Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে কৃষি খাত

আসাদুজ্জামান আজম

এপ্রিল ৪, ২০২১, ০৭:৩০ পিএম


ঘুরে দাঁড়াচ্ছে কৃষি খাত
  • অব্যাহত উৎপাদনে সংকট হবে না খাদ্যের -আশাবাদ কৃষিমন্ত্রীর

করোনা পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম খাত হতে পারে কৃষি। সে লক্ষ্যে কৃষিতে প্রণোদনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের কঠোর নির্দেশনা এবং বাস্তবায়নে তদারকির ফলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে কৃষি খাত। করোনা সংকট ও বন্যার মধ্যেও সরকারের উদ্যোগের ফলে দেশে খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। গত বছরের তুলনায় ৮৩ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এসব জমির ফসল সফলভাবে ঘরে তুলতে পারলে দেশে খাদ্য সংকট হবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কৃষিমন্ত্রী।

কৃষি অধিদপ্তর সূত্র মতে, গত বছর মার্চে বাংলাদেশে আঘাত হানে মরণঘাতী করোনা ভাইরাস। অন্যসব খাতের মতো বিপর্যয়ে পড়েন কৃষি খাত সংশ্লিষ্টরা। এরপর ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনের বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখা এবং ভবিষ্যতে উৎপাদন বাড়াতে সার ও কৃষি যন্ত্রপাতি সহজলভ্য করা, মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন, সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং শাকসবজির বিপণন, সরবরাহ ঠিক রাখা ও কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ নেয় মন্ত্রণালয়।

করোনা মোকাবিলা ও বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলমান ২০২০-২১ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৭ লাখ কৃষকের মাঝে ৩৭২ কোটি টাকার প্রণোদনা বিতরণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় মোট জমির পরিমাণ ২৩ লাখ ৬৪ হাজার বিঘা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত বাজেট কৃষি পুনবার্সন সহায়তা খাতের বরাদ্দ থেকে এ প্রণোদনা বিতরণ করা হয়। ৩৭২ কোটি টাকার মধ্যে করোনা ও বন্যায় ক্ষতি পুষাতে দেয়া হয়েছে ১১২ কোটি টাকার প্রণোদনা। রবি মওসুমে মাষকলাই, মুগ, সূর্যমুখী, সরিষা, ভুট্টা প্রভৃতি উৎপাদন বৃদ্ধিতে দেয়া হয়েছে ৯০ কেটি টাকার প্রণোদনা। এ ছাড়া, বোরো ধানের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিনামূল্যে বীজ সহায়তা বাবদ ১৩৬ কোটি টাকা, পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ২৫ কোটি টাকা ও ৬১ জেলায় সমলয়ে হাইব্রিড বোরো ধান চাষের জন্য ৯ কোটি টাকার প্রণোদনা বিতরণ করা হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের কঠোর নির্দেশনা এবং দক্ষ নেতৃত্বের কারণে প্রণোদনার সুবিধা সরাসরি কৃষকের কাছে পৌঁছানো হয়েছে। যার কারণে করোনা সংকটেও কৃষি খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত ১ এপ্রিল বোরো মওসুমের ধান কাটা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। এ সময় তিনি বলেন, ‘মহামারি করোনাকালে খাদ্য নিয়ে মানুষকে যাতে আতঙ্কে থাকতে না হয়, খাদ্যের যাতে কোনো অভাব না হয়, আমরা সেটি নিশ্চিত করতে  দৃঢ়ভাবে কাজ করছি। বোরো মওসুমে দেশে সবচেয়ে বেশি ধান চাল উৎপাদন হয়। হাওরসহ সারা দেশের বোরো ধান সফলভাবে ঘরে তুলতে পারলে দেশে খাদ্য নিয়ে তেমন কোন ঝুঁকি থাকবে না। আমরা স্বস্তিতে থাকতে পারবো।’

