Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

স্ত্রী পরিচয়ে অন্য নারী নিয়ে রিসোর্টে যান মামুনুল হক!

এপ্রিল ৪, ২০২১, ০৭:৩০ পিএম


স্ত্রী পরিচয়ে অন্য নারী নিয়ে রিসোর্টে যান মামুনুল হক!
  • স্ত্রী দাবি করলেও বিয়ের সপক্ষে দালিলিক কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি মামুনুল হক
  • রিসোর্টের এন্ট্রি পেপার্সে বর্তমান স্ত্রীর নাম আমেনা তাইয়্যেবা, সঙ্গে থাকা নারী কে
  • যথাযথ তদন্ত করেনি পুলিশ, এসপি বলছেন, যাচাই-বাছাইয়ের আগেই মামুনুল হককে নিয়ে যায় হেফাজত কর্মীরা
  • প্রথম স্ত্রীর সাথে ফাঁস হওয়া কথোপকথনেও অসংখ্য প্রশ্ন
  • শুরুতে কালো বোরকা পরে আবার নীল বোরকা পরা নারী নিয়ে অস্পষ্ট হেফাজত
  • হেফাজতের সংবাদ সম্মেলন: ছাত্রলীগ-যুবলীগের লোকেরা মামুনুলকে হেনস্তা, হত্যার চেষ্টা করেছে। যে সমস্ত অডিও ক্লিপ বের করা হয়েছে এটা মোটেও সত্য নয়। এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে

নারীসহ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক অবরুদ্ধের ঘটনা এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। সোনারগাঁও থেকে গড়িয়ে আলোচনা-সমালোচনা সারা দেশ হয়ে এখন জাতীয় সংসদেও। বেরিয়ে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। যদিও এখন পর্যন্ত মামুনুল হক ওই নারীকে স্ত্রী দাবি করলেও বিয়ের সপক্ষে দালিলিক কোনো প্রমাণই হাজির করতে পারেননি তিনি।

তবে তিনি বলেছেন, বন্ধুর সাবেক স্ত্রীর খোঁজখবর নিতে গিয়ে মাসলাগত অবৈধতাকে বৈধ করার জন্যই কয়েকজন সাক্ষীর মাধ্যমে বিয়ে করা স্ত্রীকে নিয়েই রিফ্রেশমেন্টের জন্য ওই রিসোর্টে উঠেছিলেন। কিন্তু রিসোর্টে এন্ট্রি করা পেপার্সে দেখা যায়, স্ত্রী উল্লেখ করা ওই নারীর নাম লিখেছেন আমেনা তাইয়্যেবা।

অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমেনা তাইয়্যেবা তার প্রথম স্ত্রীর নাম। তাহলে স্ত্রী দাবি করে সঙ্গে নেয়া রিসোর্টের ওই নারীর নাম কী, রিসোর্টেই বা যাওয়ার কারণ কী— এমন অসংখ্য প্রশ্নেরই উত্তর মিলছে না। আবার ঘটনার দিন পুলিশ তাকে উদ্ধার করে যাচাই-বাছাই ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয় বলে জানালেও এখন পুলিশের সেদিনের যাচাই-বাছাই কিংবা জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

অবরুদ্ধ কক্ষে যাচাই-বাছাইসহ মামুনুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিয়ে কিংবা স্ত্রীর বিষয়ে কোনো তথ্য কেন পাননি আপনারা— এমন প্রশ্নে আমার সংবাদকে নারায়ণগঞ্জের এসপি মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাই-বাছাই পুরোটা শেষ হয়নি, শেষ হওয়ার আগেই হেফাজতকর্মীরা উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে মামুনুল হককে নিয়ে যায়। আমরা ছেড়ে দিয়েছি, সে ইস্যুটাও ঠিক নয়। উচ্ছৃঙ্খল কর্মীদের সঙ্গে কিছু ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়, সে ফাঁকেই তারা চলে যায়।’ আপনারা তো বলেছিলেন ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ঠিক ছিনিয়ে নেয়া নয়, পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় চলে যান।’

