Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

জুয়ার বিরুদ্ধে কঠোর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

সাইফুল ইসলাম

এপ্রিল ৪, ২০২১, ০৭:৩০ পিএম


জুয়ার বিরুদ্ধে কঠোর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
  • ক্যাসিনো বা জুয়ার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকলেও সাজা ও জরিমানা কম থাকায় একই কাজ বারবার করছে জুয়াড়িরা

জুয়া খেলে আপনি হয় হিরো না হয় জিরো। দেশে এই খেলা অবৈধ হলেও সচরাচর সবসময় জুয়া খেলা হয়। এই জুয়ার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তারপরও বাসাবাড়ি, এলাকার ছোট ছোট ক্লাব, বাজার, রাজনৈতিক কার্যালয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য জুয়ার আয়োজন করে একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি। যারা সবাইকে নিঃস্ব করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে যায়। প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হলেও সহজ সাজা ও জরিমানায় নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

জুয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করে। র্যাব-১০ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের মার্চ মাসে ২৫৪ জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়াও গেলো ফেব্রুয়ারি মাসে ২৪০ ও জানুয়ারি মসে ২০৪ জন জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করা হয়। এবং গত বছর ২০২০ সালে সর্বমোট ১১৭৫ জন জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই জুয়াড়িদের গ্রেপ্তার করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, ক্যাসিনো বা জুয়ার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অভিযানে প্রায়ই জুয়াড়ি ধরা পড়ছে। এরপর তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় সোপর্দ করছেন। কিন্তু আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে আবারো তারা সহজেই বের হয়ে পুনরায় একই কাজ করছে। সাজা ও জরিমানা কম থাকায় একই জুয়াড়ি বারবার গ্রেপ্তার হচ্ছে। দেশের প্রেক্ষাপটে জুয়াড়িদের নির্মূল করতে সাজা ও জরিমানা বাড়ানো হলে আশা করা যায় জুয়াড়ির সংখ্যা কমে যাবে।

আইনজীবী আরিফুজ্জামান আমার সংবাদকে বলেন, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পরই যুগোপযোগী একটি আইন করার বিষয়ে আলোচনা হলেও এখনো তা বলবৎ করা যায়নি। এছাড়াও এসব ঘটনায় মামলা হলেও কোনো এফআইআর হয় না। সরাসরি কোর্টে চালান করা হয়। স্বল্প কারাদণ্ড বা জরিমানা করা হয়। লঘু শাস্তির ফলে আবারো একই কাজ করে তারা। তবে জুয়াড়ি যদি সরকারি কর্মচারী হয় তাহলে চাকরি ঝামেলা এড়াতে সাজা পাওয়ার কাগজ অফিসে জমা দিতে হয়। এবং ২০০ টাকার বেশি যদি জরিমানা হয় তাহলে তার চাকরিতে সমস্যা হতে পারে।

আইনের সাজার কথা উল্লেখ করে আরিফুজ্জামান বলেন, ১৯৭৬ সালের ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশে জুয়ার বিষয়ে দুটি ধারা আছে। ৯২ ধারা বলছে, যারাই জুয়া খেলার উদ্দেশে কোনো সড়ক বা জনসমাগমস্থলে মিলিত হবে, তাদের অনধিক ১০০ টাকা জরিমানা করা যাবে। ৯৩ ধারা বলছে, গণবিনোদনে কেউ কোনো খেলায় যুক্ত হলে তাকে অনধিক ২০০ টাকা জরিমানা করা যাবে। সেদিক থেকে পুলিশ অধ্যাদেশের চেয়ে ১৮৬৭ সালের আইনটি কিছুটা নির্দিষ্ট। সেখানে ‘জুয়ার’ সংজ্ঞার বিষয়ে স্পষ্টতা লক্ষ করা যায় না। কিন্তু কমন গেমিং হাউসের সংজ্ঞায় পরিষ্কার বলা হয়েছে, কোনো বাড়ি, কক্ষ, তাঁবু বা গাড়িসহ যেকোনো স্থানই হোক না কেন, সেখানে মুনাফা বা লাভের আশায় কোনো খেলার সামগ্রী ব্যবহূত হলে তা দণ্ডনীয়। এ আইনে জুয়া খেলার অপরাধে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা জরিমানা ও তিন মাসের কারাদণ্ড রয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে উভয় দণ্ড কার্যকর করার বিধানও রাখা হয়েছে আইনটিতে।

এই আইনজীবী আরও বলেন, জুয়াড়িদের ভালো পথে ফিরিয়ে আনতে সংক্ষিপ্ত আইন রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এই আইনের আওতায় জুয়াড়িদের আনা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে আইনটা সংশোধন করা দরকার। সাজা ও জরিমানা বাড়ালে জুয়াড়ি কমতে পারে। তা না হলে এখান থেকে আরও বড় অপরাধে জড়াতে পারে জুয়াড়িরা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) আমার সংবাদকে বলেন, সামাজিকভাবে জুয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকর। তাই এ বিষয়ে আমাদের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে, যখনই এ ধরনের কোনো তথ্য পাওয়া যাবে, দ্রুত তা বন্ধ করাসহ আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। ডিএমপি জুয়া বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলেন, জুয়া প্রতিরোধে দ্রুত যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। মূলত ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে জুয়ার বিস্তার হয়েছে। বাসাবাড়ি ছাড়াও এলাকার ছোট ছোট ক্লাব, বাজার, রাজনৈতিক কার্যালয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য জুয়ার আয়োজন করে একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি। যারা সবাইকে নিঃস্ব করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

ধর্মের দৃষ্টিতে দেখা যায়, ইসলাম ধর্মে জুয়া সম্পূর্ণভাবে নিষেধ রয়েছে। অন্যদিকে হিন্দুদের ‘মহাভারত’-এ প্রাচীন ভারতে জুয়া খেলা বেশ জনপ্রিয় ছিলো বলে জানা যায়। প্রাচীন ইহুদি সমপ্রদায়েও জুয়াকে নিকৃষ্ট নজরে দেখা হতো। খ্রিস্টানদের অনেকে জুয়াকে বৈধ ও অনেক ধর্মযাজক অবৈধ ঘোষণা করেছে।

আমারসংবাদ/জেআই