Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

সমন্বয় নিয়ে পাল্টা-পাল্টি

রফিকুল ইসলাম

এপ্রিল ১৩, ২০২১, ১০:৩৫ পিএম


সমন্বয় নিয়ে পাল্টা-পাল্টি
  • করোনা ইস্যুতে সরকারের সমন্বয়হীনতা দেখছে বিএনপি
  • বিএনপির বক্তব্যে রাজনৈতিক বিরোধিতা  বলছে আ.লীগ

করোনা রোধে শক্ত অবস্থানে সরকার। আজ থেকে কঠোর লকডাউন। বন্ধ থাকবে জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু। এমন সংকটেও তুঙ্গে আওয়ামী লীগ-বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের কথার রাজনীতি। করোনার সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ সরকার— দাবি বিএনপির। তারা বলছে, সমন্বয়হীনতা ও উদাসীনতার কারণে করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না সরকার। বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যে রাজনৈতিক বিরোধিতা ও প্রতিহিংসার রাজনীতি হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা। তারা বলছেন, করোনা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে বিএনপি বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার ছড়াতে ব্যস্ত। করোনা সংকটে দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে বিএনপি ও তাদের দলীয় নেতাকর্মীরা দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারছে না। তবুও সরকারবিরোধী নানামুখী কথা বলেই চলছে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ-বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে বিশ্লেষণ করে এমনটাই পাওয়া যায়।

সূত্রে জানা যায়, বৈশ্বিক মহামারি করোনার সংক্রমণ রোধে সারা দেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম সীমিত করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির দলীয় সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং, দায়িত্বশীল নেতাদের সাংগঠনিক সফর এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটগুলোর সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করলেও মানবিক কাজে সক্রিয় রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনার সুরক্ষাসামগ্রী মাস্ক, হ্যান্ড সেনিটাইজার ও পিপিই বিতরণ করছেন। নিজ উদ্যোগে পাড়া-মহল্লায়, রেলস্টেশন, বাসস্টেশন, বাজার ও বিভিন্ন জনসমাগম স্থানে করোনার সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করছেন। দুস্থদের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী। করোনায় আওয়ামী লীগ কার্যক্রম সীমিত করলেও সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে বিএনপি। বন্ধ করে দিয়েছেন সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম, সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম। তবে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশের কোথাও মানবিক কর্মসূচি গ্রহণ করতে দেখা যায়নি বিএনপিকে। যদিও দলটির শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের দাবি— করোনার শুরু থেকে মানবিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। 

সম্প্রতি আওয়ামী লীগ-বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়- মাঠের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল। নেই কোনো দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি। তবে বর্তমান করোনার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিন গণমাধ্যমে কথা বলছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের নেতারা। সরকারের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা। তারা বলছেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সরকার এখনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে দেশের জনগণের দুঃখ-দুর্দশা মোকাবিলায় সরকার উদাসীন। চলমান লকডাউনেও অসহায় ও কর্মহীন মানুষের জন্য বাস্তবসম্মত সহায়তার পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ সরকার। সরকারের অপরিকল্পিত ও কাণ্ডজ্ঞানহীন পদক্ষেপ দেশ ও দেশের জনগণকে চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সরকার কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন অব্যাহত রেখে দেশকে গভীর সংকটে নিপতিত করছে বলে মনে করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাব গণমাধ্যমেই দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ সিনিয়র নেতারা । তারা দাবি করছেন- করোনা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে বিএনপি বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার ছড়াতে ব্যস্ত। করোনা সংকটে দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে বিএনপি ও তাদের দলীয় নেতাকর্মীরা দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে দাবি আওয়ামী লীগের।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আমার সংবাদকে বলেন, করোনার এই জাতীয় সংকটকালে আওয়ামী লীগ বড় ব্যর্থ। তারা এখন পর্যন্ত বিরোধী কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনার টেবিলে বসতে পারেনি। যেহেতু রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি। তাই তাদের ব্যর্থতার দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। তারা চায় অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে আমরা মুক্তি পাই। তিনি আরও বলেন, করোনার শুরু থেকেই অসহায় মানুষের পাশে বিএনপি ছিলো, এখনো আছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান আমার সংবাদকে বলেন, বিএনপির নেতাদের কোনো কথার দাম নেই। তারা একবার বলে নির্বাচন করবো, আবার বলে করবো না, আবার বলে অংশগ্রহণ করে ভুল করেছি। এখন করোনা নিয়ে নানামুখী মিথ্যাচার করছেন। মূলত বিএনপি নেতাদের কোনো কথার দাম নেই । দেশের মানুষ তাদের কথা আর বিশ্বাসও করে না। বিএনপিকে গণমাধ্যম বাঁচিয়ে রেখেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বিএনপি কর্মসূচিহীন রাজনৈতিক দল। তারা দেশের মানুষের স্বার্থে আজ পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি। জণগনের জন্য আজ পর্যন্ত কিছুই করেনি। বাংলাদেশের জনগণের জন্য বিএনপির কোনো চিন্তা নেই। জণগণের স্বার্থে বিএনপি আগেও ব্যর্থ, আগামীতেও ব্যর্থ হবে বলে আমি মনে করি। বিএনপির রাজনীতি শুধু গণমাধ্যম বাঁচিয়ে রেখেছে। প্রতিদিন গণমাধ্যমে বক্তব্য দিচ্ছেন কিন্তু দেশের মানুষ তাদের বক্তব্য বিশ্বাস করে না। করোনার সংক্রমণ থেকে বিএনপি নিজেদের ঘর রক্ষা করতে পারে না উল্লেখ করে লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বাসার সবাই করোনা আক্রান্ত হয়েছে। যারা নিজেদের ঘর ঠিক রাখতে পারেনি- তাদের মুখে বাংলাদেশের কথা মানায় না। করোনা মোকাবিলা নিয়ে সরকারের সমন্বয়হীনতার কথা মানায় না। তিনি আরও বলেন, করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সকলকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

করোনা প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের কোনো সমন্বয় নেই। কোনো পরিকল্পনা নেই। কোনো রোডম্যাপ নেই। এই যে সাতদিন লকডাউন দিয়েছে, এরপর কী হবে? যারা দিন আনে দিন খায়, তাদের জন্য কী ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের তো ঘরে রাখতে পারবেন না। যার পেটে ভাত নেই, করোনা দিয়ে কী করবে সে, লকডাউন দিয়ে কী করবে। এই শ্রেণির মানুষের সংখ্যা তো অনেক। গতবারও দেখেছি, যারা বাসাবাড়িতে কাজ করেছেন, তারা ভিক্ষাবৃত্তির জন্য রাস্তায় বেরিয়ে এসেছেন। করোনার তথ্য নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে এবং ভুল ধারণা দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, তারা (সরকার) যে বলছে এতজন সংক্রমিত। পরীক্ষা না হলে শনাক্ত হবে কীভাবে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথাটা মিলে যায়, ‘নো টেস্ট, নো করোনা’। এখন তো তা-ই হচ্ছে।

আমারসংবাদ/জেআই