Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

গাড়ি চাপায়ও মিলবে জামিন!

মে ১০, ২০২১, ০৮:৩০ পিএম


গাড়ি চাপায়ও মিলবে জামিন!
  • গণদাবি উপেক্ষা করে নেতাদের কাছে নতিস্বীকার
  • চালকদের লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা শিথিল হচ্ছে
  • দুর্ঘটনায় নিহত ছাড়া সব অপরাধ জামিনযোগ্য
  • কমেছে ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সের জরিমানাও
  • পরিবর্তন নয় অসঙ্গতি ও অস্পষ্টতা পরিষ্কার করা হয়েছে -বলছে মন্ত্রণালয়

সড়কে মৃত্যু এখনো থামেনি। প্রতিনিয়তই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির খবর আসছে গণমাধ্যমে। সড়ক আইনে কড়াকড়ি ও সচেতনতা বৃদ্ধি করেও দুর্ঘটনা কমানো যায়নি। সড়ক আইন শিথিল না-কি কঠোর হবে এই সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি সরকার। ফলে আট বছর সিদ্ধান্তহীনতায় ঝুলে ছিলো আইনটি। তবে ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনে ঝুলে থাকা আইনের শাস্তি ও জরিমানা বৃদ্ধি করা হয়। বিপত্তি ঘটে এখানেই। আইনটি পাস হওয়ার পরই আন্দোলনে নামে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। শ্রমিক নেতাদের দাবি ও চাপের মুখে আবারো আইনটি সংশোধান করে জেল-জরিমানা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

ফলে শিথিল হচ্ছে বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন। ২০১৮ সালে সংশোধিত আইনটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হতেই বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রস্তাব এসেছে, যেখানে কমানো হচ্ছে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের পরিমাণ। শ্রমিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতায়ও আনা হচ্ছে পরিবর্তন। এছাড়া অজামিনযোগ্য অপরাধকে আনা হচ্ছে জামিনের আওতায়। দুর্ঘটনায় কাউকে নিহত করা ছাড়া সব ধরনের অপরাধ জামিনযোগ্য করা হচ্ছে। জানা গেছে, নতুন সংশোধনীতে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা আইনের ৩৪টি ধারা শিথিল করতে সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে। সংশোধিত খসড়া অনুযায়ী, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় আইনের ১২৬টি ধারার মধ্যে ২৯টিতে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে স্পর্শকাতর পরিবর্তনের প্রস্তাব হলো, দুর্ঘটনায় প্রাণহানির জরিমানা পাঁচ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে তিন লাখ করা। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে চাপা দিয়ে কাউকে মারাত্মকভাবে আহত ও অঙ্গহানি এবং গাড়ির আকার-আকৃতি পরিবর্তনের মামলা জামিনযোগ্য করা হচ্ছে। এ ধারায় সংঘটিত অপরাধকে আপসযোগ্য করারও প্রস্তাব করা হয়েছে। আগে এ অপরাধের মামলা জামিন অযোগ্য থাকলেও পরিবহন নেতাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জামিনযোগ্য করা হচ্ছে। আর সেটি কার্যকর হলে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে কাউকে আহত করা এবং গাড়ির আকার আকৃতি পরিবর্তনের মামলায় আসামির জামিন পেতে বাধা থাকবে না।

তবে আইনটি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের আগেই সংশোধন হওয়ায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে মনে করছেন সড়কের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা। নতুন খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে। অনুমোদন পেলে সংসদে উত্থাপন করে পাস হলে আইনের সংশোধন কার্যকর হবে বলেও জানা গেছে। এমন অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণদাবির মুখে সড়ক আইন পরিবর্তন করেও কোনো লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত জয়টা পরিবহন নেতাদেরই হলো। তাদের দাবির কাছে নতি স্বীকার করে আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন শিথিল করা দুঃখজনক। গাড়ির আকার পরিবর্তনও দুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ। আগে এই অপরাধ অজামিনযোগ্য থাকলেও এখন এতে জামিন দেয়া হবে। একটি মানুষ জেনেশুনে দোষ করবে অথচ তার শাস্তি কমিয়ে দেয়া হবে, এটি কেমন যুক্তিসঙ্গত হলো? মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো ৩৪টি ধারা সংশোধনের দাবি জানিয়ে সরকারকে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছিল। তাদের সঙ্গে বছর দুয়েক আলোচনার পর সংশোধনের যে খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবিরই প্রতিফলন বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে সবচেয়ে আলোচিত ১০৫ ধারায় জরিমানা কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হলে দণ্ডবিধি ৩০৪(খ) ধারায় চালকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছর কারাদণ্ড। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তা বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছিল। সঙ্গে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান। আইনের সংশোধনীতে জরিমানা কমিয়ে তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আদালত অর্থদণ্ডের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে প্রদানের নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন।

