Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

জাতীয় উন্নয়নের দর্শন হলো বাজেট

রায়হান আহমেদ তপাদার

মে ২৭, ২০২১, ০৯:০০ পিএম


জাতীয় উন্নয়নের দর্শন হলো বাজেট

যেকোনো দেশের ক্ষেত্রে বাজেট হচ্ছে ব্যক্তি, সমাজ, দেশ ও জাতীয় উন্নয়নের দর্শন। বিশেষ করে আমাদের মতো পোড় খাওয়া অর্থনীতির দেশে। বাজেট যেহেতু সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দিকনির্দেশনা তাই এর গুরুত্ব সর্বাধিক। বাজেটে উন্নয়নের গতিপ্রকৃতি ভালো-মন্দ দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। তবে এ আলোচনায় অংশ নেয় দেশের শিক্ষিত, উচ্চশিক্ষিত জনগোষ্ঠী— অর্থনীতিবিদরা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরকারের মন্ত্রী-এমপি, নেতা, বিরোধী মহলের নেতা, দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা টক-শোতে অংশ নেন। তারা বাজেটের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে তাদের অভিমত ব্যক্ত করেন এবং তা দেশবাসী শোনেন এবং দেখেন।

প্রতিটি শাসকদলই বাজেটকে দেশের উন্নয়ন, দারিদ্র্যবিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের সহায়ক বলে প্রচার করে। পক্ষান্তরে বিরোধী রাজনৈতিক দল বাজেটকে গরিব মারার লুটপাটের বলে অভিহিত করে। প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে কেউ কারো ভালো দেখতে পারে না— এটা আমাদের রাজনীতির একটা সংস্কৃতি। যা হোক, যারা যেভাবেই যে নামেই বাজেটকে অভিহিত করুক না কেন, প্রতিটি বাজেটের ভালো-মন্দ দুটি দিক থাকে। বাজেট শুধু সরকারের আয়-ব্যয়ের হিসাবই নয়, এর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে। সেই লক্ষ্য অর্জনেরও কৌশল ও কর্মপন্থা থাকে। সেই লক্ষ্য হচ্ছে দেশের স্বার্থে, দেশের কল্যাণে, জনস্বার্থ রক্ষা করা, দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়া এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করাসহ বিভিন্ন ইতিবাচক দিক। একইসঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা, রাজনীতির অবকাঠামো উন্নয়ন— সবকিছুই বাজেটে দৃশ্যমান থাকে। একটি রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নে সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা দরকার। আমাদের মনে রাখতে হবে— করোনার বৈশ্বিক মহামারির কবলে পতিত বিশ্ব। অনুন্নত, উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতি বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। এর মধ্যে কোনো কোনো দেশে করোনার দ্বিতীয় কোথাও তৃতীয় ঢেউ চলছে। মানুষের জীবন বাঁচানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এ প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষার কোনো ওষুধ আজও আবিষ্কার হয়নি। প্রতিষেধক হিসেবে যেসব টিকার ব্যবহার চলছে, তার কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তাছাড়া টিকা প্রাপ্তিতেও ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। করোনা মহামারির এক বছরেরও বেশি সময় আমরা অতিক্রম করছি। এবার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা খাত স্বাস্থ্যব্যবস্থার কথায় আসা যাক। করোনা মহামারির কারণে এ খাতের দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা, সমস্যাগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মানুষের জীবন রক্ষা, সুখী ও সুস্বাস্থ্যসম্মত জাতি গঠনের জন্য এ খাতের উন্নয়ন অনস্বীকার্য। প্রতি অর্থবছরই এ খাতের বরাদ্দ বাড়লেও শতকরা হিসাবে ৫ ভাগের কাছাকাছিই থাকে। চলতি বাজেটে ৫ শতাংশের কিছু বেশি স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেয়া হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা সংগতিপূর্ণ নয়। তাছাড়া নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে এ খাত বেহাল। তাই আসন্ন বাজেটে এ খাতের বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। অব্যবস্থা দূর করা উচিত, বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ব্যয়ের অংশ বাড়ানো উচিত।

