Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

সুখী পরিবার গঠনে রাসূল সা.-এর শিক্ষা

নুসরাত জাহান

মে ১৯, ২০২১, ০৮:০০ পিএম


সুখী পরিবার গঠনে রাসূল সা.-এর শিক্ষা
  • ‘রাসূল সা. নিজের কাপড় নিজেই সেলাই করতেন। নিজেই নিজের জুতা মেরামত করতেন। ঘরে যেসব কাজ পুরুষরা করে থাকে, রাসূল সা.ও সেসব কাজ নিজেই করতেন। ’ (মিশকাত-৫২০)

প্রাত্যহিক জীবনের সব ক্ষেত্রে মহানবী সা. আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। এই সময়ে অন্তহীন সুখের উৎস পরিবারে সুখের দেখা মেলা ভার। ফলে অনেকে পরিবারবিমুখ হতে শুরু করেছে। ভাঙতে শুরু করেছে পরিবারকাঠামো। এমন প্রেক্ষাপটে ‘সুখী পরিবার গঠনে প্রিয় নবীর আদর্শ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রিয় নবী সা. তার স্ত্রীদের খুবই ভালোবাসতেন। স্ত্রীদের সঙ্গে তিনি খোশমেজাজে মিশতেন ও তাদের আবেগের প্রতি লক্ষ রাখতেন। আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, ‘দুনিয়ায় আমার কাছে প্রিয় হলো নারী, সুগন্ধি আর আমার চক্ষু শীতল হয় নামাজে। (মুসনাদে আহমাদ-১২৩১৯)

দাম্পত্য জীবন স্থিতিশীল ও ফলপ্রসূ হওয়ার ফর্মুলা

বৈবাহিক সম্পর্ক স্থিতিশীল ও ফলপ্রসূ হওয়ার জন্য স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের বিশ্বস্ততা, সহযোগিতা, সহানুভূতি, ত্যাগ-তিতিক্ষা, ইজ্জত-সম্মান ও প্রেম-ভালোবাসার মুখাপেক্ষী। রাসূল সা.-এর বৈবাহিক জীবনে এসবের ছাপ গভীরভাবে লক্ষ করা যায়। রাসূল সা.-এর আচার-আচরণ, চালচলন নিজের জীবনসঙ্গিনীর সঙ্গে সহানুভূতি ও স্নেহময় ছিলো। হুজুর সা. তাদের প্রফুল্ল করতে এবং সম্মান করার মধ্যে কোনো ত্রুটি বা কমতি করেননি। এ ব্যাপারে ছোট ছোট বিষয়েও তিনি খেয়াল রাখতেন।

সান্ত্বনা প্রদান : হজরত ছাফিয়াহ রা. কোনো এক সফরে মহানবী সা.-এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি যে উটে আরোহণ করেছিলেন, তা অত্যন্ত ধীরগতির হওয়ায় কাঁদতে শুরু করেন। এ অবস্থা দেখে রাসূল সা. তার কাছে এসে নিজ হাতে তার চোখের পানি মুছে দেন এবং তাকে সান্ত্বনা দেন। (আস-সুনানুল কুবরা, নাসাঈ-৯১১৭)

স্ত্রীর প্রশংসা : রাসূল সা. স্ত্রীদের প্রশংসা করার মধ্যে কোনো কমতি করতেন না। বরং ভরপুর মজলিসে প্রশংসা করতেও কুণ্ঠাবোধ করতেন না। যেমন একবার ইরশাদ করেন, ‘খাদিজার প্রতি আমার প্রচন্ড ভালোবাসা রয়েছে। ’ (মুসলিম-২৪৩৫)

আরেকবার হজরত আয়েশা রা.-এর ব্যাপারে বলেন, ‘খাদ্যের মধ্যে যেমন ‘ছরিদ’ (আরবের খাবারবিশেষ) সর্বশ্রেষ্ঠ, তেমনি নারীদের মধ্যে আয়েশা শ্রেষ্ঠ। ‘ (বুখারি-৩৪১১)

এক পাত্রে পান করা : বর্ণিত আছে, ‘হজরত আয়েশা রা. পেয়ালার যেখানে মুখ রেখে পান করতেন, রাসূল সা. সেখানে মুখ রেখে পান করতেন এবং একই হাড্ডির গোশত আয়েশা রা. খেয়ে রাসূল সা.-এর হাতে দিলে রাসূল সা. সেখান থেকেই খেতেন, যেখান থেকে আয়েশা রা. খেয়েছেন। ’ (নাসাঈ-৭০)

