Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

কোন পথে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক

ফারাজী আজমল হোসেন

জুন ১৫, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


কোন পথে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক
  • চীনের ঋণের বেড়াজাল থেকে যখন শ্রীলঙ্কা মুক্তি পাবে, ততদিনে বাংলাদেশ বহুদূর এগিয়ে যাবে। কারণ ঢাকা তার পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবতার নিরিখে তৈরি করে এগিয়ে গেছে। আর ‘কোয়াড’ নিয়ে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করছে, সে বিষয়টি বর্তমানে স্পষ্ট। বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে শীতল যে বাক্য বিনিময় হয়েছে, তা চীনের ‘টিকা রাজনীতি’ দিয়েও উষ্ণ করা সম্ভব হয়নি। দেখার বিষয় হলো বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে এবার কোন নীতির আশ্রয় নেয় চীন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখিয়ে দেয়া পররাষ্ট্রনীতি চর্চা করে আজ সব ক্ষেত্রে উন্নত বাংলাদেশ। ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ বঙ্গবন্ধুর এই নীতিকে ধারণ করে বরাবরই বাংলাদেশ থেকেছে জোট নিরপেক্ষ। কিন্তু বাংলাদেশের এই বন্ধুত্বকে দুর্বলতা ভাবা যে উচিত নয়, তা বেশ স্পষ্ট অনুভব করেছে চীন।

চীনের দেয়া ঋণের বেড়াজাল থেকে যখন শ্রীলঙ্কা মুক্তি পাবে, ততদিনে বাংলাদেশ বহুদূর এগিয়ে যাবে। কারণ ঢাকা তার পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবতার নিরিখে তৈরি করে এগিয়ে গেছে। ঢাকা জানে, কোনো দেশের মুঠোর মধ্যে না থেকেও উন্নয়ন করা সম্ভব। বরং শ্রীলঙ্কার এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কাছ থেকে কিছু শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।

কোয়াড ইস্যুতে ১০ মে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বাংলাদেশকে কোয়াডে যোগ দেয়ার বিষয়ে সাবধান করেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কোনো মন্তব্য না করলেও নিশ্চিতভাবেই দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতো। সেই সঙ্গে বিশ্বের বুকে দুর্বল রাষ্ট্র হিসেবেও সকলের কাছে পরিচিতি পেতো বাংলাদেশ। কিন্তু সেটি হয়নি। কেননা বাংলাদেশ তার নিজ যোগ্যতা ও শক্তি সম্পর্কে জানে। আর সে কারণেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোয়াড নিয়ে যে মন্তব্য করা হয় তা নিয়ে এক শীতল বাক্যবিনিময় চলে সিনো ও ঢাকার পররাষ্ট্র বিভাগে।

লি জিমিং তার সাবধান বাণীতে বলেছিল, ‘বাংলাদেশের কোয়াডের মতো ছোট একটি সংগঠনের সদস্য হওয়া উচিত নয়, কেননা এটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতির কারণ হতে পারে।’ কিন্তু বাংলাদেশ বর্তমানে তার শক্তি সম্পর্কে জানে এবং এ কারণেই চীনের রাষ্ট্রদূতের এমন মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘সার্বভৌম একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ তার নিজ দেশের জনগণের কল্যাণের জন্য পররাষ্ট্রনীতি নিজেই ঠিক করবে।’ সেই সঙ্গে বাংলাদেশে থাকা বিদেশি কূটনীতিকদের ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও আচরণের মধ্যে থাকা’ এবং ‘বিষয়গুলো বিবেচনা করে মন্তব্য করার’ আহ্বান জানান তিনি।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হু চুনইয়াং ‘কোয়াড’ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্কশ উক্তি প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা মনে করি এটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে চীনবিরোধী মনোভাব তৈরির একটি অপচেষ্টার ফসল। সুতরাং আমরা আশা করছি, আমাদের অবস্থান বেশ স্পষ্ট সকলের কাছে।’ তিনি আরও জানান, চীন অন্য দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে কখনই হস্তক্ষেপ করে না। তারা অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে বিশ্বাসী। কোয়াড বিষয়ে আমাদের থেকেও ভালো জানে ভারত, আর কোয়াড গঠনের মূল উদ্দেশ্য কী সেটাও জানে ভারত। এখানে কী শুধু চীনকে বাদ রাখা হচ্ছে, নাকি চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য এটি গঠিত হচ্ছে। যদি তাই হয়, তাহলে এ বিষয়ে বক্তব্য দেয়া কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ নয়। এটি মূলত কোয়াডের বিরোধিতা করা এবং এ বিষয়ে সকলকে জানানো ও সাবধান করা।

