Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

হিসাব-কিতাবের বাজেট!

আবদুর রহিম ও রফিকুল ইসলাম

জুন ৪, ২০২১, ০৮:০০ পিএম


হিসাব-কিতাবের বাজেট!

হতাশ মধ্যবিত্তরা। নতুন দরিদ্র ও শহরের দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ নেই। মন ভরেছে ব্যবসায়ীদের। শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যয় বৃদ্ধির ইঙ্গিত। কর্মসংস্থানের পদক্ষেপ নেই। স্বাস্থ্যে বরাদ্দ চাহিদার কম হলেও জনপ্রশাসনে সর্বোচ্চ বরাদ্দ। এ নিয়ে রাজনীতি ও বিশ্লেষণী সংস্থাগুলো প্রশ্ন তুলেছেন। বলা হচ্ছে ঘোষিত বাজেট দুর্বলতা আড়াল করার বাজেট। জীবন-জীবিকার বাজেট নয়। শুধু গতানুগতিক হিসাব-কিতাবের বাজেট। এ বাজেট বৈদেশিক ঋণনির্ভর। করোনার দুঃসময়ে যা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। এ বাজেটে ধনীদের সুবিধার কথা আছে কিন্তু আড়াই কোটির কাছাকাছি মানুষ যে নতুন গরিব হয়েছে তাদের কথা বলা হয়নি। কর্মচ্যুত হয়ে পড়েছে হাজার হাজার প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী, তাদের বিষয়ে ভাবা হয়নি। বাজেট হওয়া উচিত ছিলো ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতিমালার পথনির্দেশনা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বাজেট, যা দুঃসময়ের বাজেটে উঠে আসেনি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দাবি— পূর্ণিমার ঝলমল আলোর বাজেট এটি, সংকটকালে সামাজিক সুরক্ষা, জীবন ও জীবিকার বাজেট। অন্যদিকে দেশের প্রভাবশালী সাতটি রাজনৈতিক দল ও একাধিক বিশ্লেষণী সংস্থা দাবি করছে— একটি অবাস্তবায়নযোগ্য, কাল্পনিক ও কাগুজে বাজেট, এই বাজেট কল্পনাপ্রসূত, মনগড়া। এই বাজেট ৯৯ শতাংশ সাধারণ মানুষের স্বার্থবিরোধী, লুটপাটের বাজেট। চাপ পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। ব্যাংক ও বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরশীল বাজেট যা দিন শেষে অমাবস্যার অন্ধকার নিয়ে আসার বাজেট। স্বাস্থ্য বা শিক্ষা খাতে প্রতিফলন না থাকায় জনবিমুখ হওয়ায় বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে সরকারকে।

পূর্ণিমার ঝলমল আলোর বাজেটেও অমাবস্যা দেখে বিএনপি —আওয়ামী লীগ

মহামারির সংকটকালে ৬ লাখ কোটি টাকার যে বাজেট সরকার দিয়েছে, তা ‘সর্ব মহলে প্রশংসিত হয়েছে’ বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, করোনা ভাইরাস সংকটকালে সামাজিক সুরক্ষা, জীবন ও জীবিকাকে প্রাধান্য দিয়ে, সর্বস্তরের মানুষকে প্রাধান্য দিয়ে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়িয়ে এ বাজেটটি করা হয়েছে। বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, মহামারির সংকটকালে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিয়ে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এই বাজেটটি করা হয়েছে করোনা প্যানডেমিকের মধ্যে জীবন এবং জীবিকার বিষয়টি মাথায় রেখে বাস্তবভিত্তিক সময়োপযোগী ব্যবসাবান্ধব, বিনিয়োগবান্ধব এবং সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিয়ে। সংকটকালে এটা একটা বাস্তবমুখী বাজেট। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহল এ বাজেটের প্রশংসা করেছে। বাজেট নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমালোর জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাজেটের এই দিনে তারা পূর্ণিমার ঝলমল আলোতে অমাবস্যার অন্ধকার দেখছে। তারা আজকে আবোল তাবোল বকছে। তাদের বাজেট বক্তৃতা অন্ধ বিদ্বেষপ্রসূত কথামালার চাতুরি। তারা ভালো কিছু চোখে দেখে না। দিনের আলোতে তারা অন্ধকার দেখে। এটা হচ্ছে বিএনপির দৃষ্টি ভঙ্গি। তাদের দল কখনো ভালো কিছু দেখে না। চোখ থাকতেও তারা হাওয়া ভবনের কালো চশমা পরে থাকে। সে জন্য প্রকৃত চিত্র তাদের কালো চশমায় ধরা পড়ে না।

