Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

বঙ্গবন্ধুবিহীন গণতন্ত্রের পুনর্যাত্রা

রফিকুল ইসলাম

মে ১৬, ২০২১, ০৮:২৫ পিএম


বঙ্গবন্ধুবিহীন গণতন্ত্রের পুনর্যাত্রা
  • ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানুষের ঢল নেমেছিল বিমানবন্দরে -আমির হোসেন আমু, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য  বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
  • প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে -আবদুর রহমান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ 
  • খুনির দলের সামরিক ও স্বৈরতন্ত্র ভেঙে দেন শেখ হাসিনা -আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
  • শেখ হাসিনাকে পেয়ে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল -বি এম মোজাম্মেল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
  • অন্ধকার যুগে আলোর দিশারি হয়ে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা -এস এম কামাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

আজ সোমবার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের চার দশক। ১৯৮১ সালের আজকের এই দিনে সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্বদেশভূমিতে ফিরে আসেন তিনি। এর আগে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের হত্যা করে স্বাধীনতাবিরোধীরা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন জিয়াউর রহমান। তিনি বাংলাদেশকে ফিরিয়ে নিয়ে যান পাকিস্তানের ধারায়। গ্রেপ্তার, গুম, খুন ও হত্যার মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ঠেলে দেন অন্ধকারের দিকে। সেই অন্ধকার যুগে আলোর দিশারি হয়ে বাঙালি ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ১৯৮১ সালের এই দিনে স্বদেশে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে আজ ক্ষুধা, দারিদ্র্য, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ দৃশ্যমান। তিনি সম্পন্ন করেছেন যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার। মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক রূপলাভ করেছে দেশের গণতন্ত্র। বঙ্গবন্ধুকন্যার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও কঠোর পরিশ্রমে একের পর এক উন্নয়নে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে দৈনিক আমার সংবাদের সাথে এমনটাই বলেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে ফিরে পাওয়ার অতৃপ্ত বাসনায় ১৯৮১ সালের ১৭ মে তার কন্যা শেখ হাসিনাকে দেখতে প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানুষের ঢল নেমেছিল বিমানবন্দরে।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হারানোর পর তার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন এবং নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে ১৭ মের মতো এমন একটি শুভ দিনের অপেক্ষায় ছিলো বাঙালি।

শেখ হাসিনার মাঝে বঙ্গবন্ধুকে খুঁজে পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছিল তারা। তাই তো দীর্ঘদিন নির্বাসন শেষে শেখ হাসিনার স্বদেশ ফেরার দিন বিমানবন্দরে ছিলো বাধভাঙা মানুষের জোয়ার।’ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ভূলুণ্ঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে দল ভাঙার রাজনীতি, রাজনীতিবিদদের চরিত্র হনন, সর্বোপরি রাজনীতিকে বিরাজনীতিকরণের মাধ্যমে দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। এই প্রতিকূল অবস্থায় দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করে দেশকে আজ উন্নয়ন আর অগ্রগতির পথে নিয়ে এসেছেন শেখ হাসিনা।’ আমির হোসেন আমু বলেন, ‘টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ ধরেই তার কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নয়নের মহাসড়কে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন তিনি। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ি ও পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও কর্ণফুলী টানেলের কাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুত গতিতে। এই অগ্রযাত্রা শেখ হাসিনার স্বদেশে ফিরে আসার ফল।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সাহসী পদক্ষেপে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন করে চলেছেন, তেমনি ছিটমহল সমস্যার সমাধান, সমুদ্রসীমানা বিরোধেরও নিষ্পত্তি করেছেন শেখ হাসিনা।’

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গঠনের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমৃত্যু আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। বারবার পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর কাছে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি কখনো কারো কাছে মাথানত করেনি। কিন্তু পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীরা বাংলাদেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছিল, কেড়ে নিয়েছিল মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার। প্রতিটি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হত্যার মধ্যদিয়ে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিল বাঙালি ও জাতির পিতার স্বপ্নকে। বাংলাদেশকে বানানো হয়েছিল সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্য। ঠিক সেই মুহূর্তে স্বদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন তিনি ফিরে এসেছিলেন বলেই আজ বাংলাদেশ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজমুক্ত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশের গণতন্ত্র আজ আলোর পথে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন আজ দৃশ্যমান। ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্মৃতিচারণ করে তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ১৭ মে দেশের মাটিতে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাাসিনা। সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যার ফিরে আসা ঘিরে পুরো বাঙালি জাতির মধ্যে আনন্দের জোয়ার উঠেছিল। লাখো জনতা মিছিল ও শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে নিয়ে আসেন। সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা ফিরে আশার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মানুষ উজ্জ্বল নক্ষত্র দেখতে পেয়েছিলেন। সেদিন শেখ হাসিনা ফিরে এসেছিলেন বলেই আজ বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে, বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।

আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম আমার সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। দেশের বাইরে থাকায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেদিন প্রাণে বেঁচে যান। সেদিন যদি তারা দু’জন বাংলাদেশে থাকতেন, তাদের কী ভয়াবহ অবস্থা হতো— তা সহজেই অনুমান করা যায়। বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করা হয়। খুনির দলেরা প্রতিষ্ঠিত করে সামরিক ও স্বৈরতন্ত্র। আঘাত করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে। বছরের পর বছর বাংলাদেশে চালু রাখে কারফিউতন্ত্র। বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে ছিলো অন্ধকারের যুগে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফিরে আশার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বাবা-মাসহ পরিবারের সব সদস্যকে হত্যার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশে ফিরতে দেয়নি। তিনি অন্যদেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর বঙ্গবন্ধুকন্যা যখন দেশে আশার জন্য তারিখ নির্ধারণ করেন, তখনো তাকে বাধা দেয়া হয়েছিল। ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা সেদিন সকল বাধা ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে দেশের মাটিতে পা রাখেন। সেদিন সারা দেশের লাখো জনতা তাকে স্বাগতম জানায়। সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে লাখ লাখ মানুষ মানিক মিয়া এভিনিউতে একত্রে হয়। সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা ফিরে আশার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মানুষ নতুনভাবে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অপরাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশ ছিলো অন্ধকারের মতো। হত্যা করা হয়েছিল দেশের গণতন্ত্রকে। হত্যা করা হয়েছিল স্বাধীনতা সপক্ষের শক্তিকে। মৃত্যুঝুঁকি মাথায় নিয়ে ওই ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন তিনি। জাতির পিতার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে তিনি কখনো পিছপা হননি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আজ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে উল্লেখ করে আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, ‘একটি সদ্য স্বাধীন দেশকে পুনর্গঠন করতে সব ধরনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধীরা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে ক্ষমতার রাজত্ব করছে। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম করে ঠিক সেই অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশে আজ বড় বড় মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। শিক্ষা, চিকিৎসা, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানসহ সব সুযোগ-সুবিধা মানুষের দোরগড়ায় পৌঁছে গেছে। শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসেছিলেন বলেই বাংলাদেশ আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। 

