Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

স্বাস্থ্যবিধিতে জোর বিশেষজ্ঞদের

এম এ আহাদ শাহীন

এপ্রিল ১২, ২০২১, ০৮:৪৫ পিএম


স্বাস্থ্যবিধিতে জোর বিশেষজ্ঞদের
  • অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে শিল্প-কারখানা খোলা রাখা ইতিবাচক
  • শিল্প-কারখানাগুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের সুরক্ষায় নজর দিতে হবে

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে দ্বিতীয় আঘাতের মধ্যে শিল্প-কারখানা খোলা রাখাকে অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিশিল্পের মালিকরাও লকডাউনে সরকারের শিল্প-কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় শিল্প-কারখানাগুলোতে তাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। লকডাউনকে ঘিরে তেমন শঙ্কা নেই বলেও মনে করেন তারা।

গার্মেন্ট মালিকরা জানান, করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী লকডাউনে গত বছর এ খাত যে সংকটে পড়েছে তা থেকে উত্তরণ ও শ্রমিকদের মজুরি, ঈদ বোনাস ও অন্যান্য খরচ মেটাতে কারখানা চালু রাখা জরুরি। এছাড়া করোনা মোকাবিলায় কারখানাগুলো প্রণোদনা ঋণ নিয়েছিল। ওই ঋণ পরিশোধের সময় ঘনিয়ে আসায় কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। 

এ বিষয়ে বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতসহ বস্ত্র খাতের অন্যান্য সহযোগী শিল্পগুলোকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখায় সরকারকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। সরকারের এ সিদ্ধান্ত অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। তবে লাকডাউনে যেহেতু শিল্প-কারখানা খোলা থাকবে, সেহেতু সব প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এদিকে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত ঘোষিত লকডাউনে বেশ-কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে শিল্প-কারখানা খোলা রাখা প্রসঙ্গে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে— শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয় দফা লকডাউনের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে ঢিলেঢালা-নামমাত্র লকডাউনের পরিবর্তে কঠোরভাবে নিশ্চিত করা, সংক্রমণ প্রতিরোধমূলক মাস্ক ও সাবান-স্যানিটাইজার ব্যাপকভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে শিল্প-কারখানা খোলা রাখা অর্থনীতির জন্য অবশ্যই ইতিবাচক। আর ব্যবসায়ীরাও চাচ্ছিলেন যে, করোনার মধ্যেও তাদের কাল-কারখানা খোলা থাকুক। তবে শিল্প-কারখানাসহ সব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পরিপালন করা না হলে এ লকডাউন কাজে আসবে না। তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাবে। তাই স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের ওপর জোর দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, লকডাউনে যারা বেশি মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অর্থাৎ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দ বাড়ানো ও সুষ্ঠুভাবে বিতরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। যেন কর্ম বা চাকরি বা ব্যবসাহীন ব্যক্তি যেন অভুক্ত না থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, লকডাউনের মধ্যে শিল্প-কারখানা খোলা রাখতে হবে। তা না হলে অর্থনীতির চাকা ঘুরবে না। এটা একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। তবে করোনা পরিস্থিতিতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

লকডাউনে শ্রকিদের যাতায়াত ব্যবস্থা না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা : করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনের সময় শিল্প-কারখানাগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকদের যাতায়াতের ব্যবস্থা না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান। গতকাল সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে ক্লিনিক ভবনে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেয়া শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান বলেন, আমরা প্রত্যেকেই জানি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আমাদের প্রচণ্ডভাবে আঘাত করেছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যাতে শিল্প-কলকারখানা চালু রাখতে পারি এবং শিল্প এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে সব প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। দেশ ও জাতির স্বার্থেই শিল্প-কারখানাগুলো খোলা রাখা হবে। 

তিনি বলেন, যদি কলকারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত শ্রমিকরা সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে। এর ফলে করোনা আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে যে ১৮ দফা বিধি নিষেধ দিয়েছে সেখানে কলকারখানা বিশেষ করে গার্সেন্টশিল্প খোলা থাকবে। এতে আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। যাতে বিদেশি বায়াররা আমাদের দেশে আসেন এবং তারা বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করে নিয়ে যান। সুতরাং আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী চমৎকার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আমরা স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় করে কাজে মনোনিবেশ করবো।

নির্দেশনায় আছে শিল্প-কারখানার মালিকরা নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় শ্রমিকদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করবে সেটা কতটা সম্ভব জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান বলেন, এটা সম্ভব। 

গত বছরের ৮ মার্চ থেকে আমাদের দেশের করোনা ভাইরাসের আক্রমণ শুরু হয়। তখনো শ্রমিকদের বেতন যাতায়াতে বিশেষ ব্যবস্থা ও নজর রাখা হয়েছে। আগে তো গার্মেন্ট মালিকরা আপনাদের নির্দেশনা মানেননি। সে সময় অনেক শ্রমিককে হেঁটে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে যেতে হয়েছে, এবার যদি না মানে তাহলে আপনারা কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান বলেন, শিল্পমালিকরা সরকারের এ সিদ্ধান্ত মানবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। মালিকরা নিজেদের যেমন রক্ষা করেন, এর সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদেরও রক্ষা করার চেষ্টা করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। যদি না মানে তাহলে আমরা অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসবো। আমাদের শ্রম আইনানুযায়ী শাস্তি ও জরিমানারও বিধান রয়েছে। এ বিষয়টি কীভাবে মনিটরিং করবেন জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান বলেন, এ বিষয়টি মনিটরিং করার জন্য ইতোমধ্যে সারা দেশের জন্য ২৩টি মনিটরিং টিম করা হয়েছে। যারা ২০২০ সালের মার্চ থেকে কাজ করছে। যখন দেশে মৃত্যুর হার বেড়ে গেছে তখন তাদের নতুন করে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে শ্রমিকদের বেতন ভাতা দিতে সমস্যা হবে কিনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান বলেন, গার্মেন্টশিল্প একটি ব্যতিক্রমধর্মী। কারণ এ শিল্পের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়। আর শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প হচ্ছে গার্মেন্ট। যেসব প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার বড় সহায়ক। এ কারণেই আমাদের এ প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রাখতে হবে। 

তিনি বলেন, লেনদেনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রীকে বলা আছে। আমরা বলেছি যেখানে শিল্প-কারখানা খোলা থাকবে তারা যেন সরকারি নির্দেশনা মেনে কষ্ট হলেও শিফট করে কারখানা চালু রাখে। যাতে শ্রমিক বা মালিক কারো অসুবিধা না হয়। এর আগে সকালে করোনা সংক্রমণ রোধে ঘোষিত আগামী ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব শিল্প-কারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া নিশ্চিত করতে হবে।

আমারসংবাদ/জেআই