অবাস্তবায়নযোগ্য কাল্পনিক ও কাগুজে বাজেট —বিএনপি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিপাদ্য শব্দমালার মাঝেই ভাঁওতাবাজি পরিষ্কার। কারণ করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাভাবিক জীবন গত ১৮ মাস যাবৎ অচল। এর মধ্যে অপরিকল্পিত লকডাউনের নামে শাটডাউনে নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষদের জীবন চূড়ান্ত রকমে থমকে গেছে। তাই সুস্পষ্টভাবে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা মাথায় না রেখে কেবল অর্থনীতির নানা তত্ত্ব ও বিশাল সংখ্যার আর্থিক উপস্থাপনার মাধ্যমে কার্যত জনগণের সঙ্গে এক ধরনের ভাঁওতাবাজি করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা— এ বাজেটেও স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। অথচ এই মুহূর্তে মানুষের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, মহামারিকালে মানুষের জীবন-জীবিকার স্বাভাবিক গতি ফিরে পেতে ও বেঁচে থাকার নিশ্চয়তায় চলমান স্বাস্থ্য পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ইহা একটি অবাস্তবায়নযোগ্য কাল্পনিক ও কাগুজে বাজেট ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণকে কোভিডের মহাসংকট থেকে রক্ষার দিকনির্দেশনা নেই। এটি দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার বাজেট। জনগণের সমর্থনবিহীন সরকারের রাষ্ট্রের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাই এ বাজেটে জনস্বার্থের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। এটি দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার বাজেট। ঘোষিত বাজেটে অপচয়, অব্যবস্থাপনা বন্ধ করে সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ হয়নি। কারোনাকালীন এই বাজেটে স্বাস্থ্য এবং হতদরিদ্র ও শ্রমিকদের প্রত্যাশিত প্রণোদনা উপেক্ষিত হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট দেখে মনে হবে, সরকার মনে করে না, আগামী দিনেও জনগণের ভোটের প্রয়োজনীয়তা আছে তাদের। বিএনপি মহাসচিব বলেন,বাজেটটি দেশের ৫০তম বাজেট। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সময় এটা। কিন্তু বাজেটে সে লক্ষ্যে বড় কোনো সংস্কার পরিকল্পনার উল্লেখ নেই। আয় ও ব্যয়ের সামর্থ বৃদ্ধি, বিশেষ করে গুণগত মান বজায় রেখে ব্যয় করার অক্ষমতা নিরসনে কোনো সংস্কারমূলক কার্যক্রমের পরিকল্পনা নেই বাজেটে।

