Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

রমজানের শেষদিনগুলোর গুরুত্ব

আবরারুল হক

মে ৫, ২০২১, ০৭:৫৫ পিএম


রমজানের শেষদিনগুলোর গুরুত্ব
  • ঈদের সময় এটা পছন্দনীয় ও কাম্য। জুমা, ঈদ ও বিশেষ ক্ষেত্রগুলোতে ভালো পোশাক পরা উচিত। নবীজীর কাছে একটি উত্তম পোশাক ছিল, যা তিনি জুমা ও দুই ঈদে পরতেন। (সহিহ ইবনে খুযাইমা, ১৭৬৬)

ইসলামপূর্বযুগে মদীনায় দুটি উৎসব প্রচলিত ছিল। এগুলো ছিল ধর্মনিরপক্ষ উৎসব। যাতে কোনো ধর্মীয় দিক নির্দেশনা ছিল না, কোনো বিধি বিধান ছিল না। এরপর আল্লাহ মুসলিমদের জন্য ধর্মীয় ঈদ দিলেন, আল্লাহর রসূল জানিয়ে দিলেন, এটা আগের ধর্মহীন সেক্যুলার ঈদের চেয়ে উত্তম। (সুনানে আবু দাউদ, ১১৩৪)  সেক্যুলার ঈদে কোনো শিক্ষা নেই, কোনো ত্যাগের মহিমা নেই। সেখানে থাকে শুধু ভোগ আর ভোগ, বাধাহীন উল্লাস। অন্যদিকে আল্লাহ মুসলমানদের যে ঈদ দিয়েছেন, তাতে রবের প্রতি শোকরের শিক্ষা আছে, ত্যাগের মহিমা আছে। সেক্যুলার ঈদে দৈহিক-জৈবিক আনন্দ করা হয়। আত্মা ও সমাজ দূরে থাকে। এতে আছে শুধু খাব আর খাব, কিনব আর কিনব। ইসলামী ঈদের চেতনা হলো, খাব ও খাওয়াব, পরব ও পরাবো, আনন্দ করব, আনন্দিত করব। নীতি-নৈতিকতাহীন অবাধ আনন্দ-উল্লাস ইসলামী ঈদোৎসব নয়।

যে সাজসজ্জার মাঝে কোনো গুনাহের মিশ্রণ নেই, তা ইসলামে বৈধ। ঈদের সময় এটা পছন্দনীয় ও কাম্য। জুমআ, ঈদ ও বিশেষ ক্ষেত্রগুলোতে ভাল পোষাক পরা উচিত। নবীজীর কাছে একটি উত্তম পোষাক ছিল, যা তিনি জুমআ ও দুই ঈদে পরতেন। (সহীহ ইবনে খুযাইমা, ১৭৬৬) এ থেকে বোঝা যায়, নবীজী একই পোষাক বিভিন্ন ঈদে বারবার পরতেন। তাই, কোনো ব্যক্তি ঈদের দিনে তার সবচেয়ে ভাল পোষাকটি পরবে, এটাই কাম্য ও যথেষ্ট। সে পোশাকটা ঘটনাক্রমে নতুন হয়ে গেলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু প্রত্যেক ঈদে নতুন কাপড় হতেই হবে, এমন ভাবনাটা সুন্নাহসম্মত নয়। আর পোষাক ছাড়া অন্যান্য বিষয়ের জন্য তো সামান্য কোনো প্রমাণও নেই।

বর্তমানে এটা খুব আবশ্যক মনে করা হয় যে, ঈদ উপলক্ষ্যে পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য নিত্যনতুন ডিজাইনের ফ্যাশনের পোষাক কিনতে হবে। ঘরের সকলের  জন্য মাথার টুপি-পায়ের জুতা থেকে শুরু করে প্রতিটি জিনিস নতুন হতে হবে। আর এ কাজগুলো এত তীব্র প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা নিয়ে করা হয় যে, কেউ যেন কারো পিছনে না পড়ে যায়। কেউ যেন কারো কাছে হেরে না যায়। কোনো ব্যক্তির আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলেও সে এটা থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।

যে কোনো সীমালংঘনের একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। এসবের অনিবার্য পরিণতি এটা হয় যে, একজন মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত ব্যক্তির জন্য ‘ঈদের আনন্দ উৎসব’ একটি মহাদুশ্চিন্তা ও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাড়ায়। একপর্যায়ে যখন দেখা যায়, হালাল উপার্জনের মাধ্যমে পরিবারের সকলের চাহিদা ও আবদার পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না, তখন সে বাধ্য হয়ে অবৈধ পথের সন্ধান করে। একটু চিন্তা করে দেখুন, শুধু এ বিষয়টি না জানি কত অন্যায়, দুর্নীতি, মিথ্যাচার ও গুনাহের উৎস হয়ে থাকে।

এ বিষয়টির আরো একটি বড় ক্ষতি হলো, এর ফলে আমলের মাস রমজান ব্যবসা-বাণিজ্যের হয়ে গিয়েছে। যখন বরকতময় রমজান মাসে বিশেষকরে শেষ দশদিনের রাতগুলোতে বেশি বেশি নেক আমলে লিপ্ত থাকা উচিত, তখন সে সময়টা উল্টা ঈদের আনন্দ আয়োজনে বাজারে বাজারে আর মার্কেটে মার্কেটে শপিং করে নষ্ট হয়ে যায়। অথচ ইতিহাসে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না যে, সাহাবাদের যুগে রমজান মাস ব্যবসা-বাণিজ্যের বিশেষ মৌসুম ছিল। বিশেষকরে শেষদিনগুলো তো পুরস্কার লাভ ও গুনাহ মাফের আশায় আল্লাহর দরবারে পড়ে থাকার সময়।

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া মদীনাতুল উলুমকেরাণীগঞ্জ, ঢাকা

আমারসংবাদ/জেআই