Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

আইসিইউ নেই রাজধানীর ৯২ শতাংশ হাসপাতালে

মাহমুদুল হাসান

এপ্রিল ১৩, ২০২১, ০৯:১৫ পিএম


আইসিইউ নেই রাজধানীর ৯২ শতাংশ হাসপাতালে

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। কোনো তৎপরতা কাজে আসছে না। সংক্রমণ তার আপন গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। করোনার প্রথম ঢেউ মোকাবিলায় রয়েছে বড় সাফল্য। মিলেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ে কাবু গোটা দেশ। গেলো বছরের শেষদিকে সংক্রমণ সন্তোষজনকভাবে কমে এলে সবার মধ্যে বেপরোয়াভাব চলে আসে। উঠে যায় স্বাস্থ্যবিধির বালাই। উচ্ছ্বাস আর উৎসবে মেতে থাকা জাতির স্বাস্থ্যসেবাও তেমন পরিবর্তন হয়নি। গেলো মার্চ থেকে বাড়তে শুরু করে সংক্রমণ। প্রতিদিন রোগী শনাক্ত ও মৃতে হচ্ছে নয়া রেকর্ড। কিন্তু তবুও সেবার পরিধি তেমন বাড়েনি। এ পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ ছুঁই ছুঁই মানুষের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়। তারমধ্যে প্রায় দশ হাজারে কাছাকাছি মানুষের মৃত্যু হয়। তবে এখনো করোনায় কাতরাচ্ছে আরও প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। এত মানুষের জন্য কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে বেড আছে মাত্র এগারো হাজারের একটু বেশি। এরমধ্যে সাড়ে দশ হাজার কম সাধারণ বেড ও পৌনে এক হাজারের কম আইসিইউ বেড। সংখ্যার বিচারে সক্রিয় দশ রোগীর অনুপাতে মাত্র একটি সাধারণ বেড রয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, করোনার প্রথম ঢেউ মোকাবিলায় দেশের সাফল্য আমাদের আরও উদাসীন করে দিয়েছে। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উৎসব আমাদের বেপরোয়া করে দিয়েছে। ফলে নীরবে ছড়িয়ে পড়া সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে এখন কাবু। পরিস্থিতি দিনে দিনে অবনতির পথে। এখনো শক্তভাবে স্বাস্থ্যবিধিতে জোর দিতে হবে। নয়তো পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। তারা আরও জানিয়েছেন, সংক্রমণ বাড়লেও তুলনামূলকভাবে বাড়েনি চিকিৎসাসেবার সক্ষমতা। দেশে ১২ হাজারেরও বেশি আইসিইউ বেডের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও এখন কোভিড রোগীর সেবা পাচ্ছে পৌনে এক হাজারের কম বেডে। লক্ষাধিক রোগীর জন্য সাধারণ বেড মাত্র সাড়ে দশ হাজার। এসব সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, করোনা শনাক্ত অধিকাংশ মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। মৃত্যু হয়েছে দশ হাজার ছুঁইছুঁই। কিন্তু তবুও করোনার সঙ্গে লড়াই করছেন এক লাখ দুই হাজার ১২৮ জন মানুষ।

অন্যদিকে দেশে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য মাত্র দশ হাজার ৪৩৪টি সাধারণ বেড ও ৭৩৮টি আইসিইউ বেড রয়েছে। তারমধ্যে সাধারণ বেডে রোগী ভর্তি আছে পাচ হাজার ৫৪৩ জন। ফাঁকা আছে চার হাজার ৮৯১ জন। আইসিইউ বেডের মধ্যে ৫৯৯টিতে রোগী ভর্তি রয়েছে। ফাঁকা আছে মাত্র ১৩৯টি। এর মধ্যে ঢাকায় দশটি সরকারি ও ১৬টি বেসরকারি ডেডিকেটেড হাসপাতালে চার হাজার ১৭৬টি সাধারণ বেড রয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার ৫৪৯ জন রোগী ভর্তি আছেন। ফাঁকা আছে মাত্র ৬১৩টি বেড। আইসিইউতে হাহাকার। ৪৪৫টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ৪৩৭টিতে রোগী ভর্তি রয়েছে। ফাঁকা আছে মাত্র আটটি। সরকারি দশ হাসপাতালে দুই হাজার ৬০৮টি সাধারণ বেডের দুই হাজার ১৬২টিতেই রোগী ভর্তি। ফাঁকা আছে মাত্র ৪৪৬টি বেড। আইসিইউ সংকট এখানে চরমে। দশ হাসপাতালে ১৩২টি আইসিইউ বেড রয়েছে। এরমধ্যে একটি হাসপাতালে মাত্র একটি আইসিইউ বেড ফাঁকা রয়েছে। দশ হাসপাতালে মধ্যে— কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ইউনিট-২) ও বার্ন ইউনিট, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল, এখানে একটি আইসিইউ বেড ফাঁকা রয়েছে। সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