কল্পনাপ্রসূত মনগড়া এবং অবাস্তব এটি বাস্তবায়নযোগ্য নয় —জাতীয় পার্টি

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছেন, বিশাল অঙ্কের এ ঘাটতি বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গিয়ে সরকার ঠেকে যাবে। যে বাজেট পেশ করা হয়েছে, তা কল্পনাপ্রসূত, মনগড়া এবং অবাস্তব। আন্দাজে করা এ বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয়। জি এম কাদের বলেন, বিশাল ঘাটতি পূরণে যে ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। এ বাজেট ব্যাপকভাবে সংশোধন বা রদবদল করতে হবে। ধারণার বশবর্তী হয়ে অর্থমন্ত্রী বাজেট তৈরি করেছেন। এ বাজেট এতটাই পরিবর্তন করতে হবে যে, তাতে প্রণীত বাজেটের প্রকৃত রূপ থাকবে না। বাজেটে খরচ বাড়িয়েছেন, বাড়ানো দরকারও আছে, কিন্তু অর্থ আহরণের বিষয়ে তারা হোঁচট খেয়েছেন। গেলো বাজেটের লক্ষ্য অনুযায়ী ৬০ ভাগও রাজস্ব আদায় করতে পারেনি ১০ মাসে। সামনের দুমাসে কতটা আদায় করতে পারবেন, তাও জানেন না। যেটা প্রাক্কলন করেছেন তাতে যথেষ্ট পরিমাণে ঘাটতি রয়েছে। এবারের বাজেটের ছয় লাখ কোটি টাকা খরচ করতে হলে অর্থমন্ত্রীকে এক-তৃতীয়াংশই ঋণ করতে হবে। সেজন্য বিদেশ থেকে ১ লাখ ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা ঋণ করার পরিকল্পনা জানিয়েছেন তিনি। জি এম কাদের বলেন, বাজেটের ঘাটতি পূরণে বিদেশি ঋণ, স্বল্প সুদে ঋণ এবং বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ প্রাপ্তির যেকথা বলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। আগামী দিনের অর্থনৈতিক যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তাতে এটা আদৌ অর্জন করা সম্ভব হবে কি না, তা বলা যাচ্ছে না। তাই রাজস্ব প্রাপ্তিতে যেমন বিশাল সমস্যা হতে পারে, তেমনিভাবে বাজেট অনুযায়ী অর্থায়নেও সমস্যা হতে পারে। জি এম কাদের বলেন, যারা করোনাকালে কর্মহীন হয়েছে এবং দারিদ্রসীমার নিচে চলে গেছেন, তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি বা তাদের জন্য আর্থিক সহায়তার সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই এই বাজেটে। স্বাস্থ্য খাতের জন্য সাধারণ মানুষের বিপুল আকাঙ্ক্ষা ছিলো, এবার স্বাস্থ্য খাতে বড় ধরনের একটা বরাদ্দ হবে, এমন আশা ছিলো সাধারণ মানুষের। কিন্তু বাজেটে অত্যন্ত সামান্য বৃদ্ধি দেখানো হয়েছে। এটা সাধারণভাবে বলা যায় রুটিন বৃদ্ধি, কোনো ক্রাইসিসের জন্য এই বৃদ্ধি সামান্য এবং অপ্রতুল।

এই বাজেট ৯৯ শতাংশ সাধারণ মানুষের স্বার্থবিরোধী- সিপিবি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ৯৯ শতাংশ মানুষের স্বার্থবিরোধী বলে আখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। সংসদে অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবনার পর দলটির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহম্মদ শাহ আলম জানান, করোনা মহাবিপর্যয়কালে পীড়িত মানুষকে বাঁচানোর জন্য স্বাস্থ্য খাতের প্রাধান্য পাওয়া উচিত হলেও প্রকৃত অর্থে তা করা হয়নি। করোনা বিপর্যয় মোকাবিলার পাশাপাশি করোনার কারণে সৃষ্ট জনজীবনের সংকট কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্য নির্ধারণে এ বাজেটে ব্যর্থ হয়েছে। এ বাজেটে ৯৯ শতাংশ সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা-রুটি-রুজি-সহায়-সম্পদ লুটপাট করে মুষ্টিমেয় ১ শতাংশ লুটেরা ধনীদের স্বার্থ রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাজেটকে ‘সাম্রাজ্যবাদ ও লুটেরা ধনিক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষার গণবিরোধী দলিল’ আখ্যায়িত করে সিপিবির পক্ষ থেকে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়।

এটা কোনো রকম টিকে থাকার বাজেট —জাসদ

করোনা পরিস্থিতিতে টিকে থাকার বাজেট উল্লেখ্য করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আমার সংবাদকে বলেন, করোনার এই দুঃসময়ে যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এই বাজেট গতানুগাতিক বাজেট। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার সার্বিক প্রস্তুতির স্বার্থে এ বাজেট দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এটা কোনো রকম টিকে থাকার বাজেট।

অতিরিক্ত বরাদ্দ এ বাজেট জনগণের নয় —নাগরিক ঐক্য

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, করোনা মহামারির এই মহাসংকট মোকাবিলা করতে যে ধরনের বাজেট প্রত্যাশা করেছিলাম, তার কোনো ছায়া খুঁজে পাইনি এই গতানুগতিক ধারার বাজেটে। বরাবরের মতো উন্নয়ন বাজেটে অতিরিক্ত বরাদ্দ রেখে সামাজিক সুরক্ষার ব্যাপারে সরকারের অনীহা প্রকাশ পেয়েছে। আমরা আগেই বলেছিলাম, করোনা সংকটের মধ্যে মানুষ বাঁচানোর চেয়ে বড় কোনো উন্নয়ন হতে পারে না। কিন্তু সরকার সেই পথে হাঁটেনি। এই বাজেট জনগণের বাজেট নয়। আমি ও আমার দল নাগরিক ঐক্য প্রস্তাবিত বাজেটকে প্রত্যাখ্যান করছি। মান্না বলেন, করোনা মোকাবিলায় কোনো ধরনের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশনা নেই। উপরন্তু বেসরকারি চিকিৎসা খাতকে কর মওকুফসহ বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এতে নিম্নবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্তদের চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ার সুযোগ আরও সীমিত করা হলো। অথচ এই মহামারির মধ্যে একটি গণমুখী স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। সরকার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি সচেতনভাবেই এড়িয়ে গেছে।

