Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

ক্ষোভ ও হতাশার লকডাউন

এপ্রিল ১১, ২০২১, ০৭:৪৫ পিএম


ক্ষোভ ও হতাশার লকডাউন
  • মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তদের জীবনব্যবস্থা নিয়ে হাহাকার
  • গত বছর অনেকের সঞ্চয় থাকলেও এ বছর নেই ব্যবসায় ঋণের বোঝা
  • আজ ও আগামীকাল চলমান নিষেধাজ্ঞা, ১৪ এপ্রিল লকডাউন
  • এক মাসের বাড়ি ভাড়া মওকুফের দাবি

পালন হয়েছে ঢিলেঢালা নামমাত্র লকডাউন! আজ ও আগামীকালও থাকবে চলমান নিষেধাজ্ঞা, ১৪ এপ্রিল থেকে পূর্ণ লকডাউন। তবে এর মধ্যে খোলা থাকবে শিল্প-কারখানা, বন্ধ থাকবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। শিল্প-কারখানা খোলার ঘোষণায় আক্রান্ত হওয়ার ভয় পাচ্ছেন শ্রমিকরা, এখনো কর্মস্থলে খাবার ও শৌচাগার ব্যবহারে সুরক্ষা নিশ্চিত নেই বলে দাবি শ্রমিকদের।

এদিকে অভাবের ভয়ে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দিয়েও মানুষকে ঢাকা ছাড়া ঠেকানো যাচ্ছে না। বাড়িফেরত মানুষরা বলছেন, লকডাউনে ঢাকায় থাকার মতো তাদের সামর্থ্য নেই। বাড়ি ভাড়াসহ নানান খরচ জোগাড় করা সম্ভব হবে না। ঢাকার এক মাসের খরচ দিয়ে গ্রামে অনায়াসে পাঁচ-ছয় মাস চলে যাবে। ফের লকডাউনের খবরে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তদের জীবনব্যবস্থা নিয়ে হাহাকার শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে এক মাসের বাড়ি ভাড়া মওকুফের দাবি উঠেছে। অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বেঁচে থাকা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গত বছর অনেকের হাতে কিছু সঞ্চয় থাকলেও এ বছর তা নেই। ব্যবসা-বাণিজ্যতে ঋণের বোঝা। দেশের মানুষের বড় অংশেরই সাহায্যের প্রয়োজন বলেও দাবি উঠেছে। প্রায় চার কোটি দরিদ্র মানুষের মধ্যে এক কোটি ৭০ লাখ অতি দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার প্রস্তুতির বিষয়ে নেই কোনো স্পষ্ট বক্তব্য, এ নিয়েও অনেকে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করছেন।

মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তদের জীবনব্যবস্থা নিয়ে হাহাকার : লকডাউনের মধ্যে সাধারণ শ্রমজীবীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। দেশব্যাপী কর্মক্ষেত্র স্বাভাবিক করতে শ্রমজীবীদের পক্ষ থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ করা হয়। তাদের চাপের মুখে সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্দিষ্ট সময় কিছু কর্মক্ষেত্র খোলা রাখার নির্দেশ দেয়। এসব মানুষের মনে কিছুটা আশার আলো সঞ্চারিত হয়েছিল। তবে, আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে আবারো দেশব্যাপী এক সপ্তাহ সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। সর্বাত্মক লকডাউনে জরুরি সেবা ছাড়া অন্য সবকিছু বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জীবিকা নিয়ে ফের শঙ্কায় পড়েছে বিভিন্ন শ্রেণির শ্রমজীবী মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষজন। অর্থনীতি গবেষকরা সরকারকে পরামর্শ দিয়ে বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কর্মহীন মানুষের জন্য দেশব্যাপী খাদ্য কর্মসূচি বাড়ানোসহ পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়ার।

অভাবের ভয়ে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ, যাচ্ছে না ঠেকানো : করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউনের’ খবরে  আবারো অভাবের ভয়ে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে অনেকে। কোনোভাবেই যাচ্ছে না ঠেকানো। দূরপাল্লার বাস চলাচল না করায় হেঁটে, পিকআপে, মোটরসাইকেল বা বিভিন্ন ছোট বাহনে করে যেতে হচ্ছে তাদের। আর এ জন্য গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড ও যাত্রাবাড়ী, উত্তরার আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী এলাকায় ভাড়ায় প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাসগুলো বিভিন্ন জেলায় অতিরিক্ত ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছে। সাইনবোর্ড থেকে চট্টগ্রাম ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, সিলেট, ভৈরব-কিশোরগঞ্জ যাত্রী পরিবহন করছে ওইসব গাড়ি। যেখানে আন্তঃজেলা বাসগুলোর ভাড়া ছিলো ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, সেখানে এসব গাড়ি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় জনপ্রতি ভাড়া আদায় করছে।

