এপ্রিল ১২, ২০২১, ০৮:৪৫ পিএম
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় প্রথম দফার লকডাউন মানেনি মানুষ। বরং রাস্তার তীব্র যানজট লকডাউনকে রীতিমত তামাশায় পরিণত করেছিল। এরকম বাস্তবতায় করোনার ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে দ্বিতীয় দফায় আগামীকাল থেকে ফের আটদিনের জন্য সর্বাত্মক লকডাউনে যাচ্ছে সরকার। এ সংক্রান্তে গতকাল একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠপ্রশাসন সমন্বয় অধিশাখা থেকে লকডাউনের যে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে সেখানে বেশকিছু কড়াকড়িও আরোপ করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনের (ক)-তে সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। গণপরিবহনও বন্ধ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটসহ সকল বিমান চলাচল, নৌ-চলাচল, রেল চলাচলও বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে, প্রথম দফার লকডাউনে যেমন হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, দ্বিতীয় দফায়ও কি শেষ পর্যন্ত তেমনি হবে, নাকি সফল হবে।
ইতোমধ্যে এ লকডাউনের সাফল্য নিয়ে চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও নানারকম প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। যেমন, আগে থেকেই লকডাউন ঘোষণা দেয়ার ফলে গত দুদিনে ঢাকার বাইরে লোকজন ছুটে যাচ্ছেন দেশের ৬৪ জেলায়। উপচেপড়া ভিড়ও লক্ষ্য করা গেছে ঢাকা ত্যাগের বিভিন্ন পয়েন্টগুলোতে। যার ফলে সারা দেশে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলেও অনেকে মনে করছেন।
বিশেষ করে ঢাকা থেকে মানুষ যেভাবে গ্রামে যাচ্ছে, এতে সারা দেশেই সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এবারের লকডাউনেও শিল্প-কলকারখানাগুলো খোলা রাখার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে নিজস্ব পরিবহনে শিল্প-কলকারখানাগুলোর শ্রমিকদের আনা-নেয়া করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো শ্রমঘন শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠেনি। মিরপুরে যেমন গার্মেন্ট আছে, রামপুরায় গার্মেন্ট আছে, এই সমস্ত গার্মেন্টকর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে থাকেন। শিল্প-কারখানা যদি খোলা থাকে, বাজার যদি খোলা থাকে এবং পণ্য পরিবহন যদি খোলা থাকে, তাহলে ব্যাংক বন্ধ কিভাবে রাখা হবে— প্রশ্ন বিভিন্ন মহলের। এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে অস্পষ্টতা রয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকেই। এছাড়াও মানুষকে ঘরে রাখার চিন্তা থেকে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে সেটা কতটুকু সফল হবে— এ নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যার কারণ বাজার খোলা রাখার কথা বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খাবারের দোকান দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা রাখার কথাও বলা হয়েছে। ফলে শেষ পর্যন্ত এই লকডাউনও দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রথম দফার লকডাউনের মতো হয় কি-না এমন প্রশ্নই এখন অনেকের।
এ নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার আমার সংবাদকে বলেন, মানুষ চলে গেছে, ছড়িয়ে পড়েছে, আবার ফিরেও আসবে। যখন ছড়িয়েই পড়েছে তখন তারা ভাইরাসও সাথে নিয়েছে। আবার যে যেখানেই গেছে অনেকে ওখানেই সংক্রমিত হবে এবং পুনরায় ভাইরাস নিয়েই ফিরে আসবে। যেহেতু ব্যবসা-বাণিজ্য (কলকারখানা) খোলা থাকবে সেহেতু তাদের জন্যও যানবাহন চালু রাখতে হচ্ছে, গাদাগাদি করেই তাদের যানবাহনে উঠতে হবে। কর্মক্ষেত্রেও তারা সংক্রমিত হবে এবং অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়বে। কাজেই লকডাউন আসলে লকডাউনই হওয়া উচিত। তাছাড়া সরকারকে এ পর্যন্ত কোনো কিছুই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার আলামত আমরা দেখিনি। আর সবচেয়ে বড় কথা লকডাউন কোনো সমাধান নয়। কার্যত লকডাউন মানে কতগুলো বিধিনিষেধ।
তিনি বলেন, আমাদের কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। যার মাধ্যমে মানুষের আচরণ বদলাবে এবং এর মাধ্যমে মানুষ এলাকাভিত্তিক দায়িত্বও নেবে, তবেই এটা থেকে উত্তরণ ঘটবে। শুধু লকডাউন দিয়ে হবে না। কিছু কর্মসূচি হাতে নেবে, কিন্তু কি কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে সরকার এটা আমি নিশ্চিত নই। সরকার তো একলা চলো..., আর এক্ষেত্রে একলা চললে তো হবে না। এটা বিএনপিও চিনে না, আওয়ামী লীগও চিনে না, এটা নারীও চিনে না, পুরুষও চিনে না। এটা মানুষ চিনে। অতএব প্রত্যেক মানুষই ঝুঁকিতে আছে। আমরা যদি সকলের নিরাপত্তাই নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে কারো নিরাপত্তাই নিশ্চিত হবে না। সুতরাং আমাদের কর্মসূচি দরকার।