হাসপাতালগুলোয় বেড সংখ্যা, আইসিইউ বাড়ানো, সরঞ্জামাদির দাম ও ভ্যাট কমানো এবং ডাক্তার ও নার্সদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টিও বাজেটে থাকা উচিত। মূল কথা হচ্ছে, পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজের শতভাগ সাফল্য আশা করা যায় না। এবারের নতুন বাজেটে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী পালনের পাশাপাশি গ্রামকে শহরে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ, গ্যাস, গ্রামীণ অবকাঠামোসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি থাকছে, যা বিগত নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষণা ছিলো।  যা হোক, বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের যে উন্নয়নের গতি দৃশ্যমান সেই গতিধারাকে আরও বেগবান করবে আগামী এ বাজেট— এমন প্রত্যাশা রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষকদের। আমরা মনে করি আসন্ন বাজেট হবে উন্নয়নের জনপ্রত্যাশা পূরণের। সাধারণ মানুষকে যেন করের বোঝা টানতে না হয়। সার্বিক দিক থেকে বাজেট হবে দারিদ্র্যমুক্ত, ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য কমানোর বাজেট, কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণের বাজেট। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করবে। শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি যোগাযোগ ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। বেকারত্বের অবসান ঘটবে। জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, আয় ও গড় আয়ু বৃদ্ধি, অপুষ্টি দূরীকরণ, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার কমানোসহ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার বৈশিষ্ট্যগুলো অর্জিত হবে। নিত্যপণ্যের মূল্য যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে সে বিষয়ে পদক্ষেপ থাকবে বাজেটে। এমনকি বাজেট হচ্ছে রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নের দিকনির্দেশক ও কর্মপরিধি। রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট খাতের উন্নয়নের জন্য। তাই বাজেটে খাত ওয়ারি অর্থ বরাদ্দ থাকে। একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন হয় সরকারি-বেসরকারি প্রচেষ্টায়। শুধু সরকারি উদ্যোগে প্রত্যাশিত উন্নয়ন আশা করা যায় না। তাই সরকারি বাজেটে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হয়। বাজেট শুধুই সরকারের অর্থ সংগ্রহ ও ব্যয়ের বিষয় নয়। সামগ্রিক অর্থে একটি অর্থবছরে রাষ্ট্রের আর্থিক নীতি ও কৌশলের সমন্বয় হচ্ছে বাজেট। সরকারি-বেসরকারি, ছোট-বড় সব খাত এবং জাতীয় জীবন থেকে ব্যক্তিজীবন— সবকিছুর ওপরই বাজেটের প্রভাব পড়ে। সুতরাং বাজেটে আয়-ব্যয়ের চেয়ে আর্থিক নীতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আসছে করোনার দুর্যোগকালে ২য় বাজেট। ইতোমধ্যে নতুন অর্থবছরে ১ হাজার ৫১৫টি প্রকল্পের জন্য ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়সংবলিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদে এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে।

২০২১ সালের ১৮ই-মে এনইসি সভার সভাপতিত্ব করেছেন এনইসির চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে গণমাধ্যমে প্রকাশ, করোনা মোকাবিলার লক্ষ্যে তৈরি করা নতুন অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে পারে ৬ লাখ ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার কম বেশি। বরাবরের মতো নতুন অর্থবছরের বাজেটেও ঘাটতি দাঁড়াতে পারে ২ লাখ ১৩ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটে করোনা মহামারি মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল থাকছে এবার। যা ২০২১-২২ অর্থবছরের বরাদ্দের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। এবারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আকার আরও বাড়ছে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। কারণ বহুদিন উৎপাদনের চাকা ঘোরেনি। নিম্ন আয়ের মানুষ জীবন-জীবিকা নিয়ে চরম ভোগান্তি মোকাবিলা করছে। বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে এসএমই খাতে আরও অর্থায়ন করা হবে। কারণ বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সরকারের। ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটেও করোনাকে মাথায় রেখে নানা প্রণোদনা ও সাহায্য- সহায়তার বিষয়টি অগ্রাধিকার পেয়েছে। সে কারণেই হয়তো দেশের অর্থনীতি এখনো টিকে থাকার লড়াইয়ে মোটামুটি একটা জায়গায় আছে। বিষয়টি খুবই ইতিবাচক। এদিকে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় দেশ এখনো লকডাউন পরিস্থিতিতে আবারো সমস্যায়। এ অবস্থায় দেশের যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেন সুপরিকল্পিত হয়, জনবান্ধব হয়— এই আমাদের প্রত্যাশা। সাধারণ মানুষের বাজার স্বস্তির বাজার হয়। বাজেট যেহেতু সাধারণ মানুষের দায়বদ্ধতার দলিল সে বাজেট যেন দায়িত্বহীনতার দলিলে পরিণত না হয়। বিভিন্ন পেশার মানুষ প্রস্তাবিত এ বাজেট থেকে উপকৃত হয়। তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেটের শৃঙ্খল থেকে জনগণকে মুক্ত করতে হবে। শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ খাত যেকোনো রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দিক।