১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কারণে আজকে বাংলাদেশ সারা দুনিয়ায় মাথায় উচু করে দাঁড়িয়েছে। একটি দরিদ্র্য রাষ্ট্র আজকে পৃথিবীর উন্নয়নের রোলমডেল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের যে শৃঙ্খল ভঙ্গ করে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম আবার কিন্তু গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিলাম। ১৯৭১ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন এবং ’৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনার প্রত্যাবতর্ন এই দুটিই ঐতিহাসিক ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক। দৈনিক আমার সংবাদের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমগ্র বাঙালি জাতি মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহণ করে। তারই আহ্বানে স্বাধীন বাংলা সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মুক্তিযোদ্ধে আমরা বিজয় লাভ করি। কিন্তু বিজয় অসম্পূর্ণ ছিলো। যতক্ষণ না বিজয়ের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আমাদের দেশে প্রত্যাবর্তন করেননি। ১৯৭১ সালে ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। তখন বাংলাদেশ ছিলো একটি দরিদ্র দেশ। তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে রূপান্তরিত করেন। আমাদের জিডিপি বেড়ে যায়। কিন্তু ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাস সেই— একাত্তরে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, পাকিস্তানের এজেন্ট, সহযোগী, সেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এই হত্যার মূল লক্ষ্য ছিলো বাংলাদেশের মানুষের যে স্বপ্ন ছিলো একটা উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা— সেই অগ্রযাত্রাকে হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা একটি অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম, সেই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে আবার একটি সামপ্রদায়িক বাংলাদেশে রূপান্তরিত করে মুক্তিযোদ্ধের যে চেতনাকে ধ্বংস করে পাকিস্তানি ভাবধারায় জাতিকে ফিরে নিয়ে যায়। জয় বাংলার জায়গায় বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, বাংলাদেশ বেতারের জায়গায় রেডিও বাংলাদেশ। এইরকম অনেকগুলো মৌলিক পরিবর্তন করেন। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলো তাদেরকে ক্ষমতায় বসানো হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধা জীবনকে যেভাবে বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধারা পঁচাত্তর পরবর্তীতে খুনি জিয়াউর রহমানরা ক্ষমতায় বসার পরে একটি ১৯৭৫-৮১ সালে বঙ্গবন্ধুরকন্যার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা পরিচয় দিতে ভয়ে ছিলেন।’ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘১৯৭১ সালের বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে পূর্ণতা দিয়েছিল আর বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার কন্যা শেখ হাসিনার ’৮১ সালের প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি আবার সেই বঙ্গবন্ধুর চেতনায়, বঙ্গবন্ধুর আইডিওলজি খোঁজে পেয়েছিল। শেখ হাসিনাকে পেয়ে বাঙালি জাতি আবার সাহসী হলো, ঐক্যবদ্ধ হলো। তিনিও সারা বাংলাদেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। বারবার তাকে আঘাত করা হয়েছে, হত্যা করার জন্য চেষ্টা করা হয়েছে, বাংলাদেশের যে প্রান্তে গেছেন সেখানেই বাধাগ্রস্ত হয়েছেন শেখ হাসিনা। সেই বাধাকে ডিঙ্গিয়ে এই বাঙালি জাতিকে তার হারিয়ে যাওয়ার মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ, চেতনা এবং আদর্শকে পুনরুদ্ধার করেছেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, তার স্বাধীনতার যে লক্ষ্যে ছিলো— একটি নিরাপদ বাংলাদেশ, উন্নত বাংলাদেশ, একটি জঙ্গি ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ, একটি অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ, এই বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ নিরাপদে থাকবে সেই স্বপ্নকে বঙ্গবন্ধুকন্যা ১৭ মে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করার মাধ্যমেই কিন্তু আজকের বাংলাদেশ সারা দুনিয়া মাথায় উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ‘১৭ মে বাঙালির ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক দিন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে পাকিস্তানের ধারায় ফিরে নিয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। রাতের বেলায় কারফিউ দিয়ে সেনানিবাসগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অফিসারদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিল। বিমানবাহিনীর ৫৫১ জন অফিসারকে হত্যা করেছিল। সাড়ে চার লাখ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার, গুম, খুন ও হত্যা করেছিল। বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশ ছিলো একটি অন্ধকারের বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল— জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সেই বাংলাদেশকে পাকিস্তানে পরিণত করা হয়েছিল। বাংলার প্রতিটি মানুষ চোখে-মুখে অন্ধকার দেখেছিল, সেই অন্ধকার যুগে আলোর দিশারি হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঙালি ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ১৭ মে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তিনি ফিরে আশার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মানুষ উজ্জ্বল নক্ষত্র দেখতে পেয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা এসেছিলেন বলেই আজ বাংলাদেশে গণতন্ত্র এসেছে, শেখ হাসিনা এসেছিলেন বলেই বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হয়েছে, শেখ হাসিনা এসেছিলেন বলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, শেখ হাসিনা এসেছিলেন বলেই ক্ষুধা, দারিদ্র্য, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শেখ হাসিনা এসেছিলেন বলেই উন্নয়নশীল দেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্যদিয়ে এ সকল কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়েছে।’ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন আরও বলেন, ‘অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে আসতে দিতে চায়নি। তিনি দেশে ফেরার পর তাকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য একবার, দুবার নয়, ২১ বার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু শত সংকট ও প্রতিকূলতার মধ্যেও শেখ হাসিনা তার বাবার মতো মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মানুষের স্বপ্ন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য, বাঙালির অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মৃত্যুকে উপেক্ষা করে এগিয়ে গেছেন। আমরা মনে করি, বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে ১৭ মে একটি ঐতিহাসিক দিন, ওই দিনে নতুন করে বাঙালির জন্ম হয়েছিল, নতুন করে বাঙালি স্বপ্ন দেখেছিল, প্রতিটি বাঙালির মধ্যে আকাঙ্ক্ষা জেগেছিল, সেদিন শেখ হাসিনাকে বাঙালিরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি হিসেবে পেয়েছিল, বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরি হিসেবে পেয়েছিল, যে রক্ত কোনোদিন বাঙালির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে না, বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠায় যে রক্ত হাসতে হাসতে জীবন দিতে জানে, যে রক্ত বাঙালির জন্য জীবন-যৌবন বিসর্জন দিয়েছে, বাঙালির স্বার্থে যে রক্ত কোনোদিন মানুষের কাছে মাথানত করেনি, অন্যায়ের কাছে মাথানত করেনি, শোষকের কাছে মাথানত করেনি, ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে আপস করেনি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন, শেখ হাসিনা মানেই বাংলাদেশের উন্নয়ন, শেখ হাসিনা মানেই বাঙালির মুক্তির ঠিকানা। ১৭ মে বাঙালির ঐতিহাসিক দিন, ওইদিন বঙ্গবন্ধুবিহীন অন্ধকারের বাংলাদেশে শেখ হাসিনা আলোর দিশারি হয়ে এসেছিলেন।’

আমারসংবাদ/জেআই