Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

রুখতে পারে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট

মাহমুদুল হাসান

জুন ২, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


রুখতে পারে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট
  • ডব্লিউএইচও ধরনটিকে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন আখ্যায়িত করেছে
  • সীমান্তবর্তী জেলায় অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে নজরদারি দাবি
  • সংক্রমণ আরও বাড়লে চিকিৎসাব্যবস্থা চ্যালেঞ্জে পড়বে
  • উচ্চ সংক্রমিত জেলায় গণপরিবহন বন্ধের পরামর্শ

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশ। প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে দ্বিতীয় ঢেউয়ে শনাক্ত-মৃত্যু দুটোই বেড়েছে। এর মধ্যেই দেশে ভারত, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার নতুন ধারার করোনা শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ভারতীয় ধরন। নতুন এই ধরনটি ভারতে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। শনাক্ত-মৃত্যুতে প্রতিনিয়ত গড়ছে নতুন রেকর্ড। ইতোমধ্যে বাংলাদেশসহ অন্তত ৪৮টি দেশে ছড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) এ ধরনটিকে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন (ভিওসি) হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সীমান্তবর্তী জেলায় ধরনটি কমিউিনিটি ট্রান্সমিশনে (স্থানীয় সংক্রমণ) পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি ভারত ভ্রমণের ইতিহাস নেই এমন মানুষও সংক্রমিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে সংক্রমণ। এক জেলা থেকে অন্য জেলায়ও সংক্রমণ ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। সংক্রমণ যাতে সারা দেশে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সীমান্তবর্তী জেলাগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল চিহ্নিত করে লকডাউনের পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। তার আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক কমিটির পরামর্শের ভিত্তিতে নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও খুলনায় লকডাউনের কথা বলে মন্ত্রিপরিষদ।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়ে ছিলেন, পুরো জেলা অবরুদ্ধ করা হবে, না-কি জেলার নির্দিষ্ট কিছু এলাকা- সেসব বিষয়ে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। অবশ্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করলে স্থানীয় প্রশাসনও লকডাউনের ঘোষণা দিতে পারে, সে রকম নির্দেশনা আগেই দিয়ে রাখা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে; বিশেষ করে সীমান্তবর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, নওগাঁ, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট এলাকায় সংক্রমণের উচ্চহার দেখা যাচ্ছে। উচ্চহার বিবেচনায় সীমান্ত এলাকাসমূহ অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতোমধ্যে কমিউনিটি পর্যায়ে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বড় আকারে সংক্রমণ হলে চিকিৎসাব্যবস্থার জন্য বড় রকমের চ্যালেঞ্জ হতে পারে। এজন্য সীমান্তবর্তী জেলা ও উচ্চ সংক্রমিত এলাকায় অঞ্চলভিত্তিক সম্পূর্ণ লকডাউন দেয়া। সীমান্তবর্তী জেলাসমূহে অবৈধ অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণরূপে বন্ধের জন্য কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করা ও টহলের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় কার্যক্রম গ্রহণে স্থানীয় প্রশাসনকে ক্ষমতা অর্পণ করা প্রয়োজন। সীমান্তবর্তী সকল জেলাসহ উচ্চ সংক্রমিত এলাকা থেকে আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ করা প্রয়োজন বলেও তারা মনে করছেন। একই সাথে তারা জেলাপর্যায়ে করোনা প্রতিরোধের বিধিনিষেধ পালনে স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন।

এদিকে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে অংশ নিয়ে লাইন ডাইরেক্টর মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা দেখছি সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে শতকরা হিসাবে শনাক্তের হার অন্য যেকোনো জেলার তুলনায় অনেক বেশি বেড়ে গেছে। তবে আতঙ্কের কিছু নেই, সে জায়গাগুলোর হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেনসহ চিকিৎসাসামগ্রী মজুত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহে যদি আমরা সংক্রমণ পরিস্থিতি দেখি, তাহলে ২৬ মে শতকরা হিসাবে শনাক্তের হার ছিলো ৯ দশমিক ১১ শতাংশ। সেদিন এক হাজার ৪৯৭ জন রোগী আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছিলাম। তারপর তিনদিন সংক্রমণের সংখ্যা খানিকটা কম ছিলো। এরপর আবার সপ্তাহের শেষে এসে ৩১ মে এবং ১ জুন শনাক্তের সংখ্যা ১৭শ ছাড়িয়ে গেছে। এর মানে বুঝতেই পারছেন, সংক্রমণ কিন্তু আবার বাড়তে শুরু করেছে। এ অবস্থায় আমাদের যেটি করণীয়, তা হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। এমনকি এ সতর্কবার্তাটি সবাইকে ছড়িয়ে এবং জানিয়ে দেয়া।

আমারসংবাদ/জেআই