একথা অস্বীকার করা যাবে না যে, শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের অর্জন অনেক। তথ্যপ্রযুক্তির সফলতাও রয়েছে। মাত্র কয়েক বছরে তথ্যপ্রযুক্তির খাতে যে সাফল্য তা চোখে পড়ার মতো। শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, নারী শিক্ষার ক্ষমতায়ন, বাংলাদেশ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে শিক্ষায় দেশ এগিয়ে গেলেও বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা আত্মকর্মসংস্থান ও বেকারত্বের অবসানের কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে একজন কৃষক বা শ্রমিকের সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে আজ তারা বেকার। তাদের কোনো কর্মসংস্থান হচ্ছে না। কিন্তু বাজেটে বেকার সমস্যার সমাধানের দিকনির্দেশনা থাকা উচিত। অপরদিকে দুর্নীতি স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে থেকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে প্রকৃতপক্ষে জনগণ ও দেশের উন্নয়ন হবে, জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে এবং ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয় ও ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি সমৃদ্ধ ও আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি অর্জন করবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, তৃণমূলপর্যায়ের মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার কথা বাজেটে থাকতে হয়। এবং তাদের চাহিদা ও দাবির প্রতিফলন ঘটিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হলে সত্যিকার অর্থে সে বাজেট হবে গণমুখী এবং বাস্তবায়নযোগ্য। আসলে বাজেট প্রণয়ন করা যতটা কঠিন, তার চেয়েও কঠিন বাজেটের বাস্তবায়ন ঘটানো। বাজেট নিয়ে বিভিন্ন মহল যে, মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন সে বিষয়গুলোর দিকে নজর দেয়া দরকার। মানুষের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য না হলে তা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সুষ্ঠু ব্যয়-বণ্টন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাতওয়ারি যে বরাদ্দ তা যদি স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বণ্টন করা হয় তাহলে বাজেটে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের দুয়ার অনেকাংশে খুলে যাবে।

কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তৃণমূলপর্যায়ে রাষ্ট্রীয় অর্থের যে অপচয় ও দুর্নীতি হয় তা রোধ করতে পারলে বাজেট বারবার সংশোধনের প্রয়োজন পড়ে না। বাজেট বারবার সংশোধন করা হলে বিরোধীমহল সুযোগ পায় সরকারের সমালোচনার। দলীয় নেতাকর্মীদের আরও সংযত হওয়া উচিত। বাজেটের সম্পূর্ণ অর্থ স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যয় করতে হবে যাতে হতদরিদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, অটোরিকশাচালক, ভ্যানচালক, নিম্নবিত্ত সাধারণ জনগণ উপকৃত হয়। তাদের ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি হয়, জীবনযাত্রা উন্নত হয় যা হবে তাদের প্রত্যাশা বাজেট।

উল্লেখ্য, অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবায়ন চিত্র কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে দূরেই থেকে যায়। তাছাড়া রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলনের বিষয়টিও অনস্বীকার্য। রাজনীতিতে বাহবা পাওয়া কিংবা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে লাভের হিসাব কষে নয় বরং অর্থনৈতিক উন্নয়নের নীতিমালা অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করা উচিত। গত বছরের চেয়ে এবার আরও জটিল ও অনিশ্চয়তায় ভরা একটা সময়ে বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে। পরিশেষে বলব— প্রবৃদ্ধি বা ঘাটতি বাজেট নিয়ে দুর্ভাবনা না করে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কী করে বাড়ানো যায়, স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা দূর করে জ্ঞানভিত্তিক, সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে জনবান্ধব, বিনিয়োগবান্ধব বাজেট প্রণয়ন হোক, যেখানে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার ওপর জোর দেয়া হবে। এবার বাজেট তৈরির সময়টিতে দেশের অর্থনৈতিক পটভূমিটা দেখা দরকার। বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, কোভিডের প্রাথমিক ধাক্কা বাংলাদেশ মোটামুটি ভালোভাবেই মোকাবিলা করেছে। বিশ্বব্যাংক প্রক্ষেপণ করেছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে আমরা ৩.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করতে পারবো। আইএমএফ প্রক্ষেপণ করেছে, একই বছরে আমাদের প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৬ শতাংশ। আবার আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রক্ষেপণ হলো আমাদের প্রবৃদ্ধি হবে ৫.১ শতাংশ এবং আইএমএফের প্রক্ষেপণ হলো প্রবৃদ্ধি হবে ৭ শতাংশ। এখানে সংখ্যাটার ব্যবধান যা-ই হোক, দুটি সংস্থাই ইতিবাচক যে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ভালো হবে।

তবে এর মধ্যে নতুন আশঙ্কা হয়ে এসেছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, যা ভালো প্রবৃদ্ধির জন্য হুমকি হতে পারে। আসলে প্রশ্নটা বাজেটের আকার নিয়ে যতটা নয়, তার থেকে বেশি হওয়া উচিত তার গতি-প্রকৃতি নিয়ে। শুধু বরাদ্দের দিকে নয়, নজর দেয়া দরকার বাজেটের গুণগত মানের দিকে। বস্তুত জনগণের প্রত্যাশা, জনগণের প্রাপ্তি এবং জনগণের চাহিদায় যদি বাজেটের প্রতিফলন থাকে, তবে নিশ্চিত তা হবে আসল বাজেট। আর তা না হলে বাজেট গুরুত্বহীন ও তাৎপর্যহীন বলেই প্রতীয়মান হবে। এই গুরুত্বহীন বাজেটে গরিব আর ধনীর সম্পদের ব্যবধান বাড়বে, সম্পদের বৈষম্য বাড়বে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে, জাতীয় প্রবৃদ্ধি হার কমবে। ঋণের বোঝা বাড়বে। দেশ সংকটে পড়বে। সুতরাং এবারের বাজেট হোক শিক্ষাবান্ধব ও জনবান্ধব।

লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট

আমারসংবাদ/জেআই