Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

সংকটে নৌকাপ্রত্যাশীরা কোথায়!

রফিকুল ইসলাম

মে ১১, ২০২১, ০৭:৪৫ পিএম


সংকটে নৌকাপ্রত্যাশীরা কোথায়!

করোনা সংকটে মাঠে নেই আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। অথচ কদিন আগেও দলীয় মনোনয়ন পেতে সরব ছিলেন রাজনীতির মাঠে। নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় বড় বড় ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড টাঙানোর মাধ্যমে জানান দিয়েছিলেন নিজেদের ব্যক্তিগত অবস্থান। নৌকার মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে ধরনা দিতেন স্থানীয় এমপি-মন্ত্রী, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতাদের বাসা কিংবা অফিসে। সকাল-সন্ধ্যা মিছিল-মিটিংয়ে খরচ করতেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। করোনা সংকটে নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় অধিকাংশ মনোনয়নপ্রত্যাশীর আর হদিস নেই।

তবে আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের দাবি— নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া মনোনয়নপ্রত্যাশীরা রাজনীতিতে বসন্তের কোকিল। নির্বাচন এলেই তারা তোড়জোড় করে রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন।

তথ্যমতে, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে গত ১ এপ্রিল ইউনিয়ন পরিষদসহ দেশের সকল নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।  সে সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেন, দেশে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়ংকর রূপ ধারণ করায় সব নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। করোনার কারণে এটা ইসির নীতিগত সিদ্ধান্ত বলেও দাবি করেন তিনি। সূত্রে জানা যায়, করোনা সংকটের কারণে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় মাঠে নেই আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকাপ্রতীকের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। নির্বাচন স্থগিত থাকায় তাদের অধিকাংশ নেতারা গা-ঢাকা দিয়েছে। অথচ মাত্র কদিন আগেও ভোট ও মনোনয়নের রাজনীতিতে সরব ছিলো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রত্যাশীরা। তারা নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকা ও আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসের আশপাশে বড় বড় ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড টাঙানোর মাধ্যমে জানান দিয়েছিলেন নিজেদের ব্যক্তিগত অবস্থান। নৌকার মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে ধরনা দিতেন স্থানীয় এমপি-মন্ত্রী, জেলা-উপজেলাপর্যায়ের প্রভাবশালী নেতাদের বাসা কিংবা অফিসে। সকাল-সন্ধ্যা মিছিল-মিটিংয়ে খরচ করতো কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সমর্থকরা নিজ নিজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রচার-প্রচারণায়ও মুখর ছিলো সারাক্ষণ। তবে করোনা সংকটে ওই সকল মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অধিকাংশ নেতার বর্তমানে হদিস নেই। করোনায় অসহায় হওয়া মানুষের পাশে নেই তারা।

অথচ করোনার শুরু থেকে কঠোর পরিশ্রম করছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলটির কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতারা। এ সংকট মোকাবিলায় বসে নেই যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগসহ ক্ষমতাসীন দলটির সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা বঙ্গবন্ধুকন্যার নির্দেশনা বাস্তবায়নে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। অসহায়, দরিদ্র, শ্রমজীবী, নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি করোনার সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করছেন। বসে নেই আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণসহ সব উপ-কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারা নিজ নিজ উদ্যোগে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। করোনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের এমন মানবিক কর্মসূচির বাস্তবায়নের জন্য প্রশংসা করছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অথচ সংকটের এই সময়ে মাঠে নেই ইউনিয়ন পরিষদ ও সাংসদীয় উপনির্বাচনের আওয়ামী লীগের নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। বিগত দিনে তারা নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনীতিতে সরব হলেও দুর্যোগ ও সংকটে মানুষের পাশে নেই।

বিগত নির্বাচনগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, টানা একযুগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ সরকার। ক্ষমতার এই দীর্ঘ সময়ে মাঠ ও ভোটের রাজনীতিতে সফল ক্ষমতাসীন দলটি। বিশেষ করে জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে নৌকার মনোনীত প্রার্থীদের জয়জয়কার। ফলে নির্বাচনগুলোতে বৃদ্ধি পেয়েছে নৌকা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সংখ্যা। বিশেষ করে দলটির দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে- ভোটের মাঠে নৌকার মনোনয়ন পেলেই বিজয় নিশ্চিত। ফলে মাঠে শক্ত অবস্থান না থাকলেও চেষ্টা-তদবির করে মনোনয়ন বাগিয়ে নিতেই বেশি মনোযোগী হন আওয়ামী লীগের এক শ্রেণীর নেতারা। তাদের নিজেদের যোগ্যতা না থাকলেও ধরনা দেন এমপি-মন্ত্রী ও শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের বাসায়। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বারবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতাদের। অতিরিক্ত মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় অনেক সময় বঞ্চিত হয়েছে ত্যাগী, পরিশ্রমী, মেধাবী, যোগ্য ও দুর্দিনে মাঠের আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় থাকা নেতাকর্মীরা।  

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু আমার সংবাদকে বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এক ধরনের বসন্তের কোকিল প্রবেশ করেছে। তারা জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকারের যেকোনো নির্বাচন এলেই তোড়জোড় করে রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। কিন্তু মনোনয়ন না পেলে রাজনীতি থেকে হারিয়ে যান। এরা সুযোগ সন্ধানী, তারা সব সময় সুযোগ খোঁজেন। তিনি আরও বলেন, মানুষের সেবাই বড় রাজনীতি। এখন যারা রাজনীতি করেন তাদের এই বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। যেখানেই মানুষের সমস্যা, সেখানেই এগিয়ে যেতে হবে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু আরও বলেন, করোনার শুরু থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সাথে সাথে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।

আমারসংবাদ/জেআই