Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

বিকল্প টিকার খোঁজে দেশ

মাহমুদুল হাসান

মে ৩, ২০২১, ০৮:১৫ পিএম


বিকল্প টিকার খোঁজে দেশ
  • টিকা কেনার জন্য চীনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে -জাহিদ মালেক, মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়
  • মডার্নার টিকা আনতে একটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে -অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
  • মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই হলো সবচেয়ে বড় টিকা -অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম, মুখপাত্র, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই গোটা বিশ্ব টিকার জন্য তাকিয়ে ছিলো। সংক্রমণের এক বছর না যেতেই মিলেছে বিশ্বের কয়েকটি দেশে টিকা। তবে শুরু থেকেই টিকার ন্যায্য বণ্টন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিল খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। বাংলাদেশও চাতকের মতো তাকিয়ে ছিলো। গত ৭ ফেব্রুয়ারি ৫৪তম দেশ হিসেবে শুরু হয় গণটিকাদান কর্মসূচি। শুরুতেই টিকা সংগ্রহে এসেছিল বড় সুযোগ। চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। সফল হলে বাংলাদেশকে বিশেষ সুযোগের প্রস্তাব। কিন্তু বাংলাদেশ তখন প্রস্তাবটিতে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে কালক্ষেপণ করে। শুরু থেকেই টিকা সংগ্রহের বিষয়ে শুধু একটি দেশের ওপর নির্ভরশীল হয়েছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ জন্যই তখন সিনোভ্যাকের প্রস্তাবও মূল্যায়ন করা হয়নি। 

তথ্যমতে, গত বছর ৫ নভেম্বর অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকার ভারতীয় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট, তার এদেশীয় পরিবেশক বেক্সিমকো ফার্মা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মধ্যে তিন কোটি ডোজ ক্রয়ের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুসারে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ টিকা প্রদানের কথা রয়েছে। বেক্সিমকোর তথ্যমতে, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দেড় কোটি ডোজের অগ্রিম টাকাও পরিশোধ করেছে। কিন্তু চুক্তির কোনো শর্তই পালন করেনি সেরাম। দুই মাসে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করেছে। সম্প্রতি কাঁচামাল সংকটের অজুহাতে টিকা সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। আগামী জুন-জুলাইয়ের আগে এ সংকট কাটিয়ে ওঠারও নিশ্চয়তা নেই।

করোনা সংকট মোকাবিলায় দেশে চলছে গণটিকাদান। কিন্তু তারমধ্যে দেশের একমাত্র টিকা সরবরাহের উৎস থেকে টিকা প্রাপ্তি বন্ধ হওয়ায় অনেকটা সংকটে পড়ে দেশ। আবার দেশে যেই টিকা মজুদ রয়েছে তার মাধ্যমে সবার দ্বিতীয় ডোজও প্রয়োগ সম্ভব নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রথম ডোজ যে প্রতিষ্ঠানের টিকা দেয়া হয়েছে তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজও একই প্রতিষ্ঠানের প্রয়োগ করতে হবে। তবে এ বিষয়ে সেরামের সঙ্গে এখনো কোনো সমঝোতা হয়েছে কিনা জানা যায়নি।

সম্প্রতি টিকার সংকট কেটে যেতে শুরু করেছে। রাশিয়া তাদের আবিষ্কৃত স্পুটনিক ভি দেশেই উৎপাদনে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে। চীনা ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে চললো আলোচনা। সম্প্রতি চীনের সিনোফার্ম পাঁচ লাখ ডোজ টিকা উপহার পাঠানোর কথা বলেছেন। চলতি মাসের শুরুতেই উপহারের টিকা দেশে আসার কথা রয়েছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার টিকা আমদানির বিষয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালস সরকারের কাছে আবেদন করেছে। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, বহুমাত্রিক উপায়ে টিকা সংগ্রহের এ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার। তবে সময়টা একটু বিলম্বে হয়েছে। তবে তৎপরতা অব্যাহত থাকলে দেশেই টিকা তৈরিতে অনেকে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাবে।

এদিকে গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, প্রথম ডোজ নিয়ে দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষারত ব্যক্তিরা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা না পেলে কি করবেন এ ব্যাপারে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো এখনো নির্দিষ্ট করে কোনো পরামর্শ দেয়নি। প্রথম টিকা যে কোম্পানির নেয়া হয়েছে, দ্বিতীয় ডোজও সেই কোম্পানির নিতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা ১২ সপ্তাহ অপেক্ষা করবো। ভ্যাকসিন নিয়ে সারা বিশ্বে এক ধরনের ডিপ্লোম্যাসি আছে, এক ধরনের রাজনীতি আছে। তারপরও মানবতার চূড়ান্ত জয়গান যেনো হয়। আমরা এ পর্যন্ত দেখেছি, শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সাফল্য পেয়েছে। যে কারণে আস্থা রাখতে চাই, আমরা ভ্যাকসিন পেয়ে যাবো। তাহলে আমরা দ্বিতীয় ডোজটিও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে শেষ করতে পারবো। তিনি বলেন, আশা করছি, এ মাসেই চীনের ভ্যাকসিন আসবে। টিকা আসতে দেরি হোক বা যাই হোক না কেন, যতক্ষণ টিকা হাতে না আসছে মাস্ক হলো সবচেয়ে বড় টিকা। এটি সহজলভ্য, আমরা সবাই নিয়ম মেনে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেটি ব্যবহার করি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, মডার্নার টিকা আনার জন্য রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালস আবেদন করেছে। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে (ডিজিডিএস) পাঠানো হয়েছে। তারা যাচাই-বাছাই করে দেখছেন, ওই কোম্পানির সক্ষমতা আছে কিনা, তারা আনতে পারবেন কিনা। এখন পর্যন্ত আমাদের ক্যাপাসিটিতে আমরা এটা ঢাকায় রাখতে পারবো। কিন্তু ঢাকার বাইরে এই টিকা সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নেই। তিনি বলেন, চীন আমাদেরকে বলেছিল আমরা টিকা নেবো কিনা। আমরা নিতে রাজি আছি, সেটা তাদের জানিয়েছি। কিন্তু টিকা কবে আসবে সেই তারিখ তারা আমাদেরকে এখনো জানায় নাই।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, টিকা কেনার জন্য চীনকে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। চীন তাতে সম্মত হলে আলোচনা শুরু হবে। চীন আমাদের বলেছে পাঁচ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দেবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটা আনার ব্যবস্থা করছে, হয়তো ১০ তারিখের মধ্যে বাংলাদেশে আসতে পারে। রাশিয়ার সঙ্গেও আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা টিকা দিতে চায়, উৎপাদনও করতে চাচ্ছে। আমরা দুটি দেশের সঙ্গেই কথা বলে রাখছি।

আমারসংবাদ/জেআই