এদিকে এ ঘটনায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রিসোর্ট ভাড়ার সময় মামুনুল হক নিজের নাম সঠিক লিখলেও তার সঙ্গিনীর নাম লুকিয়েছেন। সেই নারী নিজের নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা লিখলেও মামুনুল হক রিসোর্টের নথিতে তার নাম উল্লেখ করেছেন আমেনা তাইয়্যেবা। তবে তাইয়্যেবা তার চার সন্তানের জননী প্রথম স্ত্রীর নাম। যা আমার সংবাদকে নিশ্চিত করেছেন ঘটনার দিন ওই নারীর সঙ্গে মামুনুলের পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়েছিল দাবি করা ভাগিনা এহসান।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার বেলা ২টার দিকে সাদা রঙের একটি গাড়ি নিজেই চালিয়ে রিসোর্টটিতে যান মামুনুল হক। ভাড়া করেন এক্সিকিউটিভ ডিলাক্স (সেমি-সুইট) কক্ষ। যে কক্ষগুলোর ভাড়া ১০ হাজার টাকা। সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আর ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ যুক্ত হয়। তবে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ ডিসকাউন্ট করে মামুনুল হককে সাত হাজার টাকায় ভাড়া দেয়। রিসোর্টের সংশ্লিষ্টরা বলেন, অভ্যর্থনা কর্মীরা মামুনুলের কাছে তার সঙ্গিনীর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেছেন তার স্ত্রী, নাম আমেনা তাইয়্যেবা। মামুনুল হক কক্ষ ভাড়া করার সময় নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিও জমা দেন। পরে ১২ ঘণ্টার জন্য ভাড়া করে যান ৫০১ নম্বর কক্ষটি। সেখানে এক ঘণ্টা অবস্থানের পর মামুনুল হক খাবারের অর্ডারও করেন। এরপর সাড়ে ৫টার দিকেই শুরু হয় হাঙ্গামা। স্থানীয় যুবকরা মামুনুলকে ঘিরে যখন একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন তখনো তিনি ওই নারীর পরিচয় দেন আমেনা তাইয়্যেবা। শ্বশুরবাড়ি খুলনায়, শ্বশুরের নাম বলেন জাহিদুল ইসলাম। তবে মামুনুল হকের এই বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে স্ত্রী দাবি করা সেই নারীর বক্তব্যে। ওই নারী নিজের নাম বলেন জান্নাত আরা ঝর্ণা। বাবা ওলিয়র রহমান। বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা ওলিয়র রহমান উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কামারগ্রাম ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। জান্নাতের আগে বিয়ে হয়েছে, দুটি সন্তান আছে, এ কথা এলাকার সবাই জানলেও মামুনুল হকের সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ের কোনো খবরই জানেন না এলাকাবাসী। জান্নাত আরা ঝর্ণার ৯ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল বাগেরহাটের কচুড়িয়া এলাকার হাফেজ শহীদুল ইসলামের সঙ্গে। পারিবারিক কলহের জেরে আড়াই বছর আগে শহীদুল্লাহর সঙ্গে ঝর্ণার বিয়েবিচ্ছেদ হয়ে যায়। জানতে চাইলে মামুনুলের ভাগিনা এহসান বলেন, ‘যে অডিওটি (কল রেকর্ড) ফাঁস হয়েছে, এটার বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলনেও বলা হয়েছে। আমরা এটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো এবং আমাদের পক্ষ থেকে মামলা হবে।’ যদি পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়ে থাকে তাহলে এসব অডিও রেকর্ডে এসব কথোপকথন কেন এবং এর ভিত্তিই বা কী— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অডিও রেকর্ডের কোনো ভিত্তি আছে বলে আমি জানি না। এ অডিওর বিষয়ে মামার সাথে আমার কথাও হয়নি। আর ৭১ টেলিভিশনে যে অডিওটা এসেছে, সেখানে এটা স্পষ্ট যে— কাটিং করে দেয়া হয়েছে। ওনার মূল কথাটা এখানে নেই।’ যদি পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়ে থাকে তাহলে ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত আপনারা বিয়ে সংক্রান্তে কোনো প্রমাণাদিই উপস্থাপন করতে পারছেন না— নেই, নাকি থেকেও দেখাচ্ছেন না আপনারা— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কাবিন দেখানো বা না দেখানো এ বিষয়টি সম্পূর্ণ মামুনুল হক সাহেবের হাতে। এখন তার ওপর দিয়ে যে প্রেসার যাচ্ছে, তার মধ্যে আজকে তো আরও বড় আকার ধারণ করলো সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। এগুলো তো অনেক বড় প্রেসার। আমরা চিন্তা করছি— ওনার জনপ্রিয়তা নষ্ট করার জন্য এটা হাতিয়ার হচ্ছে। টার্গেট হলো ওনাকে আন্দোলন থেকে সরিয়ে দেয়া।’