সুতরাং ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ক্ষমা চাইলেও দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেশ স্পষ্ট করেই তার বক্তব্যের সপক্ষে নিজেদের অবস্থান এবং ভবিষ্যতে এভাবে নাক গলানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে নিয়েছে। সুতরাং কোয়াডে শ্রীলঙ্কা যোগ দিলে তাদের ভবিষ্যৎ যে ভালো হবে না, সেই ইঙ্গিত বেশ স্পষ্ট হু চুন ইয়াংয়ের বক্তব্যে। আর এখানেই বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার মূল পার্থক্য। কিন্তু লি জিমিং-এর উক্তি যে শীতল সম্পর্ক তৈরি করেছে চীনের সঙ্গে, তা উষ্ণ করার জন্যই বাংলাদেশকে ১০ ডলারে করোনার টিকা দিতে রাজি হয় চীন। আমার মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন, কিন্তু ঘটনা প্রবাহ অনেকটা তেমনই।

বাংলাদেশের থেকেও চীনের কাছে বেশি গুরুত্ব পাওয়ার কথা শ্রীলঙ্কার। কেননা দেশটির সঙ্গে চীনের ঋণ সহায়তার সম্পর্ক রয়েছে, যা বাংলাদেশের সঙ্গে নেই। কিন্তু বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার থেকে পাঁচ ডলার কম মূল্যে ১০ ডলারে সিনোফার্মার টিকা বিক্রির প্রস্তাবে রাজি হয় চীন। সমপ্রতি টিকার মূল্য প্রকাশিত হওয়ার পর নতুন করে যা শোনা যাচ্ছে তা হলো, এরপর আর ১০ ডলারে টিকা দেবে না চীন। আর এ বিষয়কে কেন্দ্র করে আবারো সম্পর্কে ভাটা পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে চীন-বাংলাদেশের। তবে শ্রীলঙ্কা যে চীনের প্রকৃত বন্ধু তা প্রমাণ করেছে রাজাপাকসের সরকার। বাংলাদেশের সরকারি দপ্তর থেকে টিকার মূল্য নিয়ে তথ্য জানাবার পরও শ্রীলঙ্কার বর্তমান সরকার দাবি করেছে, ১০ ডলারে টিকা গ্রহণের বিষয়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের এমন কোনো চুক্তিই হয়নি, বরং সম্পন্ন হওয়ার পথে রয়েছে। তারা সেটাই বলেছে যা কলম্বোর চীন অ্যাম্বাসি থেকে বলা হয়েছে।

চীন বাংলাদেশকে স্বল্পমূল্যে টিকা সরবরাহ করছে এমন তথ্য বারবার সামনে এলেও ভেতরকার তথ্যটা এখনো জানে না অনেকে। চীনের সিনোফার্মার টিকার মূল্য ভারতের অ্যাস্ট্রাজেনেকার (কোভিশিল্ড) টিকার থেকে বেশি। অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রতিটি ডোজের মূল্য ৫.৫ ডলার। সেই সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সিনোফার্মের টিকার থেকে অনেক বেশি কার্যকর। মধ্যপ্রাচ্যে সিনোফার্মার টিকার তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপ পর্যন্ত ব্যবহার করতে হচ্ছে, যেখানে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দুই ডোজেই কাজ করছে। এ অবস্থায় সিনোফার্মার টিকার প্রকৃত ব্যয় কয়েকগুণ হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে। সেই সঙ্গে তাদের টিকার ওপর নির্ভর করেও থাকতে হতে পারে।

আরেকটি সমস্যা হচ্ছে চীনের ভ্যাকসিন অনেক দেশেই স্বীকৃতি পাচ্ছে না। এবার সৌদিতে হজপালনের জন্য জনসন অ্যান্ড জনসন, ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেকাসহ আরও বেশকিছু টিকা গ্রহণকারীর অনুমোদন দিয়েছে সৌদি সরকার। কিন্তু চীনের ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের সেই অনুমোদন দেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে দারুণ বিপাকে রয়েছে পাকিস্তান। তারপরও বাংলাদেশকে স্বল্পমূল্যে টিকা দেয়ার কথা বলে সম্পর্ক উন্নয়নের যে চেষ্টা করা হয়েছে তা শেষ পর্যন্ত সফল হচ্ছে না।

প্রাথমিকভাবে কলম্বোর চায়না অ্যাম্বাসি ঢাকার কাছে ১০ ডলারে টিকা বিক্রির বিষয়টিকে ‘ভুয়া খবর’ বলে চালিয়েছে। কিন্তু এখন বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন যে, চীন এই তথ্য প্রকাশে বিরাগভাজন হয়েছে। টিকার মূল্য নিয়ে খবর প্রকাশের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, সিনোফার্মার টিকার মূল্য প্রকাশ হওয়ায় কিছুটা অখুশি চীন। তিনি বাংলাদেশের অবস্থান পরিষ্কার করতে আরও স্পষ্ট করে জানান যে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ আর এই মূল্যে টিকা পাবে না চীনের কাছ থেকে।

চীন বাংলাদেশকে এমন এক তথ্য গোপন রাখতে বলেছে যা গোপন রাখা সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক এক দেশের পক্ষে কষ্টকর। আর সে কারণেই এই শর্তের মাধ্যমে আসলে বাংলাদেশের সঙ্গে এক ধরনের ছলনার আশ্রয় নিয়েছে চীন। স্বল্পমূল্যে টিকা সরবরাহে তাদের দেয়া শর্ত নিয়ে প্রশ্ন ওঠা খুব অস্বাভাবিক নয়। কেননা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ করার উদ্দেশ্যেই যদি স্বল্পমূল্যে টিকা সরবরাহ করে চীন, তাহলে বিষয়টি স্পষ্ট করে তারা বললেই হতো যে, এই মূল্য শুধু বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু সেটি না করে লুকোচুরির মাধ্যমে টিকা সরবরাহ এক ধরনের ছলনার আশ্রয় ছাড়া আর কী!