আইন মন্ত্রণালয় বলছে, বিদ্যমান যে পেনাল কোড, সেটির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করার জন্য এটি সংশোধন করা হচ্ছে। সড়ক আইনে অনেক পরিবর্তন আনা হয়নি। যেখানে অসংগতি ছিলো, যেখানে অস্পষ্টতা ছিলো, সেগুলোকে পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে, যাতে এই আইনের অধীনে কেউ অপরাধ করলে আদালতের সাজা দিতে সহজ হয়।

সড়কে দুর্ঘটনায় কারো অঙ্গহানি বা মারাত্মকভাবে আহত হলে জামিনযোগ্য অপরাধ কি-না এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেন, আসলে সড়ক আইন ও পেনাল কোড দুটো আলাদা বিষয়। সড়ক আইনের সাথে পেনাল কোর্ডের কোনো মিল নেই। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে আরেকজনকে কুপিয়ে আহত করে তাহলে সেটা পেনাল কোডের আওতায় বিচার হবে এবং অপরাধী জামিন পাবে না। কিন্তু সড়কের বিষয়টা ভিন্ন সেটা অনিচ্ছাকৃতভাবে হয় এজন্য হয়তো জামিনযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আর পরিবহন সেক্টরে যারা আছেন তারা সরকারি দলের নেতা। আইনটি পাস হওয়ার পর তারা এটি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নই করতে দেননি। তারা সংশোধনের জন্য লেগে ছিলেন। তারা যেটা চাইছেন, সেটাই হচ্ছে। এতে সড়কে মৃত্যুর মিছিল কমবে না বরং আরও বাড়বে। কারণ পরিবহন শ্রমিকরা আরও বেপরোয়া হবে।

সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, ‘অন্যান্য দেশে জরিমানা আরও বেশি আছে। ইংল্যান্ডে একটি কুকুর মরলে মালিক দুই মিলিয়ন ডলার চেয়ে বসবে। আমাদের দেশে কি কুকুরের চেয়েও মানুষের জীবনের মূল্য কম। সব ধরনের দণ্ড কমানো হলো। যদি দণ্ড কমালে দুর্ঘটনা কমে যায়, তাহলে আমার কোনো সমস্যা নেই। এই আইনটি এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। অথচ সংশোধনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিবহন নেতাদের মন রাখতে এমনটি করা হচ্ছে। গাড়ির আকার পরিবর্তনও দুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ। আগে এই অপরাধ অজামিনযোগ্য থাকলেও এখন এতে জামিন দেয়া হবে। একটি মানুষ জেনেশুনে দোষ করবে অথচ তার শাস্তি কমিয়ে দেয়া হবে, এটি কেমন যুক্তিসঙ্গত হলো।’

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর চেয়ারম্যান ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, পরিবহন সেক্টরে যারা আছেন তারা সরকারি দলের নেতা। আইনটি পাস হওয়ার পর তারা এটি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নই করতে দেননি। তারা সংশোধনের জন্য লেগে ছিলেন। তারা যেটা চাইছেন, সেটাই হচ্ছে। আগে আইনটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা উচিত ছিলো, তারপর অসুবিধাগুলো দেখে প্রয়োজনে সংশোধন করা যেতো। পরিবহন সেক্টরে যে নৈরাজ্য চলছে, সেখানে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা কোনো আশা দেখছি না। কিন্তু পরিবহন সেক্টরের লোকজন যা চাচ্ছে তাই হচ্ছে। করোনা মহামারি চলছে, লকডাউন চলছে। এর মধ্যে এরা এগুলো করছে। মানুষ রাস্তায় নামতে পারবে না, তারা মূলত এই সুযোগটা নিচ্ছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হোসেন মো. মজুমদার বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর যে জনরোষের সৃষ্টি হয়েছিল, তা সামাল দিতেই সরকার তড়িঘড়ি করে এই আইন পাস করেছিল, যেখানে পুরোপুরি যাচাই-বাছাই করা হয়নি। ফলে কিছু অসঙ্গতি থেকে গিয়েছিল। সেই অসঙ্গতিগুলো এখন দূর করা হচ্ছে।

যেখানে যেখানে আসছে সংশোধন : সংশোধিত খসড়া আইনে কন্ডাক্টরের পাশাপাশি ‘সুপারভাইজার’ নামে একটি পদ যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ‘হেলপার কাম ক্লিনার’ ও ‘বন্দোবস্তকারী’ নামেও পদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমান আইন অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে কমপক্ষে শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে, তবে কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত তিন চাকাবিশিষ্ট মোটরযান চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। বর্তমান আইন অনুযায়ী ফিটনেসের অনুপযোগী কোনো মোটরযানকে সনদ দেয়া হলে, সনদ দেয়া কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। এক্ষেত্রে সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, কোনো অবস্থাতেই ত্রুটিপূর্ণ কোনো মোটরযানের ফিটনেস সনদ দেয়া যাবে না। পণ্যবাহী মোটরযানে এর রেজিস্ট্রেশন সনদে উল্লিখিত আসন সংখ্যার বেশি কোনো ব্যক্তি বহন করা যাবে না বলে সংশোধিত খসড়া আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমান আইনে এমন বিধান নেই। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড পেতে হয়। সংশোধিত খসড়ায় জরিমানা কমিয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুত, প্রদান বা নবায়নের ক্ষেত্রে বর্তমানে শাস্তি ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড বা এক থেকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দ্ল। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ জরিমানা কমিয়ে তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নকল, ভুয়া বা জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহারের শাস্তিও কমছে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়া আইনে। বর্তমানে এই শাস্তি ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড বা এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা। ড্রাইভিং লাইসেন্স স্থগিত, প্রত্যাহার বা বাতিলের পর মোটরযান চালালে বর্তমানে শাস্তি সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। এখন জরিমানা কমিয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে।

