Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কাবু দেশ

মাহমুদুল হাসান

এপ্রিল ৯, ২০২১, ০৮:০৫ পিএম


করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কাবু দেশ
  • উপেক্ষিত প্রধানমন্ত্রীর ১৮ নির্দেশনা
  • সপ্তাহে শনাক্ত বেড়েছে প্রায় দুই হাজার
  • গতকালও প্রায় সাড়ে সাত হাজার শনাক্ত

করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে কাবু দেশ। প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে এবার সংক্রমণ তীব্র। নমুনা সংগ্রহ, শনাক্ত ও মৃত্যু ভেঙেছে অতীতের সব রেকর্ড। চলতি বছরের মার্চে আঘাত হানে দ্বিতীয় ঢেউ। এক সপ্তাহের সরকারি তথ্যে দেখা গেছে, ৩ এপ্রিল থেকে গতকাল পর্যন্ত করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দুই হাজার। মৃত্যুও নেহায়েত কম নয়। সপ্তাহে বেড়েছে ২২ জনের মৃত্যু! গত ৩ এপ্রিল দেশে সাড়ে পাঁচ সহস্রাধিক রোগী শনাক্ত হলেও ৭ এপ্রিল সাড়ে সাত হাজারের ঘর ছাড়িয়ে গেছে। একই সপ্তাহে ৫২ জনের মৃত্যুর সংখ্যা এখন ৭৪ জনে ঠেকেছে।

সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৯ মার্চ বেশ কিছু বিধি-নিষেধসহ ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। এরপর গত সোমবার থেকে চলছে ঢিলেঢালা এক সপ্তাহের লকডাউন। চলমান লকডাউন সংক্রমণ ঠেকাতে কোনো কাজে আসছে না। লকডাউন সত্ত্বেও শনাক্ত রোগী ও মৃত্যু বাড়ছে। ফলে পরামর্শ এসেছে কঠোর লকডাউন জারি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ১৮ দফা নির্দেশনা কার্যকরের।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকলেও জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে এখনো উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল সাত হাজার ৪৬২ জনের নমুনায় করোনার উপস্থিতি মিলেছে। এ সময় মারা গেছে ৬৩ জন। তার আগের দিন ছয় হাজার ৮৫৪ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়। মৃত্যু হয় ৭৪ জনের। ৭ এপ্রিল সাত হাজার ৬২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ওইদিন মৃত্যু হয় ৬৩ জনের। ৬ এপ্রিল সাত হাজার ২১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। সেদিন ৬৬ জনের মৃত্যু হয় করোনায়। তার আগের দিন সাত হাজার ৭৫ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হলেও সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন ৫২ জনের মৃত্যু হয়। ৪ এপ্রিল সাত হাজার ৮৭ জন রোগী শনাক্তের দিনে ৫৩ জনের প্রাণহানি ঘটে। সর্বশেষ ৩ এপ্রিল সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার ৬৮৩ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হলেও মৃত্যু হয় ৫৮ জনের। এক সপ্তাহে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে এক হাজার ৯৪৩ জন। মৃত্যুও বেড়েছে ২২ জন। এদিকে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি বলছে, দুই সপ্তাহ পূর্ণ লকডাউন ছাড়া করোনার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোয় পূর্ণ লকডাউন দেয়ার সুপারিশ করেছে। লকডাউনের দুই সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগে সংক্রমণের হার বিবেচনা করে আবার নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গত বুধবার রাতে কমিটির ৩০তম সভায় সুপারিশকৃত পরামর্শগুলো গতকাল জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধিতে জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে ১৮টি নির্দেশনা জারি হয়েছিল, সেগুলো সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না। তাই বিধি-নিষেধ আরও শক্তভাবে অনুসরণ করা দরকার। যেহেতু হাসপাতালের রোগী ভর্তির বাড়তি চাপ বাড়ছে, তাই হাসপাতালগুলোর শয্যা সংখ্যা, আইসিইউ সুবিধা, অক্সিজেন সরবরাহসহ অন্যান্য সক্ষমতা দ্রুত বাড়ানো দরকার। বিদেশে অভিবাসী কর্মজীবী মানুষ ছাড়া অন্যদের পরীক্ষার জন্য বেসরকারি পরীক্ষাগারে পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন। এতে রোগীদের পরীক্ষা ও রিপোর্ট দ্রুত প্রদান করে আইসোলেশন নিশ্চিত করা যাবে। যা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়াও বাংলাদেশে টিকা কর্মসূচি সফল করতে টিকা সরবরাহ নিশ্চিতে বেসরকারিভাবে আমদানির ওপর জোর দেয়ার সুপারিশ করা হয়।

দেশের সর্বশেষ অবস্থা : করোনায় গতকাল আরও ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে আরও সাত হাজার ৪৬২ জনের নমুনায়। এ নিয়ে দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৭৩ হাজার ৫৯৪ জনে। মৃত্যুও বেড়ে ৯ হাজার ৫৮৪ জনে পৌঁছেছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে করোনা ভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সারা দেশে ২৪৩টি সরকারি বেসরকারি আরটিপিসিআর, জিন এক্সপার্ট ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাবে গতকাল ৩১ হাজার ৬৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৪৯ লাখ ৪৭ হাজার ৪১২টি নমুনা। তার মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩৭ লাখ পাঁচ হাজার ২৩৪টি আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আরও ১২ লাখ ৪২ হাজার ১৭৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নতুন করে আরও সাত হাজার ৪৬২ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ছয় লাখ ৭৩ হাজার ৫৯৪ জনে দাঁড়িয়েছে। তারমধ্যে গতকাল শুক্রবার সুস্থ হয়েছে তিন হাজার ৫১১ জন। এতে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা বেড়ে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার ৫৪১ জনে ঠেকেছে। এ ছাড়াও গতকাল করোনায় মৃত ৬৩ জন সহ এখ নপর্যন্ত করোনায় প্রাণহানি ঘটেছে ৯ হাজার ৫৮৪ জনে। গতকাল শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪২ শতাংশ।

গত একদিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৪৩ জন পুরুষ আর নারী ২০ জন। তাদের সবার মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। মৃতদের মধ্যে ৩৬ জনের বয়স ছিলো ৬০ বছরের বেশি, ১৬ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, চারজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, পাঁচজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর এবং দুইজনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিলো। ৬২ মৃত্যুর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৪২ জন, চট্টগ্রামের ১০ জন, রাজশাহীর দুইজন, খুলনার তিনজন, বরিশালের চারজন, সিলেটের একজন এবং একজন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। করোনা ভাইরাসে দেশে মোট মৃত ৯ হাজার ৫৮৪ জনের মধ্যে সাত হাজার ১৭৩ জন পুরুষ ও দুই হাজার ৪১১ জন নারী। এদের মধ্যে পাঁচ হাজার ৩৮৫ জনের বয়স ছিলো ৬০ বছরের বেশি। দুই হাজার ৩৫৬ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, এক হাজার ৬৯ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৪৭৮ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১৮৭ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ৭০ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ৩৯ জনের বয়স ছিলো ১০ বছরের কম। মোট মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচ হাজার ৫২৪ জন ঢাকা বিভাগের, এক হাজার ৭১৯ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৫২২ জন রাজশাহী বিভাগের, ৬০৭ জন খুলনা বিভাগের, ২৮৮ জন বরিশাল বিভাগের, ৩৩৫ জন সিলেট বিভাগের, ৩৮১ জন রংপুর বিভাগের এবং ২০৮ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

আমারসংবাদ/জেআই