Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

খালেদাকে নিয়ে উভয় পক্ষই মুশকিলে

মে ৮, ২০২১, ০৮:২৫ পিএম


খালেদাকে নিয়ে উভয় পক্ষই মুশকিলে
  • খালেদা জিয়ার মানবিক বিদেশযাত্রার ভাগ্য নির্ধারণ হতে পারে আজ
  • কোনো পক্ষই খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থায় রিস্ক নিতে চাচ্ছে না
  • করোনা ও অর্থনৈতিক সংকটে খালেদা জিয়া ইস্যুতে চাপ নিতে চায় না সরকার
  • যাত্রাপথে কিংবা বিদেশ নেয়ার অল্প সময়ের মধ্যে যদি অঘটন ঘটে, তখন পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে এমন হিসাব থেকেই বিএনপির নীরবতা
  • অসুস্থ ও মানবিকতায় বিনাশর্তে নেত্রীকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিতে চায় বিএনপি 

সরকার খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে পাঠাতে ইতিবাচক। দেয়া হয়েছে সবুজ শঙ্কেত। পাসপোর্ট ও ভিসা জটিলতাও প্রায় কেটে গেছে। ক্ষমতাসীন সরকার ও বিএনপিই এখন যাত্রায় বাধাতে রাজনৈতিক মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসকরা মনে করছেন, শারীরিক অবস্থার কারণে খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা এখন ঝুঁকিপূর্ণ। এ নিয়ে সরকার ও বিএনপি উভয়পক্ষই জটিলতায় পড়েছে।

ক্ষমতাসীন সরকার এবং বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, কোনো পক্ষই এখন খালেদা জিয়ার বিষয়ে রিস্ক নিতে চাচ্ছে না। উভয় পক্ষই দেশের বাইরে পাঠাতে একমত। কিন্তু ঝুঁকির হিসাব দু’দলই কষছে। নানান হিসাবে ঝুলে গেছে বিপজ্জনক মুহূর্তে থাকা খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা। সরকার হিসাব করছে— বেগম জিয়া বিদেশ গেলে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে কোনো প্রভাব পড়বে কি-না। কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যদি খালেদা জিয়ার কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তার দায়ভার সকারের ওপর কীভাবে বর্তাবে, সেসব। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, এখন খালেদা জিয়ার শারীরিক যে পরিস্থিতি এতে করে যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এর মধ্যে যদি আকাশপথে ঝুঁকি থাকে কিংবা দেশের বাইরে নেয়ার পর যদি কিছু সময় দীর্ঘায়িত না হয় তাহলে পরিস্থিতি কী হবে। রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি তখন কিভাবে দেখা হবে। দলের শীর্ষ নেতাদের উপর চাপ আসবে কি-না।

কারণ এখন যে পরিস্থিতিতে রয়েছে এর মধ্যে যদি খালেদা জিয়ার অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে তাহলে পুরো বিষয়টি বন্দিত্বের মানদণ্ডে বিবেচনা করা হবে। একটা রাজনৈতিক সহানুভূতি থাকবে বিরোধী দলের ওপর। আর যদি দেশের বাইরে কিছু ঘটে তাহলে সরকার মানবিকতার উদাহরণ হয়ে থাকবে। এখন বিএনপি কী সরকারকে মানবিকতার উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করাতে সুযোগ দেবে— নাকি রাজনৈতিক হিসাবে থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ক্ষমতাসীন সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে,  সরকার মানবিকতা প্রকাশ করছে। খালেদা জিয়ার অস্বাভাবিক ঘটনা থেকে মুক্ত হতে চাচ্ছে। সহজভাবেই দেশের বাইরে যেতে সব ব্যবস্থা করছে। কারণ সরকার কোনোভাবেই বন্দি মৃত্যুর দায় নিতে চাচ্ছে না। এর মধ্যে দেশে চলছে মহা অর্থনৈতিক সংকট। লকডাউনের কারণে তছনছ রাষ্ট্রের শক্তিশালী কাঠামো। এর মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া গেছে ভারতীয় ভয়ঙ্কর করোনার ধরন। বহুমুখী চাপের মধ্যে সরকার স্বাভাবিকভাবেই খালেদা জিয়াকে নিয়ে এখন নয়া চাপে পড়তে চাচ্ছে না। মানবিক দৃষ্টিতে সহজভাবে চিকিৎসা নিশ্চিতে দেশের বাইরে যেতে সরকারও সহযোগিতা করছে। এ নিয়ে বিএনপির শীর্ষ এক  নেতার কাছে জানতে চাইলে তিনিও শঙ্কার কথা জানান।

ওই নেতা শুরু থেকেই খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রায় আবেদন থেকে শুরু করে সব কিছুর সাথে জড়িত। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, ‘সরকার খালেদা জিয়ার বিষয়ে এখন আর কোনো ধরনের রিস্ক নিতে চাচ্ছে না। এ জন্য স্বাভাবিকভাবেই সহজে সবকিছু গ্রহণ করছে। এখন সরকার যেমন নানান রাজনৈতিক হিসাব সহজ করে দিয়েছে, তেমনি বিএনপিকেও এখন নানা ধরনের হিসাব করতে হচ্ছে।

কারণ পথে কিংবা বিদেশ নেয়ার অল্প সময়ের মধ্যে যদি অঘটন ঘটে তখন প্রেক্ষাপট কোন দিকে যাবে! খালেদা জিয়ার বন্দি রাজনৈতিক ইস্যু কী বিএনপির ঘরে আসবে নাকি ক্ষমতাসীন সরকারের ঘরে যাবে!

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, ‘এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি’। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন। তবে বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, আইন মন্ত্রণালয় আমাদের কাছে পাঠালে আমরা দেখবো।’ তবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার বিষয়ে আজ রোববার সকালের মধ্যেই আইন মন্ত্রণালয় থেকে মতামত দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব- উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়াকে এ মুহূর্তে বিদেশে নেয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ করোনাকালে যোগাযোগ ব্যবস্থা সীমিত হয়ে গেছে। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসার চেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা চিকিৎসার নামে রাজনীতি নিয়ে বেশি ব্যস্ত। আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখেছি, বিএনপি নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার পরিবর্তে নানাভাবে সরকারকে প্রেশার ক্রিয়েট করার অপ্রাসঙ্গিক এবং অপ্রয়োজনীয় চেষ্টা চালিয়েছে।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া এই দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার অসুস্থতা নিয়ে লুকোচুরি খেলার কোনো কারণ নেই মির্জা ফখরুল সাহেবের। কারণ বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কী তা জানার অধিকার দেশবাসীর রয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আমার সংবাদকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়াকে নিয়ে অহেতুক রাজনৈতিক মন্তব্য করছেন। আমরা কোনোভাবেই সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে রাজনীতি করছি না। আমরা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চাই। সরকারের উচিত মানবিক দৃষ্টিতে বিবেচনা করা। আর আমরা সরকার থেকে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পরই আবেদন করেছি। এখন সরকার যেসব শর্ত দিতে চাচ্ছে, তা উঠিয়ে বিদেশ যাত্রা সহজ করে দেয়া উচিত। মানবিক দৃষ্টিতে খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া দেশের লাখো কোটি মানুষের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যথায় খালেদা জিয়ার কিছু হয়ে গেলে এর দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে।’

আমারসংবাদ/জেআই