এদিকে ঘটনার দিন মামুনুল হক যখন বেকায়দায় পড়েন, তখন তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন হেফাজতে ইসলামের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তারা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে জড়ো করে হামলে পড়েন রিসোর্টে। ব্যাপক ভাঙচুর করে ছিনিয়ে নেন মামুনুল হককে। এ সময় প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে নিচতলা থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত প্রায় সব জানালার কাচ, আর্চওয়ে, অভ্যর্থনা কক্ষ, অতিথি কক্ষ ও জিম ভাঙচুর করা হয়। রিসোর্টের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে হিসাব করছেন কর্মকর্তারা। যারা ভাঙচুর করেছেন, সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে ভিডিও দেখে তাদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

এবারই প্রথম নয়, রিসোর্টের কর্মীরা জানান, হেফাজত নেতা মামুনুল হক এর আগেও রিসোর্টটিতে থেকেছেন। সুনির্দিষ্ট তারিখ জানাতে না পারলেও মাস চারেক আগেও সোনারগাঁওয়ে মাহফিল করতে এসে সেখানে অবস্থান করেন তিনি। এদিকে দুইজনের তথ্যে নানা অনিয়মের পর রাতে তিনটি মোবাইল কথোপকথনের অডিও ফেসবুকে ফাঁস হয়। এর একটিতে বোঝা যায়, মামুনুল হক তার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, সেই নারী তার পরিচিত শহীদুল ইসলামের স্ত্রী। ঘটনার কারণে চাপে পড়ে স্ত্রী বলতে বাধ্য হয়েছেন। পরে আরেকটি কথোপকথন ফাঁস হয়, যা মামুনুলের সঙ্গে তার রিসোর্টের সঙ্গিনীর মধ্যকার বলে প্রতীয়মান হয়। সেখানে সেই নারী জানান, তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তার মায়ের একটি বন্ধ মোবাইল নম্বর দিয়েছেন। আর অন্য একজন যখন তাকে কোথায় বিয়ে হয়েছে জিজ্ঞেস করেছেন, তখন তিনি বলেছেন, এটা জানেন না। মামুনুলের সঙ্গে কথা বলে নেবেন। আরও একটি কথোপকথনে বোঝা যায়, মামুনুলের বোন কথা বলেছেন হেফাজত নেতার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর সঙ্গে। তিনি তাকে বুঝিয়েছেন, কেউ যদি তাকে ফোন করে, তাহলে তিনি যেন বলেন, তিনি বিয়ের অনুমতি দিয়েছেন এবং তার শাশুড়ি এই বিয়ের আয়োজন করেছেন। এরপর মামুনুল হক ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, তিনি বিয়ে করেছেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্ত্রীকে। পারিবারিকভাবেই এই বিয়ে হয়েছে। পরদিন ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি একে একটি মানবিক বিয়ে উল্লেখ করে লেখেন, সেই নারীর সঙ্গে তার স্বামীর ছাড়াছাড়ির আগে তিনি সংসার ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন। ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর মেয়েটি দুর্দশায় পড়ে যায়। সে সময় তিনি বিয়ে করেছেন তাকে।  হেফাজতের প্রেস সচিব এনামুল হক ফারুক আমার সংবাদকে বলেন, ‘উনি তো নিজের বিষয়ে বক্তব্য ক্লিয়ার করেছেন। আমরা বিশ্বাস করেছি। এটা সাংগঠনিকভাবে তদন্ত করার প্রশ্নই আসে না। তদন্ত হবে যখন এটা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হবে, আমাদের অবিশ্বাস হবে, তখন তদন্ত করবো। এটা তদন্তের বিষয় না। ওই নারী যে তার স্ত্রী এর প্রমাণ তো এখন পর্যন্ত দেখাতে পারলেন না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পারিবারিকভাবে বিয়ে হইছে। কোর্টে গিয়ে বা উকিল নিয়ে বিয়ে হয়নি। এটা তো উনি বারবার বলেছেন। ওই নারী ওনার বন্ধুর স্ত্রী ছিলো। ওই সংসারে বনিবনা হয়নি এবং ছাড়াছাড়ির পর উনি নিজেই ওই বন্ধুকে বিয়ে করিয়েছেন এবং একটা ছেলেও হয়েছে। তারপর থেকে মামুনুল হক খোঁজখবর নিতেন। যেহেতু ওনার স্ত্রী না সেহেতু মাসলাগতভাবে অবৈধ হওয়ায় তিনি বৈধ করার জন্য কয়েকজন সাক্ষীর সামনে বিয়ে করেছেন।’

