Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

চলছে তদন্ত যেকোনো সময় গ্রেপ্তার মামুনুল

এপ্রিল ৬, ২০২১, ০৭:৫০ পিএম


চলছে তদন্ত যেকোনো সময় গ্রেপ্তার মামুনুল

ভাস্কর্য ইস্যু থেকে শুরু করে মোদির সফরবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, দেশের বিভিন্নস্থানে ভাঙচুর আর সবশেষ নারায়ণগঞ্জের সোনাগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষে স্ত্রী দাবি করা এক নারীসহ অবরুদ্ধের ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচিত হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক গ্রেপ্তার হতে পারেন যেকোনো সময়।

গত ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষের ঘটনায় ব্যবসায়ী খন্দকার আরিফ-উজ-জামানের করা মামলায় ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন আদালত। গত সোমবার রাতে মামুনুল হককে হুকুমের আসামি করে দলটির ১৭ নেতার নামে পল্টন থানায় মামলাটি করেন ওই ব্যবসায়ী।

এদিকে বায়তুল মোকাররমে পুলিশের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের সংঘর্ষে দলটির নেতা-কর্মীদের সেদিনের অবস্থান, বর্তমান অবস্থান, ঘটনার সঙ্গে তারা কতটুকু জড়িত, কার কী ভূমিকা এসব বিষয়ে পর্যালোচনাও চলছে এবং সার্বিক পর্যালোচনা শেষেই ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল জোনের উপ-কমিশনার সৈয়দ নূরুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার মামলাটির তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে অপরাধীদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয়কেও আমলে নেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

সৈয়দ নূরুল ইসলাম বলেন, সোমবার রাতে মামলাটি রেকর্ড হয়েছে। এখন মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের পরিচয়, তাদের এখনকার অবস্থান এবং ২৬ তারিখ তারা কোথায় অবস্থান করছিলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তারা কতটুকু জড়িত, কার ভূমিকা কী ছিলো ইত্যাদি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হবে।’ সবকিছু পর্যালোচনা করেই যাদের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপের প্রমাণ মিলবে, তাদেরই গ্রেপ্তারসহ প্রয়োজনীয় আইনিব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, মামলার এজাহারে যেসব আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজন হেফাজতে ইসলামের নেতা। আমরা দেখবো কারা ম্যাসাকার করেছে, কারা সাংঘর্ষিক অবস্থার নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের আমরা খুঁজে বের করবো। তাদের কোনো রাজনৈতিক পদ আমরা বিবেচনায় নেবো না। আমরা শুধু তার অপরাধের ধরন ও মাত্রা দেখবো। 

বাদির মামলা করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জনৈক ব্যবসায়ী মামলাটি করেছেন। এজাহারে তিনি ১৭ জন আসামির নাম উল্লেখ করেছেন ও অজ্ঞাতনামা অনেকের কথা বলেছেন।’ তার বক্তব্য অনুযায়ী ২৬ তারিখের ঘটনায় ছুঁড়ে মারা টাইলসের টুকরো ও ইট তার গায়ে লেগে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। তার সঙ্গে আরও অনেকেই আহত হয়েছেন। আহতদের পক্ষ থেকেই তিনি মামলাটি করেছেন। সাক্ষী যারা তারা সকলেই সেদিনের ঘটনায় আহত হয়েছেন। 

সৈয়দ নূরুল ইসলাম আরও বলেন, বাদির বর্ণনায় তিনি সেদিন বায়তুল মোকাররম মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। নামাজ পড়তে গিয়ে তিনি আক্রমণের শিকার হন। সেখান থেকে তিনি পালাবার চেষ্টা করেন। তখন তার ওপর ইটপাটকেল ছোড়া হয়, লাঠিসোটা দিয়ে তাকে আঘাত করা হয় এবং তার সঙ্গে যারা ছিলেন সকলকেই আঘাত করা হয়। 

ডিসি জানান, মামলার এজাহারে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন বাদি। আহতরা এতোদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তারা এখন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে আগ্রহ প্রকাশ করেন মামলার জন্য। ভুক্তভোগী তার আইনি অধিকারের জায়গা থেকে মামলাটি দিয়েছেন, সে অনুযায়ী পুলিশ মামলাটি নিয়েছেন বলেও জানান।

ডিসি বলেন, মামলায় পেনাল কোড ও বিস্ফোরক আইনের কয়েকটি ধারায় ১৭ জন আসামি আছে, আমরা এখন তদন্ত করে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব।

সেদিন মোদিবিরোধীদের সঙ্গে সরকার সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল, তাই মামলার বাদির কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না জানতে চাইলে ডিসি নূরুল বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যোগ দিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে সেদিন ঢাকায় উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি সরকার সমর্থকরা সমর্থন করবেন— এটাই স্বাভাবিক। যারা এর বিরোধিতা করেছেন তারা সরকারবিরোধী সেটা আপনারা ধরে নিতেই পারেন। যিনি মামলা করেছেন তার পরিচয় তিনি দিয়েছেন একজন ব্যবসায়ী। তার অন্য কোনো পরিচয় আছে কি না সেটা আমরা পরে জানতে পারব। 

মানুনুল হক সেদিন বায়তুল মোকাররমে উপস্থিত ছিলেন কি না প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ নূরুল ইসলাম বলেন, সেটা আমরা নিশ্চিত নই, তদন্তের পর এর উত্তর পাওয়া যাবে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত যারা তারাই শুধু অপরাধী বিষয়টা তেমন নয়, অনেকে আড়ালে থেকেও বড় অপরাধের নেতৃত্ব দিতে পারে। আমরা সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই তদন্ত করব।

২৬ মার্চ জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় হেফাজতে ইসলাম ও সমমনা ইসলামী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বায়তুল মোকাররমের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সেদিন চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানাসহ সরকারি বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। সেখানে পুলিশের গুলিতে মারা যায় চারজন। একই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। সেখানে রেল স্টেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ডাক বাংলোয় আগুন ধরিয়ে দেয়। সেদিন একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। সংঘর্ষ হয় পরের দিনও। ২৮ মার্চ হরতাল দেয় হেফাজতে ইসলাম। সেদিন আবারো ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ কয়েকটি জেলায় সংঘর্ষ হয়। তিনদিনের সংঘর্ষে ১৬ জন মারা যায়। তাণ্ডবের ঘটনায় কয়েকটি মামলা হলেও সেখানে হেফাজতে ইসলামের কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি।

এদিকে আগামী ২৭ মে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এজাহার পৌঁছালে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধীমান চন্দ্র মন্ডল এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখা থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আমারসংবাদ/জেআই