Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

করোনাকালেও অদম্য সেতু কর্তৃপক্ষ

এপ্রিল ৫, ২০২১, ০৮:৫০ পিএম


করোনাকালেও অদম্য সেতু কর্তৃপক্ষ
  • সব প্রজেক্ট এলাকায় কোয়ারেন্টাইনের জন্য আলাদা কক্ষ ও হাসপাতালের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কেউ অসুস্থ হলে সেখানেই চিকিৎসা দেয়া যাবে। সকল প্রকল্পই চলমান থাকবে, কন্ট্রাক্টরসহ সংশ্লিষ্ট যারাই বাইরে আছে তারা অনলাইনে জুম কিংবা টিমের মাধ্যমে কাজের তদারকি করছে -আমার সংবাদকে সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদাউস

প্রাকৃতিকভাবে বিচ্ছিন্ন দেশের দুই অংশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভারসাম্য এবং নিবিড় যোগাযোগের লক্ষ্যে যমুনা নদীর উপর যমুনা বহুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষের সৃষ্টি। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ যমুনা বহুমুখী সেতু প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মপরিধিসহ প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে। ২০০৯ সালে যমুনা বহুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষের নামকরণ করা হয় ‘বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ’। এরপর থেকেই বঙ্গবন্ধু সেতু পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বসহ দেড় কিলোমিটার ও তদূর্ধ্ব দৈর্ঘ্যের সকল প্রকার সেতু, টোল, অ্যাপ্রোচ রোড-সড়ক নির্মাণ ও পরিচালনাসহ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিরবচ্ছিন্নভাবে পালন করে যাচ্ছে সেতু কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালে নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কজওয়ে, টানেল, নদীশাসন কার্যক্রম, ফ্লাইওভার, রিং রোড ইত্যাদি নির্মাণকাজের দায়িত্বও পূর্ববর্তী দায়িত্বের সাথে পালন করছে এ সংস্থা। দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কৌশলগত উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে চলা ‘বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ’ বিশেষ ভূমিকা রাখছে সরকারের রাজস্ব খাতেও।

সাম্প্রতিক বছরসমূহেও সেতু কর্তৃপক্ষের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এর মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের আওতাধীন মূল সেতুর নির্মাণ কাজের ৮৯ শতাংশ ভৌত অগ্রগতি, ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে র্যাম্পসহ ৪৬.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজের শুরু এবং ইতোমধ্যেই প্রথম ট্রাঞ্চের ৫৬ শতাংশ ভৌত অগ্রগতি, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩.২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ৫৬ শতাংশ ভৌত অগ্রগতি এবং বিআরটি প্রকল্পের এলিভেটেড অংশের নির্মাণ কাজেরও ৩০.৫২ শতাংশ ভৌত অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। দেশের বিভিন্ন অবস্থানে আরও ৫টি বৃহৎ সেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে এ কর্তৃপক্ষের। এরমধ্যে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আশুলিয়া হয়ে ঢাকা ইপিজেড পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ১ হাজার ২২৬ কোটি টাকাও পরিশোধ করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী সড়কে পায়রা নদীর ওপর ১ হাজার ৬৯০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণে ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটিও  ইতোমধ্যে একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। তাছাড়া ঢাকায় সাবওয়ে নির্মাণে ২৩৮ কিলোমিটার এলাইনমেন্টের সম্ভ্যাব্যতা সমীক্ষা চলমান রয়েছে। অন্যদিকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৯৯.৭৭ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে।  এতসব অর্জনের বিপরীতে সেতৃ কর্তৃপক্ষের সম্মুখে রয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প এলাকা এবং বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় নদী ভাঙন মোকাবিলা। ঢাকা-আশুলিয়া এবং বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলাকালে যানবাহন ব্যবস্থাপনাকেও চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে সেতু কর্তৃপক্ষ। তবে কোভিডকালীন বর্তমান সময়ে দেশের অন্যসব সেক্টরের ন্যায় সেতু কর্তৃপক্ষের সামনেও সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে চলমান সব প্রকল্পগুলোকে সামনে এগিয়ে নেয়া।

