Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪,

লকডাউন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি

আসাদুজ্জামান আজম

এপ্রিল ২০, ২০২১, ০৮:১৫ পিএম


লকডাউন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি
  • মানতে হবে বিধি-নিষেধ, কঠোর থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
  • জরুরি প্রয়োজন ছাড়া প্রবাসীদের দেশে না আসার অনুরোধ
  • আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবে —শেখ ইউসুফ হারুন

মরণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নেয়া লকডাউন আর এক সপ্তাহ বাড়িয়েছে সরকার। অর্থাৎ ২১ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর আগে গত ১২ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকর করার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। লকডাউন পালনের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয়। নতুন মেয়াদেও এই নির্দেশনা কার্যকর থাকবে বলে গতকালের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, করোনা ভাইরাসজনিত রোগ সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের নির্দেশনার ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক বিশেষ ফ্লাইট চলাচল, ব্যাংকিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ আগের সব বিধিনিষেধের আরোপের সময়সীমা ২১ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র মতে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে আটদিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। সেই মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ বুধবার মধ্যরাতে। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় ৩১তম সভায় সংক্রমণরোধে আরও এক সপ্তাহের জন্য ‘কঠোর লকডাউন’ আরোপের সুপারিশ করে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। লকডাউনের মেয়াদ বাড়াতে সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সেখানে লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত সর্ম্পকে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন,  ‘আগের জারি করা নির্দেশনা মোতাবেক ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বিধি নিষেধ কার্যকর করা হবে।  ব্যাংক-বিমা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক খোলা রাখবে। আন্তর্জাতিক বিশেষ ফ্লাইট চলবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সবাইকে মাস্ক ব্যবহার এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। করোনা প্রবণ এলাকাগুলোতে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। শপিংমল বন্ধ থাকবে। কাঁচাবাজারগুলো খোলা জায়গায় বসবে।

নির্দেশনা অনুযায়ী— লকডাউন চলাকালীন সময়ে সব সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান (পরে ব্যাংক খুলে দেয়া হয়) বন্ধ থাকবে। প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। তবে প্লেন, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। সব ধরনের পরিবহন (সড়ক, নৌ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে (নতুন প্রজ্ঞাপনে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর অনুমতি দেয়া হয়েছে)। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন— কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা দেয়া, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (স্থল, নদী ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনা, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে। খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ করা যাবে। শপিংমলসহ অন্য দোকান বন্ধ থাকবে। কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে। বোরো ধান কাটার জরুরি প্রয়োজনে কৃষি শ্রমিক পরিবহনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সমন্বয় করবে। সারা দেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে।  স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেবেন।  স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমা ও তারাবি নামাজের জামায়াত বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি করবে। উপর্যুক্ত নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ প্রয়োজনে সম্পূরক নির্দেশনা জারি করতে পারবে। 

নানা অজুহাতে বের হচ্ছে মানুষ, ফেরিঘাটে জট : লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়লেও মানুষের মধ্যে বাড়েনি সচেতনতা। সর্বাত্মক লকডাউনের সপ্তম দিনে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সড়কে ছিলো যানবাহনের চাপ। গণপরিবহন ছাড়া সব ধরনের পরিবহন চলছে পুরোদমে। সেই সঙ্গে নানা অজুহাতে চলছে সাধারণ মানুষের অবাধ যাতায়াত। দিনের শুরুতেই রাস্তায় গণপরিবহন ছাড়া সব যানবাহনই চোখে পড়ার মতো রয়েছে— সেই সঙ্গে বেলা যত বেড়েছে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গাড়ি। সবার যুক্তি এক— জরুরি কাজ আছে। এমনকি ভিআইপি সড়কে নেমেছে রিকশাও। মানুষ ও পরিবহন সামলাতে নাভিশ্বাস পুলিশের। অর্থাৎ নানা অজুহাতে গন্তব্যে ছুটছে মানুষ। পুলিশি চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে গতকাল মাওয়া শিমুলিয়া ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় মানুষের ভিড় ছিলো লক্ষণীয়। ফলে স্বাভাবিক পারাপারে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে জরুরিসেবার যানবাহনগুলো। বিআইডব্লিউটিসির আরিচা সেক্টরের ডিজিএম জিল্লুর রহমান বলেন, সারা দেশে কঠোর লকডাউন পরিস্থিতিতেও সকাল হলেই পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় ছোট গাড়ির চাপ পড়ে। এখন প্রশ্ন, গাড়িগুলো কীভাবে মহাসড়ক পার হয়ে ঘাটে আসছে? সকাল থেকে তিন-চারটি অ্যামবুলেন্স ও লাশবাহী গাড়ি নৌপথ পারের অপেক্ষায় ছিলো, কিন্তু নৌপথ পাড়ি দিতে আসা যাত্রীদের চাপে পার করতে পারিনি ওই জরুরিসেবার যানবাহনগুলো। কারণ, পারের জন্য গাড়িগুলোকে ফেরিতে ওঠাতে গেলেই নৌপথ পারের অপেক্ষায় থাকা মানুষজন হুমড়ি খেয়ে ফেরিতে উঠে পড়েন।

