Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় তৎপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

মাহমুদুল হাসান

এপ্রিল ২০, ২০২১, ০৮:১৫ পিএম


দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় তৎপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এখন নিয়ন্ত্রণহীন। অদৃশ্য ভাইরাসে কাবু গোটা বিশ্ব। বাংলাদেশও তার আঁচ থেকে রক্ষা পায়নি। প্রতিনিয়ত শনাক্ত-মৃতে গড়ছে রেকর্ড। প্রথম ঢেউ মোকাবিলায় সক্ষমতার পরিচয় দিয়ে ওঠে এসেছে বৈশ্বিক জরিপে। ব্লুমবার্গের তালিকায় শীর্ষে ওঠে আসে বাংলাদেশ। এসব অভিজ্ঞতার আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ মোহাম্মদ আলমের নেতৃত্বে একদল নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বাস্থ্যসেবা প্রশাসনের কর্মীরা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় কাজ করছেন। সফলতাও মিলতে শুরু করেছে।

গত মার্চে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ঢেউ এখন স্থিতিশীল। সংক্রমণ শনাক্তের হার কিছুটা নিম্নমুখী। গতকাল মৃত্যুও কমে এসেছে। গত বছর ২৩ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেন। এরপর থেকেই তিনি আপন আলোয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চেহারা পাল্টে দেয়ার সংগ্রাম শুরু করেন। করোনা সংকট মোকাবিলায় জীবনের মায়া ত্যাগ করে কাজে নেমে পড়েন। গত মার্চের মাঝামাঝি তিনি কয়েকজন কর্মকর্তাসহ করোনা আক্রান্ত হোন। কিন্তু থেমে থাকেননি। বাসায় আইসোলেশনে থেকেও তিনি নিয়মতি ভার্চুয়ালি দায়িত্ব পালন করেছেন। খোঁজ নিয়েছেন সারা দেশের কর্মকাণ্ডের। সুস্থ হয়ে কাল বিলম্ব না করে ফের কাজে নেমে পড়েন। তার মেধা, মনন একদল পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কর্মচারীর অক্রান্ত শ্রমে স্বাস্থ্যসেবা খাত এখন সাধারণ মানুষের আস্থার ঠিকানায় পরিণত হয়েছে। ফলে ছোট্ট দেশ হয়েও ব্লুমবার্গের তালিকায় শীর্ষে ওঠে আসার সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোটা বিশ্বে ৫৪তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে করোনার গণটিকাদান চলছে। টিকার জন্য যখন বিশ্বজুড়ে হাহাকার বাংলাদেশ তখন অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকা হাতে পেয়েছে। রোগী বৃদ্ধিও সাথে সাথে জ্যামিতিকহারে দেশে বেড়েছে সাধারণ ও নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) বেড। সংক্রমণ কোনপর্যায়ে রয়েছে সেটি নির্ধারণের জন্য প্রয়োজন বেশি বেশি নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা। একটি ল্যাব থেকে এখন করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা হচ্ছে ২৬৫টি ল্যাবে। মাত্র বিশ দিনে রাজধানীর মহাখালীস্থ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বহুতল মার্কেটে স্থাপন করা হয়েছে এক হাজার বেডের সবচেয়ে বড় কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল। একশরও বেশিসংখ্যক হাসপাতালে এখন স্থাপন করা হয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন। আরও ৩৪টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। জেলা সদর জেনারেল হাসপাতালেও আইসিইউ স্থাপনের কাজ চলছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জিনোমসিকোয়েন্সিংয়ে জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শুধু আমদানিকৃত টিকায় ভরসা না রেখে দেশেই টিকা উৎপাদনে প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়েছেন। সে বিষয়টি নিয়েও কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ফের আটমাস পর ভার্চুয়াল বুলেটিন চালু করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, একটি থেকে এখন সরকারি বেসরকারি ১২২টি আরটিপিসিআর ল্যাব, ৩৪টি জিন এক্সপার্ট ল্যাব ও ১০৯টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাবসহ ২৬৫টি ল্যাবে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা চলছে। করোনা টিকিৎসায় নিয়োজিত সারা দেশের সরকারি ১০০ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা রয়েছে। আরও ৩৪টি হাসপাতালে স্থাপনের কাজ প্রক্রিয়াধীন। ২০ হাজার ১০৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। এক হাজার ৫২৭টি হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ও এক হাজার ২৫১টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর রয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে করোনা রোগীর জন্য ১২ হাজার ১৩৯টি সাধারণ বেড ও এক হাজার ৫টি আইসিইউ বেড রয়েছে।

টিকার তথ্যও বেশ আশাব্যঞ্জক। গত সাত ফেব্রুয়ারি থেকে ৫৪তম দেশ হিসেবে করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক কোভিশিল্ড টিকার প্রয়োগ করা হচ্ছে। সম্মুখসারীর যোদ্ধা ও চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা এখন নিবন্ধন ও টিকা গ্রহণ করতে পারছেন। এখন পর্যন্ত ৭১ লাখ ৪৮ হাজার ৮৩৮ জন মানুষ টিকা গ্রহণের জন্য নিবন্ধন করেছেন। ইতোমধ্যে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ৫৭ লাখ ২৯ হাজার ১৪৭ জন। প্রথম ডোজ টিকা প্রয়োগের সাথে সাথে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ডোজ টিকার প্রয়োগ। এ পর্যন্ত ১৫ লাখ সাত হাজার ২৮৭ জনকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। এছাড়াও সম্প্রতি করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে গত আট মাস পর ফের ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিন চালু করা হয়েছে। সপ্তাহে দুইদিন চলবে এ বুলেটিন।

আমারসংবাদ/জেআই