Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪,

স্বাভাবিকের চেয়ে গ্রাহক কম ব্যাংকে

এম এ আহাদ শাহীন

এপ্রিল ২০, ২০২১, ০৮:১৫ পিএম


স্বাভাবিকের চেয়ে গ্রাহক কম ব্যাংকে

করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও সাতদিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এতে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসজনিত রোগ সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যাংকিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, আন্তর্জাতিক বিশেষ ফ্লাইট চলাচলসহ আগের সব বিধিনিষেধ আরোপের সময়সীমা আগামী ২১ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো। এর আগে সারা দেশে ১৪ এপ্রিল থেকে বিধিনিষেধ শুরু হয়। এই সময়ে সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে। নিষেধাজ্ঞার প্রথম কয়েকদিন ব্যাংকে গ্রাহক উপস্থিতি কম থাকলেও আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করেছে।

গতকাল মঙ্গলবার সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে রাজধানীর ব্যাংক পাড়া মতিঝিল, দিলকুশাসহ আশপাশের এলাকায় দেখা গেছে, ব্যাংকগুলোর শাখায় গ্রাহক উপস্থিতি বেড়েছে। তবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় গ্রাহক কম। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ব্যাংকে আসছেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বিধিনিষেধের প্রথম দিকের তুলনায় গ্রাহক বেড়েছে। জমা-উত্তোলনের গ্রাহকই বেশি। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন কারখানা খোলা থাকায় এখন সাধারণ গ্রাহকের চেয়ে কর্পোরেট গ্রাহকের চাপ একটু বেশি। তবে পাড়া মহল্লার ব্যাংকের শাখাগুলোতে ইউটিলিটি বিল ও বিভিন্ন ডিপোজিট জমা দেয়ার সংখ্যা বেশি লক্ষ করা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ব্যাংকে লেনদেন হবে। লেনদেন-পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করার জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। জানতে চাইলে মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, ‘বিধিনিষেধের কারণে যানবাহন কম, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ব্যাংকে আসছে না। তবে গত দিনের তুলনায় আজ গ্রাহক কিছুটা বেড়েছে। বেশির ভাগ গ্রাহক টাকা জমা ও উত্তোলনের কাজে এসেছে।’ দিন যত যাবে, গ্রাহক তত বাড়বে বলেও জানান তিনি। বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংকের মতিঝিল শাখার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আজহার উদ্দিন বলেন, ‘আজও গ্রাহকের তেমন ভিড় নেই। তবে সাধারণ গ্রাহকের চেয়ে কর্পোরেট গ্রাহক এখন বেশি। কারণ গার্মেন্টস খোলা, তাদের অনেক প্রয়োজনে লেনদেন করতে হচ্ছে। তবে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে।’ মাস্ক ছাড়া কাউকে শাখায় ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

রাজধানীর মান্ডা এলাকায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শাখায় আসা সামছুদ্দিন নামে এক গ্রাহক জানান, ‘বিদ্যুৎ বিল দিতে এসেছি। করোনা পরিস্থিতি ভালো না। সামনে কী হয় জানি না। তাই আজ সুযোগ পেয়ে বিল দিতে এসেছি।’ করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারের জারি করা বিধিনিষেধ ১৪ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়। চলবে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত। এর আগে ৫ এপ্রিল থেকে সাতদিনের জন্য গণপরিবহন বন্ধসহ ১১ দফা কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সরকার। দুদিন পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন চলার অনুমতি দেয়া হয়। এর একদিন পর খুলে দেয়া হয় শপিংমলও। তখন সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে সমালোচনা করেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অফ-সাইট সুপারভিশনের মহাব্যবস্থাপক অনোয়ারুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক সার্কুলারে বলা হয়, গত ১৩ এপ্রিল ডিওএস কর্তৃক জারিকৃত সার্কুলার অনুযায়ী সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত দৈনিক ব্যাংকিং সময়সূচি সকাল ১০ টা থেকে ১টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হলো।

বিধিনিষেধ চলাকালে ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়সহ সকল অনুমোদিত ডিলার (এডি) শাখাও জেলা সদরে অবস্থিত ব্যাংকের প্রধান শাখা খোলা রাখতে হবে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন এলাকাধীন প্রতি দুই কিলোমিটারের মধ্যে একটি শাখা (এডি শাখা খোলা না থাকলে) খোলা রাখতে হবে। তাছাড়া, এ সময়ে উপজেলা পর্যায়ে কার্যরত প্রতিটি ব্যাংকের একটি শাখা বৃহস্পতিবার, রোববার এবং মঙ্গলবার খোলা রাখতে হবে। ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ অফিসে আনা-নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গ্রহাকের হিসাবে সর্বপ্রকার জমা এবং উত্তোলন, ডিমান্ড ড্রাফট, পে-অর্ডার ইস্যু ও জমা গ্রহণ, ট্রেজারি চালান গ্রহণ, সরকারের প্রদত্ত ভাতা-অনুদান বিতরণ, বৈদেশিক রেমিট্যান্সের অর্থ পরিশোধ, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, টেলিফোন বিল গ্রহণসহ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃৃক চালু রাখা বিভিন্ন পেমেন্ট সিস্টেমের ক্লিয়ারিং ব্যবস্থার আওতাধীন অন্যান্য লেনদেন সুবিধা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, সমুদ্র, স্থল, বিমান বন্দর এলাকায় অবস্থিত ব্যাংকের শাখা উপ-শাখা, বুথসমূহ সার্বক্ষণিক খোল থাকবে। তবে স্থানীয় প্রশাসনসহ বন্দর, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনে যথাযথ ভূমিকা গ্রহণ করবেন। ব্যাংক খোলা থাকবে বেলা বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। লেনদেন চালবে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ব্যাংকের প্রতিটি শাখা একদিন পরপর খোলা থাকবে। অর্থাৎ শাখাগুলো একদিন বন্ধ থাকলে পরের দিন খোলা থাকবে। এই নিয়মে চলবে উপজেলা পর্যায়ের শাখাও। জেলা পর্যায়ে সদর শাখা খোলা থাকবে। আর বৈদেশিক বাণিজ্য শাখাগুলো খোলা থাকবে নিয়মিত।

আমারসংবাদ/জেআই