ব্যাংকে লেনদেন চলবে আগের মতোই : ২৮ এপ্রিল অবধি সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ব্যাংকের লেনদেন চালু থাকবে। লেনদেন পরবর্তী অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করার জন্য ব্যাংক খোলা রাখা যাবে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আনোয়ারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি সার্কুলার দেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, বিধিনিষেধ চলাকালে ব্যাংকের স্থানীয় শাখাসহ সব অনুমোদিত ডিলার (এডি) শাখা ও জেলা সদরে অবস্থিত ব্যাংকের প্রধান শাখা খোলা রাখতে হবে। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রতি দুই কিলোমিটারের মধ্যে একটি (এডি শাখা না থাকলে) শাখা খোলা রাখতে হবে। এ সময় উপজেলা পর্যায়ে কার্যরত প্রতিটি ব্যাংকের একটি শাখা রোববার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার খোলা রাখতে হবে। ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ অফিসে আনা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিধিনিষেধ চলাকালে যে সব শাখা বন্ধ থাকবে সে সব শাখার গ্রাহকসেবা কার্যক্রম খোলা রাখা শাখার মাধ্যমে সম্পাদনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।  বন্ধ শাখার গ্রাহকদের গ্রাহক সেবা প্রাপ্তির বিষয়ে অবহিত করতে ওই শাখার দৃশ্যমান স্থানে তা বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করতে হবে। খোলা রাখা সব শাখার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন করে রোস্টারিংয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ও সীমিত জনবল দিয়ে ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে হবে। সমুদ্র, স্থল, বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থিত ব্যাংকের শাখা, উপশাখা, বুথ সার্বক্ষণিক খোলা রাখতে স্থানীয় প্রশাসনসহ বন্দর/কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাক্রমে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এটিএম ও কার্ডের মাধ্যমে লেনদনে চালু রাখার সুবিধার্থে এটিএমবুথে পর্যাপ্ত নোট সরবরাহসহ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা সার্বক্ষণিক চালু রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রবাসীদের দেশে না আসার অনুরোধ : চলমান লকডাউনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দেশে না আসার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ লক্ষ্যে বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোকে নির্দেশনাও দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। লকডাউনের মধ্যেও বিশেষ ফ্লাইটে বিদেশ থেকে প্রবাসীরা দেশে ফিরতে চাইছেন। এছাড়া অনুমোদিত পাঁচটি দেশের বাইরেও অনেক প্রবাসী দেশে ফিরতে আগ্রহী। তবে প্রবাসীরা এখনই যেনো দেশে না আসেন, সে লক্ষ্যে বিদেশের মিশনগুলোকে উদ্যোগ নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। চলমান লকডাউনে বাংলাদেশে আটকে পড়া প্রবাসীদের বিষয়ে বিবেচনায় নিয়ে শুধু পাঁচটি দেশের সঙ্গে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এ পাঁচটি দেশ হলো— সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান ও সিঙ্গাপুর। লকডাউনের মধ্যেও এসব দেশে প্রবাসীরা যেতে পারবেন। তবে বিদেশ থেকে এখনই প্রবাসীদের বাংলাদেশে না আসার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

আমারসংবাদ/জেআই