Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

বিশাল ঘাটতির উচ্চাভিলাষী বাজেট

আসাদুজ্জামান আজম

জুন ৩, ২০২১, ০৮:০৫ পিএম


বিশাল ঘাটতির উচ্চাভিলাষী বাজেট

বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবিলা এবং সংকট পরবর্তী অর্থনীতি টেনে তুলতে ২০২১-২২ অর্থবছরে বিশাল ঘাটতির উচ্চাভিলাষী ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। দেশের ইতিহাসের পঞ্চাশতম প্রস্তাবিত বাজেট সর্বোচ্চ ঘাটতি বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেট মোট জিডিপির ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এটি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৬৪ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা বেশি। প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। করবহির্ভূত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সরকার বরাবরই দুই উৎস বেছে নেয়। এগুলো হলো— বিদেশি ও অভ্যন্তরীণ উৎস। আগামী বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপর নির্ভরতা কিছুটা কমিয়ে বৈদেশিক উৎসের প্রতি নির্ভরতা বাড়ানো হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ খাত থেকে এবার ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নেবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। আর জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেবে ৩২ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য খাত থেকে নেয়া হবে পাঁচ হাজার এক কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি পূরণে সরকার প্রধানত বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করবে, অংকে যা ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা আছে— ৭৬ হাজার চার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান খাতে প্রত্যাশা করা হয়েছে তিন হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় মেয়াদে ১৩তম বাজেট এবং বর্তমান সরকারে তৃতীয়বারের মতো বাজেট পেশ করেন মুস্তফা কামাল। এর আগে দুপুরে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়। দুপুর ১২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের পশ্চিম ব্লকের দ্বিতীয় তলায় মন্ত্রিসভা কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এ বিশেষ বৈঠক হয়। নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বাজেট অনুমোদন দিয়ে স্বাক্ষর করেন। পরে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে খয়েরি ব্রিফকেস হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংসদ কক্ষে প্রবেশ করেন অর্থমন্ত্রী। এই ব্রিফকেসেই ছিলো ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাজেট বক্তব্য শুরু করেন তিনি। এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ এর দীর্ঘতর প্রভাব এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্বিতীয় ঢেউয়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে সৃষ্ট ক্ষতি হতে পুনরুদ্ধারের কৌশল বিবেচনায় নিয়ে এবং বিশেষভাবে স্বাস্থ্য খাতে উদ্ভূত প্রয়োজন মেটানো এবং ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। কোভিড-১৯ এর প্রভাব মোকাবিলায় প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ব্যবস্থা প্রস্তাবিত বাজেটে রাখা হয়েছে। নতুন ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সময় মূল্যস্ফীতি হবে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশের ক্রমাগত উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করোনার প্রভাবে সাময়িক বাধাগ্রস্ত হয়েছে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেকর্ড ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে করোনার কারণে তা কমে ৫ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়ায়। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনার প্রভাব থেকে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার হবে ধরে নিয়ে চলতি অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮ দশমিক ২০ শতাংশ। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশের ওপরে ধরা হয়েছে, কিন্তু সেই প্রবৃদ্ধির জন্য যে পরিমাণ বিনিয়োগ দরকার, তা কীভাবে হবে বলা হয়নি। বিশেষ করে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ কয়েক বছর ধরে এক জায়গায় আটকে আছে। কোভিডের কারণে তা আরও কমে গেছে। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ না হলে প্রবৃদ্ধি বাড়বে কীভাবে? শুধু সরকারি বিনিয়োগ দিয়ে হবে না। আবার গত এক বছরে অনেক সরকারি প্রকল্পে ধীরগতি দেখা গেছে। এই বাস্তবতার সঙ্গে প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ মেলে না। প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক বরাদ্দ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ৭০ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ২৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। মানবসম্পদ খাতে (শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাত) বরাদ্দের পরিমাণ ধরা হয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। ভৌত অবকাঠামো খাতে ধরা হয়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা বাজেটের ২৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর মধ্যে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে খরচ হবে ৭৪ হাজার ১০২ কোটি টাকা, যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে ৬৯ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। সাধারণ সেবা খাতে খরচের পরিমাণ ধরা হয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব, বিভিন্ন শিল্পে ভর্তুকি, রাষ্ট্রায়ত্ত, বাণিজ্যিক ও আর্থিক খাতে বিনিয়োগের জন্য ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৪ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। সুদ পরিশোধ বাবদ ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা ও নিট ঋণদান পাঁচ হাজার ১০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা খাতে ৩২ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। করোনা (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় গৃহীত কার্যক্রমসমূহ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা খাতে এ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। গত অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ছিলো ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি। টাকার হিসাবে গত অর্থবছরের তুলনায় প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে তিন হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা বেশি অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ছিলো ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। শতাংশের হিসাবে যা ছিলো ৫ দশমিক ২ শতাংশ। এ ছাড়া মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি চাহিদা মেটাতে আবারো ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিগত বাজেটে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য বিপুল বরাদ্দ রাখা হয়। এ ছাড়া যেকোনো জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৬১ হাজার ৬৩১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের এডিপির সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৬১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। সড়কপথের উন্নয়নে ৪৫২টি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে  জানিয়ে অর্থমন্ত্রী  বলেন, একটি আধুনিক ও টেকসই মহাসড়ক সংযোগ গড়ে তোলার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। একই সাথে সড়ক নিরাপত্তা বৃদ্ধি, ঢাকা মহানগরীতে যানজট নিরসণে দ্রুতগতির গণপরিবহন ব্যবস্থা (এমআরটি ও বিআরটি) প্রবর্তনসহ মোটরযান ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নে পরিকল্পনা গ্রহণসহ বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান। তিনি বলেন, গত ১২ বছরে সরকার সড়কপথের উন্নয়নে ৩৩১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে ৪৫৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক চার এবং তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে এবং চার লেন বিশিষ্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ জাতীয় মহাসড়ক ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ইত্যাদি চার লেনে উন্নীত করার কাজ এগিয়ে চলছে। এরপরই বিদ্যুৎ খাতে গুরুত্ব দিয়ে  বিদ্যুৎ, বিভাগ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জন্য ২৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিলো ২৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। এবার বরাদ্দের পরিমাণ বেড়েছে ৭২৬ কোটি টাকা। এরপর গৃহায়ণ খাতে ২৩ হাজার ৪২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের জন্য এক হাজার ৭২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৩০৬ কোটি টাকা বেশি। বিদায়ী অর্থবছরে এ বিভাগের জন্য বাজেট ছিলো এক হাজার ৪১৫ কোটি টাকা।