গণপরিবহনে ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন ও নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা দাবি বা আদায় করলে শাস্তি সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেয়া হবে। একই সঙ্গে চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসাবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কাটা হবে। সংশোধিত আইনে জরিমানা কমিয়ে পাঁচ হাজার টাকা করা ছাড়াও চালকের পয়েন্ট কাটার বিধান বাদ দেয়া হয়েছে। কোনো কন্ট্রাক্ট ক্যারিজের (চুক্তিতে ভাড়ার মাধ্যমে পরিচালিত) মালিক নির্ধারিত দিনভিত্তিক জমার অতিরিক্ত অর্থ আদায়, কন্ট্রাক্ট ক্যারিজের ভাড়া সংক্রান্ত মিটার পরিবর্তন এবং রুট পারমিটে বর্ণিত এলাকার মধ্যে যে কোনো গন্তব্যে মিটারে না যাওয়ার শাস্তি ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেয়া হবে। চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কাটা হবে। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী মিটার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এই শাস্তি বহাল থাকবে। মালিক নির্ধারিত দিনভিত্তিক জমার অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও মিটারে না যাওয়ার শাস্তি কমে হয়েছে তিন মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। ট্রাফিক সাইন ও সংকেত না মেনে চলার শাস্তি বর্তমানে সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কাটা হবে। এক্ষেত্রে কারাদণ্ড উঠিয়ে জরিমানা করা হচ্ছে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা। বর্তমান আইনে অতিরিক্ত ওজন বহন করে মোটরযান চালানোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে এবং চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক ২ পয়েন্ট কাটা হবে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী, এখন এই জেল-জরিমানা মালিক, প্রতিষ্ঠান, বন্দোবস্তকারী সমিতি, মধ্যস্বত্বভোগী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, পরিবহন ঠিকাদার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হবে। চালকের ক্ষেত্রে এই বিধান লঙ্ঘনে শাস্তি তিন মাসের কারাদণ্ড, ২৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কাটা হবে। নির্ধারিত শব্দমাত্রার অতিরিক্ত উচ্চমাত্রার কোনোরূপ শব্দ সৃষ্টি বা হর্ন বাজানো বা যন্ত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে এখন শাস্তি সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কাটা হয়। এক্ষেত্রে কারাদণ্ড কমিয়ে এক মাস এবং জরিমানাও কমিয়ে পাঁচ হাজার টাকা করা হচ্ছে। পরিবেশ দূষণকারী, ঝুঁকিপূর্ণ ইত্যাদি মোটরযান চালানোর শাস্তিও কমছে। এখন এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড পেতে হয়। একই সঙ্গে চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কাটা হবে। সংশোধিত আইনে কারাদণ্ড কমে একমাস এবং জরিমানা কমে হচ্ছে ১০ হাজার টাকা। মোটরযান পার্কিং এবং নির্ধারিত স্থান ছাড়া যাত্রী বা পণ্য ওঠা-নামার সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা, চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কাটা হবে। আইন সংশোধন করে সর্বোচ্চ জরিমানা এক হাজার টাকা করা হচ্ছে। বাদ যাচ্ছে পয়েন্ট কাটার বিধান। বর্তমান আইনের ১০৫ ধারায় বলা হয়েছে, মোটরযান চালনাজনিত কোনো দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে কোনো ব্যক্তি আহত হলে বা তার প্রাণহানি ঘটলে তা ‘পেনাল কোড, ১৮৬০’ এর এ সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী অপরাধ বলে গণ্য হবে। তবে শর্ত থাকে যে, ‘পেনাল কোড, ১৮৬০’ এর সেকশন ৩০৪ বি-এ যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত মোটরযান চালনার কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত হলে বা তার প্রাণহানি ঘটলে, ওই ব্যক্তি (দায়ী) সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে সংশোধিত আইনে ‘গুরুতরভাবে কোনো ব্যক্তি আহত’ হওয়ার বিষয়টি বাদ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জরিমানা পাঁচ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে তিন লাখ টাকা করা হয়েছে। বর্তমান আইনে অতিরিক্ত বা বেপরোয়া গতি বা ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং বা ওভারলোডিং বা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে মোটরযান চালানোর ফলে কোনো দুর্ঘটনায় জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি সাধিত হয় এবং মোটরযানের নির্মাণ, সরঞ্জাম বিন্যাস ও রক্ষণাবেক্ষণের সংক্রান্ত অপরাধ জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছিল। সংশোধিত আইনে তা তুলে দেয়া হয়েছে।

আমারসংবাদ/জেআই