Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বিচারক-আইনজীবীসহ আক্রান্ত শতাধিক

এপ্রিল ১১, ২০২১, ০৭:৪৫ পিএম


বিচারক-আইনজীবীসহ আক্রান্ত শতাধিক
  • বিচারাঙ্গনে করোনার থাবা
  • দ্বিতীয় ঢেউয়ে চারজনের মৃত্যু
  • সংক্রমণ বাড়ায় ৩৫ ভার্চুয়াল বেঞ্চ চেয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি
  • আক্রান্তদের অধিকাংশই নিজ বাসায় চিকিৎসাধীন
  • বারের পক্ষ থেকে চিকিৎসার সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে : বার সম্পাদক

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত দেশ। প্রতিনিয়তই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ঘটছে মৃত্যুর ঘটনাও। কড়াকড়ি আরোপ করেও সংক্রমণ কমানো যাচ্ছে না। সরকারি ও বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি করোনার প্রভাব পড়ছে আইনাঙ্গনেও। আইনজীবীদের অনেকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কেউবা উপসর্গ নিয়ে আছেন আইসোলেশনে। সংক্রমণ রোধে প্রথম দফা সাতদিনের লকডাউনে উচ্চ আদালতসহ অধঃস্তন আদালত বন্ধ রয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে খোলা রাখা হয়েছে হাইকোর্ট বিভাগের চারটি ভার্চুয়াল বেঞ্চ। শারীরিক উপস্থিতি ছাড়াই চলছে আদালত। তবুও আইনজীবী, বিচারক ও বিচার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাসহ অন্তুত ২০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী। আক্রান্ত হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতিও।

এদিকে দেশের সব আইনজীবীকে করোনা টিকার আওতায় আনতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে লিগ্যাল নোটিস পাঠিয়েছেন এক আইনজীবী। এমন অবস্থায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনও। এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের সময় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ভার্চুয়াল বেঞ্চের সংখ্যা ৩৫টি করার জন্য প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের কাছে আবেদন করেছে সাধারণ আইনজীবী পরিষদ। সোমবার থেকে পুনরায় নিয়মিত আদালত চালু করার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দস কাজল।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা জানান, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। সংক্রমণের হার প্রতিদিনই পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে এবং ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। গাউন বাদ দিয়ে সাদা শার্ট ও কামিজ পরতে বলা হয়েছে। সর্বশেষ  সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় নিয়মিত আদালতও বন্ধ করা হয়েছে। তবে যেসব আইনজীবী আক্রান্ত হয়েছেন তারা আগে থেকেই আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা আইনজীবীদের।

করোনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ও সুস্থ হয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সৈয়দ হায়দার আলী, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহজাবিন রাব্বানী দীপা, ব্যারিস্টার নাজমুল হাসান রাজু, নাজমা আফরীন সুমনা, খলিফা শামসুন নাহার বারী, তাহমিনা সুলতানা আল্পনা, অ্যাডভোকেট আজহার উল্লাহ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের, আইনজীবী সমিতির আরেক সাবেক সহ-সভাপতি মুহাম্মদ আসাদ উল্লাহ, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান, ব্যারিস্টার মাহিন এম রহমান ও তার স্ত্রী ব্যারিস্টার ফারজানা ছাত্তার, অ্যাডভোকেট সুমন বণিক, ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবীর পল্লব, অ্যাডভোকেট একলাস উদ্দিন ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট সোহেল রানা, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সুপ্রিম কোর্ট যুব আইনজীবী কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক দেওয়ান হুমায়ুন কবির রিপন, যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন শিকদার।  সমপ্রতি সুস্থ হয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি আব্দুল মতিন খসরু, অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মেহদী হাসান চৌধুরী, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ, প্রতিকার চাকমা, জান্নাতুল ফেরদৌস রুপা, আসাদুজ্জামান মনির, গিয়াস উদ্দিন আহম্মদ ও আব্দুল আজিজ মিয়া (মিন্টু), সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী ইলিয়াস-উর-রহমান, আবুল কালাম খান (দাউদ), মাহফুজুর রহমান ও ড. নুরুনাহার আক্তার।

আক্রান্ত বিচারক : ঢাকার বিশেষ জজ (জেলা ও দায়রা জজ) শেখ হাফিজুর রহমান আপিল বিভাগের বিচারপতি নুরুজ্জামান ননী। এ ছাড়া হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি বদরুজ্জামান করোনায় আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে সুস্থ আছেন। অধঃস্তন আদালতের অর্ধশতাধিক আইনজীবী ও অন্তত পাঁচজন বিচারক করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদিকে করোনার নতুন ঢেউয়ে মারা গেছেন ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার আব্দুল মান্নান, সুপ্রিম কোর্টের তিনজন আইনজীবী মমতাজ আলী ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার তানভীর পারভেজ ও অ্যাডভোকেট রশিদ আহমেদ।

সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান প্রধান বিচারপতির : সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। গত ৩১ মার্চ বিচারিক কার্যক্রমের শুরুতেই আপিল বিভাগের বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণেই দেশে ফের করোনার বিস্তার ঘটছে।

আইনজীবীদের টিকা দিতে স্বাস্থ্য সচিবকে লিগ্যাল নোটিস : বার কাউন্সিলের সব আইনজীবীকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে করোনার টিকার আওতায় আনতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজি) মহাপরিচালককে লিগ্যাল নোটিস পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলেও নোটিসে জানানো হয়। রেজিস্ট্রি ও ডাকযোগে গত ৩১ মার্চ আইনজীবী মো. আবু তালেব এ নোটিস পাঠান।

আক্রান্তের বিষয়ে কয়েকজন আইনজীবীর সাথে কথা হয় এর মধ্যে ব্যারিস্টার মাহিন এম রহমান ও তার স্ত্রী ব্যারিস্টার ফারজানা ছাত্তার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ব্যারিষ্টার মাহিন বলেন, আইডিসিআরে নমুনা দিয়েছিলাম। গত ৫ এপ্রিল আমার ও স্ত্রী ফারজানা ছাত্তারের করোনা টেস্টের ফল পজেটিভ এসেছে। আমরা বাসায় থেকেই আসগর আলী হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সরোয়ার-ই-আলমের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছি। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের যে সকল আইনজীবীরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বারের পক্ষ থেকে তাদের চিকিৎসার জন্য সার্বক্ষণিক  খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে এবং সংক্রমণ রোধে নানাবিধ পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। নিয়মিত আদালত খোলার বিষয়ে তিনি বলেন, আইনজীবীদের পেশা পরিচালনা ও বিচারপ্রার্থী মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য সোমবার থেকে সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সকল আদালত খোলার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করছি।’

আমারসংবাদ/জেআই