Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

উন্নয়ন-কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখছে বেজা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ১৩, ২০২১, ০৭:১৫ পিএম


উন্নয়ন-কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখছে বেজা

দেশের উন্নয়নসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা)। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অর্থনৈতিক অঞ্চলে অন্বয়ী ও পশ্চাৎসংযোগ শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়নে তৎপর সংস্থাটি। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠায় শিল্প ও সেবা খাত উন্নয়নে বেজা কাজ করছে।

২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক অতিরিক্ত ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য সেবা উৎপাদন ও রপ্তানির প্রত্যাশা নিয়ে অর্থনেতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বেজা কর্তৃক ইতোমধ্যে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) ডেভেলপার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। চীন, জাপান ও ভারতের সাথে জিটুজি-ভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণসহ অফ-সাইট অবকাঠামো উন্নয়নে প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়েছে। তিনটি ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের জন্য অফ-সাইট অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২০টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে প্রি-কোয়ালিফিকেশন লাইসেন্স দেয়া হয়েছে, তন্মধ্যে ১০টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে চূড়ান্ত লাইসেন্স দেয়া হয়েছে।

দেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন ও পরিচালন কৌশল নির্ধারণ একটি চলমান দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় সুবিধাজনক স্থান নির্ধারণ, বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন, প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা, ওয়ান স্টপ সার্ভিস নিশ্চিতকরণ ও বিনিয়োগ প্রচারণা কৌশল চিহ্নিতকরণ অপরিহার্য। বেজার গভর্নিং বোর্ড ইতোমধ্যে ৯৩টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান নির্ধারণ ও জমির পরিমাণ অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল ৬৪টি, বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল ২৯টি, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের অর্থনৈতিক অঞ্চল দুটি, জিটুজি অর্থনৈতিক অঞ্চল চারটি এবং ট্যুরিজম পার্ক তিনটি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে বেজা। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই উপজেলা এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ‘বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপনে বেজা ও বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) মধ্যে ‘ডেভেপলমেন্ট চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর স্থাপনে ইতোমধ্যে ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে। দেশি-বিদেশি বড় বড় কোম্পানিগুলো জমি বরাদ্দের জন্য বেজায় আবেদন করেছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে জাপানের নিপ্পন, ভারতের এশিয়ান পেইন্টস, যুক্তরাজ্যের বার্জার পেইন্টস, সিঙ্গাপুরের উইলমারসহ আরও অনেকে। দেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে পিএইচপি, বসুন্ধরা গ্রুপ, টি কে গ্রুপ ছাড়াও আরও নানা বিনিয়োগকারী। এ শিল্পনগরে ইতোমধ্যে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে নির্মিত হয়েছে শেখ হাসিনা সরণি, দেশের সর্বপ্রথম সুপারডাইক, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গ্যাস সংযোগ, বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ। এ শিল্পনগরে বর্তমানে ১৩টি শিল্প নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে, আরও ১৫টি প্রতিষ্ঠান শিল্প নির্মাণের অংশ হিসেবে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে। জুলাই মাস নাগাদ কমপক্ষে দুটি শিল্প-কারখানা উৎপাদনে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ শিল্পনগরের মাধ্যমে ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

করোনা সংকটেও বেজার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তার নেতৃত্বে এবং কঠোর নির্দেশনায় করোনা সংকটেও ঝুঁকি নিয়েই মাঠে কাজ করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

সম্প্রতি বেজা নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, করোনাকালেও বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সমর্থ হয়েছে। শুধু গত বছরই ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব পেয়েছে বেজা। অচিরেই বেজার অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বেশকিছু কারখানা পুরোদমে উৎপাদনে যাবে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, বেজা ইতোমধ্যে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে, যা শিগগিরই ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে যাচ্ছে। বড় বড় কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে মিরসরাই ইকোনমিক জোনে জমি বরাদ্দের জন্য বেজার কাছে আবেদন করেছে। এই জোনটিতে জমি বরাদ্দ দেয়া প্রায় শেষের দিকে রয়েছে। ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় নিয়ে এই জোনটিকে কোম্পানিগঞ্জ, সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ, হাতিয়া ইত্যাদি এলাকায় সম্প্রসারিত করা যেতে পারে। আড়াইহাজার ইকোনমিক জোনের সম্প্রসারণ ও সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের (১০৪৭ একর) জন্য জমি বরাদ্দ পুরোদমে শুরু হওয়ার বিষয়ও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি আরও জানান, দেশের ইকোনমিক জোনগুলো প্রয়োজনের ভিত্তিতে বিভিন্ন মডেল অনুসরণ করে থাকে। একটি ভালো মডেল হতে পারে ডিভিডেন্ড অ্যান্ড প্রফিট শেয়ারিং মডেল, যা কি-না ভারতের জয়পুরে আইসিটি পার্কের অনুসরণ করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি ইকোনমিক জোন একেকটি নতুন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রস্থল হিসেবে কাজ করতে পারে।

গত ১০ জুন কাজের গতি বাড়াতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) ভবনে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) অফিস স্থাপনে চুক্তি হয়েছে। বিডার সম্মেলন কক্ষে বেজা ও এনএসডির সঙ্গে নবনির্মিত বিডা ভবনের ফ্লোর ভাড়া সংক্রান্ত চূড়ান্ত চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। বিডা, বেজা ও এনএসডি বিনিয়োগ-সংক্রান্ত কাজ করে থাকে। তাই এই তিনটি প্রতিষ্ঠান একই ভবনে হওয়ায় পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহযোগিতার ভিত্তিতে উন্নত বিনিয়োগ সেবার মাধ্যমে সরকারি ভিশন ও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সহজ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশে শিক্ষিত তরুণদের বড় অংশ কাজ না পেয়ে হতাশগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। এছাড়া বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতির কারণে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে। করোনায় সরকারের আয়ও কমে গেছে। কাজ হারিয়ে শহর ছেড়ে অসংখ্য মানুষ গ্রামে চলে গেছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসাও সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। প্রবাসীদের বড় অংশ দেশে ফিরে এসেছে। আরেকটি অংশ চেষ্টা করেও নানা নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রবাসে যেতে পারছে না। বিশাল এই বেকারদের কথা চিন্তা করে গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নের কথাও বলছেন অনেকে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনার সময়ে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাই হবে সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। কর্মসংস্থান বাড়াতে গেলে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

২০৩০ সালকে সামনে রেখে দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ৯৩টি অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদন পেয়েছে। তার মধ্যে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে সরকারি-বেসরকারি ২৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে অনেক মানুষ। যার কারণে পরিকল্পনা নেয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর কাজ দ্রুত বাস্তবায়নে বেজা কাজ করছে।

আমারসংবাদ/জেআই