Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

দেশে ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্টের আঘাত!

মাহমুদুল হাসান

মে ৮, ২০২১, ০৮:২৫ পিএম


দেশে ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্টের আঘাত!
  • দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে -অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
  • ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে -অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
  • ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে বলে শুনেছি -ডা. শেখ আবু শাহীন, সিভিল সার্জন, যশোর জেলা

সীমান্ত বন্ধ করেও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট থেকে শেষরক্ষা হলো না। ভাইরাসের নতুন এই ধরনটি দেশে শনাক্ত হলো! সম্প্রতি বেনাপোল স্থলবন্দর পথে ভারতফেরত যাত্রীদের নমুনায় এই ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) আলাদাভাবে পরীক্ষা করেছে। দুই প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষাতেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়েছে। নতুন ধারার মিউট্যান্টটি প্রথমে ভারতে শনাক্ত হওয়ায় নাম দেয়া হয়েছে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট। তবে ধরনটির আনুষ্ঠানিক নাম বি দশমিক এক দশমিক ৬১৭। এই ভাইরাসের তিনটি সাব-টাইপ রয়েছে। তার মধ্যে বি দশমিক এক দশমিক ৬১৭ দশমিক দুই ধারা বাংলাদেশসহ ইতোমধ্যে প্রায় দুই ডজন দেশে শনাক্ত হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘বাংলাদেশে শনাক্ত ভারতীয় ধরনটি অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে দেশজুড়ে এখন নয়া উদ্বেগ। গেলো বছরের ৫ অক্টোবর ভারতের মহারাষ্ট্রে নতুন ধারার ভাইরাসটি প্রথমে শনাক্ত হয়। পরে রাজ্যে রাজ্যে ছড়িয়ে পাড়ে।’ নতুন ধরনের উপস্থিতির পর থেকেই ভারতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে সংক্রমণ ও মৃত্যু। গতকাল একদিনেই ভারতে চার হাজারেরও বেশি মানুষ করোনায় প্রাণ হারায়। নতুন রোগী শনাক্ত হয় চার লাখেরও বেশি। গোটা ভারত আজ লণ্ডভণ্ড।

বাংলাদেশে সেই ধারার ভাইরাস শনাক্তের পর দেশেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও আতঙ্কিত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গেলো মাসের শেষদিকে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। ২৬ এপ্রিল থেকে দুই সপ্তাহের জন্য ভারতীয় সীমান্ত বন্ধ করা হয়। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে অনেকে আটকা পড়েন। কারো কারো ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ফলে বিষয়টিকে মানবিকভাবে বিবেচনা করা হয়। দূতাবাসের বিশেষ অনুমতিতে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এতই বাধে বিপত্তি। সম্প্রতি শুধু বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারত ফেরত ২৪ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়। তাদের সবাইকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনো সেখানে ১৬ করোনা রোগী ভর্তি রয়েছে। সেখান থেকেও সাত রোগী পালিয়ে যায়। যদিও বিষয়টি জানাজানি হলে পরে আবার তাদের প্রশাসনিক সহায়তায় হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে গতকাল সবচেয়ে আতঙ্কেও খবরটি আসে। ইতোমধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটায় (জিআইএসআইডি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। নমুনাগুলো থেকে জিনোম সিকোয়েন্স করা হয় আইইডিসিআরের ল্যাবে। তথ্য আপলোড করেছে ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভস (আইদেশি)।

জিআইএসআইডি-এর তথ্যমতে, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বি-১৬১৭ যাদের শরীরে পাওয়া গেছে সেই দুইজনের বয়স ৪১ এবং ২৩। তারা ভারতে ভ্রমণে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের একজন খুলনার এবং একজন ঢাকার। তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয় গত ২৮ ও ২৯ এপ্রিল। তাদের একজনের ভ্যাকসিন নেয়ার কোনো ইতিহাস নেই। আরেকজনের বিষয়ে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই।’

খবরটি শোনামাত্র যশোর সিভিল সার্জন কর্মকর্তা ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, ‘ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট দেশে শনাক্ত হয়েছে বলে আপনাদের কাছেই শুনেছি। এখনো আমার সঙ্গে কেউ অফিসিয়ালি যোগাযোগ করেনি। এ পর্যন্ত যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভারতফেরত ২৪ জন করোনা রোগী ভর্তি করা হয়। তার মধ্যে ১৬ জনের শরীরে ভাইরাস সক্রিয় থাকায় তাদের ভর্তি রাখা হয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘এভারকেয়ার হাসপাতালে একটি নমুনা পাওয়া গেছে। সেটি আমি দেখেছি। ধরা পড়েছে বলেই এ ধরনের তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, সমপ্রতি বেনাপোল বন্দর হয়ে ভারতফেরত কয়েকজনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জিন বিন্যাস বিশ্লেষণ করা হয়। তার মধ্যে দুটি নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেশি। আমরা উদ্বিগ্ন। খুবই বেশি সতর্ক থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইইডিসিআর আলাদাভাবে পরীক্ষা করেছে। দুই প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষাতেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়েছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীরা ভারত থেকে ফিরেছেন। তারা চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন। বর্তমানে তারা যশোরে অবস্থান করছেন।’

আমারসংবাদ/জেআই