রফিকুল ইসলাম
জুন ১৩, ২০২১, ০৭:১৫ পিএম
উপনির্বাচনে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়নে উচ্ছ্বসিত তৃণমূল আওয়ামী লীগ। দলের প্রভাবশালী নেতা, ব্যবসায়ী, বিত্তশালী ও সুযোগ-সন্ধানীদের বাদ দিয়ে দুঃসময়ের পরীক্ষিতদের নৌকার মনোনয়ন দেয়ায় উজ্জ্বীবিত হয়ে উঠেছে তারা। আর ত্যাগীদের মূল্যায়ন করায় প্রশংসায় ভাসছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এমন সিদ্ধান্ত দল ও নেতাকর্মীদের জন্য নতুন বার্তা বলে মনে করছেন তৃণমূলের পরীক্ষিতরা। তারা বলছেন, ব্যবসায়ী ও বিত্তশালী নয়, রাজনীতিবিদদের হাতে রাজনীতি রাখতে নতুন কর্মকৌশল নিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
আ.লীগ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার গণভবনে অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড সভা। ওই সভায় ঢাকা-১৪, কুমিল্লা-৫ ও সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করেন দলটির সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা-১৪ আসনে আগাখান মিন্টু, সিলেট-৩ আসনে হাবিবুর রহমান ও কুমিল্লা-৫ আসনে আবুল হাসেম খানকে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছেন তিনি। তিনটি সংসদীয় আসনে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, উপনির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাওয়া তিনজনই আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের নেতা। তারা নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারবিরোধী আন্দোলন, ১/১১ সরকারের সময় নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। দুঃসময়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব। অথচ এই আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা। দল ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের বাদ দিয়ে উপনির্বাচনে তৃণমূলের নেতাদের মনোনয়ন দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সাথে সারা দেশে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন ও দলকে সুসংগঠিত করতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। জেলা-উপজেলাপর্যায়ে দলের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব সৃষ্টিকারীরা কথা না শুনলে কমিটি ভেঙে দিতে নির্দেশনাও দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার এমন নির্দেশনার পর নড়েচড়ে বসেছে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা। আর তৃণমূলে সৃষ্ট কোন্দলের সমাধানের পথ দেখছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ।
মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. গোলাম মহিউদ্দিন আমার সংবাদকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপনির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে দলের ত্যাগী, পরীক্ষিত, পরিশ্রমী ও দলের জন্য নিবেদিতকর্মীদের যেভাবে মূল্যায়ন করেছেন, তার সিদ্ধান্তের পর তৃণমূলের রাজনীতিতে নতুনভাবে ত্যাগীদের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সবাই এখন দল ও দলের নেত্রীর ওপর আস্থাশীল ও আশাবাদী।’ নেত্রী ত্যাগীদের মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল নেতাদের বাস্তবায়ন করতে হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, দলের মধ্যে অনেক ভুঁইফোঁড়, সুবিধাবাদী, সুযোগ-সন্ধানী, বিএনপি-জামায়াতের হাইব্রিড নেতা রয়েছে। এখনই সময় এসব আগাছা দল থেকে ছেঁটে ফেলার। তাই করোনার মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠন জরুরি। তৃণমূল নেতাদের দাবি— আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকায় ভুঁইফোঁড়, হাইব্রিড, সুবিধাবাদী, সুযোগ-সন্ধানী ও বিএনপি-জামায়াতের নেতাতে রমরমা অবস্থা। ফলে তৃণমূলের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলাসহ মূল্যায়ন পাচ্ছেন না দুর্দিনের পরীক্ষিত, মেধাবী, পরিশ্রমী ও দলের একনিষ্ঠ রাজনীতিবিদরা। সুযোগে নানামুখী সুবিধা নিচ্ছেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও বিত্তশালীরা। একই সাথে দলের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব, কোন্দল, ভাই লীগ, এমপি লীগ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের বলয়ভিত্তিক রাজনীতির কারণে কোণঠাসা ত্যাগীরা। এ অবস্থায় সাম্প্রতিক সময়ে দলের দুঃসময়ের রুট-লেভেলের নেতাদের মূল্যায়ন করছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় সভানেত্রীর এমন সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বসিত ও উজ্জ্বীবিত হয়ে উঠেছে তৃণমূল আওয়ামী লীগের রাজনীতি। তারা বলছেন, উপনির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে ত্যাগী, পরীক্ষিত, পরিশ্রমী ও নিবেদিতদের যেভাবে মূল্যায়ন শুরু হয়েছে, তৃণমূলের রাজনীতিতে ত্যাগীদের নতুনভাবে জোয়ার সৃষ্টি হবে। মূলত ব্যবসায়ী ও বিত্তশালী নয়, রাজনীতি সব সময় রাজনীতিবিদদের হাতে রাখতে হবে।
ব্যবসায়ী ও বিত্তশালী নয়, রাজনীতি সব সময় রাজনীতিবিদদের হাতে রাখতে হবে উল্লেখ করে শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন পাল আমার সংবাদকে বলেন, ‘রুট লেভেলের আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী আছেন। যারা নিজেদের মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে একনিষ্ঠভাবে দলের দুর্দিনে রাজনীতি করছেন। দীর্ঘদিন তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। তাহলে তারা কেন দলের জন্য ঝুঁকি নেবেন ও পরিশ্রম করবেন।’ সম্প্রতি দলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, রুট-লেভেলের নেতাদের মূল্যায়ন শুরু হয়েছে। এটা তৃণমূলের জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন মেসেজ। নেত্রীর সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত ও উজ্জ্বীবিত। তিনি আরও বলেন, রুট-লেভেলের কোনো নেতা বিত্তশালী হতে পারেননি। কারণ তারা সব সময় বঙ্গবন্ধুর জন্য, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জন্য, দলের জন্য এবং দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতি করেন। তাই ব্যবসায়ী ও বিত্তশালী নয়, তাদের হাতে নেতৃত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে।
তৃণমূলের ত্যাগীদের মূল্যায়ন দীর্ঘদিনের দাবি বঙ্গবন্ধুকন্যা পূরণ করতে শুরু করেছেন জানিয়ে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি শফিউর রহমান শফি আমার সংবাদকে বলেন, ‘হাইব্রিড, আগাছা, ভুঁইফোঁড়, সুযোগ-সন্ধানী এবং দলের সুসময়ে বিএনপি-জামায়াত থেকে আগত নেতাদের বাদ দিয়ে দলের ত্যাগীদের মূল্যায়নের দাবি তৃণমূল আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের। এই দাবি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পূরণ করতে শুরু করেছেন। তিনি শীর্ষপর্যায়ের নেতা, ব্যবসায়ী, বিত্তশালী, প্রভাবশালী ও এমপি পরিবারের সদস্যদের বাদ দিয়ে দুঃসময়ের ত্যাগীদের মূল্যায়ন করছেন। তার এমন সিদ্ধান্তে তৃণমূল আওয়ামী লীগ প্রাণ ফিরে পেয়েছে। নেত্রীর সিদ্ধান্ত তৃণমূল ইতিবাচকভাবে দেখছে। ত্যাগীরা উজ্জ্বীবিত হয়েছে। তারা শেখ হাসিনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।’
শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে আমার সংবাদকে বলেন, ‘দুর্দিনে তৃণমূলের কর্মীরাই আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু সে সময় অনেক বড় বড় নেতা বিরোধিতা করেছেন, নানামুখী সুবিধা নিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, কোনো স্বার্থের জন্য তৃণমূলের নেতারা রাজনীতি করেন না। সবাই বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসেই রাজনীতি করেন। এটাই তৃণমূল, এটাই তৃণমূলের ত্যাগীদের রাজনীতি।’
আমারসংবাদ/জেআই