বাজেটে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ বেড়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৭১ হাজার ৯৫১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিদায়ী অর্থবছরের চেয়ে এবার পাঁচ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা বেশি। করোনা ভাইরাসের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আগামী ১২ জুন পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিক স্তর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আছে। করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে ১৩ জুন থেকে স্কুল-কলেজ খোলার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ২৬ হাজার ৩১১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়, যা চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) বরাদ্দ ছিলো ২৪ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার জন্য ৩৬ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়, যা চলতি অর্থবছরে ছিলো ৩৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য ৯ হাজার ১৫৪ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বর্তমান অর্থবছরে বরাদ্দ করা হয় আট হাজার ৩৪৫ টাকা।

অন্যদিকে বাজেটে বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবনায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সাল থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর করারোপ করা হয়েছিল। তবে মামলার কারণে আদায় হয়নি। মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় এখন নতুন করে করারোপের প্রস্তাব করছি। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রযোজ্য সাধারণ করহার হ্রাস করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা কেবল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের আয়ের ১৫ শতাংশ হারে কর নির্ধারণ করা হয়েছিল। মহান এ সংসদে আমি এ করহার অর্থ আইনের মাধ্যমে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।’ প্রবাসীদের জন্য ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসমূহে বিশেষ প্যাকেজ কর্মসূচি চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। প্রবাসী আয়ে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি শিরোনামে বলা হয়, ‘চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রবাসী আয় এসেছে ২২ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৪০ দশমিক ১ শতাংশ। মূলত প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রবাসীদের পাঠানো টাকার উপর ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা অব্যাহত রাখা এবং অর্থ পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজীকরণ করার ফলে প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে এ ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। করোনা মহামারিকালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে রপ্তানি বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি নিয়ে অনিশ্চয়তার মাঝেও প্রবাসী আয়ের অভাবনীয় সাফল্য স্বস্তির মধ্যে রেখেছে।

