Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

নার্সরাই প্রকৃত সম্মুখযোদ্ধা!

মাহমুদুল হাসান

মে ১১, ২০২১, ০৭:৪৫ পিএম


নার্সরাই প্রকৃত সম্মুখযোদ্ধা!

হেলেনা আক্তার রাজধানীর একটি বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত। গেলো বছর করোনা সংক্রমণের আগে রাজধানীর সন্নিকটের একটি জেলা থেকে বদলি হয়েছেন। তিন বছরের পুত্র ও স্বামীকে নিয়ে শুরু হয় স্বপ্নের সংসার। কিন্তু সেখানেই বাঁধে বিপত্তি। তিলোত্তমা নগরীতে খাপখাইয়ে নেয়ার আগেই দেশে আঘাতহানে মহামারি করোনা। ছোট্ট সন্তান আর স্বামীকে রেখে বিরামহীন সেবায় নিয়োজিত হোন। পরিবারের ঝুঁকি এড়াতে থাকতে হয় দূরে। আবার দায়িত্ব নিয়েই ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির আসতে হয় সংস্পর্শে। সম্মুখযোদ্ধা শব্দের সবচেয়ে বড় উদাহরণ নার্সরা। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হেলেনা করোনা আক্রান্তও হয়েছিলেন। সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। কমেনি কর্মোদ্যোম। এখনো ঝুঁকি নিয়েই রোগীর কাছে আসতে দ্বিধাবোধ করেন না।

তার ভাষ্য— মুক্তিযুদ্ধ করার সৌভাগ্য হয়নি। তবে মহামারিতে জাতির পাশে থাকার সুযোগ হয়েছে। তাই প্রথমে ভয় লাগলেও দেশপ্রেম থেকে কাজে নেমে পড়েন। এমন শুধু একজন হেলেনার গল্প নয় বাস্তবতা প্রতিটি নার্স বা সেবিকার ঘরের। কারণ নাসির্ং দক্ষতা, মানবিকতা, আন্তরিকতা আর ভালোবাসায় পূর্ণ পেশা। আন্তরিক সেবা প্রদানের ব্রত নিয়ে একজন রোগীর সবচেয়ে আপনজন হয়ে ওঠেন তারা। যিনি ভালোবেসে রোগীর সেবা করেন। মানসিকভাবে সাহস দেন। এমনকি রোগীর ভালো বন্ধু হিসেবেও সঙ্গ দেন। ফলে রোগীরাও দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।  কর্মদক্ষতা ও মানবিক আচরণ দিয়ে তারা প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পর নার্সদের গল্প বেশি উঠে এসেছে। একমাত্র নার্সরা সবচেয়ে বেশি রোগীর সংস্পর্শে আসেন। তাদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি।

বৈশ্বিক মহামারি করোনা চোখে আঙুল দিয়ে পেশার গুরুত্ব বুঝিয়ে গেলো। করোনা মোকাবিলায় আত্মনিয়োগকৃত পেশার মানুষের মধ্যে সম্মুখে নার্সরা। তারা জীবনের মায়া ত্যাগ করেই করোনা রোগীর আইসিইউ ইউনিট ও সাধারণ ওয়ার্ডেও রোগীদের  সেবায় শ্রম নিয়োগ করেন। প্রাণহানিও নেহায়েত কম নয়। করোনা সংক্রমণের প্রকোপে তিন হাজারেও বেশি নার্স করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুও নেহায়েত কম নয়। ২৫ জনের মৃতুও হয়েছে। এখনও বিশ্বে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসেনি। নার্সদেরও জীবনের ঝুঁকি কমেনি। কিন্তু তবুও কি সেবার দায়িত্ব ফেলে নার্সরা পালিয়েছেন। মোটেও নয়। তারা নিরলসভাবে কাজ করছে। কোভিড-১৯-এর অদৃশ্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় সাহসিকতার স্বাক্ষর রাখছেন আমাদের নার্সরা। এমন মানবিকতাপূর্ণ পেশাকে স্বীকৃতি দিতে প্রতিবছর আধুনিক নার্সিং সেবার প্রতিষ্ঠাতা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ১২ মে আজ আন্তর্জাতিক নার্স দিবস উদযাপন করা হয়। এ বছর নার্সেস ঃ এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য খাতে একটি দর্শন— এই প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। ১৯৭৪ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা আনুষ্ঠানিকতায় দিবসটি উদযাপন করা হয়। তবে এবছর করোনা সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের  বিভিন্ন দেশে আয়োজনে রয়েছে ভাটা। তবে সীমিত পরিসরে দিবসটি উদযাপনের আয়োজন করা হয়েছে।

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বাংলাদেশে বিশ্ব মানের নার্স গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত ও বাস্তবায়িত কার্যক্রমসমূহ সর্বস্তরে প্রশংসিত হয়েছে। রোগীর সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত এক বছরে ছয় হাজার নার্স নিয়োগ, ১০ হাজার নার্স ও পাঁচ হাজার মিডওয়াইফের নতুন পদ সৃজন, বিশেষায়িত নার্স গড়ে তোলা, নার্সদের নানাবিধ প্রশাসনিক কার্যক্রম গতিশীল করা, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে নার্সিং সেবার মান বৃদ্ধি, নতুন নতুন নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠা, দক্ষ নার্সিং শিক্ষক পদায়নসহ নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে। দেশের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তথা মাতৃ ও শিশু মৃত্যু হার কমানোর ক্ষেত্রে আমাদের নার্সরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। স্বাস্থ্য খাতে সরকারের সাফল্যের অন্যতম অংশীদার আমাদের নার্সরা। বর্তমানে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের অধীনে সারা দেশে সর্বমোট ৬০টি নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষা কার্যক্রম চলমান আছে। এছাড়াও নার্সিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউটসমূহে কর্মরত শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান আছে এবং নার্সিং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আরও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দক্ষ নার্স ও মিডওয়াইফ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নার্সিং শিক্ষাব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, যোগ্য শিক্ষক পদায়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএনএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইসমত আরা পারভীন নার্সিং দিবস উপলক্ষে বলেন, কোভিড-১৯ থাবায় বিশ্বের মানুষ আজ দিশাহারা। প্রতি মুহূর্তে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রিয় মুখগুলোর কেউ না কেউ, কাছের মানুষটিও যখন করোনা আক্রান্তের কারণে প্রিয়জনকে দূরে ঠেলে দিতে দ্বিধা করছে না; ঠিক হাজারো মানুষের জীবন-মৃত্যুর এই সন্ধিক্ষণে বিশ্বে নার্স একটি ভরসার প্রতীক এবং সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত। তিনি বলেন, এত হাহাকার, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও ভয়-ভীতি দূরে ঠেলে নার্সরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে করোনা আক্রান্ত মানুষের সেবায় নিজেকে অব্যাহত রেখেছেন।

আমারসংবাদ/জেআই