Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

সংকটাপন্ন মুসলমানদের সাহায্য করার মূলনীতি

ড. ইউসুফ আল কারজাভি

মে ২৬, ২০২১, ০৮:৪৫ পিএম


সংকটাপন্ন মুসলমানদের সাহায্য করার মূলনীতি
  • রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই, না সে তার প্রতি জুলুম করবে, না তাকে অন্যের হাওলা করবে। যে কেউ তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করবেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৯৫১)

সংকটে পতিত মুসলমানের পাশে দাঁড়ানো অপর মুসলমানের জন্য আবশ্যক। ঈমানের দাবি হলো- একজন মুসলিম তার ভাইকে সাহায্য করবে, সংকটে সহযোগিতা করবে, তাঁকে উদ্ধারের চেষ্টা করবে, কষ্ট দূর করবে এবং একইভাবে তাঁর প্রতি সে অবিচার করবে না, বিপদের মধ্যে ছেড়ে যাবে না এবং তাকে অসম্মান করবে না। একাধিক বিশুদ্ধ হাদিসে বিষয়টির তাগিদ রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই, না সে তার প্রতি জুলুম করবে, না তাকে অন্যের হাওলা করবে। যে কেউ তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করবেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৯৫১)

সাহায্য করার মূলনীতি : ইসলামের মূলনীতি হলো অত্যাচারের শিকার মুসলিমকে অত্যাচার থেকে রক্ষা করে এবং অত্যাচারীকে তা থেকে বিরত রেখে সাহায্য করা হবে। কেননা তারা উভয়ে দুভাবে সংকাপন্ন। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘তোমার ভাইকে সাহায্য কোরো সে অত্যাচারী হোক অথবা অত্যাচারিত।’ অর্থাৎ অত্যাচারী ভাইকে অত্যাচার থেকে বিরত রাখবে এবং অত্যাচারিত ভাইকে অত্যাচারীর হাত হতে রক্ষা করবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪৪৩)

অত্যাচারীকে অত্যাচার থেকে বিরত রাখার অর্থ হলো তাকে প্রবৃত্তি ও শয়তানের প্ররোচণার বিরুদ্ধে সাহায্য করা হলো এবং তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে অত্যাচারের শাস্তি থেকে রক্ষা করা। সুতরাং সংকাপন্ন মুসলিমদের সাহায্য করার মূলনীতি হলো অত্যাচারীর বিরুদ্ধে এবং শয়তান ও কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করা। তাকে কোনো ধরনের সংকটের মধ্যে ফেলে রাখা হবে না; বরং হাদিসে এসেছে, ‘কোনো ব্যক্তির মন্দ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে সে তার মুসলিম ভাইকে অবজ্ঞা-উপেক্ষা করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৪)

পৃথিবীর চেয়ে মানুষের জীবনের মূল্য বেশি : অবজ্ঞা-উপেক্ষাকারীর ব্যাপারে যদি এটা বলা হয়, তবে হত্যা করা কতটা গুরুতর। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘আল্লাহর কাছে অন্যায়ভাবে কোনো মুসলিমকে হত্যা করার চেয়ে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়া সহজ।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৩৯৫)

ভেবে দেখতে হবে, একজন মুসলিমকে হত্যা করার এতটা গুরুতর হলে যুদ্ধক্ষেত্রে হাজার হাজার মুসলিম হত্যা করা কতটা জঘণ্য!

মানুষ মৌলিকভাবে নিরপরাধ : ইসলামী শরিয়তের মূলনীতি হলো মানুষ মৌলিকভাবে নিরপরাধ। ফলে সাধারণভাবে মানুষের রক্তপাত নিষিদ্ধ।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি মানবহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করার কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করল সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করল। আর যে কারো প্রাণ রক্ষা করল, সে যেন সব মানুষের জীবন রক্ষা করল।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৩২)

ইসলাম মানুষের রক্তপাত বৈধ করেছে শুধু একান্ত প্রয়োজনে, সৃষ্টিজগতের কল্যাণে, ক্ষতি ও বিশৃঙ্খলা প্রতিহত করার জন্য। যেমন ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে হত্যা করার শাস্তি হিসেবে কাউকে কিসাস বা মৃত্যুদন্ড দেওয়া, ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীকে প্রতিহত করা ইত্যাদি। শাস্তি বা প্রতিবিধান হিসেবে রক্তাপাত ততটুকুই বৈধ, যতটুকু যৌক্তিক এবং প্রতিবিধানের জন্য যথেষ্ট। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ যদি মানুষের কতককে কতকের মাধ্যমে প্রতিহত না করত, তবে পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫১)

‘ফিকহুল জিহাদ’ গ্রন্থ থেকে মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর

আমারসংবাদ/জেআই