২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এমআরটি লাইন-৬ (উত্তরা-মতিঝিল)-এর উত্তরা-আগারগাঁও অংশে যাত্রী পরিবহন শুরু করার লক্ষ্যে কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা মহানগর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসন এবং পরিবেশ উন্নয়নে অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসেবে ছয়টি মেট্রোরেলের সমন্বয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) আওতায় মোট ১২৮ দশমিক ৭৪১ কিলোমিটার (উড়াল ৬৭.৫৬৯ কিলোমিটার এবং পাতাল ৬১.১৭২ কিলোমিটার) দীর্ঘ এবং ১০৪টি স্টেশন (উড়াল ৫১টি এবং পাতাল ৫৩টি) বিশিষ্ট একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার নিমিত্তে সরকার সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা ২০৩০ গ্রহণ করেছে।’ অর্থ মন্ত্রী বলেন, ‘উল্লেখ করা প্রয়োজন, ডিএমটিসিএলের মাধ্যমে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এমআরটি লাইন-৬ এর উত্তরা-আগারগাঁও অংশে যাত্রী পরিবহন শুরু করা, এমআরটি লাইন-১ এর ডিটেইলড ডিজাইন সম্পন্ন করা, এমআরটি লাইন-৫ নর্দার্ন রুটের বেসিক ডিজাইন সম্পন্ন করা এবং এমআরটি লাইন ৫ সাউদার্ন রুটের ফিজিবিলিটি স্টাডি শুরু করার বিষয়ে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’

২০২১-২২ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারকে গতিশীল-উজ্জীবিতকরণের লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। স্টক এক্সচেঞ্জকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার উদ্দেশে ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরো কিছু পদক্ষেপ শিগগিরই বাস্তবায়ন করা হবে। বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছ— ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন চালু করা, আধুনিক পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইন্সস্ট্রুমেন্টের মধ্যে সুকুক, ডেরিভেটিভ অপশনে লেনদেন চালু করা, ওটিসি বুলেটিন বোর্ড চালু করা, ইটিএফ চালু করা, ওপেন অ্যান্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত করা ইত্যাদি। এ ছাড়া কর্পোরেট করহার কমানোর বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে অধিক সংখ্যক ভালো শেয়ার পুঁজিবাজারে আসবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের সমাজের মূলধারায় আনতে নতুন অর্থবছরের (২০২১-২২) বাজেটে কর ছাড় দেয়া হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান বছরের পুরো সময় মোট জনবলের ১০ শতাংশ বা ১০০ জনের বেশি তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিকে চাকরি দিলে প্রদেয় করের ৫ শতাংশ রেয়াত পাবে। বাজেট বক্তৃতায় ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সি সব শিশুর বাল্যবিয়ে নির্মূলের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন-২০২১ প্রণীত হয়েছে, যা শিগগিরই জাতীয় সংসদে পাস হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র স্থাপন, হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল শিশুদের জন্য শিশু বিকাশ কেন্দ্র কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় দুস্থ ও অসহায় নারীদের কর্মসংস্থান প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। আমরা ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের নিচে সকল শিশুর বাল্যবিয়ে নির্মূলের পরিকল্পনা করেছি।’

স্বল্প শিক্ষিত, দরিদ্র ও অসহায় নারীদের আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ ও আইটি প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। মুস্তফা কামাল বলেন, ‘নারীদের জন্য ঢাকায় কমিউনিটি নার্সিং ডিগ্রি কলেজ স্থাপন, তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কার্যক্রমের বাস্তবায়নসহ নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা বিধানসহ নারীর সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার মাধ্যমে উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখবো।’ অর্থমন্ত্রীর তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য চার হাজার ১৯১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি, যা ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিলো তিন হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। নতুন করে বয়স্ক ভাতায় পরিধি আট লাখ বাড়ানো হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরে সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১১২টি উপজেলায় বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী দরিদ্র প্রবীণ ব্যক্তিকে শতভাগ বয়স্ক ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে বয়স্ক ভাতা কার্যক্রমে উপকারভোগীর কাভারেজ বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী প্রাপ্য শতভাগ বয়স্ক মানুষকে অতি উচ্চ ও উচ্চ দারিদ্র্যভুক্ত গ্রুপের আরও ১৫০টি উপজেলায় সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এতে করে আট লাখ নতুন উপকারভোগী যোগ হবেন এবং এ খাতে ৪৮১ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হবে।

