Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

মামুনুলেই হেফাজতের সর্বনাশ

এপ্রিল ১৮, ২০২১, ০৮:৩৫ পিএম


মামুনুলেই হেফাজতের সর্বনাশ
  • ঢাকায় মামুনুলের বিরুদ্ধে ১৭ মামলা
  • মামুনুলের মাদ্রাসা শান্ত, রাস্তায় বিপুল পুলিশ
  • অর্ধশতাধিক নেতা গ্রেপ্তার, কেন্দ্রীয় পাঁচজনসহ আরও গ্রেপ্তারের শঙ্কা
  • কেন্দ্রীয় অনেক নেতার পদত্যাগের ঘোষণা ও সামপ্রতিক সময়ে হেফাজতের কর্মকাণ্ড নীতি ও আদর্শের বিরোধী বলেও মন্তব্য তাদের
  • হারাতে বসেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরাজমান সহানুভূতি ও আস্থা 
  • আলেমদের গ্রেপ্তার কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না -চরমোনাই পীর
  • ২০২০ সালে মোহাম্মদপুরে ভাঙচুরের মামলায় গ্রেপ্তার মামুনুল, আজ তোলা হবে আদালতে, আমরা ওই মামলাটি তদন্ত করছিলাম, সম্পৃক্ততা পাওয়ায় গ্রেপ্তার করেছি -হারুন অর রশিদ, ডিসি, তেজগাঁও 

দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তার, পদত্যাগ, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের হেফাজতবিরোধী বিক্ষোভ, মামুনুলের নারী কেলেঙ্কারিসহ সামপ্রতিক নানা ঘটনায় বিপাকে তথা দিশাহারা হেফাজত। পড়েছে নানামুখী চাপেও। শুধু তাই নয়— বর্তমান সময়ে হেফাজতের অস্তিত্বও চরম সংকটে। কেউ কেউ বলছেন, বর্তমান কোণঠাসা অবস্থা সংগঠনটির সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডেরই ফল। যে ফল ভোগ করছে নারীসহ রিসোর্টে অবরুদ্ধ হওয়া হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকও। সকল আলোচনার জের টেনে অবশেষে ২০২০ সালে মোহাম্মদপুর থানায় হওয়া ভাঙচুরের একটি মামলায় পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তাকে।

এছাড়া সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে সরকারও হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এদিকে চলমান সংকট থেকে উত্তরণে নানা কৌশলও গ্রহণ করছে সংগঠনটি। বিবৃতির মাধ্যমে উচ্চারণ করছে নানা হুঁশিয়ারি, যা হালে পানি পাচ্ছে না। মূলত সাবেক আমির আল্লামা শফীর মৃত্যুতে জুনায়েদ বাবুনগরী দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সরকারে সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে সংগঠনটির। নানা ইস্যুতে আন্দোলন সংগ্রামও করতে থাকে। সরকারকে চাপে রাখারও ব্যর্থ চেষ্টা করে। সেই ব্যর্থ চেষ্টারই ফল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে ২৬ এবং ২৭ মার্চ ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তাণ্ডব। এ অবস্থায় সরকারের সামনে কঠোর অবস্থান গ্রহণ ছাড়াও আর কোনো বিকল্প ছিলো না। আর সরকারের কঠোর অবস্থান গ্রহণের পর থেকেই দৃশ্যত বিপাকে পড়েছে হেফাজত। হেফাজতের বর্তমান অবস্থা নাজুক। পদে পদে বিপর্যস্ত। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় অনেক নেতাও সংগঠন থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