অন্যদিকে ১৬টি কোভিড ডেডিকেটেড বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও এভার কেয়ার হাসপাতালে সাতটি আইসিইউ বেড ফাঁকা রয়েছে। এছাড়া আসগর আলী হাসপাতাল, স্কয়ার হাসপাতাল, ইবনে সিনা হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল, ইম্পালস হাসপাতাল, এ এম জেড হাসপাতাল, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল, জাপান ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, গ্রীন লাইফ হাসপাতাল, ল্যাব এইড হাসপাতাল, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জয়নুল হক শিকদার ওমেন্স মেডিকেল কলেহ অ্যান্ড হসপিটাল, সাজিদা হাসপাতাল ও গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে আইসিইউ বেড ফাঁকা নেই।

চট্টগ্রাম বন্দর নগরীর অবস্থাও বেশি ভালো নয়। সেখানে চারটি সরকারি হাসপাতাল ও তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে ৬৫১টি সাধারণ বেড রয়েছে। এরমধ্যে চারশটিতে রোগী ভর্তি। ফাঁকা আছে ২৫১টি বেড। ৫৯টি আইসিইউ বেডের মধ্যে মাত্র ২৯টি বেড ফাঁকা। রোগী ভর্তি আছে ৩০টিতে। এছাড়াও সারা দেশের বিভাগীয় হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ হাজার ৬০৭টি সাধারণ বেড রয়েছে। এরমধ্যে চার হাজার ১৩টি বেড ফাঁকা আছে। ভর্তি আছে এক হাজার ৫৯৪টি বেডে। আইসিইউ বেড আছে ২৩৪টি। ১৩২টিতে রোগী ভর্তি আছে। ফাঁকা আছে ১০২টি বেড। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সারা দেশে ১৭ হাজার ৩৪টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। এক হাজার ২৫৫টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে। সেইসাথে এক হাজার ৭৬টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর রয়েছে।

গতকাল পর্যন্ত ৭০ লাখ ৭৬ হাজার ৩৬৯ জন মানুষ করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। এরমধ্যে গতকাল ২২ হাজার ৪৫৬ জনসহ এ পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন ৫৬ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৩ জন। গতকাল এক লাখ ৩৮ হাজার ৮৭৯ জন মানুষ দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণসহ এ পর্যন্ত ৫ লাখ ২২ হাজার ৫৯৬ জনকে করোনার দ্বিতীয় ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে।

একদিনে করোনায় শনাক্ত-মৃত্যু কমেছে

করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে কাবু দেশ। গতকাল একদিনের ব্যবধানে শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা কমলেও এখনো রোগীতে ঠাসা দেশের হাসপাতাল। গতকাল আরও ৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও ছয় হাজার ২৮ জনের নমুনায় করোনার উপস্থিতি মিলেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা স্বাক্ষরিত নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এদিকে জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তালিকায় বাংলাদেশ বিশ্বে শনাক্তের হিসেবে ৩৩তম আর মৃতের সংখ্যায় ৩৯তম অবস্থানে রয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাজধানীসহ সারা দেশে ২৫৫টি সরকারি বেসরকারি আরটি-পিসিআর, জিন-এক্সপার্ট ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাবে গতকাল ৩২ হাজার ৯৫৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৫০ লাখ ৭০ হাজার ৭৮৮টি নমুনা। এতে নতন করে আরও ছয় হাজার ২৮ জনের নমুনায় করোনার উপস্থিতি মিলেছে। এনিয়ে দেশে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ছয় লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৫ জনে পৌঁছেছে। এরমধ্যে মঙ্গলবার সুস্থ হয়েছে চার হাজার ৮৫৩ জন। তাদের নিয়ে সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৯৬৬ জনে। গতকাল মৃত্যু হওয়া ৬৯ জনসহ মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে নয় হাজার ৮৯১ জনে পৌঁছেছে। গতকাল শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। সুস্থতার হার ৮৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪২ শতাংশ।

গত একদিনে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৪৩ জন পুরুষ আর নারী ২৬ জন। তাদের ৫ জন বাড়িতে, ১ জনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। বাকিদের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। মৃতদের মধ্যে ৩৯ জনের বয়স ছিলো ৬০ বছরের বেশি, ২০ জনের ৫১-৬০ বছর, ৭ জনের ৪১-৫০ বছর এবং ৩ জনের ৩১-৪০ বছরের মধ্যে ছিলো। মৃতদের মধ্যে ৪১ জন ঢাকা বিভাগের, ১৩ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৩ জন রাজশাহী বিভাগের, ৩ জন খুলনা বিভাগের, ৩ জন বরিশাল বিভাগের, ২ জন সিলেট বিভাগের, ৩ জন রংপুর বিভাগের এবং ১ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ৯ হাজার ৮৯১ জনের মধ্যে ৭ হাজার ৩৭৬ জনই পুরুষ এবং ২ হাজার ৫১৫ জন নারী।

আমারসংবাদ/জেআই