Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

সবজি ও ফলের দাম দ্বিগুণ

এম এ আহাদ শাহীন

এপ্রিল ১৫, ২০২১, ০৮:১০ পিএম


সবজি ও ফলের দাম দ্বিগুণ

কঠোর লকডাউনের শুরুতে বাজারের যে উত্তাপ শুরু হয়েছে, তা এখনো কমেনি। অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া বেগুন, টমেটো, লেবু, শসাসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তিতেই আটকে রয়েছে। ৭০ থেকে ৮০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো সবজি। আর ফলের দামও এখনো কমেনি। রোজার প্রথম থেকেই অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে শসার। একদিনে দ্বিগুণ দাম বেড়ে শসার কেজি প্রায় একশ টাকা হয়ে গেছে। এর সঙ্গে প্রতি হালি লেবু ৮০ টাকা, পাকা টমেটো ৫০ টাকা ও বেগুনের দামও ১০০ টাকায় পৌঁছায়। গতকাল বৃহস্পতিবারও একই দামে এসব পণ্য বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া রাজধানীর তালতলা, খিলগাঁও, মতিঝিল কলোনি ও শান্তিনগর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আলু ও পেপে ছাড়া অন্যান্য প্রায় সব সবজি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা এবং পেঁপে ৪০ টাকা কেজিতে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রোজায় চাহিদা বেশি থাকে। মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপের মধ্যেও এবার এর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে সরবরাহ সেই তুলনায় কম। ফলে পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে। কিছু কিছু পণ্য আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ দাম দিয়ে কিনতে হয়েছে। তালতলা কাঁচাবাজারে নিজামুদ্দিন নামে একজন ক্রেতা জানান, জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়ে গেছে। লেবু এখন ১২০ টাকা। এটা ভাবা যায়। সরকার বাজার মনিটরিংয়ের কথা বললেও আদতে সেটা করা হচ্ছে না। এদিকে বাজারে ফলের দামও বেড়েছে। দুদিনের ব্যবধানে তরমুজের দাম কেজিপ্রতি ১৫-২০ টাকা বেড়েছে। তরমুজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কলার দামও। দুদিনের ব্যবধানে কলার দাম হালি প্রতি বেড়েছে দ্বিগুণ। রাজধানীর রামপুরা ও বাড্ডা এলাকার বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, গত বছর যে তরমুজ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল সেই তরমুজ এবার বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। আর চাম্পা ও চিনিচাম্পা কলা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা হালি। সবরি কলা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা হালি।

বিক্রেতারা বলছেন, রোজায় কলা ও তরমুজের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু লকডাউনের কারণে সেই পরিমাণ কলা আসছে না। ফলে চাহিদার তুলনায় কলা কম থাকায় দাম বেড়েছে। ক্রেতারা বলছেন, রোজা রাখার পর প্রচুর পানির দরকার হয়। তরমুজ খেলে শরীর ঠাণ্ডা হয়। পানির পিপাসাও কমে। তাই তরমুজ খাওয়া ভালো। কিন্তু মওসুমি ফল হওয়ার পরও কেজিপ্রতি তরমুজের দাম অনেক বেশি। কলা নিয়ে তারা বলেন, ইফতারে আপেল, খেজুর, মাল্টা ও শসার সঙ্গে কলা খুবই জনপ্রিয় খাবার। এ ছাড়াও রাতে বা সেহরিতে দুধের সঙ্গে কলার প্রয়োজন হয়। কলা কিনতে এসে দেখি দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। তারা বলেন, বিশ্বের সব দেশেই রমজান মাসে পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। যাতে রোজাদাররা ভালোভাবে রোজা পালন করতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো। রোজার আগের দাম কম থাকলেও রোজার আসতে না আসতেই দাম বাড়ায়। রামপুরা বাজারে ব্যবসায়ীরা জানান, গত সোমবার তরমুজ বিক্রি করেছি ২৫ টাকা কেজি। আজকে কেনাই পড়েছে ৪০ টাকা। এখন আপনিই বলেন আমি কত টাকা বিক্রি করব। আমি ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি করছি। ইউনাইটেড হাসপাতালের কর্মচারী জাফর আহমেদ বলেন, গতবারের চেয়ে তরমুজের দাম অনেক বেশি। গতবার ১০০ টাকায় যে তরমুজ কিনেছি এবার সেই তরমুজ কিনতে ৩০০ টাকা লাগে। তরমুজ কখনো কেজি হিসেবে কিনতে হয়নি। এবার কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। ফলে দাম বেশি পড়ছে।

মোজাম্মেল হোসেন নামের একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, দুদিন আগেও যে সবরি কলা ৮০-৮৫ টাকা ডজন কিনেছি এখন সেই কলা ১২০-১৩০ টাকা ডজন। অর্থাৎ এক হালি কলার দাম ৪০-৪৫ টাকা। মধ্যবাড্ডার ব্যবসায়ী মমিনুল হক জানান, গত দুদিনে সব ধরনের কলার দাম বেড়েছে। এর মধ্যে চম্পা কলার দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। এখন বাংলা কলা, সরবি কলা বিক্রি করছি ১২০-১৩০ টাকা ডজন। খুচরা নিলে ৪৫ টাকা হালি বিক্রি করছি। আর চম্পা কলা ৩০ টাকা হালি বিক্রি করছি। তিনি বলেন, রোজার মাসে কলার দাম একটু বেশি থাকে। কিন্তু এবার লকডাউন থাকার কারণে দাম বাড়ছে। তবে লকডাউন শেষ হলে দাম কমত পারে।

অন্যদিকে সরকার কিছু পণ্যের দাম বেধে দিলেও সেই দামে কোথাও পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে নির্ধারিত আয়ের মানুষরা চরম বিপদে রয়েছেন বলে আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। বাজারে শুধু গরুর মাংস বেঁধে দেয়া দাম কেজিপ্রতি ৬০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। নির্ধারিত দাম অনুয়ায়ী খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম হবে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা, চিনি ৬৭ থেকে ৬৮ টাকা, ছোলা ৬৩ থেকে ৬৭ টাকা, মসুর ডাল উন্নতমানের হলে দাম হবে ৯৭ থেকে ১০৩ টাকা ও সাধারণ মোটা মসুর হলে ৬১ থেকে ৬৫ টাকা, খেজুর সাধারণ মানের ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং মধ্যম মানের ২০০ থেকে ২৫০ টাকা এবং সয়াবিন তেল লিটারে ১৩৯ টাকা। তবে এর মধ্যে পেঁয়াজ ছাড়া অন্যান্য সব পণ্যই বাড়তি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এদিকে মুদি দোকানদাররা দাবি করেন, এখনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেনি। তবে লকডাউনের মধ্যে সরবরাহ ব্যবস্থা কতটা সচল থাকে তার ওপর পরবর্তী পরিস্থিতি নির্ভর করছে। এদিকে কঠোর লকডাউনেও বাজারে বের হওয়া মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা তেমন একটা ছিলো না। মাস্ক ব্যবহারের প্রবণতাও খুবই কম। বাজারের সবখানেই ছিলো মানুষের ভিড়।

আমারসংবাদ/জেআই