সামপ্রতিক সময়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনাও করেন তারা। এ ছাড়া সামপ্রতিক কর্মকাণ্ড, নীতি ও আদর্শবিরোধী বলেও মন্তব্য করেছেন তারা। যে কারণে পদত্যাগ করছেন অনেকে। অন্যদিকে দেশের প্রায় ২৩টি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও তাদের মধ্যে আলোচনা করে হেফাজতের আন্দোলনে আর যোগ না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে হেফাজতের মূল শক্তি যে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা, সেই মূল শক্তিও ভেঙে পড়েছে। হেফাজতের উচ্চবাচ্যও এখন আর কাজে আসছে না বলে মনে করছেন অনেকেই।  এদিকে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা হেফাজতের জন্য একটি বড় ধাক্কা। নারায়ণগঞ্জের রয়েল রিসোর্টে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে প্রমোদবিহারে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন মামুনুল। এরপর এখন পর্যন্ত তার একাধিক স্ত্রীরও খবর শোনা যাচ্ছে এবং অনেক নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের খবরও বিভিন্ন মাধ্যমে সামনে আসছে। যে কারণে হেফাজতের প্রতি সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিরাজমান সহানুভূতি ও আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। এ নিয়েও বিপাকে পড়েছে হেফাজত। এরই মধ্যে মামুনুলে বিয়ের বিষয়ে হেফাজতের ভেতরে আলোচনাও হয়েছে। যদিও জুনায়েদ বাবুনগরী আলোচনার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, বিয়ের বিষয়টি মামুনুলের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ নিয়ে হেফাজতের কিছুই বলার নেই। কিন্তু এ ঘটনাতেই দেশের মানুষের কাছে ইতোমধ্যে হেফাজতের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে গেছে।

হালে হেফাজতের সামনে আরেকটি বড় সংকট- গ্রেপ্তার। একের পর এক হেফাজতের বিভিন্ন নেতারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত হেফাজতের অর্ধশতাধিক নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। এদের মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন পাঁচজন। আরও গ্রেপ্তার হবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে পুরনো মামলায়। বিশেষ করে ২০১৩ সালের মে মাসে ঢাকা চলো অভিযানের সময় সারা দেশে নাশকতার মামলাসহ পুরনো বিভিন্ন মামলায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গত বুধবার কয়েকজন আলেম-ওলামা এ নিয়ে একটি বিবৃতিও দিয়েছেন। সেই বিবৃতিতে আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও মানহানিকর আচরণ করা হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন। সংশ্লিষ

বিভিন্ন মহলের ভাষ্য, হেফাজতের বর্তমান অবস্থার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী হেফাজতের বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। আল্লামা শফী যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক ছিল মোটামুটি প্রকাশ্য। কিন্তু আল্লামা শফী অসুস্থ থাকা অবস্থায় হেফাজতের মধ্যে উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী বিশেষ করে বর্তমান সরকারবিরোধী একটি গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। যদিও আল্লামা শফীর জীবদ্দশায় প্রকাশ্যে সক্রিয় অবস্থান নিতে পারেনি ওই গোষ্ঠী। কিন্তু আল্লামা শফী যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন তখনই হেফাজতের মূল নিয়ন্ত্রণ চলে যায় জুনায়েদ বাবুনগরীর হাতে। নেতৃত্বই নয় শুধু রীতিমতো হেফাজত দখল করে নেয় বাবুনগরীপন্থিরা। এরপর থেকেই বাবুনগরীসহ তার নেতৃত্বের আওতাবদ্ধদের উগ্র মৌলবাদী আচরণের জন্যই একে একে সবাই হেফাজত ছেড়ে চলেও যাচ্ছে এবং বহুমুখী বিপাকে পড়ছে হেফাজত। বর্তমানে সরকারের হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের পর থেকেই একে একে উগ্র মৌলবাদী প্রায় সব নেতাই গ্রেপ্তার হচ্ছেন। সরকারের কঠোর সাঁড়াশি অভিযানের প্রেক্ষিতে সর্বশেষ গতকাল মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। তার গ্রেপ্তার নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন মহলে চলছিল জল্পনা-কল্পনা। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের রয়েল রিসোর্টে কথিত স্ত্রীকে নিয়ে রঙ্গলীলার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন তিনি। এরপর থেকেই মামুনুল হক গ্রেপ্তার হবেন— এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছিল। তবে অনেকেরই ধারণা ছিলো— মামুনুল হকের খুঁটি অনেক শক্ত এবং সরকার হেফাজতকে ভয় পায়। কিন্তু সকল জল্পনা-কল্পনার ঊর্ধ্বে গিয়ে মামুনুলকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে আবারো প্রমাণ হলো— অন্যায়কারীর ব্যাপারে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি এখনো বহাল রয়েছে। সবকিছুরই একটা মাত্রা আছে। আর সেই মাত্রা অতিক্রম করলে কাউকেই ছাড় দেয়া হয় না সেটি মামুনুল হক গ্রেপ্তারের মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হলো। মামুনুল গ্রেপ্তারের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন জুনায়েদ বাবুনগরী কখন গ্রেপ্তার হবেন? বিশেষ করে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের ঢাকা তাণ্ডবের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন বাবুনগরী। তার নির্দেশেই সেসময় পল্টন, মতিঝিলসহ ঢাকায় তাণ্ডব চালিয়েছিল হেফাজতের কর্মীরা। সেসময় তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলাও হয়েছিল। কিন্তু নানা বাস্তবতায় সেই মামলা আর এগোয়নি। এরই মধ্যে গত বছরের নভেম্বরে হেফাজতের আমির হওয়ার পর থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখা শুরু করেন। এক পর্যায়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে সারা দেশে উস্কানি ছড়ান। ২৬ ও ২৭ মার্চ সারা দেশে তাণ্ডবও চালায় হেফাজত। এই তাণ্ডবের পর থেকেই কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকারের। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে— জুনায়েদ বাবুনগরীর বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা প্রস্তুত, তার গ্রেপ্তারও এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। সরকার কঠোর হলেও ধীরে ধীরে বিষয়টি নিয়ে এগোচ্ছে বলেই জুনায়েদ বাবুনগরীর গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়াটিও বিলম্বিত হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট সকলেই মনে করেন, হেফাজতকে দমন করতে গেলে জুনায়েদ বাবুনগরীকে গ্রেপ্তারের কোনো বিকল্প নেই। গত শুক্রবারেও বাবুনগরী উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছেন। হালে দেখার বিষয়, কোন মামলায় কখন কীভাবে গ্রেপ্তার হন জুনায়েদ বাবুনগরী।