কিন্তু রিসোর্টের এন্ট্রি কপিতে আমেনা তাইয়্যেবা উল্লেখ করেছেন এবং মামুনুল হকের ভাগিনাও আমার সংবাদকে জানিয়েছেন বর্তমান স্ত্রীর নাম আমেনা তাইয়্যেবা, কিন্তু রিসোর্টে ওই নারী তার নাম বলেছেন জান্নাত আরা ঝর্ণা। এ রকম অস্পষ্টতা কেন— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ঘটনার শুরুতে কালো বোরকা পরা যে নারীকে দেখানো হয়েছিল এবং পরে নীল বোরকা পরা যে নারীকে দেখানো হয়েছে এটা নিয়ে আমরা এখনো অস্পষ্ট। একটি বেসরকারি টেলিভিশন যখন সর্বপ্রথম প্রচার করে তখন ঢুকার সময়ে দেখা যাচ্ছিল কালো বোরকা পরা। পরে লাইভের শুরুতেও দেখা গেছে কালো বোরকা পরা। হঠাৎ ওয়াশরুম থেকে এক মহিলা হাশিখুশিভাবে লাইভে আসে এটা আসলে ক্লিয়ার না। ওনার ভাগিনাও বলছে আমেনা তাইয়্যেবা। কিন্তু ওই নারী নিজের থানাটা বলতেও ভুল বলেছে। এখন ওইটা কি আসলে ওনার দ্বিতীয় স্ত্রী নাকি সাজানো নাটক দ্বিতীয় অংশে এ বিষয়টা ক্লিয়ার না।’ সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমসহ টেলিভিশনে যে অডিও ক্লিপ ভাইরাল হচ্ছে তাতে হেফাজত কি মনে করে— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কল রেকর্ডের ব্যাপারে ওনারা বলছেন যে, কল রেকর্ড মিথ্যা। মামুনুল হক সাহেবের লম্বা কথা থেকে কাটছাঁট করে এটা তৈরি করেছে। ওনার ভাগিনা এহসানুল হকও এটা জানিয়েছেন।’

রিসোর্টে প্রবেশের সময় সঙ্গে থাকা নারীকে স্ত্রী আমেনা তাইয়্যেবা উল্লেখ করে এন্ট্রি করলেও প্রকৃতপক্ষে উনি তো আমেনা তাইয়্যেবা নন এবং আমেনা তাইয়্যেবা প্রথম স্ত্রীর নাম। তাহলে সঙ্গে থাকা নারী কে— জানতে চাইলে এনামুল হক বলেন, ‘মামুনুল হক সাহেব নিজে বলেছেন আমেনা তাইয়্যেবা, বখাটেরা যখন জিজ্ঞেস করেছে তখনো তিনি একই নাম বলেছেন এবং ওনার ভাগিনাও একই নাম বলেছেন। কিন্তু দ্বিতীয় যে ব্যক্তি ঝর্ণা আক্তার তার তো অনেক কিছুই অস্পষ্ট। কিন্তু মামুনুল হক তো ওনাকে নিয়েই রিসোর্টে গেছেন, তাহলে তো অস্পষ্টতা থাকার কথা নয়; এমনটা জানালে তিনি বলেন, ‘আমরা শুরুতেই যেটা দেখছি টেলিভিশনে সেখানে তিনি ছিলেন কালো বোরকা পরিহিতা। আবার যখন লাইভে ছিলেন তখন তো নীল বোরকা। এটা কীভাবে সমাধান করবেন আপনারা, কীভাবে ব্যাখা করবেন?’ মূলত হেফাজত এখন কালো আর নীল বোরকার অস্পষ্টতার মধ্যে রয়েছে। অন্য কোনো নারীকে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে বলে বলছেন হেফাজতের প্রেস সচিব। 

