Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

ভয়ানক পরিস্থিতি হতে পারে

রফিকুল ইসলাম

এপ্রিল ৮, ২০২১, ০৮:৪৫ পিএম


ভয়ানক পরিস্থিতি হতে পারে
  • নিজ উদ্যোগে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে -ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র
  • উদাসীনতায় করোনার সংক্রমণ বাড়ছে -অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
  • সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক কাজ করতে হবে -ডা. মোশতাক হোসেন, সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আইইডিসিআর

লকডাউনে লেজেগোবরে অবস্থা। খুলে গেছে গণপরিবহন, দোকানপাট ও বিপণিবিতান। সীমিত আকারে বলা হলেও তা মানছে কেউই। করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের দেয়া বিধিনিষেধ পালন হচ্ছে না কোথাও। এমন অবস্থায় প্রতিদিন রেকর্ড ছাড়ছে সংক্রমণের সংখ্যা। থেমে নেই মৃত্যুর মিছিল। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। ভেস্তে গেছে লকডাউনের সিদ্ধান্ত। ফলে ভয়ানক পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার।

এ অবস্থায় সরকারের সকল দপ্তরে সমন্বয়হীনতার অভাব দেখছেন দেশের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা। তারা বলছেন, রাস্তায় নামা অধিকাংশ মানুষ মানছে না সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি। নিশ্চিত হচ্ছে না সকল আক্রান্ত মানুষের প্রথমিক চিকিৎসাসেবা। নেই পর্যাপ্ত হাসপাতাল। এমন অবস্থায় দায়িত্বশীল সকলকেই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক কাজ করতে হবে। দুই সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী থেকে নিয়ন্ত্রণে না এলে পরিস্থিতি ভয়ানক হতে পারে বলে দাবি তাদের। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলছেন, যেভাবে প্রতিদিন করোনা বৃদ্ধি পাচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে দেশে কোনো হাসপাতালেই রোগী রাখার জায়গা থাকবে না। এজন্য করোনা বৃদ্ধি ঠেকাতে দলমত নির্বিশেষে সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে এখনই।

তথ্য মতে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণ করছে ৭৪ জন। নতুন সংক্রমিত হয়েছে ছয় হাজার ৮৫৪ জন। গত বছর ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনা আঘাতের পর এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৫২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গেলো মাসের ২৯ তারিখ শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়িয়ে যায়। প্রতিদিন মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। এমন অবস্থায় ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সাতদিনের বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্পকারখানা, ব্যাংক, বিমা ও জরুরি সেবা চালু রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। বিভিন্ন অফিস খোলা থাকায় রাস্তায় ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। আন্দোলনে নামে দোকানপাট ও গণপরিবহনের শ্রমিকরা। ঢাকাসহ অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার। আজ শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দোকানপাট ও বিপণিবিতান খোলা রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন না করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে সরকার। এদিকে প্রতিদিন করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ফের কঠোর অবস্থানের কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে দেখা দিয়েছে। সরকারও সেই ধাক্কা দেখতে পাচ্ছে। মানুষকে বাঁচানোর জন্য সরকার প্রাথমিক কিছু ব্যবস্থা নিলেও ভবিষ্যতে হয়তো আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সরকার সেটা নেবে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। অন্যরাও যেনো সুরক্ষিত থাকে, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। তিনি আরও বলেন, আমি দেশবাসী সবাইকে বলবো, প্রত্যেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি যাতে মেনে চলে, সেই ব্যবস্থা নেবেন। মানুষের জীবন-জীবিকা চালাতে হবে। মানুষকে আমরা কষ্ট দিতে পারি না। কিন্তু সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা একান্তভাবে অপরিহার্য। সে জন্য সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন। তবে সরকার প্রধানের এমন ঘোষণার পরও সাধারণ মানুষ স্বাস্থাবিধি মানছে না। কর্মের দোহাই দিয়ে রাস্তায় নামছে তারা। এদের অধিকাংশ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানছে না।

এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, যেভাবে প্রতিদিন করোনা বৃদ্ধি পাচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে দেশে কোনো হাসপাতালেই রোগী রাখার জায়গা থাকবে না। এজন্য করোনা বৃদ্ধি ঠেকাতে দলমত নির্বিশেষে সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে এখনই। গতকাল সকালে বারিধারার নিজ বাসভবন থেকে অনলাইন জুম অ্যাপের মাধ্যমে অংশ নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের নতুন ১০টি আইসিইউ বেড উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, প্রতিদিন করোনা সংক্রমণের রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আমরা কত মানুষকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিতে পারছি। কতজন মানুষকে আইসোলেশন করে রাখতে পাচ্ছি। কতজন মানুষকে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারছি। এগুলো আগে বিবেচনায় নিতে হবে। করোনা সংক্রমণের কারণ চিহ্নিত করতে হবে। আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ফিল্ড হাসপাতাল দরকার। আক্রান্ত কেউ যেনো গুরুতর অবস্থায় না যায়। কিন্তু আমাদের কতটা ফিল্ড হাসপাতাল রয়েছে। আমাদের হাসপাতালগুলোতে যেভাবে গাদাগাদি করে করোনা টেস্ট চলছে। অথচ খেয়াল রাখছি না হাসপালগুলোতে করোনা সংক্রমণের উৎস হয়ে যাচ্ছি কী না। তিনি আরও বলেন, এসব বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখেই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক আমাদের কাজ করতে হবে। যদি কোনো কারণে সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারি, তাহলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হতে পারে। এজন্য দায়িত্বশীলদের আরও দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করতে হবে। ডা. মোস্তাক আহমেদ বলেন, বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ রাস্তায় নেমে আসছে। সবাই কর্মের জন্যই বেড় হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও সরকারে নির্দেশনা আমরা দুই সপ্তাহ মানতে পারলেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে দাবি করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া আমার সংবাদকে বলেন, করোনার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করছেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ সরকারের ওই সকল বিধিনিষেধ মানছে না। প্রয়োজন ছাড়াও কেউ কেউ রাস্তায় নেমে আসছে। তাদের মাঝে সামাজিক দূরত্ব নেই, স্বাস্থ্যবিধি নেই, মাস্ক নেই। এমন উদাসীনতার কারণে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে সকলকেই আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। নইলে যেভাবে করোনার সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে আরও ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে করোনার টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু হয়েছে। টিকা নিলে মৃত্যুর ঝুঁকি কম থাকে। তারপরও যদি কেউ সচেতন না হয়, তাহলে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থেকে যাবে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, করোনা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। মূলত সবাই পেটের দায়ে কাজের সন্ধানে বেরিয়েছে। তাই সাধারণ ও অসহায় মানুষের কথা চিন্তা করে সরকারকে সামগ্রিকভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। নইলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। তিনি আরও বলেন, আমরা যারা সাধারণ মানুষ রয়েছি, যাদের বাইরে তেমন কোনো প্রয়োজন নেই, তাদের আরও সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। নইলে আমরা করোনা থেকে কেউ রক্ষা পাবো না। সকলের দায়িত্বশীল হতে হবে।

আমারসংবাদ/জেআই