এদিকে আগে থেকেই ঘোষণা দেয়ায় স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই রাজধানীর ফুটপাতের দোকান ও শপিংমলে পড়েছে কেনাকাটার হিড়িক। মাস্ক পরলেও নেই সামাজিক দূরত্ব। সর্বাত্মক লকডাউনের আগেই কেনাকাটা সারতে সাধারণ মানুষের নানা অজুহাত। রাজধানীর মার্কেটগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই চলছে বেচাকেনা। দেখে বোঝার উপায় নেই করোনার সংক্রমণ রোধে সর্বাত্মক লকডাউনে যাওয়ার আগে চলছে কঠোর বিধিনিষেধ। মাস্ক পরার সংখ্যা বাড়লেও নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান কেউই মানছেন না। গাদাগাদির মধ্যেই শিশুদের নিয়ে অনেকে মার্কেটে আসছেন। বৈশাখ, রোজা আর ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে পসরা সাজালেও বিক্রি নিয়ে হতাশ দোকানদাররা। দোকানিরা বলছেন, এত টাকা পুঁজি দিয়ে মালামাল তুলে যদি বিক্রি না করতে পারি তাহলে আত্মহত্যার পথ ছাড়া আর কিছু দেখছি না। পরিবার চলবে কীভাবে। এত টাকা ঋণ করে যে মাল তুলছি, ঋণ পরিশোধ করবে কীভাবে? সর্বাত্মক লকডাউনের আগেই মার্কেটের এই হযবরল অবস্থায় বৃদ্ধি পাবে সংক্রমণ— এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরাও।
শুধু তাই নয়, একই অবস্থা সড়ক-মহাসড়কেও। গতকাল পর্যন্তও মহাসড়কেও দেখা গেছে যানবাহনের জট। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে হাঁটিকুমরুল মোড় পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে গতকাল। হাঁটিকুমরুল হাইওয়ে পুলিশ জানায়, সকাল থেকেই মহাসড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ দেখা দেয়। এতে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে হাঁটিকুমরুল মোড় পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হয়। এতে মহাসড়কের কড্ডা ও নলকা এলাকায় অনেকটা থেমে থেমে চলাচল করছে যানবাহন। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনে অতিরিক্ত যানবাহনের ফলে ধীরগতিতে চলাচল করতে হচ্ছে চালকদের। সরকার ঘোষিত আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন ঘোষণার ফলে অনেকে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছে, এজন্য মহাসড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কুমিল্লার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে শহীদনগর পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ফেরি ঘাটগুলোতেও বেড়েছে চাপ। বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম জিল্লুর রহমান জানান, ১৫টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। সকালের দিকে ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাক ও ছোট গাড়ির চাপ পড়েছিল। সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তিন শতাধিক যানবাহন পারাপার করা হয়। জরুরি পণ্যবাহী ট্রাকের সাথে সাথে ছোট গাড়িও পার করা হচ্ছে। মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়াঘাটেও ভোর থেকে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ফেরি, স্পিডবোট ও ট্রলারে করে যাত্রীরা পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন। ঘাট কর্তৃপক্ষ উভয়মুখী যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। ভোর থেকে নৌরুটে পদ্মা পারের জন্য ১৪টি ফেরি চলাচল করেছে। গন্তব্যে যাওয়ার হুড়োহুড়িতে বিপুল যানবাহনের সমাবেশে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন শিমুলিয়া ঘাটে পারাপারে আসা হাজারো যাত্রী। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পারের অপেক্ষায় ছিলো সাত শতাধিক যানবাহন। বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক প্রফুল্ল চৌহান জানান, ভোর থেকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ১৪টি ফেরি চলাচল করছে। শিমুলিয়া ঘাটে ছয় শতাধিক যাত্রীবাহী গাড়ি পারাপারের অপেক্ষায় আছে। ফেরিগুলো ঘাটে আসার সাথে সাথে যাত্রীরা গাদাগাদি করে অবস্থান করছে। যাত্রীদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে ফেরিতে গাড়ি বহন করতেও বেশি সময় লাগছে।
এদিকে মন্ত্রিপরিষদের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, টিকা গ্রহণ ও জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে বের হতে থাকবে কঠোর নির্দেশনা। অন্যান্য নিষেধাজ্ঞাসহ লকডাউন কার্যকরের পূর্বের অবস্থা যেমন তেমন, সর্বাত্মক লকডাউন কার্যকরের প্রথম দিন থেকেই ঘোষিত সেসব বিধিনিষেধ কার্যকর করতে ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। এছাড়া চালু থাকা শিল্প-কলকারখানায় নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনা তদারকিতেও ২৩ সদস্যের টিম গঠন করেছেন বলে জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। তিনি বলেন, লকডাউনে শিল্প-কারখানাগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকদের যাতায়াতের ব্যবস্থা না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া এর আগের লকডাউনে পণ্যবাহী গাড়িতে যাত্রী বহনের যে প্রবণতা ছিলো, এবারের সর্বাত্মক লকডাউন কার্যকরে তা বন্ধে কঠোর নজরদারির কথা বলেছেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, সর্বাত্মক লকডাউন চলাকালে পণ্যবাহী পরিবহন যাতে কোনোভাবেই যাত্রীবাহী পরিবহনে রূপ না নিতে পারে সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে। তিনি বলেন, ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণায় লঞ্চ ও ফেরিঘাটে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কেউ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্বের বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছে না। এ ধরনের মনোভাব করোনা সংক্রমণকে আরও অবনতির দিকে নিয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তিনি। এছাড়াও করোনাকালে গণপরিবহন চলাচলে শর্ত প্রতিপালনের ক্ষেত্রে অনেক মালিক শ্রমিক কথা রাখেনি, আবার কেউ রেখেছে। অনেকে সমন্বয়কৃত ভাড়া আদায় করেছে ঠিকই কিন্তু অর্ধেক আসন খালি রাখেনি বলেও বলেছেন তিনি।