ব্যাংক ও বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরশীল বাজেট —এলডিপি

এবারের বাজেট লোক দেখানোর বাজেট উল্লেখ্য করে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ আমার সংবাদকে বলেন, সরকার যে বাজেট ঘোষণা করেছে নিঃসন্দেহে এটা সর্বকালের সর্ববৃহৎ বাজেট। তবে এই বাজেট সম্পূর্ণভাবে ব্যাংক ও বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরশীল। এ বাজেটে বিরাট অঙ্কের ঘাটতি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এবারের বাজেটে যে বিষয়গুলোতে বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার ছিলো সেই বিষয়গুলোর ৮০-৮৫ শতাংশও গুরুত্ব দেয়া হয়নি। মূলত এই বাজেট, লোক দেখানো বাজেট। আমি মনে করি এই বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয়।

লুটপাটের বাজেটে অর্থের চাপ পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর —বাংলাদেশ ন্যাপ

করোনা দুর্যোগের মাঝে সরকারের প্রস্তাবিত বিশাল ঘাটতি ও ঋণনির্ভর বাজেট জনদুর্ভোগ আরও প্রকট করবে ও দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাশ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করবে। করোনাকালীন সংকটেও সরকার ঘোষিত বাজেটে গণমানুষের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি অনেকটাই অবহেলিত। তারপরও বাজেট বাস্তবায়নে সর্বস্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে বরাদ্দকৃত অর্থ হরিলুট, দুর্নীতি, অপচয় রোধ করতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ। বাজেট প্রতিক্রিয়ার পার্টির চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, বিশাল অঙ্কের ঋণনির্ভর বাজেট। এ বাজেট সাধারণ মানুষের কল্যাণে বা বিশাল মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যত্তি ও দরিদ্র জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করা হয়নি। এ বাজেটে দুই পদ্ধতিতে ভ্যাট আরোপ হতে যাচ্ছে। যা শাখের করাতের মতো। বরাবরের মতো নতুন অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। এর মাধ্যমে আসলে লুটেরা ও দুর্নীতিবাজদের স্বার্থই বারবার রক্ষা করা হচ্ছে। ফলে দুর্নীতিবাজরা উৎসাহিত হয়। সরকারের উচিত এই প্রস্তাব বাতিল করা।

তারা বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে— এ বাজেট কল্পনাবিলাসী ও লুটপাট সহায়ক বাজেট। বাজেটের টাকা কোত্থেকে আসবে। বিদেশি ব্যাংক, দাতাগোষ্ঠী নাকি দেশি কোনো ব্যাংক থেকে? কিন্তু এই অর্থের চাপ পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। করোনাকালে সাধারণ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছে। এই বাজেটে এর মাত্রাকে ছাড়িয়ে যাবে। ভালো বাজেট সেটাই, যেই বাজেটে সাধারণ মানুষের কথা ভাবা হয়। ন্যাপ নেতারা আরও বলেন, দেশে শিল্পায়ন হচ্ছে না। শিল্পায়ন না হলে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের বিশ্বাল বেকার জনগোষ্ঠী পরিবার-সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে উঠছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে প্রয়োজন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। তা না হলে বাজেট বিশাল করে লাভ নেই। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, বড়জোর ৪-৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। করোনার থাবা কতদিন স্থায়ী হবে, সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এ সময় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.২ শতাংশ অতি উচ্চাভিলাষী।

