Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

কৃষি ব্যাংকের মুন্সিয়ানা

এম এ আহাদ শাহীন

জুন ১৫, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


কৃষি ব্যাংকের মুন্সিয়ানা
  • মে মাস পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২০ শতাংশ ঋণ বিতরণ
  • ঋণ আদায়ে কৃষি ব্যাংকের ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
  • বকেয়া ঋণ আদায়েও ভালো দক্ষতা দেখিয়েছে ব্যাংক
  • ঋণ বিতরণে যেমন সচেষ্ট ছিলাম, ঋণ আদায়েও জোর তৎপরতা চালিয়েছি —মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া, এমডি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক

করোনা মহামারির মধ্যে কৃষি খাতকে চাঙ্গা রাখতে ঋণ বিতরণে বড় ধরনের অগ্রগতি দেখিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। একই সঙ্গে বকেয়া ঋণ আদায়েও ভালো কর্মদক্ষতা দেখিয়েছে বিশেষায়িত এ ব্যাংকটি। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি ব্যাংকের শাখা নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৫ হাজার কোটি টাকা। মে মাস পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ১০ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বিতরণ ৬৯ শতাংশ। অন্যদিকে ৯ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সাত হাজার ১১২ কোটি টাকা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে ব্যাংকটি। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ঋণ আদায়ের হার ৭৭ শতাংশ।

গত বছরের একই সময়ে কৃষি ব্যাংকের ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিলো ছয় হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। বিতরণের প্রবৃদ্ধি ৫১ শতাংশ। অন্যদিকে আদায়ের পরিমাণ ছিলো পাঁচ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত আদায়ে প্রবৃদ্ধি ছিলো ১৯ শতাংশ। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের হালনাগাদ করা পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শস্য গুদামজাত ও বাজারজাতকরণে ঋণ বিতরণের হার কম কৃষি ব্যাংকের। চলতি অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পেরেছে ব্যাংক। এ ছাড়া কৃষিভিত্তিক প্রকল্প ঋণেও বিতরণের হার কম। শস্য গুদামজাত ও বাজারজাতকরণে কৃষি ব্যাংকের ৪০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো। মে মাস পর্যন্ত এ খাতে ব্যাংকটি ঋণ বিতরণ করেছে আট কোটি পাঁচ লাখ টাকা। অন্যদিকে কৃষিভিত্তিক প্রকল্প ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে কৃষি ব্যাংক বিতরণ করেছে ২৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিতরণ ১০ শতাংশ।

প্রাপ্ত তথ্যে আরও দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি ব্যাংকের শাখা নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৫ হাজার কোটি টাকা। মে মাস পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ১০ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বিতরণ ৬৯ শতাংশ। এর মধ্যে শস্য খাতে (বর্গাচাষি ছাড়া) পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো কৃষি ব্যাংকের। এর বিপরীতে আলোচিত সময়ে বিতরণ হয়েছে চার হাজার ৯০ কোটি টাকা। শস্য উৎপাদনে বর্গাচাষি খাতে ৫০০ কোটি টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জন হয়েছে ১৭৮ কোটি টাকা বা লক্ষ্যমাত্রার ৩৬ শতাংশ। মৎস্য চাষে কৃষি ব্যাংক ঋণ দিয়েছে ৮৬৯ কোটি টাকা। বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো এক হাজার ২০০ কোটি টাকা। বিতরণের হার ৭২ শতাংশ। প্রাণিসম্পদ খাতে ঋণ বিতরণের হার সবচেয়ে বেশি কৃষি ব্যাংকের। এ খাতে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ব্যাংকটি বিতরণ করেছে এক হাজার ৬০ কোটি টাকা। বিতরণের হার ৮৮ শতাংশ। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পেও (এসএমই) ঋণ বিতরণ করেছে কৃষি ব্যাংক। আলোচ্য সময়ে এসএমই খাতে তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও মে মাস পর্যন্ত ব্যাংকটি বিতরণ করতে পেরেছে দুই হাজার ২৬১ কোটি টাকা। এ খাতে বিতরণের হার ৬৫ শতাংশ। এ খাতে চলতি মূলধন ঋণ হিসেবে সবচেয়ে বেশি ঋণ গেছে ট্রেডিং বা ব্যবসা উপখাতে। এ খাতে এক হাজার ৮৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও মে মাস পর্যন্ত এর ১৬৮ শতাংশ ঋণ দিয়েছে ব্যাংক। ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৮২৫ কোটি টাকা।

জানা গেছে, আগামী জুলাই মাসে কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আলী হোসেন প্রধানিয়ার চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ ব্যাংকে এমডি হিসেবে যোগ দেন প্রধানিয়া। এই সময়ে ব্যাংকের ঋণ বিতরণ ও আদায় বাড়াতে তৎপর ছিলেন জানিয়ে আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, ‘আমরা কৃষি খাতের প্রণোদনার ঋণ বিতরণে সচেষ্ট ছিলাম। এ ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে আবার তহবিল চেয়েছি।’ কৃষি ব্যাংকের এমডি বলেন, ‘আমরা ঋণ বিতরণে যেমন সচেষ্ট ছিলাম, তেমনি ঋণ আদায়েও জোর তৎপরতা চালিয়েছি। এর সুফলও মিলেছে।’ প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত মে মাস পর্যন্ত কৃষি ব্যাংকের অনাদায়ী ঋণ ছিলো ২৪ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ অনাদায়ী রয়েছে শস্য খাতে, ১৩ হাজার ১৯ কোটি টাকা। এসএমই খাতে ব্যাংকটির অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ দুই হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। আলোচিত সময়ে অশ্রেণিকৃত ঋণ আদায় হয়েছে দুই হাজার ১৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শস্য খাতের অশ্রেণিকৃত ঋণের এক হাজার ১৯১ কোটি টাকা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংক।

আমারসংবাদ/জেআই