Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪,

শুধু নামেই লকডাউন!

এপ্রিল ৭, ২০২১, ০৭:৫০ পিএম


শুধু নামেই লকডাউন!
  • রিকশায় পাশাপাশি এক সিটের আসনে ২-৩ জনও বসছে
  • জটলাবেঁধে পিকআপ ভ্যান ও সিএনজিতে ঠাসাঠাসি করে যাতায়াত
  • ঢাকার অলিগলিতে কিংবা পাড়া-মহল্লায় আড্ডা দেয়া হয়
  • গুলিস্তানে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
  • ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ
  • মিরপুরে মানববন্ধন, মগবাজারে রাইড শেয়ারিং দাবিতে বিক্ষোভ

লকডাউন যেন শুধু নামে! কেউ মানছে না স্বাস্থ্যবিধি। চলছে বাস, নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার। রিকশায় পাশাপাশি দুই সিটের আসনে তিনজনও বসছেন। মোটরসাইকেলেও অতিরিক্ত লোক। সিএনজিতে ঠাসাঠাসি করে চলছে অনেকে। জটলাবেঁধে পিকআপ ভ্যানে করেও মানুষ দূর-দূরান্তে চলাফেরা করছেন। হাটবাজারে একদমই নেই শারীরিক দূরত্ব। খোলা আছে খাবারের দোকান। অনেককে দল বেঁধেও হোটেলে খেতে দেখা গেছে। ঢাকার অলিগলিতে কিংবা পাড়া-মহল্লায় খোলা আছে দোকানপাট।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় লকডাউনের আগেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৮ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ১১ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু কেউ তা মানছেন না। কেউ জীবিকার তাকিদে আবার কেউবা উচ্ছ্বাসে সবকিছু ভঙ্গ করছেন। ঢাকার বাসিন্দারা পরিবার নিয়ে রিকশা কিংবা প্রাইভেটকারে ফাঁকা রাস্তায় ঘুরছেন আবার জীবিকা নিশ্চিতের জন্য রাজধানীসহ সারা দেশের ব্যবসায়ীরা সমাবেশ বিক্ষোভ ও অবরোধ করে যাচ্ছেন। গতকালও রাজধানীর গুলিস্তানে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রাইড শেয়ারিং চালুর দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে ঢাকায়। মিরপুরে পুলিশি বাধায় ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন পণ্ড হয়ে যাওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।

এছাড়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ হয়েছে তৃতীয় দিনের মতো। লকডাউনের অনিয়ম জানতে চাইলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক আশেক মাহমুদ বলেন, মানুষ এভাবে বেশিদিন চলতে পারবে না। একটা কথা মনে রাখতে হবে প্রয়োজন কোনো আইন মানে না। মানুষের পেটে যখন খাবার থাকবে না, মানুষ তখন বন্দুকের গুলিকেও ভয় করবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন বলেন, পেটের ক্ষুধার যন্ত্রণা নিয়ম-নিষেধ মানতে চায় না। মানুষকে খাবার নিশ্চিত করা গেলে কেউ রাস্তায় নামবে না। কিংবা সরকারের কঠোরতা থাকলে সবাই নিয়ম মানতে বাধ্য হবে। অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বলেন, লড়াই করেই, সংগ্রাম করেই প্রতিদিন বাঁচতে হয় দেশের নব্বই শতাংশ মানুষের। সরকার সুরক্ষিত থাকতে চাইছে, জনগণ চাইছে কাজ করে দুটো ডাল-ভাত খেতে। এখন এটিই বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক অভিভাবক গোলাম আলী আজমল বলেন, আর কিছুদিন পর স্কুল খোলার দাবিতে অভিভাবকরাও রাস্তায় নামবে। সেই কাতারে আমাকে পাওয়া যাবে সবার আগে। আজহার উদ্দিন শিমুল বলেন, সিটিতে বাসের মতো এভাবে ধীরে ধীরে সব স্বাভাবিক করতে হবে। লকডাউন মানেই গরিব মানুষের রিজিক নষ্ট করা। আমরা লকডাউন চাই না। তবে সবাই যাতে নিজ দায়িত্বে স্বাস্থ্যবিধি মানে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দূরপাল্লার বাসচালক কামরুল আরেফিন বলেন, জনসাধারণের যাতায়াতে দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশের সব দূরপাল্লার গণপরিবহন চলাচল যথারীতি চালুর সিদ্ধান্ত দরকার । জানতে চাইলে এক গণমাধ্যমকর্মী নাজমুস সাকিব বলেন, মোটরসাইকেল কিংবা বাসে পাশাপাশি বসে চলাফেরা করলে করোনা হতে পারে কিন্তু রিকশায় সিএনজিতে পাশাপাশি বসে চলাফেরা করলে কী করোনা হবে না। আমরাতো দেখছি রিকশায় সিএনজিতে মানুষ পাশাপাশি বসে। এতে কী করোনা হবে না?

