Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

গণপরিবহনে ভাড়ায় নৈরাজ্য

জুন ১৬, ২০২১, ০৬:৫৫ পিএম


গণপরিবহনে ভাড়ায় নৈরাজ্য
  • বর্ধিত ভাড়ায় অর্ধেক যাত্রী বহনের নামে ‘গলাকাটা’ বন্ধে নেই তৎপরতা 
  • অতিরিক্ত যাত্রী বহনের বিরোধিতায় নাজেহাল হতে হয় যাত্রীদের, গত মঙ্গলবার লাঞ্ছিত হন এক সেনাসদস্য
  • অনিয়ম বন্ধে সরেজমিন কাজ করছে মালিক সমিতির কয়েকটি টিম, যাত্রী লাঞ্ছিতের ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস এনা পরিবহনের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লার 
  • পরিবহন মালিকরা বিআরটিএর যোগসাজশেই ভাড়া বৃদ্ধি করে নিজেরা লুটে নিচ্ছেন —হানিফ খোকন, সভাপতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ 

করোনার শুরু থেকেই সরকার, মালিকপক্ষ ও শ্রমিক সংগঠনের বর্ধিত ভাড়ার নামে ‘গলাকাটা’র ঘানি টানছেন সাধারণ যাত্রীরা। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ভয় দেখিয়ে অর্ধেক যাত্রী বহনের নামে শুরু হওয়া এ ‘গলাকাটা’ বন্ধে সরকার তথা প্রশাসনেরও নেই কোনো তৎপরতা। অথচ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের কথা বলে সড়কে নেমে এখন গাদাগাদি করেই যাত্রী বহন করায় সংক্রমণ ঝুঁকিও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ বেশি। এ নিয়ে যেনো কারোরই মাথাব্যথা নেই। যাত্রীরা প্রতিবাদ করলেও গণপরিবহন শ্রমিকদের হাতে হতে হচ্ছে নাজেহাল। সংক্রমণ ঝুঁকির পাশাপাশি বর্ধিত ভাড়ার নামে যাত্রীদের কষ্টার্জিত অর্থ লুটপাট করা হচ্ছে বলেও বলছেন অনেকেই। এখন পর্যন্ত যাত্রী কল্যাণ সমিতি ছাড়া অন্য কোনো সংগঠন বর্ধিত ভাড়ার নামে পরিবহন শ্রমিকদের একগুয়েমির বিরোধিতা না করলেও সম্প্রতি খোদ একটি পরিবহন শ্রমিক সংগঠনও এর বিরোধিতা করেছে। কিন্তু পরোক্ষ বিরোধিতায় কি-ই বা আসে-যায় তাদের, প্রত্যক্ষ বিরোধিতা করলেই হতে হয় লাঞ্ছিত।

গত মঙ্গলবার রাজধানীর মহাখালী এলাকায় এনা পরিবহনের চালক-হেলপারের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন এক সেনাসদস্য। ওই ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ওই সেনাসদস্য অতিরিক্ত যাত্রী বহনের বিরোধিতা করায় তার গায়ের পোশাক ছিঁড়ে বেধড়ক মারধর করে এনা পরিবহনের চালক ও হেলপার। অথচ এত কিছুর পরও কেউ যেনো কর্নপাতই করছে না। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, কার স্বার্থে সরকার বর্ধিত ভাড়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে? আর মালিকপক্ষ ও শ্রমিকরাই বা কেন এতটা বেপরোয়া যে, তারা সরকারের সিদ্ধান্তকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে করোনাকালেও সড়কে যাত্রীদের পকেট কাটছে। বর্ধিত ভাড়ার বিরোধিতা করে সম্প্রতি একটি শ্রমিক সংগঠনের ডাকা সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক নেতারা বলেন, ‘পরিবহন মালিকরা বিআরটিএর যোগসাজশে সাধারণ যাত্রীদের কষ্টার্জিত অর্থ লুটপাট করার জন্যই ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধিতে সরকারের সিদ্ধান্ত আদায় করে নেয়। যদিও সরকার স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্ত জুড়ে দিয়েছিল। কিন্তু সব শর্তই উপেক্ষা করে গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। দুই সিটে একজন যাত্রী বহনের কথা থাকলেও কার্যত প্রতি সিটেই যাত্রী আর দাঁড়িয়েও বহন করার দৃশ্য রাজধানীতেই দেখা গেছে। প্রশাসনের এসব নিয়ন্ত্রণ করার কথা থাকলেও তাদের চোখের সামনেই সরকারি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নিজেদের মতো করে যাত্রীদের পকেট কাটছে গণপরিবহন শ্রমিকরা। লাভবান হচ্ছেন মালিকরা। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে— সরকারের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই গণপরিবহনে চলমান অনিয়ম আর ‘গলাকাটা ভাড়া’ বন্ধে এখনো কেনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। শুধু তাই নয়— গণপরিবহনে শ্রমিক ফেডারেশনের চাঁদাবাজিও সরকারের সিদ্ধান্তের ষোলআনা সফল বাস্তবায়নের অন্তরায়। গণপরিবহন শ্রমিকদের কাছ থেকে ফেডারেশনের চাঁদাবাজির কারণে বর্ধিত ভাড়া কিংবা তার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায়ে বেপরোয়া গণপরিবহন শ্রমিকরা। দীর্ঘদিন ধরেই ফেডারেশনের চাঁদাবাজি বন্ধে দাবি জানিয়ে এলেও অদৃশ্য শক্তির বলে তাও করা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি হানিফ খোকন বলেন, লকডাউনে শিল্পপ্রতিষ্ঠান খোলা, অফিস-সার্ভিস সেক্টর খোলা, শপিংমল-বাজারঘাট সবই খোলা। পরিবহনে গাদাগাদি করে যাত্রী নেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি পালন বা জিবাণুনাশক ব্যবহারের কোনো বালাই নেই। পরিবহন মালিকরা বিআরটিএর যোগসাজশেই সাধারণ যাত্রীদের কষ্টার্জিত অর্থ লুটপাটের জন্য ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করে নিজেরা লুটে নিচ্ছেন উল্লেখ করে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া পরিবহন শ্রমিকদের শ্রম-আইন অনুযায়ী মালিক কর্তৃক নিয়োগপত্র দেয়ার দাবিও জানান তিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়োগপত্র আর ফেডারেশনের চাঁদাবাজি বন্ধ এবং করোনাকালে রেশন চালুর মধ্য দিয়েই হয়তো পরিবহন শ্রমিকদের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের নেতারা বলেন, শ্রম-আইন লঙ্ঘন করে চাঁদাবাজির নির্দেশিকা তৈরির সাথে জড়িত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠিত চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার, পরিবহন শ্রমিকদের কাছ থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন ও তাদের অন্তর্ভূক্ত বেসিক ইউনিয়নসমূহ দীর্ঘদিন ধরে শ্রম-আইন পরিপন্থি চাঁদা উত্তোলন করে অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়া ফেডারেশনের নেতাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জ্ঞাতআয় বহির্ভূত সম্পদের হিসাব যাচাই-বাছাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়েই গণপরিবহনের বর্তমান অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে বর্ধিত ভাড়া আদায় করা পরিবহনের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতোমধ্যে আমাদের কয়েকটি টিম কাজ করছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে তাদের বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। অনিয়মের বিরোধিতা করায় আপনার মালিকানাধীন এনা পরিবহনের চালক-হেলপারের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন একজন সেনা সদস্য- এদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবেন— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি এ ঘটনার একটা ভিডিও ফুটেজ দেখেছি। জড়িত চালক-হেলপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

আমারসংবাদ/জেআই