রাজধানীর ভেতরে পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা থাকার কারণে যানবাহনগুলো সরকারি আদেশ মেনে চললেও ঢাকার বাইরের চিত্র ভিন্ন। সরকারের নির্দেশে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর পরও গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। মহানগরে গণপরিবহন চলাচল করার কথা থাকলেও কিছু চালক বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় অধিক ভাড়ায় যাত্রী নিয়ে যাচ্ছেন। চট্টগ্রামগামী যাত্রী আসলাম হোসেন জানিয়েছেন, তিনি ঢাকার একটি ছোট দোকানে কাজ করেন। লকডাউনের কথা শুনে তিনি আগেই গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। কারণ ওই সময় বেচা-বিক্রি হবে না। দোকান বন্ধ রাখতে হবে। আবার ঢাকায় থেকে খরচও চালাতে পারবেন না। কিন্তু যেখানে ৫০০ টাকায় বাসে যেতেন, সেখানে মাইক্রোবাসে ভাড়া নিচ্ছে ৯০০ টাকা। এ অবস্থায় তিনি অতিরিক্ত ভাড়া গুনেই ঢাকা ছাড়ছেন।

আজ ও আগামীকাল চলমান নিষেধাজ্ঞা, ১৪ এপ্রিল থেকে লকডাউন : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, ১২ ও ১৩ এপ্রিল চলমান সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হবে সর্বাত্মক লকডাউন। গতকাল রোববার তিনি তার সরকারি বাসভবনে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে শেখ হাসিনা সরকার সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার লকডাউন ঘোষণা করেছে। ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউন, এ সময় আমাদের বৃহত্তর স্বার্থে জরুরি কাজ ছাড়া সকলকে ঘরে অবস্থান করতে হবে। সরকার সময়মতো প্রয়োজনীয় নির্দেশনাসহ প্রজ্ঞাপন জারি করবে বলেও জানান তিনি। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, সোমবার এবং মঙ্গলবার যথারীতি শুধুমাত্র দেশের সিটি কর্পোরেশন এলাকায় শর্তসাপেক্ষে সমন্বিত ভাড়ায় অর্ধেক আসন খালি রেখে গণপরিবহন চলবে। এছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেশের মানুষকে এই সংকটকালে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বাস্থ্যবিধির প্রতি সামান্য অবহেলা আমাদের চিরচেনা জীবন থেকে ছিটকে দিতে পারে। অচেনা হয়ে যেতে পারে পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনের এই মায়াময় পৃথিবী। জীবনের পাশাপাশি জীবিকার চাকা সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রাখুন, ভরসা রাখুন স্রষ্টার প্রতি। সকলের প্রচেষ্টা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে নিশ্চয়ই এ মহামারি থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে আবারো পৃথিবী নিজ রূপে ফিরবে।

১৪ এপ্রিল থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ : ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে কঠোর লকডাউন শুরু হতে যাচ্ছে। এ জন্য ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এ মফিদুর রহমান। গতকাল গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি। এয়ার ভাইস মার্শাল এ মফিদুর রহমান বলেন, ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে কার্গো বিমান চলাচল করবে।

লকডাউনেও খোলা থাকবে শিল্প-কারখানা, আক্রান্তের ভয় শ্রমিকদের : ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে সম্পূর্ণ লকডাউন শুরু হলেও এ সময়ে শিল্প-কারখানা চলবে। গতকাল বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।সভায় যুক্ত ছিলেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালাম, নবনির্বাচিত সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ও বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে পোশাক খাতের বর্তমান ইস্যু নিয়ে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ ও ইএবির যৌথ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতসহ বস্ত্র খাতের অন্যান্য সহযোগী শিল্পসমূহকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানান এ খাতের শিল্প উদ্যোক্তারা। তারা বলেন, যেখানে ইউরোপ, আমেরিকা, ব্রাজিলের মতো রাষ্ট্রগুলো হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমাদের সমন্বয়ের অভাব নেই। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত রেখেছি। সেন্টার ফর বাংলাদেশ, ইউকে বার্কলি ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপ মতে, ৯৪ শতাংশ শ্রমিক বলেছেন, তারা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গাইডলাইন বিষয়ে সচেতন। ৯১.৪২ শতাংশ শ্রমিক বলেছেন, কারখানা থেকে তাদের কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। তাছাড়া শ্রমিকরা ছুটিতে গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা দিলে সংক্রমণ আরও ছড়াবে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার লকডাউনে শিল্প-কারখানা খোলা রাখার পক্ষে মত দেন তারা।

বিকেএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সরকার আগামী বুধবার থেকে সম্পূর্ণ লকডাউন করলেও ওই সময়ে শিল্প-কারখানা চলবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আমাদের নিশ্চিত করে বলেছেন, লকডাউনে শিল্প কারখানা ছাড়া সব বন্ধ থাকবে। ব্যাংক বন্ধ থাকলে আমদানি রপ্তানিতে সমস্যা হবে, এটি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে জানানো হলে তিনি পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আজ বা আগামীকাল এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।

ভাড়াটিয়াদের এক মাসের ভাড়া মওকুফের দাবি : লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ভাড়াটিয়াদের এক মাসের দোকান ভাড়া ও বাড়ি ভাড়া মওকুফে সরকার ও বাড়িওয়ালাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ভাড়াটিয়া পরিষদ। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানান সংগঠনের সভাপতি মো. বাহারানে সুলতান বাহার। বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার গত ৫ এপ্রিল থেকে সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করে। আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে সর্বাত্মক লকডাউনের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। কিন্তু লকডাউনের ফলে দেশের নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণী কর্ম হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে সে ভাবনা কেউ ভাবছে না। আমরা এই মানবিক সংকট থেকে উত্তরণে ক্ষতিগ্রস্তদের এক মাসের দোকান ভাড়া ও বাড়ি ভাড়া মওকুফে সরকার ও বাড়িওয়ালাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

চলমান পরিস্থিতি নিয়ে অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, সত্যিকার অর্থে ইমপ্ল্যামেন্ট করা কী যাবে নাকি ঢিলেঢালা নামমাত্র চলবে! ঢিলেঢালা লকডাউনে লোকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে সংক্রমণ আরও বাড়াতে পারে। এবার কিন্তু গত বছরের  অবস্থা নেই। গতবার সংক্রমণের হার কম ছিলো। কিন্তু এবার কোভিডের নতুন ভ্যারাইটিতে সংক্রমণ প্রবণতা অনেক বেশি। প্রায় চার কোটি দরিদ্র মানুষের (এর মধ্যে প্রায় এক কোটি ৭০ লক্ষ অতি দরিদ্র) মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার প্রস্তুতি থাকতে হবে। গতবার মানুষের হাতে সঞ্চয় ছিলো, এখন কিন্তু  স্বল্প আয়ের মানুষের হাতে সঞ্চয় কম। কাজেই সত্যিকারের লকডাউনে গেলে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের সাহায্য দরকার হবে। এত মানুষের দায়ভার নেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক সক্ষমতা আমাদের আছে কি? অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বাঁচিয়ে রাখার উপায় কি হবে? গত এক বছরে যারা ঋণ নিয়েছেন তারা ব্যবসা-বাণিজ্য এখন না করলে ফেরত দেবেন কি করে? আর এই ধরনের প্রতিষ্ঠান সমস্যায় পড়লে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের উপায় কি হবে তা ভাবতে হবে।

তিনি আরও বলেন, নিম্ন মধ্যবিত্ত, টানাটানিতে চলা লোকজন কারো কাছে হাত পাততে পারবেন না কিন্তু খাদ্য কষ্টে থাকবেন। এদেরও কিন্তু সরকারি সাহায্যের প্রয়োজন হবে। আবারো বলছি, গত বছর এই সংকটে মানুষ যতটা না পড়েছে, এবার তার চেয়ে বেশি হবে। কারণ অনেক মানুষের সঞ্চয় গত বছর কমে গেছে। বিশেষ করে অনেক উদ্যোক্তা তাদের ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখার জন্য সঞ্চয় থেকে অথবা পারিবারিকভাবে ঋণ করেছেন। এত বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্য খাদ্য কিংবা আয়ের নিরাপত্তা অথবা কর্মসংস্থানের নিরাপত্তার দেয়ার উপায় কী হবে! যে কদিনের লকডাউন দিলে সত্যিকার অর্থেই তা করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় কার্যকর হবে, ততদিন পর্যন্ত লকডাউন দেয়ার সক্ষমতা না থাকলে অল্পদিনের লকডাউন দিয়ে জীবনেরও তেমন লাভ হবে না, জীবিকাও হবে ক্ষতিগ্রস্ত। তখন করোনার সাথে সাথে অভাবে পড়েও মানুষের জীবনের ঝুঁকি বাড়তে পারে। এগুলো ভেবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

আমার মতে, সকল প্রকার সভা-সমাবেশ জনসমাগম বন্ধ করে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিত করতে হবে। সংক্রমণ প্রতিরোধমূলক মাস্ক সাবান ইত্যাদি ব্যাপকভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। এই সংক্রান্ত প্রচার-প্রচারণা জোরদার করতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় গ্রামপর্যায় পর্যন্ত সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। সর্বোপরি স্বাস্থ্যবিধি মানা কঠোরভাবে ইমপ্লিমেন্ট করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিতে হবে।

আমারসংবাদ/জেআই