লকডাউনে চলাচলে লাগবে পুলিশের ‘মুভমেন্ট পাস’ : এদিকে আগামীকাল জরুরিভিত্তিতে যাদের বাইরে যাওয়া প্রয়োজন, তাদের যাতায়াত নিশ্চিত করতে এবং মানুষের অনিয়ন্ত্রিত ও অপ্রয়োজনীয় চলাচল রোধ করতে ‘মুভমেন্ট পাস’-এর ব্যবস্থা করছে পুলিশ। এই মুভমেন্ট পাসধারী ব্যক্তিরা ঢাকার ভেতরে এবং বাইরে যেকোনো সড়কে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবেন। তবে সবাই এই পাস পাচ্ছেন না। শুধু জরুরি সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দেয়া হবে এ পাস। তারা এই পাস ব্যবহার করে নিজেদের কাজে বের হতে পারবেন।
বন্ধ থাকবে ব্যাংক : সরকারের দেয়া কঠোর বিধিনিষেধে সব ব্যাংক বন্ধ থাকবে। বিধিনিষেধ চলাকালীন ব্যাংক শাখার পাশাপাশি আর্থিক সেবা দেয়া ব্যাংকের সব উপশাখা, বুথ ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং সেবাও বন্ধ থাকবে। তবে খোলা থাকবে এটিএম, ইন্টারনেট ব্যাংকিংসহ অনলাইনের সব সেবা। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব সাইট সুপারভিশন থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
সব অফিস-গণপরিবহন বন্ধ, শিল্প-কারখানা খোলা : মন্ত্রিপরিষদের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সর্বাত্মক লকডাউনের আটদিন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে গণপরিবহন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তবে জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা খোলা থাকবে। খোলা থাকবে শিল্প-কারখানা। এ সময় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। খোলা স্থানে কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনা-বেচা করা যাবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টা।
লকডাউনে যেসব কারণে বাইরে যাওয়া যাবে : আদেশ অনুযায়ী, লকডাউন চলাকালীন বিনা কারণে বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে জরুরি প্রায়োজনের ভিত্তিতে বের হওয়া যাবে বলে ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো— প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকারের কাজ। এর বাইরে কেউ যদি করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে তার টিকা গ্রহণের তারিখ হলে সে ঘরের বাইরে যেতে পারবেন। তবে অবশ্যই প্রমাণস্বরূপ টিকাকার্ড সঙ্গে থাকতে হবে।
যতদিন ব্যাংক বন্ধ, ততদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ : ব্যাংক বন্ধ ঘোষণা করায় শেয়ারবাজারেও লেনদেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যতদিন ব্যাংক বন্ধ থাকবে ততদিন শেয়ারবাজারের লেনদেনও বন্ধ থাকবে।
মসজিদে তারাবিসহ প্রতি ওয়াক্তে সর্বোচ্চ ২০ জন : সর্বাত্মক লকডাউন কার্যকরে রোজায় নামাজ আদায়ে চারটি নির্দেশনা জারি করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। তার প্রথমটি মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের প্রতি ওয়াক্তে সর্বোচ্চ ২০ জন মুসল্লি অংশগ্রহণ করবেন, দ্বিতীয়টি তারাবির নামাজে খতিব, ইমাম, হাফেজ, মুয়াজ্জিন ও খাদিমসহ সর্বোচ্চ ২০ জন মুসল্লি অংশগ্রহণ করবেন, তৃতীয়টি জুমার নামাজে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করবেন; চতুর্থ, সম্মানিত মুসল্লিগণকে পবিত্র রমজানে তিলাওয়াত ও জিকিরের মাধ্যমে মহান আল্লাহর রহমত ও বিপদমুক্তির জন্য দোয়া করার অনুরোধ করা হয়।
স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে সেনাবাহিনী নামানোর পরামর্শ সিপিডির : আসন্ন লকডাউনে শিল্প-কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষের চলাচলে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী ও আর্মড ফোর্স, সরকারের এজেন্সিগুলোকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে নামানোর দাবি জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
যাত্রীবাহী নৌযান ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ : সর্বাত্মক লকডাউনের কারণে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান বন্ধের সিদ্ধান্ত আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে পণ্যবাহী নৌযান চালু থাকবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা আদেশ অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ।
আমারসংবাদ/জেআই