Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

দূরত্ব কমাতে চায় আ.লীগ

রফিকুল ইসলাম

জুন ১৫, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


দূরত্ব কমাতে চায় আ.লীগ
  • চিহ্নিত করা হচ্ছে সাংসদ ও স্থানীয় নেতাদের সমস্যা
  • সমস্যা সমাধানের সুযোগ দেয়া হচ্ছে
  • স্থানীয় নেতা ও  এমপিদের সাথে বৈঠক করছেন আওয়ামী লীগের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারা বলছেন, সংগঠনের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে স্থানীয় এমপি ও দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠক করা হচ্ছে। তাদের সমস্যার কথা শুনেছি এবং সমাধানের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে নিজেদের কোন্দল নিষ্পত্তি করতে না পারলে কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে

জেলা-উপজেলার শীর্ষ পদধারী নেতাদের সাথে স্থানীয় এমপিদের দূরত্ব কমাতে চায় আওয়ামী লীগ। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও কোন্দল মীমাংসার পাশাপাশি সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। এজন্য স্থানীয় নেতা ও  এমপিদের সাথে বৈঠক করছেন আওয়ামী লীগের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারা বলছেন, সংগঠনের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে স্থানীয় এমপি ও দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠক করা হচ্ছে। তাদের সমস্যার কথা শুনেছি এবং সমাধানের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে নিজেদের কোন্দল নিষ্পত্তি করতে না পারলে কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

সূত্রে জানা যায়, অভ্যন্তরীণ কোন্দল মীমাংসা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে পাবনা জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও স্থানীয় এমপিদের সাথে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক করেন তিনি। এ সময়  উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান, সদস্য আব্দুল আউয়াল শামীম ও মেরিনা জাহান কবিতা। এছাড়া পাবনা জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় এমপি ও নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, পাবনায় মেয়াদোত্তীর্ণ সকল ইউনিটের সম্মেলন, দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের মূল্যায়ন এবং স্থানীয় এমপি ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশনা দিয়েছেন উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতারা। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা আমার সংবাদকে বলেন, পাবনার রাজনীতির অবস্থা খুবই খারাপ। এমন পরিস্থিতি থেকে দলকে মুক্ত করতে কেন্দ্রীয় নেতারা কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। বিশেষ করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন নেতা ও দলীয় এমপিদের মধ্যে সৃষ্ট কোন্দল নিরসনের জন্য সাতদিন সময় বেঁধে দিয়েছেন। সৃষ্ট সমস্যা এই সাতদিনের মধ্যে সমাধান করতে না পারলে কেন্দ্র থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই সাথে মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটগুলোর সম্মেলনের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, পাবনা জেলায় দলীয় রাজনীতি নিয়ে বেশকিছু সমস্যা রয়েছে। জেলা-উপজেলার নেতা ও এমপিদের কাছ থেকে আমরা সমস্যার কথা শুনেছি এবং সমাধানের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে নিজেদের কোন্দল নিষ্পত্তি করতে না পারলে কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, তৃণমূল কোন্দল এবং বলয়-ভিত্তিক রাজনীতি ভেঙে দিয়ে ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের মূল্যায়ন করতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। নেত্রীর সিদ্ধান্ত অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে। তৃণমূলে কোনো প্রকার কোন্দল থাকবে না।  

বৈঠকে উপস্থিত থাকা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা আমার সংবাদকে বলেন, আজ (গতকাল) পাবনা জেলার বিভিন্ন সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে স্থানীয় এমপি ও দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে এমপি ও জেলার নেতাদের সমস্যার কথা শুনেছি। তারা নিজেরা কোন্দলের সমাধান করতে না পারলে কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সংগঠনের ভাবমূতি পুনরুদ্ধার, পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার পক্ষে সকল পর্যায়ের নেতাদের সমর্থন এবং স্থানীয় সাংসদ ও দলীয় নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে কর্মিসভা করার নির্দেশনা দিয়ে গত ১৩ জুন কক্সবাজার জেলার শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

এ সময় উপস্থিতি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ। এ সময় কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাড. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশেক উল্লাহ রফিক এমপি উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় রাজনীতিতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বৈঠকে কঠোর অবস্থানের কথা জানান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এ সময় কক্সবাজার জেলা এবং চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন এবং আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত, ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী সাংগঠনিক শাখায় পরিণত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এ সময় জাফর আলম এমপি সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত অপ্রীতিকর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তার ব্যবহারের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ জানান।

এর আগে গত ৮ জুন  চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার অধীন পাঁচটি উপজেলা (সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, পটিয়া, আনোয়ারা ও কর্ণফুলী) আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভা করে আওয়ামী লীগ। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতা ও দলীয় সংসদ সদস্যদের মধ্যকার দূরত্ব ঘুচিয়ে তাদের সমন্বয় করে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। পাশাপাশি এখন থেকে উপজেলা বা জেলা আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে দলীয় সংসদ সদস্যদের এবং সংসদ সদস্যদের অনুষ্ঠানে তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতাদের রাখতে বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক মতবিনিয়ময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে উল্লিখিত পাঁচটি উপজেলাধীন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এবং আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ওই পাঁচটি উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সাথে উপস্থিত দলীয় সংসদ সদস্য ও নেতৃবৃন্দ দলের সাংগঠনিক গতিশীলতা ও শক্তি বৃদ্ধিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, অর্থ ও পরিকল্পনা-বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আমারসংবাদ/জেআই