এদিকে দেশে আলেমদের গ্রেপ্তারে চলমান লকডাউন কঠোরভাবে সমালোচিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামি আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। বিবৃতির মাধ্যমে চরমোনাই পীর বলেন, ‘যখন মহামারি প্রকট আকার ধারণ করছে, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠছে, তখন আলেমদের অযথা হয়রানি-নির্যাতন কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।’ সরকারের আচরণ অমানবিক ও দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশে মাদ্রাসা শিক্ষকসহ আলেমদের গণহারে গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর ভাষা নেই। পবিত্র রমজানের শুরুতেই দেশের আলেম ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের সরকার গণহারে গ্রেপ্তার করছে ও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালাচ্ছে।’ যেকোনো ইসলামবিরোধী ইস্যুতে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিবাদ করা দেশের আলেমদের নৈতিক দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেন মুহাম্মদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, ‘তাদের এই দায়িত্ব পালনে বাধা দান ও গ্রেপ্তার মেনে নেয়া যায় না।’ 

এর আগে গতকাল পুলিশ মোহাম্মদপুরের মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করে মামুনুলকে। তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদ বলেন, ‘২০২০ সালে মোহাম্মাদপুরে একটি ভাঙচুরের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ মামলায় আজ সোমবার আদালতে পাঠানো হবে তাকে। ডিএমপির পল্টন, মতিঝিল থানায়ও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সেসব মামলাতেও তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।’ ডিসি হারুন বলেন, ‘আমরা এই মামলাটি তদন্ত করছিলাম। তদন্তে মামুনুল হকের সম্পৃক্ততা পেয়েছি। সে জন্য তাকে গ্রেপ্তার করেছি। মামুনুলকে গ্রেপ্তারে বাধা এসেছে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কোনো বাধা আমরা পাইনি। তাকে পুলিশ আগে থেকেই নজরদারিতে রেখেছিল।’

নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় সামপ্রতিক সহিংসতা ও রিসোর্টকাণ্ডে রাজধানীর পল্টন ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় দুটি মামলা হয় মামুনুলের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর তাণ্ডবসহ আরও কয়েকটি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, মামুনুল রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। এ জন্যই পরিকল্পিতভাবে একের পর এক সহিংসতায় উস্কানি দিচ্ছিলেন তিনি। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও রিসোর্টকাণ্ডের পর থেকে হেফাজতের শীর্ষস্থানীয় এ নেতাকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। ৩ এপ্রিল রিসোর্টকাণ্ডের পরদিন ওই মাদ্রাসায় হেফাজত নেতারা জরুরি বৈঠকও করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মামুনুল। এরপর আর তাকে সাংগঠনিক কোনো কর্মকাণ্ডেও দেখা যায়নি।

মামুনুলের মাদ্রাসা শান্ত, রাস্তায় বিপুল পুলিশ : মামুনুলকে গ্রেপ্তারের সময় মাদ্রাসার কিছু শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানের সামনের গলিতে কয়েক মিনিট বিক্ষোভ করে। এ সময় বিভিন্ন স্লোগানও দেয় তারা। তবে পরিস্থিতি ছিলো পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। এর আগে মামুনুলের গ্রেপ্তার কেন্দ্র করে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গ্রেপ্তারকালে মাদ্রাসার পরিবেশ ছিলো অনেকটাই শান্ত।

মামুনুলের গ্রেপ্তারে দিশাহারা হেফাজত : সামপ্রতিক সময়ে সারা দেশে মামুনুল হকের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার পাহাড়। নারী কেলেঙ্কারি, একাধিক নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে সারা দেশে যখন তোলপাড় চলছে ঠিক সেই সময়ই গ্রেপ্তার হলেন মামুনুল হক। আর মামুনুলের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে হেফাজতের অনেক উগ্র মৌলবাদী নেতাদের ভ্রান্ত ধারণার অবসান হলো। যারা এতদিন মনে করছিল সরকার মামুনুলকে ভয় পায়, তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থায় যাবে না সরকার। কিন্তু সেই ধারণারই অবসান হলো গতকাল গ্রেপ্তারের ঘটনায়।  এখন গ্রেপ্তার আতঙ্কে সময় পার করছে উগ্র মৌলবাদী নেতারা। একই সঙ্গে জুনায়েদ বাবুনগরীর মধ্যেও গ্রেপ্তার আতঙ্ক বাসা বেধেছে বলে আলোচিত হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। ফলে সবদিক থেকেই দিশাহারা হয়ে পড়েছে হেফাজত।

ঢাকায় মামুনুলের বিরুদ্ধে ১৭ মামলা

মামুনুল হকের বিরুদ্ধে কেবল রাজধানীতেই অন্তত ১৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডবের পর হওয়া ১৫টি মামলায় তার নাম রয়েছে। এসব মামলার বাদি পুলিশ। পল্টন থানায় হওয়া সর্বশেষ মামলার বাদি যুবলীগের এক নেতা। আর মোহাম্মদপুরে আরেকটি মামলার বাদি সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, ডিবির মতিঝিল বিভাগে তদন্তাধীন আটটি মামলা, লালবাগ বিভাগে তদন্তাধীন দুটি মামলা এবং তেজগাঁও বিভাগে তদন্তাধীন একটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মামুনুল হক। এ ছাড়া মতিঝিল থানায় তদন্তাধীন একটি এবং পল্টন থানায় তদন্তাধীন চারটি মামলায় তার নাম রয়েছে। ১৬টি মামলার মধ্যে ১৫টি মামলাই হয়েছে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডবের পর। তার বিরুদ্ধে সর্বশেষ মামলা হয়েছে চলতি বছরের ৫ এপ্রিল। গত ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমার নামাজের পর পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধর্মভিত্তিক দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় এই মামলা করেছেন ঢাকা মহানগর যুবলীগের (দক্ষিণ) উপ-দপ্তর সম্পাদক খন্দকার আরিফ উজ জামান। মামুনুল হক এই মামলার এক নম্বর আসামি।

আমারসংবাদ/জেআই