একসঙ্গে গোসল করা : বর্ণিত আছে, ‘রাসূল সা. এবং হজরত মাইমুনা রা. একই সঙ্গে একই মগ দিয়ে একই পাত্রের পানি দিয়ে গোসল করেন। ’ (নাসাঈ, হা. ২৪০)

সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সম্মানজনক আচরণ করা

রাসূল সা. স্ত্রীদের সঙ্গে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সম্মানজনক আচরণ করতেন। একদিন হজরত ছাফিয়াহ রা. হুজুর সা.-এর সঙ্গে ইতিকাফকালীন সাক্ষাতের জন্য আসেন, সাক্ষাৎ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় রাসূল সা. তাকে একটু এগিয়ে দেন। (বুখারি, ১/২৭৩)

পারস্পরিক মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ

আমাদের সমাজে পারিবারিকভাবে নারীদের যেহেতু বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয় না, তাই গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যাপারে তাদের সঙ্গে পরামর্শ বা তাদের মতামত জানার চেষ্টাও করা হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের মতামত গ্রহণ করা হলেও তা আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত স্বামী গ্রহণ করবে আর বেগম সাহেবা শুধু শুনে থাকবে আর মেনে চলবে এটাই তার একমাত্র দায়িত্ব! অথচ রাসূল সা.-এর অবস্থা ছিলো সম্পূর্ণ ভিন্ন।

তিনি শুধু পারিবারিক বিষয়েই নয়, প্রয়োজন হলে উম্মতের ব্যাপারেও স্ত্রীদের পরামর্শ ও মতামত গ্রহণ করতেন এবং তা বাস্তবায়ন করতেন। যেমন হুদাইবিয়ার সন্ধি সম্পাদন হওয়ার পর রাসূল সা. সাহাবাদের বলার পরও যখন তারা ব্যথিত হয়ে ভগ্নহূদয়ের কারণে কোরবানি এবং হলক (মাথা মুণ্ডানো) কোনোটাই করলেন না, তখন রাসূল সা. মনঃক্ষুণ্ন হয়ে তাঁবুতে প্রবেশ করেন এবং হজরত উম্মে সালমা রা.-এর সঙ্গে এ ব্যাপারে পরামর্শ করেন। তার পরামর্শ অনুযায়ী রাসূল সা. নিজের কোরবানি ও হলক সম্পাদন করলে সাহাবায়ে কেরামও নিজেদের কোরবানি ও হলক সম্পন্ন করে নেন। (বুখারি, ১/৩৮০)

পারিবারিক কাজে সহযোগিতা করা : ঘরের কাজকর্মে স্ত্রীদের সহযোগিতা করার প্রতি পুরুষদের কোনো আগ্রহ নেই বললেই চলে। অনেকে আবার এটাকে মানহানিকর মনে করে থাকে। ছোট ছোট বিষয়ে তারা স্ত্রীনির্ভর হয়ে থাকে। হায় রে মান রে! অথচ রাসূল সা. ঘরের কাজকর্মে স্ত্রীদের সহযোগিতা করতেন।

হজরত আয়েশা রা.কে একদিন জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূল সা. ঘরে কী কাজ করতেন? হজরত আয়েশা রা. বলেন, ‘রাসূল সা. ঘরের কাজকর্মে স্ত্রীদের সহযোগিতা করতেন। ’ (মিশকাত-৩৫১৯) অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, ‘রাসূল সা. নিজের কাপড় নিজেই সেলাই করতেন। নিজেই নিজের জুতা মেরামত করতেন।

 ঘরে যেসব কাজ পুরুষরা করে থাকে, রাসূল সা.ও সেসব কাজ নিজেই করতেন। ’ (মিশকাত-৫২০)

স্ত্রীর মনোরঞ্জন ও বিনোদনমূলক কাজে অংশগ্রহণ : মানুষের স্বভাবজাত বিষয় হলো, সে অবিরাম কাজের ফলে ক্লান্ত হয়ে ওঠে, কাজের প্রতি অনীহাভাব চলে আসে। এমতাবস্থায় ক্লান্তি দূর করতে প্রয়োজন একটু বিনোদনের যেন নবোদ্যমে জীবনের পথচলা শুরু করা যায়। ইসলাম যেহেতু মানুষের স্বভাবজাত ধর্ম, তাই মানুষের স্বভাবজাত চাহিদা বিনোদনের প্রতি আকর্ষণ পূরণ করার জন্য শরিয়তের গণ্ডির মধ্য থেকে জায়েজ এবং বৈধ পন্থায় প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা লাভ করার যাবতীয় পথ উন্মুক্ত রেখেছে।

আমারসংবাদ/জেআই