হেফাজতের সঙ্গে কেউ সংঘর্ষে জড়ালে তার গদি থাকবে না বলে গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে প্রতিবাদ সভায় মন্তব্য করেছেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব সাখাওয়াত হোসেন রাজি। তিনি বলেন, ‘মামুনুল হক তার স্ত্রীকে নিয়ে একটা রিসোর্টে গিয়েছিলেন সেখানে ক্ষমতাসীন দলের বিশেষ করে ছাত্রলীগ, যুবলীগের লোকেরা তাকে হেনস্থা করেছে, হত্যার চেষ্টা করেছে। তার নামে যে সমস্ত অডিও ক্লিপ বের করা হয়েছে এটা মোটেও সত্য নয়। আমরা এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেবো।’

দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন মামুনুল হক : মামুনুল হক ও তার সঙ্গে থাকা তার স্ত্রীকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের ঘটনার বিষয়ে জাতীয় সংসদে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বিকেলে ফেসবুক লাইভে এসে মামুনুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তি, মন্ত্রীদের স্পষ্ট ভাষায় বলছি, আমার স্ত্রী সম্পর্কে বক্তব্য দিয়েছি, তিনি আমার বৈধ স্ত্রী।’ তিনবার আল্লাহর কসম খেয়ে মামুনুল হক আরও বলেন, ‘আমি যদি মিথ্যাবাদী হয়ে থাকি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকি তাহলে আমি যেনো ধ্বংস হয়ে যাই। পক্ষান্তরে যারা আমার ও আমার স্ত্রী সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে, মিথ্যা প্রচার করছেন— তাদের ওপর তোমার গজব নাজিল করো। তারা যেন নির্বংশ হয়ে যায়। যারা এই তথ্য বলে বেড়াচ্ছেন— অনুরোধ করবো, তারাও যেনো আমার মতো আল্লাহর কসম খেয়ে বলে, তারা যদি মিথ্যা বলে থাকে তাহলে আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুক। যদি সৎ সাহস থকে তারা এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুক।’ নিজেকে কুরআনের ধারক দাবি করে মামুনুল হক বলেন, ‘আল্লাহ তোমার নবীর একজন নায়েব হিসেবে যে দায়িত্ব দিয়েছো, আল্লাহ তোমাকে বললাম, যারা মিথ্যাবাদী হয় তাদের ওপর গজব নাজিল করো।’ 

সোনারগাঁও থানায় হেফাজতে ইসলামের লিখিত অভিযোগ : রয়েল রিসোর্টে মামুনুল হকের ওপর হামলার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় গতকাল রোববার দুপুরে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুই নেতার নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের ১০ নম্বর অঞ্চলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুফতি ফয়সাল মাহমুদ বাদি হয়ে স্থানীয় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের নিয়ে অভিযোগটি দায়ের করেন। লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ৩ এপ্রিল হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক সস্ত্রীক সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে বিশ্রাম নেয়ার সময় রিসোর্টের মালিক শেখ সাইদুর রহমান ও তার কর্মচারীরা মামুনুল হককে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হন। এ সময় সোনারগাঁও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনির নেতৃত্বে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা মামুনুল হকের ওপর হামলা চালিয়ে তার জামার কলার ছিঁড়ে ফেলে দাড়ি ধরে টান দেয় ও অশ্লীল ভাষায় গালাগালি দিয়ে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। মামুনুল হকের গাড়ির চাবি ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়ে হেফাজতের নেতারা থানার ভেতরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে ৭১ টেলিভিশনের নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি বুলবুল আহম্মেদের মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে আছড়ে ভেঙে ফেলে গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে বিশোদগার করে থানার ভেতর থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে চলে যান। সোনারগাঁও থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, হেফাজতে ইসলাম নেতার অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

আমারসংবাদ/জেআই