Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

অপ্রতিরোধ্য সীমান্তের সংক্রমণ

মাহমুদুল হাসান

জুন ১৩, ২০২১, ০৭:১৫ পিএম


অপ্রতিরোধ্য সীমান্তের সংক্রমণ
  • সীমান্তের পাঁচ জেলায় অর্ধেক মৃত্যু
  • শুধু রাজশাহীতেই গতকাল মৃত্যু ১৩ জনের
  • সীমান্তবর্তী ৩০ জেলার ২১টিই ঝুঁকিপূর্ণ
  • লকডাউন না মানায় মিলছে না সুফল

সীমান্তের জেলাগুলোতে করোনা শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের উত্থান রাজধানী থেকে হলেও এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। দেশের সীমান্তবর্তী জেলা থেকেই বাড়ছে সংক্রমণের ঢেউ। গতকাল রোববার ৪৭ জনের মৃত্যু হয়। তার মধ্যে ২৭ জনই সীমান্তের পাঁচ জেলার। এর মধ্যে শুধু রাজশাহীতে ১৩ জন মারা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর লকডাউনেও মিলছে না সুফল। প্রতিনিয়ত অবস্থার অবনতি ঘটছে। সীমান্তের জেলাগুলোতে দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ল্যাবে জমে যাচ্ছে নমুনা। দ্রুত সমস্যার সমাধানে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে রামেকে জমে থাকা নমুনা কম চাপ থাকা অন্যান্য জেলায় পাঠানো হচ্ছে। একইসাথে এন্টিজেন টেস্টেও জোর দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

দেশে করোনা সংক্রমণ ৬৭তম সপ্তাহেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন রোগী শনাক্তের হার, মৃত্যু সবই বেড়েছে। নতুন রোগী বেড়েছে ২৭ দশমিক ২০ শতাংশ। একই সময়ে মৃত্যু বেড়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। সীমান্তবর্তী ৩০ জেলার ২১টিই ঝুঁকিপূর্ণ। রাজশাহী বিভাগের সীমান্তবর্তী জেলাগুলো মৃত্যু ও শনাক্তের সূচকে এখন সবার উপরে। পাশাপাশি অন্যান্য সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতেও অব্যাহত সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি। চুয়াডাঙ্গায় শনাক্তের হার ৬৬ শতাংশ, ঝিনাইদহে ৪৫ শতাংশের বেশি। রাজশাহীতে শনাক্তের হার ৫৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ, সাতক্ষীরায় ৬৪ শতাংশ এবং যশোরে ৪২ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল করোনায় ও উপসর্গে ১৩ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছয়, নওগাঁর তিন, রাজশাহীর দুই এবং নাটোর ও কুষ্টিয়ায় একজন করে মারা গেছেন। এ নিয়ে গত ১৩ দিনে এ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে ১২৫ জনের মৃত্যু হলো। তাদের মধ্যে ৭০ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা যান পরীক্ষা হওয়ার আগেই। গতকাল ৩৪১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৮৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। শনাক্ত হার ৫৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এদিকে রোগীর চাপ বাড়ছে খুলনা কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালেও। ১০০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছে ১৪৩ জন। গতকাল করোনায় ও উপসর্গে চারজনের মৃত্যু হয়। সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরায় গতকাল করোনায় একজন ও উপসর্গ নিয়ে দুজন মারা গেছেন। রোববার ৮১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫২ জন আক্রান্ত। শনাক্ত হার ৫৫ থেকে বেড়ে ৬৪ শতাংশে। করোনা সংক্রমণ বাড়ছে যশোরেও। গতকাল তিনজনের মৃত্যু, শনাক্ত হার ২৭ থেকে বেড়ে ৪২ শতাংশে ঠেকেছে। একই অবস্থা উত্তরের সীমান্ত জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে। রোগী বাড়ছে। একদিনে ১৫০ নমুনা পরীক্ষায় ৪৯ জন শনাক্ত ও একজনের মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ল্যাবে জমে যাচ্ছে নমুনা। এসব নমুনা নওগাঁ ও নাটোরে পাঠানো হচ্ছে। একই চিত্র আরও অনেক জেলার। রাজশাহী জেলাসহ যেসব এলাকায় সংক্রমণ বেশি, সেসব এলাকার করোনা নমুনা যেসব এলাকায় চাপ কম সেখানে পাঠিয়ে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাজশাহীর পাশাপাশি বগুড়াতেও কিছু নমুনা পাঠানো হবে। এছাড়া যেখানে চাপ কম আছে, সেখানে এই নমুনা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে নমুনা পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে।’

তিনি বলেন, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁসহ দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় সংক্রমণের হার অনেক বেশি। যে কারণে সরকারি উদ্যোগে বিধিনিষেধ চলমান রয়েছে। তাই এ অঞ্চলগুলোতে অ্যান্টিজেন টেস্ট বাড়ানো হয়েছে। দেশে এই মুহূর্তে ৪০ থেকে ৫০ হাজার পরীক্ষা করার সক্ষমতা রয়েছে। যদি করোনা পরীক্ষার জন্য উপস্থিতি সংখ্যা বাড়ে তাহলে আমরা পরীক্ষা বাড়াতে পারবো। এমনকি করোনা পরীক্ষা জন্য যে ১০০ টাকা নেয়া হতো, সেটাও নেয়া হচ্ছে না। তিনি আরও জানন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সীমান্তবর্তী এলাকাকে তিন ভাগে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করেছে। ১০ শতাংশের বেশি সংক্রমণের হার থাকা জেলাগুলোকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আর ৫-৯ শতাংশ হার থাকা জেলাগুলোকে মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ও ৫ শতাংশের নিচের জেলাকে স্বল্প ঝুঁকির অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

নাজমুল ইসলাম বলেন, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষের টিকা নিশ্চিতে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। এমনকি কোভ্যাক্সের মাধ্যমে যে টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের আমরা বারবার জানিয়েছি, বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং আমাদের ইপিআরে রাখা যাবে এমন টিকা যেনো আমাদের দেয়া হয়। যেটি আমরা সহজেই মানুষের মধ্যে প্রয়োগ করতে পারি, দেশের জনগণকে দিতে পারি।

আমারসংবাদ/জেআই