Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

লকডাউনের খবরে পড়েছে কেনাকাটার ধুম

এম এ আহাদ শাহীন

এপ্রিল ৪, ২০২১, ০৭:৩০ পিএম


লকডাউনের খবরে পড়েছে কেনাকাটার ধুম

এক সপ্তাহের লকডাউনের আগাম ঘোষণায় বিভিন্ন বাজারে ক্রেতাদের অগ্রিম কেনাকাটার ধুম পড়েছে। চাল, ডাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ কাঁচাবাজার, মাছ ও মাংসের দোকানে ক্রেতাদের অস্বাভাবিক ভিড় দেখা গেছে।

ক্রেতারা জানান, করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকারের এক সপ্তাহের লকডাউনের আগাম ঘোষণায় মানুষ শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এদিকে এ আগাম ঘোষণাকে মানুষ সতর্কতা হিসেবেও গ্রহণ করেছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে করোনা সংক্রমণ হু হু করে বেড়ে যাওয়ায় মানুষ ঘরে থাকার জন্য বেশি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় কিনে ঘরবন্দি হওয়ার পরিকল্পনা করছে। অপরদিকে লকডাউনকে পুঁজি করে কিছু কিছু পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এদিকে গতকাল রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত পর্যাপ্ত রয়েছে বলে দাবি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. আব্দুল লতিফ বকসীর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়। এতে বলা হয়, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত পর্যাপ্ত; স্বাভাবিক ক্রয়ে আস্থা রাখুন।’ ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানিয়েছে, এ বছর নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি থাকার কারণে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম বাড়িয়েছে টিসিবি। রমজানে যেসব পণ্যের বেশি চাহিদা থাকে, সেগুলোর ১০ থেকে ১২ শতাংশ টিসিবির মজুত রয়েছে।

রমজান উপলক্ষে সংস্থাটি সাশ্রয়ী মূল্যে ২৬ হাজার ৫০০ টন ভোজ্যতেল, ১৮ হাজার টন চিনি, ১২ হাজার টন মসুর ডাল, আট হাজার টন ছোলা ও ছয় হাজার টন পেঁয়াজ বিক্রি করবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ১৭ মার্চ থেকে খোলাবাজারে প্রথম ধাপে ৪০০ ট্রাকে ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল ও পেঁয়াজ বিক্রি করে আসছে টিসিবি। রমজান উপলক্ষে দ্বিতীয় ধাপে ট্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৫০০টি করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে পণ্য বিক্রি করবে ১০০ ট্রাক। তখন ট্রাকসেলে যুক্ত হবে ছোলা ও খেজুর। এসব পণ্য ১ এপ্রিল থেকে ই-কমার্সের মাধ্যমেও বিক্রি করবে সংস্থাটি। কেউ ট্রাক থেকে না কিনলে ই-কমার্স অথবা সরাসরি বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমেও পণ্য কিনতে পারবেন।

এদিকে লকডাউনের খবরে গত শনিবার থেকে বাড়তি পণ্য কিনতে ক্রেতারা বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এতে গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় আগামী ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে লকডাউন দিয়েছে সরকার। এ সময় শুধু জরুরি সেবা ছাড়া প্রায় সবকিছু বন্ধ থাকবে।

লকডাউন ঘোষণার প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনা-বেচা করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ-স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে। এই সময়ের মধ্যে সব ধরনের গণপরিবহন (সড়ক, রেল, নৌ, অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে উৎপাদন ও সেবায় নিয়োজিত গণপরিবহনের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। বিদেশগামী বা বিদেশফেরত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।

এছাড়া সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন-সৎকার ইত্যাদি) ছাড়া কোনোভাবেই বাইরে বের হওয়া যাবে না। খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় কেবল খাদ্য বিক্রয়-সরবরাহ করা যাবে। কোনো অবস্থাতেই হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ করা যাবে না।

শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে। তবে দোকান, পাইকারি ও খুচরা পণ্য অনলাইনের মাধ্যমে কেনাবেচা করতে পারবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সর্বাবস্থায় কর্মচারীদের মধ্যে আবশ্যিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং কোনো ক্রেতা সশরীরে যেতে পারবে না। দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড ভেঙেছে। সংক্রমণ ঠেকাতে আবারো এক সপ্তাহের লকডাউনের ঘোষণা দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এমন খবরে রাজধানীর বাজারগুলোতে হঠাৎ বেড়ে যায় ক্রেতার ভিড়। অনেকেই সংগ্রহে রাখছেন বাড়তি পণ্য। জোগানের চেয়ে কয়েকগুণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দামও বাড়িয়ে দেন দোকানিরা। কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট, মালিবাগ, রায়েরবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

অযথা বাড়তি পণ্য কেনার ফলে বাজারে দ্রব্যমূল্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে- এমন আশঙ্কা করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনসাস কনজ্যুমার্স সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ বলেন, লকডাউনের ঘোষণায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। কারণ বিগত সময়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে ক্রান্তিকালে বাজার নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। তাই সরকারের উচিত জনসাধারণকে আশ্বস্ত করা। পাশাপাশি লকডাউনের সময় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

আমারসংবাদ/জেআই