চীন শ্রীলঙ্কাকে ঋণ, ব্যবসায়িক সুবিধা এবং উপহার প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করেছে। আর বিনিময়ে দেশটির একটি বন্দরকে ৯৯ বছরের জন্য নিজেদের করে নিয়েছে। শ্রীলঙ্কা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার পর হাম্বানতোতা বন্দর নিজেদের করে নিয়েছে চীন। আর দেশের নিজস্ব এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় বড় ধরনের ভূ-রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে শ্রীলঙ্কা।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গঠিত (আরও অনেক দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে) কোয়াড নিয়ে দারুণ দুশ্চিন্তায় রয়েছে চীন। আর সে কারণেই তার সঙ্গে উন্নয়ন কার্যক্রমে জড়িত দেশগুলোকে কোয়াডে যোগ না দেয়ার জন্য বলছে দেশটি। এমনকি কোয়াডে যোগ দিলে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হতে পারে বলেও দেশগুলোকে হুমকি দেয়া হচ্ছে।

চীন তার ‘পার্ল ট্রেড’ নীতি নেপাল থেকে শুরু করে শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। মধ্যখানে বাদ থাকছে ভারত। আর চীনের এই নীতিমালায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক বেশ আন্তরিক। আর এ বিষয়টিকে মোটেও ভালোভাবে দেখছে না চীন।

চীনের থেকে ঋণ নিতে রাজি না হওয়ার পরও বিগত এক বছরে বাংলাদেশকে ১০ হাজার টেস্টিং কিট, ১০ হাজার সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) এবং এক হাজার থার্মাল স্ক্যানার প্রদান করেছে চীন। বাংলাদেশ কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় এই উপহার গ্রহণ করলেও বেশ কৌশলে চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পকে নাকচ করেছে।

বাংলাদেশে দৃঢ় নেতৃত্বের অধিকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াকে সংযুক্ত করে এমন এক বড় প্রকল্পে নিজেদের যুক্ত রাখতে চান যা চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের মাধ্যমে সম্ভব নয়। আর সে কারণেই চীনের আর্থিক সহায়তা প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করেনি বাংলাদেশ।

নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপ চীনের যে নীতির শিকারে পরিণত হয়েছে, তা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতেই চীনের কাছ থেকে দ্রব্যসামগ্রী বা প্রযুক্তিগত সহায়তা নিলেও আর্থিক কোনো সহায়তা নিতে রাজি হয়নি বাংলাদেশ। বরং বাংলাদেশ তার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্পের কাজগুলো সম্পাদন করছে। এই জন্য বাংলাদেশ বেছে নিয়েছে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কার্যক্রম।

২০১৬ সালে বাংলাদেশে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরের সময় বেশকিছু সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু চীন থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ সাবধান থেকেছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে চীনের বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাতিলের পাশাপাশি চীনের বেশকিছু ফার্মকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যার খবর দেশের জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

বিপদগ্রস্ত দেশগুলোর সঙ্গে চীনের ‘ভ্যাকসিন কূটনীতি’ যেভাবে কাজ করেছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। বাংলাদেশ বাস্তবিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে তার নীতিনির্ধারণ করছে। নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে এতদিন পরিচালিত হয়েছে বাংলাদেশ, যার সুফলও ভোগ করছি আমরা। ঢাকা শ্রীলঙ্কাকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিচ্ছে, যা স্পষ্টতই বলছে যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের জিডিপি বর্তমানে ৮৫ বিলিয়ন, যেখানে কলম্বোর বর্তমান জিডিপি মাত্র ৩ বিলিয়ন।

চীনের ঋণের বেড়াজাল থেকে যখন শ্রীলঙ্কা মুক্তি পাবে, ততদিনে বাংলাদেশ বহুদূর এগিয়ে যাবে। কারণ ঢাকা তার পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবতার নিরিখে তৈরি করে এগিয়ে গেছে। আর ‘কোয়াড’ নিয়ে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করছে, সে বিষয়টি বর্তমানে স্পষ্ট। বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে শীতল যে বাক্য বিনিময় হয়েছে, তা চীনের ‘টিকা রাজনীতি’ দিয়েও উষ্ণ করা সম্ভব হয়নি। দেখার বিষয় হলো বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে এবার কোন নীতির আশ্রয় নেয় চীন।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলাম লেখক

আমারসংবাদ/জেআই