কোভিডকালীন পরিস্থিতিতে চলমান সব প্রকল্পের কাজ কীভাবে এগিয়ে নেয়া যায় এবং এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এসব বিষয়ে আমার সংবাদের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদাউস। আমার সংবাদকে তিনি বলেন, আমরা আমাদের সব প্রজেক্ট এলাকায় কোয়ারেন্টাইনের জন্য আলাদা আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা করে রেখেছি। চিকিৎসার জন্যও ব্যবস্থা করা আছে, হাসপাতালেরও ব্যবস্থা আছে, সেখানেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চিকিৎসা নিতে পারবেন। এমনকি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কেউ অসুস্থ হলে সেখানেই তাদের চিকিৎসা দেয়া যাবে।

এছাড়া আপনারা জানেন যে, আমাদের সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট পদ্মা বহুমুখী প্রকল্পকে ইতোমধ্যে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার বন্ধ রেখেছি। আমাদের যারা ভেতরে আছে তারাই, এমনকি আমরা নিজেরাও অনেক সময় চলমান  কোভিডকালীন সময়ে খুব বেশি যাচ্ছি না, যাতে কোনো রকমের সমস্যা সৃষ্টি না হয়। ওখানে যারা প্রকৌশলী রয়েছেন, তারাও এ মুহূর্তে ঢাকায় আসছেন না। তারা ওখানে থেকেই কাজ পর্যবেক্ষণ করছেন। কন্ট্রাক্টরসহ সংশ্লিষ্ট সবাই, যারা বাইরে আছেন তারা অনলাইনে জুম কিংবা টিমের মাধ্যমে কাজের তদারক করছেন।

একইভাবে কর্ণফুলী টানেলও সাধারণ জনগণের থেকে দূরে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, প্রজেক্ট ব্যবস্থাপনায় যারা আছেন, তারাও জনসাধারণ থেকে দূরে আছেন। এ দুটি প্রজেক্টেই কাজ চলমান রাখতে সমস্যা নেই।

জানতে চাইলে কাজী মো. ফেরদাউস বলেন, লকডাউনে সারা বিশ্বেই যখন ট্রান্সপোর্ট সমস্যা হয় তখন মালামাল আমদানিতে একটু বিলম্ব হয়, তার একটা প্রভাবও কিন্তু পড়ে। মহামারি সারা বিশ্বেই আছে, এর মধ্যে পদ্মা সেতুর মালামাল চায়না থেকে আসে, কর্ণফুলী টানেলের মালামালও চায়না থেকে আসে, আমদানির ক্ষেত্রে অনেক সময় কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটু বিলম্ব হতে পারে। সবমিলিয়ে করোনা মোকাবিলার জন্য যতটুকু সতর্কতা নেয়া দরকার প্রজেক্টগুলোতে তাই নেয়া হচ্ছে। এভাবে যতটুকু সম্ভব তার সর্বোচ্চটুকুই আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

করোনার বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে সেতু কর্তৃপক্ষের চলমান বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে কোনো প্রকল্প বন্ধ রাখা হবে কি না— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সব প্রকল্পের কাজ চলতেই থাকবে। তবে করোনা মহামারি যখন সারা বিশ্বেই বিস্তার করছে, তখন আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়াও একটু ব্যাহত হয়। তবুও কোনো প্রকল্পের কাজ যেন বন্ধ না হয়, সেজন্য আমাদের এবং আমাদের কন্ট্রাক্টরসহ কন্ট্রোলিংয়েরও চেষ্টা চলমান রয়েছে। বাকিটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল। যখন সারা বিশ্বই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তখন আমরা চেষ্টা করলেও শতভাগ আগের মতো কাজ করা সম্ভব নয়। যতটুকু নিরাপত্তার মধ্যে থেকে সহনীয়ভাবে করা যায়, ততটুকুই চেষ্টা করা হচ্ছে।

আমারসংবাদ/জেআই