Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

রোজা পরিশুদ্ধ করে সদকাতুল ফিতরা

মুফতি মাহমুদুল হক জালীস

মে ৯, ২০২১, ০৯:১৫ পিএম


রোজা পরিশুদ্ধ করে সদকাতুল ফিতরা
  • কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, যে রসুল সা. এর হুকুম মান্য করল, সে আল্লাহর হুকুমই মান্য করল। আর যে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল, আমি আপনাকে তাদের জন্য পর্যবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি। সূরা নিসা,আয়াত ৮

এক এক করে রমজানের রোজা শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ বছর আমরা যারা রোজা পেয়েছি; সামনের বছর রোজা পাই কিনা জানি না। তাই আদায়কৃত রোজাগুলোকে পরিপূর্ণ পরিশুদ্ধ করতে হবে। ইচ্ছায়- অনিচ্ছায় যদি এতে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয় সেগুলো দূর করতে হবে। সেইজন্য আল্লাহ রোজার শেষে একটি বিধান দিয়েছেন। তা হচ্ছে, ‘সদকাতুল ফিতর’ আদায় করা। এর মাধ্যমে রোজার ভুল-ত্রুটিগুলোকে পরিশুদ্ধ করে পূর্ণতা দেয়া হয়।

রসুল সা. সদকাতুল ফিতের আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রসুল সা. সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন অশ্লীল ও অনর্থক কথা-বার্তার কারণে রোজায় ঘটে যাওয়া ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো দূর করার জন্য ও মিসকিনদের খাদ্য প্রদানের জন্য। ঈদের সালাতের পূর্বে আদায় করলে তা সদাকাতুল ফিতর হিসাবে গণ্য হবে। আর ঈদের সালাতের পর আদায় করলে তা অন্যান্য সাধারণ দানের মতো একটি দান হিসেবে গন্য হবে। আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ।

ইসলাম সদকাতুল ফিতর মুসলিম নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, আজাদ-গোলাম সকলের উপর ওয়াজিব করেছে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, রসুল সা. রমজান মাসে আজাদ, গোলাম, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সকল মুসলিমের উপর এক সা’ খেজুর, বা এক সা’ যব সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন। পেটের বাচ্চার পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর দেয়া ওয়াজিব নয়, কিন্তু কেউ যদি আদায় করে, তাহলে নফল সদকা হিসেবে আদায় হবে। হযরত উসমান রা. পেটের বাচ্চার পক্ষ থেকে সদকায়ে ফিতর আদায় করতেন। ফিতরা নিজের পক্ষ থেকে এবং নিজের পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে আদায় করবে। যেমন স্ত্রী ও সন্তান। যদি তাদের নিজস্ব সম্পদ থাকে তবে তাদের সম্পদ থেকেই সদকাতুল ফিতর আদায় করবে। কারণ এটা রসুল সা. এর হুকুম। আর রসুলের হুকুম মানা সকল মুসলমানদের জন্য আবশ্যক। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, যে রসুল সা. এর হুকুম মান্য করল, সে আল্লাহর হুকুমই মান্য করল। আর যে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল, আমি আপনাকে তাদের জন্য পর্যবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি। সূরা নিসা,আয়াত ৮।

সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ রসুল সা. এর যুগের এক সা’ ছিল। যার ওজন চার শত আশি মিসকাল গম। ইংরেজি ওজনে যা দুই কেজি ৪০ গ্রাম গম। যেহেতু এক মিসকাল সমান চার গ্রাম ও এক চতুর্থাংশ হয়। সুতরাং ৪৮০ মিসকাল সমান ২০৪০ গ্রাম হবে। অতএব রাসূলের যুগের সা’ জানতে ইচ্ছা করলে, তাকে দুই কেজি চল্লিশ গ্রাম গম ওজন করে এমন পাত্রে রাখতে হবে, যা মুখ পর্যন্ত ভরে যাবে। তারপর এটা পরিমাপ করে জিনিস  অথবা তার মূল্য গরীবদের মাঝে বন্টন করে দিতে হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এ বছর সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩১০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৭০ টাকা নির্ধারণ করেছে।

সদকাতুল ফিতের আদায়ের অনেক উপকারিতা রয়েছে-

এতে দরিদ্র ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা হয়। ঈদের দিনগুলোতে দরিদ্র ব্যক্তিরা ধনীদের ন্যায় স্বচ্ছলতা বোধ করে।

সদকাতুল ফিতরের ফলে ধনী-গরীব সবার জন্য ঈদ আনন্দদায়ক হয়।

সদকাতুল ফিতর আদায়কারী ব্যক্তি দানশীল হিসেবে পরিগণিত হয়। সদকাতুল ফিতরের মাধ্যমে সিয়াম অবস্থায় ঘটে যাওয়া ক্রটিগুলোর কাফফারা আদায় হয়েছে যায়।

সদকাতুল ফিতর দ্বারা আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা হয়। তিনি নিজ অনুগ্রহে বান্দাকে পূর্ণ একমাস সিয়াম পালনের তওফিক দিয়েছেন, সাথে সাথে সদকাতুল ফিতরের ন্যায় আরেকটি ভাল কাজের তওফিক দান করেছেন।

লেখক : মুহাদ্দিস, খাদিমুল ইসলাম মাদ্রাসা কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা

আমারসংবাদ/জেআই