গুলিস্তানে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া : গুলিস্তান ফুলবাড়িয়ায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফুলবাড়িয়া বিআরটিসি বাস কাউন্টারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খুলে দেয়ার দাবিতে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২-এর সামনে মানববন্ধন করে ঢাকা রেডিমেড গার্মেন্ট ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি। মানববন্ধন শেষে তারা মিছিল নিয়ে বিআরটিসি কাউন্টারের সামনের সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ঢাকা রেডিমেড গার্মেন্ট ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সদস্য এমদাদ হোসেন বলেন, ‘সরকার লকডাউন ঘোষণা করলেও ঢাকার জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিক। সড়কে গণপরিবহন চলছে। কাঁচাবাজার খোলা। বইমেলাও চলছে। অফিস আদালতে দাপ্তরিক কাজও চলছে। অযথা শুধু মার্কেটগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। তাই তারা মার্কেট খুলে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।’ ঢাকা রেডিমেড গার্মেন্ট ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান সাংবাদিকদের জানান, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের মার্কেট খুলে দেয়ার দাবিতে আজকের এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছিল। তখন তাদের একটি পক্ষের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।’

মিরপুরে পুলিশি বাধায় ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন পণ্ড : স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলার দাবি নিয়ে মিরপুরে ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন করতে চাইলে পুলিশের বাধায় তা পণ্ড হয়ে যায়। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর শাহ আলি প্লাজার সামনে এ ঘটনা ঘটে। শাহ আলি প্লাজার ম্যানেজার মো. আবু বক্কর সিদ্দিক সাংবাদিকদের জানান, গতবছর লকডাউনে ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এখনো তারা সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। সরকার এ বছর সাত দিনের লকডাউন দিয়েছে। কিন্তু লকডাউনে সকাল থেকে গাড়ি চলছে, মেলা হচ্ছে তাহলে আমাদের মার্কেট কেন বন্ধ থাকবে। অন্যান্য সেক্টরের সঙ্গে তালমিলিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মার্কেট খুলতে দেয়া হোক। যদি এবছরও রমজানের আগে মার্কেট খুলতে না পারি তাহলে বউ-বাচ্চা নিয়ে আমাদের রাস্তায় নামা অথবা না খেয়ে মরা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

কাফরুল থানার পিআই মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা মার্কেট খোলার জন্য মানববন্ধন করতে শাহ আলি প্লাজার পূর্ব পাশের রাস্তায় অবস্থান নেন। সরকারি নির্দেশনায় সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন করার নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমরা তাদের ব্যানার কেড়ে নিয়ে সরিয়ে দিতে বাধ্য হই।

রাইড শেয়ারিং চালুর দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ : রাইড শেয়ারিং সার্ভিস বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ঢাকায় বিক্ষোভ করেছেন চালকরা। গতকাল তারা রাজধানীর মগবাজার চৌরাস্তায় ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা বন্ধ করে দেন। এতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মগবাজার চৌরাস্তা এলাকায় কয়েকশ রাইডার তাদের মোটরসাইকেল রাস্তায় রেখে বিক্ষোভ করেন। তারা রাইড শেয়ারিং চালুর দাবি জানান। চালকরা জানান, চাকরি না থাকায় সংসার চালাতে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং করেন। সরকারের নির্দেশনায় গণপরিবহন চললেও মোটরসাইকেল বন্ধ করে তাদের পেটে লাথি মারা হয়েছে। মোটরসাইকেলচালক হাফিজুর রহমান জানান, রাস্তায় দাঁড়ালেই আমাদের বিনা অপরাধে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে পুলিশ। তার ওপর রাইডশেয়ারিং বন্ধের ঘোষণা। আমরা চলবো কীভাবে। চাকরি হারিয়ে আমরা রাইড শেয়ারিংয়ের ওপর নির্ভর করেই পেট চালাই। অপর এক মোটরসাইকেলচালক জানান, সব যানবাহন চলছে। বিআরটিসির মতো গাড়িতে দ্বিগুণ যাত্রী পরিবহন করছে। সেখানে যদি করোনা না ছড়ায় আমরা একজন যাত্রী নিয়ে কীভাবে করোনা ছড়াই? এসব অত্যাচার আমরা মেনে নিতে চাই না। তাই আজ রাস্তায় নামলাম।

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ : স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো সাভারে মানববন্ধনসহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় ব্যসায়ীরা। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, সাভার শিল্পাঞ্চলের সকল পোশাক কারখানা চালু রয়েছে। ফলে এ অঞ্চলে লকডাউনের তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। প্রায় সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে দাবি করে ব্যবসায়ীরা অতিদ্রুত সাভারের বিপণীবিতানসহ সকল মার্কেটের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেয়ার দাবি জানান। ব্যবসায়ীরা বলেন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা হলে তাদের লাখ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি অপারেশন) আল-আমীন বলেন, ব্যবসায়ীদের সড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভের খবরে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের সরিয়ে দেই। পরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।

আমারসংবাদ/জেআই