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, করোনা সংকটের ক্ষতি কাটিয়ে নিতে কৃষি খাতে ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। মাত্র ৪ শতাংশ সুদে কৃষকদের  মাঝে এ ঋণ বিতরণ করা হবে।  বিশেষ প্রণোদনা ছাড়াও সারসহ সেচকাজে বিদ্যুৎবিলের রিবেট বাবদ কৃষি খাতে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ভর্তুকি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আউশ এবং আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। আউশ ধানের আবাদ বাড়ানোর জন্য চার লাখ ৬৫ হাজার ৮৩৪ জন কৃষককে কৃষি উপকরণ দেয়া হয়েছে। প্রায় ৫৯ লাখ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এক কোটি ৫৬ লাখ টন। এ জন্য উচ্চফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধান চাষ বাড়ানো, পর্যাপ্ত বীজ, সার ও সেচের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমনের উৎপাদন বাড়াতে সরকার এবারই প্রথম বীজে ভর্তুকি দিচ্ছে। বিএডিসির ১৯ হাজার ৫০০ টন আমন ধান বীজ চাষি পর্যায়ে বিক্রির জন্য ২০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে প্রতিটি ইউনিয়নে ৩২টি করে পারিবারিক সবজি পুষ্টিবাগান তৈরির কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এ জন্য ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ ২২ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬৪ জেলায় এক লাখ ৪১ হাজার ৭৯২ জন কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে বীজ, চারা ও সার দেয়া হয়েছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক হাজার ২৪০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ৫০০টি রিপার বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।  ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে এবং উপকূল ও হাওর এলাকায় ৭০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে কৃষকের মধ্যে এসব কৃষিযন্ত্র দেয়া হয়েছে। প্রায় তিন হাজার ২০ কোটি টাকার ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে।

এর মাধ্যমে প্রায় ৫২ হাজার কম্বাইন্ড হারভেস্টার, রিপার ও রাইস ট্রান্সপ্লান্টার নামের কৃষিযন্ত্র কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হবে। বিএডিসি ও অন্যান্য বেসরকারি কোম্পানির উৎপাদিত আউশ, সবজি ও পাটবীজ মাঠপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে। রবি মওসুমে উৎপাদিত আলুবীজ সংগ্রহ করে হিমাগারে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বিএডিসির আলুবীজ সংগ্রহের পরিমাণ ৩৪ হাজার ৫০০ টন এবং বেসরকারি কোম্পানির প্রায় ৮৫ হাজার টন, যা গত বছরের তুলনায় পাঁচ হাজার টন বেশি। কৃষি চাষাবাদে গতি ফেরাতে চলমান ২০২০-২১ অর্থবছরে রাসায়নিক সারের চাহিদা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এতে অতিরিক্ত এক লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া ও এক লাখ মেট্রিক টন ডিএপি সার সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ সার  ফসল উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। দেশে গম ও ভুট্টার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের খাদ্য হিসেবে ভুট্টা ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। সে জন্য, গম ও ভুট্টার  উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, উৎপাদনশীলতা বেশি হওয়ায় এ বছর হাইব্রিড জাতের ধানের চাষ বৃদ্ধিতে জোর দেয়া হয়েছে। গত বছরের তুলনায় প্রায় তিন লাখ  হেক্টর জমিতে হাইব্রিডের আবাদ বেড়েছে। গড়ে হেক্টর প্রতি এক টন করে বেশি ফলন হলেও কমপক্ষে তিন লাখ টন উৎপাদন বাড়বে। বাংলাদেশে এখনো বেশির ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া কৃষকদের বেশির ভাগ হলো প্রান্তিক ও ভূমিহীন। স্বল্প জমিতে ও বাড়ির আঙিনায় গরু- মুরগি পালন, ফলমূল চাষ ও শাকসবজির বাগান স্থাপনসহ বিভিন্ন আধুনিক কৃষিকাজ সম্প্রসারণে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

আমারসংবাদ/জেআই