দুই লাখ আট হাজার জন বৃদ্ধি করা হয়েছে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা। যার ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরে এ বাবদ ২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রয়োজন হবে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা বলয় খাতে বরাদ্দ ছিলো ১৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা, যা ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় সাতগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট এক লাখ সাত হাজার ৬১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি, যা বাজেটের ১৭.৮৩ শতাংশ এবং জিডিপির ৩.১১ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানি ১২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বিগত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানি ভাতা ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে ১২ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে। এতে বরাদ্দ বাড়বে এক হাজার ৯২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করতে তাদের জন্য চার হাজার ১২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০ হাজার ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।’ প্রস্তাবিত বাজেটে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আরো শক্তিশালী করতে কমিশনের কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে অটোমেশনের পরিকল্পনা রাখা হয়েছে।  বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের চাহিদা মোতাবেক পর্যাপ্ত আইনি সহায়তা প্রদান করে আসছে সরকার। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তদন্ত ও মামলা পরিচালনা সংক্রান্ত কাজ সঠিকভাবে পরিবীক্ষণের জন্য ওয়েবভিত্তিক সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হবে। দুর্নীতি দমনে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

দুই লাখ টাকার কম সঞ্চয়পত্রে টিআইএন লাগবে না। দুই লাখ টাকার ঊর্ধ্বে সঞ্চয়পত্র ক্রয় এবং পোস্টাল সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে টিআইএন বাধ্যতামূলক। এর আগে ৫০ হাজার টাকার অধিক অর্থের সঞ্চয়পত্র কিনতে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) সার্টিফিকেট জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এবার তা বৃদ্ধি করা হয়েছে।  অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে দুই লাখ টাকার কম অর্থের সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন সার্টিফিকেট লাগবে না। করোনা ভাইরাস ধকল কাটাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্রুত প্রসারের লক্ষ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে কর্পোরেট কর হার কমিয়ে নন-লিস্টেড কোম্পানিসমূহের ক্ষেত্রে করহার ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ এবং লিস্টেড কোম্পানির জন্য তা ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। আর এক ব্যক্তি কোম্পানির জন্য নন-লিস্টেড কোম্পানির কর হার ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রযোজ্য। অর্থনীতিকে অধিকতর আনুষ্ঠানিক করা এবং এক ব্যক্তি কোম্পানির প্রতিষ্ঠা উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ ধরনের কোম্পানির কর হার ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ও ঢাকা শহরের বর্ধিষ্ণুতা বিবেচনায় এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় চারটি স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাছাড়া পদ্মা বহুমুখী সেতুর উভয় প্রান্তে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের মেগাসিটিগুলোর আধুনিকায়ন ও পরিকল্পনা মাফিক বিনির্মাণের লক্ষ্যে বিভিন্ন মেয়াদের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হচ্ছে। রাজউকের আওতায় ২০১৬-৩৫ সাল মেয়াদি ‘ডিটেইল্ড অ্যারিয়া প্ল্যান (ড্যাপ)’ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় ২০২০-৪১ সাল মেয়াদি ‘চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টারপ্ল্যান’ প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। অন্যান্য বড় শহরগুলোর জন্যও অনুরূপ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হবে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে শহরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, পয়ঃনিষ্কাশনের উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন, যানজট দূরীকরণ, পরিবেশ-প্রতিবেশের দূষণ কমানোসহ নাগরিক জীবনমানের উন্নতি ঘটবে বলেও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্ততৃায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিলো ৫৪৩ মার্কিন ডলার। যা বর্তমানে দুই হাজার ২২৭ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। আর মানুষের গড় আয়ু ২০০৫-০৬ অর্থবছরের ৫৯ বছর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯-২০ সালে দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৬ বছর।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বদলে যাওয়া এক দেশ। বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা একটি স্বর্ণালি যুগ অতিক্রম করলাম, যা সারা বিশ্বে সমাদৃত। বঙ্গবন্ধুর পরে অর্থনীতি ও উন্নয়ন, সমাজনীতি, সংস্কৃতি, আইনশৃঙ্খলা, পররাষ্ট্রনীতিসহ সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। গত ১২ বছরে জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ছিলো ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭ শতাংশের বেশি ছিলো এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ শতাংশ অতিক্রম করে। মূল্যস্ফীতি ছিলো সহনীয় পর্যায়ে।

আমারসংবাদ/জেআই