Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

শতাধিক মৃত্যুতে হ্যাট্রিক!

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ১৮, ২০২১, ০৮:৩০ পিএম


শতাধিক মৃত্যুতে হ্যাট্রিক!
  • আগের চেয়ে দ্রুত মারা যাচ্ছেন করোনা রোগীরা
  • সংক্রমণের আতঙ্ক, চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা, মৃত্যুভয়, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, বেকারত্বের কারণে বেড়েছে মানসিক সমস্যা
  • আট মাস পর চালু হলো ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিন

টানা কদিন ধরে একশর ওপর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। গতকাল ১০২ জন। এখন পর্যন্ত এটিই একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। তার আগের দুদিন ১০১ জন করে করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এতে তিনদিনেই সর্বোচ্চ ৩০৪ জনের মৃত্যু হলো। এনিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা দশ হাজার ৩৮৫ জন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল রোববার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা স্বাক্ষরিত করোনা ভাইরাসবিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

এদিকে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশ বিশ্বে শনাক্তের হিসেবে ৩৩তম স্থানে আর মৃতের সংখ্যায় ৩৮তম অবস্থানে রয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাজধানীসহ সারা দেশে ২৫৭টি ল্যাবে গতকাল আরও ১৯ হাজার ৪০৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৫১ লাখ ৭০ হাজার ৬৭টি নমুনা। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩৮ লাখ ৪৬ হাজার ৪১০টি আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আরও ১৩ লাখ ২৩ হাজার ৬৫৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে নতুন করে আরও তিন হাজার ৬৯৮ জনের নমুনায় করোনার উপস্থিতি মিলেছে। এনিয়ে দেশে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে সাত লাখ ১৮ হাজার ৯৫০ জনে দাঁড়াল। গতকাল সুস্থ হয়েছে ছয় হাজার ১২১ জন। এনিয়ে দেশে করোনা থেকে সুস্থ রোগীর সংখ্যা বেড়ে ছয় লাখ ১৪ হাজার ৯৩৬ জনে পৌঁছালো। এছাড়াও গতকাল আরও ১০২ জনের মৃত্যুতে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দশ হাজার ৩৮৫ জনে ঠেকলো। গতকাল শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ০৬ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৪ শতাংশ।

গত একদিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৫৯ জন পুরুষ আর নারী ৪৩ জন। তাদের ৯৭ জন হাসপাতালে এবং পাঁচজন বাড়িতে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ৬৩ জনের বয়স ছিলো ৬০ বছরের বেশি, ২৩ জনের ৫১-৬০, ১৪ জনের ৪১-৫০ এবং ২ জনের ৩১-৪০ বছরের মধ্যে ছিলো। মৃতদের মধ্যে ৬৮ জন ঢাকা বিভাগের, ২২ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৩ জন রাজশাহী বিভাগের, ১ জন খুলনা বিভাগের এবং ৪ জন করে বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ১০ হাজার ৩৮৫ জনের মধ্যে সাত হাজার ৬৯৪ জনই পুরুষ এবং দুই হাজার ৬৯১ জন নারী।

আট মাস পর ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিন চালু

এদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আট মাস পর ফের ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিন চালু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতবছর ১১ আগস্ট স্বাস্থ্য বুলেটিন বন্ধ হয়। গতকাল রোববার বুলেটিনে অংশ নিয়েছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম। গত ১৪ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে ফের স্বাস্থ্য বুলেটিন চালুর বিষয়টি জানিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, জনগণের সামনে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে সরকারের নির্দেশনায় আবার স্বাস্থ্য বুলেটিন প্রচার করা হবে। সপ্তাহে দুদিন এটা করা হবে। তবে কোন দুইদিন অনলাইন বুলেটিন করা হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।

  • আগের চেয়ে দ্রুত মারা যাচ্ছেন রোগীরা
  • মানসিক সমস্যা বাড়ছে

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্তরা আগের চেয়ে দ্রুত মারা যাচ্ছেন। আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হারও বেড়েছে গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি তীব্রতা নিয়ে। মহামারির প্রভাব পড়ছে মানসিক স্বাস্থ্যেও। গত শনিবার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর।)

প্রতিবেদনে বলা হয়— এবছরের মার্চে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬৩৮ জন। এপ্রিলের ১৫ তারিখ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৯৪১ জনের। সে অনুযায়ী দুই সপ্তাহেই মৃত্যুর হার এক লাফে ৪৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ বেড়েছে। এ বছর এপ্রিলে আগের বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যু হারের চেয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল মাসের সঙ্গে এ বছরের একই সময়ের তুলনা করে দেখা গেছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কেউ মারা যায়নি, মার্চে পাঁচজন আর এপ্রিলে ১৬৩ জন মারা গেছেন । আর চলতি বছরের এই তিনটি মাসে মারা গেছেন যথাক্রমে ২৮১, ৬৩৮ এবং ৯৪১ জন।

২৮ জানুয়ারি থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে আইইডিসিআর বলছে, এ সময় আক্রান্তদের ৪৪ শতাংশই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ৩৩ শতাংশ রোগী প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে, ১৭ শতাংশ বাড়িতে এবং ছয় শতাংশ অন্যান্য উপায়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, যারা মারা গেছেন, তাদের ৫২ শতাংশই উপসর্গ শুরুর পাঁচদিনের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ২৬ শতাংশ পাঁচ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এবং ১২ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হন উপসর্গ শুরুর ১১ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পাঁচদিনের মধ্যে মারা গেছেন ৪৮ শতাংশ এবং পাঁচ থেকে ১০ দিনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৬ শতাংশ রোগীর। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে আইইডিসিআর জানিয়েছে, কোভিড-১৯ রোগী খুব দ্রুত মৃত্যুবরণ করছেন।

বেড়েছে মানসিক সমস্যা

করোনা ভাইরাস মহামারিতে সংক্রমণের আতঙ্ক, চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা, মৃত্যুভয়, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, বেকারত্বের কারণে মানসিক সমস্যা বেড়েছে বলেও জানিয়েছে আইইডিসিআর। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জরিপের ফলাফল তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মানসিক রোগের হার ছিলো ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে ছয় দশমিক সাত শতাংশের মধ্যে বিষণ্নতা এবং চার দশমিক সাত শতাংশ মানুষ ভুগেছেন দুঃশ্চিন্তায়।

আইইডিসিআর বলছে, কোভিড মহামারির সময় বাংলাদেশে পরিচালিত কয়েকটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৪৬ শতাংশের মধ্যে বিষণ্নতা, ৩৩ শতাংশের মধ্যে দুঃশ্চিন্তার লক্ষণ পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীরা চাপ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

আমারসংবাদ/জেআই