আসাদুজ্জামান আজম
মে ৩, ২০২১, ০৮:১৫ পিএম
দেশব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আশানুরূপ নিয়ন্ত্রণে না আসায় ফের আরেক দফা চলমান বিধিনিষেধ (লকডাউন) বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। লকডাউনের মেয়াদ আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্তে ঈদকালীন সময়ে নাগরিকদের স্থান ত্যাগ করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকছে। বাকি শর্তগুলো থাকবে আগের মতোই। তবে ৬ মে থেকে জেলার মধ্যে গণপরিবহন চলবে। আন্তঃজেলা গণপরিবহন, ট্রেন ও লঞ্চ বন্ধ থাকবে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এমনটা সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে সিদ্ধান্ত হয়েছে লকডাউন যেটা আছে সেটা ১৬ মে পর্যন্ত এভাবেই কন্টিনিউ করবে। ৬ মে থেকে গণপরিবহন জেলার মধ্যে চলাচল করতে পারবে। আন্তঃজেলা বাস চলাচল করতে পারবে না। ঢাকার বাস ঢাকার মধ্যে চলাচল করবে। এছাড়া লঞ্চ ও ট্রেন বন্ধ থাকবে। তিনি আরও বলেন, গণপরিবহন মালিকরা আমাদের কথা দিয়েছেন, কোনোভাবেই গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করা হবে না। লঙ্ঘন করা হলে বন্ধ করে দেয়া হবে। সেই নির্দেশনাও দেয়া আছে। সেটা আমরা দেখবো।
ঈদ আগামী ১৪ মে শুক্রবার হতে পারে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোনো বন্ধ দেয়া যাবে না। ঈদের ছুটি তিনদিনের মধ্যে দুটি পড়েছে শুক্র ও শনিবার। শিল্পকারখানাও এই সময়ে বন্ধ দিতে পারবে না।
সরকারি অফিস বন্ধ সেগুলোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না- জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘যেগুলো যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটা মিটিং হয়েছে। সেখানে সুপারিশ করা হয়, আজকে সেই বিষয়ে ক্যাবিনেট সিদ্ধান্ত দিয়েছে- আজকে থেকে পুলিশ, সিটি কর্পোরেশন, ম্যাজিস্ট্রেট ও অ্যাডমিনিস্ট্রেশন তারা দেশের প্রত্যেকটি মার্কেট সুপারভাইস করবে। কোনো মার্কেটে এতো লোক হয়তো কন্ট্রোল করা যাবে না কিন্তু মাস্ক ছাড়া যদি বেশি লোকজন ঘোরাফেরা করে প্রয়োজনে আমরা সেসব মার্কেট বন্ধ করে দেবো। ক্লিয়ারলি এটা বলে দেয়া হয়েছে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, দেশে বিপণিবিতান খোলা থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করলে সেসব তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দোকান-মালিক সমিতির সভাপতি ওনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। ওনারা নিজেরাও এটা সুপারভাইস করবেন। এছাড়া সর্বত্র মাস্ক ব্যবহার না করলে প্রশাসনিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি ছুটি তিনদিন। এ তিনদিনের সঙ্গে কোনো প্রতিষ্ঠান নিজস্ব উদ্যোগে অতিরিক্ত ছুটি দিতে পারবে না। এ সিদ্ধান্ত সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।
কোভিড-১৯ সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাপে ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত সাতদিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। লকডাউনের মধ্যে পালনের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এরপর দ্বিতীয় দফায় ১৪ এপ্রিল হতে ২১ এপ্রিল মধ্যরাতে পর্যন্ত ফের লকডাউন দেয়া হয়। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় লকডাউনের মেয়াদ আগামী ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়। চতুর্থ দফায় আরেক দফা বাড়িয়ে ৫ মে মধ্যরাত পর্যন্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ পঞ্চম দফায় ১৬ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এছাড়া আগের মতো জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া যথারীতি সরকারি-বেসরকারি অফিস, গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। খোলা থাকবে শিল্প-কারখানা। দফায় দফায় লকডাউন বাড়লেও মানুষের মধ্যে বাড়েনি সচেতনতা। গতকাল সোমবার রাজধানীর সড়কে ছিলো যানবাহনের চাপ। অনেক সড়কে যানজট ছিলো দৃশ্যমান। গণপরিবহন ছাড়া সব ধরনের পরিবহন চলছে পুরোদমে। সেইসঙ্গে নানা অজুহাতে চলছে সাধারণ মানুষের অবাধ যাতায়াত। মাকের্ট ও ব্যাংক ও শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলায় থাকায় সড়কে পুলিশি চেকপোস্ট তেমন দেখা যায়নি।
আমারসংবাদ/জেআই