স্বাস্থ্য বা শিক্ষা খাতে প্রতিফলন নেই বাজেটে —সিপিডি

নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশি শিল্প ও গতানুগতিক অর্থনীতির জন্য বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ থাকলেও মূল প্রতিপাদ্য ‘জীবন-জীবিকা’ রক্ষার ‘স্বচ্ছ রূপরেখা’ দেখছেন না সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি। বাজেট নিয়ে সিপিডির বিশ্লেষণে ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এবার অর্থনীতির প্রায় সকল জায়গায় স্বস্তির একটি জায়গা’ থেকে বাজেট দেয়ার সুযোগ ছিলো কিন্তু দুর্বল অনুমিতির ওপর প্রাক্কলন বাজেটকে কাঠামোগত দুর্বল করে দিয়েছে। তিনি বলেন, এ বাজেটকে কোভিডকালীন বাজেট বলা হলেও স্বাস্থ্য বা শিক্ষা খাতে তার প্রতিফলন তারা দেখছেন না। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা বা মহামারিতে যারা নতুন করে দারিদ্র্যে পড়েছে, তাদের বিষয়েও বাজেটে ‘তেমন কিছু নেই’। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজেটে ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা আছে, তাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পরোক্ষ একটি চেষ্টা হয়তো আছে, কিন্তু পরোক্ষ চেষ্টায় অর্থনীতিতে ‘বড় ধরনের চাঞ্চল্য’ সৃষ্টি করা যায় না। তার ভাষায়— এ বাজেটে প্রয়োজনীয় কিছু উদ্যোগ থাকলেও তা ‘যথেষ্ট নয়’।

স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ কম মন্তব্য করে তিনি বলেন, যে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে তাও সক্ষমতার অভাবে ব্যয় করা যাচ্ছে না। অথচ সারা দেশের ১৬ হাজার কম্যুনিটি ক্লিনিকের অবকাঠামো দিয়েও আমরা অর্থ ব্যয় করতে পারি। সরকার সেটাও করছে না। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বাজেটে সরকারি কর্মকর্তাদের পেনশন যুক্ত করে বড় দেখানোর প্রবণতার সমালোচনা করে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো বলেন, পেনশন বাদ দিলে এ খাতে থাকে মাত্র বাজেটের ২ দশমিক ৪ শতাংশ। এ বরাদ্দ কোভিড-১৯ অতিমারির এই সময়ে সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকার সমাধান করতে পারবে বলে আমি মনে করি না। তিনি বলেন, আয় বৈষম্য, ভোগ বৈষম্য এবং সম্পদ বৈষম্য দূর করাই বাজেটের দর্শন। সেটাই প্রস্তাবিত বাজেটে অনুপস্থিত। সিপিডের গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে যাদের জন্য বরাদ্দ প্রয়োজন তাদের ‘দেয়া হয়নি’। আবার যার দরকার নেই, তাকেও দেয়া হয়েছে।

বাস্তবায়নে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে সরকারকে- বিসিআই

প্রস্তাবিত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের ঘোষিত বাজেট আশাব্যঞ্জক হলেও এটি বাস্তবায়নে সরকারকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। বিসিআই জানায়, এই সময়ে এরূপ উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ঘোষিত বাজেট আশাব্যঞ্জক হলেও বাস্তবায়নে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে সরকারকে। প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো করদাতা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ১০ শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গের শ্রমিক অথবা শতাধিক কর্মচারী নিয়োগ সাপেক্ষে পাঁচ শতাংশ কর রেয়াতের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া দেশি পণ্য উৎপাদনকারী বৃহৎ শিল্পে (অটোমোবাইল খাত) ২০ বছর, হোম অ্যাপ্লায়েন্স শিল্পে ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে ১০ বছর কর অব্যাহতি এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে যন্ত্রাংশ উৎপাদনে ১০ বছর কর অব্যাহতি প্রদান করায় বাংলাদেশের একমাত্র জাতীয় শিল্প চেম্বার হিসেবে বিসিআই অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছে। বিসিআই মনে করে প্রস্তাবিত বাজেট দেশি শিল্প ও বেসরকারি খাত সহায়ক বাজেট। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সমুদয় মূলধনি যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে কর হার ৩৭.৫ শতাংশ, বিসিআইর পক্ষ থেকে কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। আমরা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মূলধনি যন্ত্রাংশের ওপর আরোপিত ১ শতাংশের অতিরিক্ত সকল প্রকার শুল্ক-করাদি মওকুফ করার পুনরায় অনুরোধ জানায় বিসিআই।

আমারসংবাদ/জেআই