Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

সীমান্তে পরিস্থিতির উন্নতি নেই

মাহমুদুল হাসান

জুন ১৬, ২০২১, ০৬:৫৫ পিএম


সীমান্তে পরিস্থিতির উন্নতি নেই
  • শনাক্ত-মৃত্যুতে এগিয়ে সীমান্তের জেলাগুলো
  • গতকাল সারা দেশে ১৬ শতাংশের বেশি শনাক্ত
  • সীমান্তবর্তী অধিকাংশ জেলা ঝুঁকিপূর্ণ
  • রামেকে গতকাল আরও ১৩ জনের মৃত্যু
  • সাতক্ষীরায় শনাক্তের হার ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশ

করোনার বড় দুটি ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশ। এমন সময় দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় শনাক্ত হলো ভারতে শনাক্ত করোনার নয়া ধরন। নতুন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপে দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসন্ন। সীমান্তবর্তী জেলাগুলো এখন করোনার হটস্পটে পরিণত হয়েছে। দেশের সীমান্তবর্তী ৩০ জেলার ২১টিই ঝুঁকিপূর্ণ। ছয়টি জেলার অবস্থা প্রতিনিয়ত অবনতি হচ্ছে। হটস্পট চিহ্নিত হলেও ভাইরাসের সংক্রমণ আটকানো যাচ্ছে না। লকডাউনেও সুফল মিলছে না। প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনার আগ্রাসন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে গেছে। গতকাল আরও ৬০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। তার মধ্যে শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্তের হার এক লাফে সাড়ে ১৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল সাতক্ষীরায় ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, রাজশাহীতে ৪৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ, কুষ্টিয়ায় ৪১ শতাংশ, নাটোরে ৩৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং ঝিনাইদহে ৩৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের হার কমিয়ে আনতে গতকাল আরও এক মাসের লকডাউন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

গেলো ৮ মে দেশে প্রথম ভারতফেরত দুই নাগরিকের নমুনায় করোনার নতুন ধরন ডেল্টা শনাক্ত হলেও এখন নয়া ভাইরাসটি রাজধানীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ফলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে শনাক্ত-মৃত্যু। পরিস্থিতির অবনতির জন্য  অনেকে সীমান্তে অবৈধ যাতায়াত, কার্যকর লকডাউন বাস্তবায়নে অব্যবস্থাপনা আর সচেতনতার অভাবকে দায়ী করছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও স্বীকার করেছেন দেশের পরিস্থিতির কথা। তারা জানিয়েছেন, দেশের সীমান্তবর্তী খুলনা, নাটোর, চুয়াডাঙ্গা, কুড়িগ্রাম, নওগাঁ ও দিনাজপুর জেলায় করোনা সংক্রমণ এখনো বাড়ছে। এজন্য তারা সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ জানিয়েছেন। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সফলতা মিললেও ডেল্টাসহ বিদেশি অন্যান্য নতুন ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়ায়, এজন্য তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় হিমশিম খেতে হতে পারে। এজন্য স্বাস্থ্যবিধিতে তারাও বিশেষ জোর দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।  স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল ২৩ হাজার ৮০৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে নতুন করে আরও তিন হাজার ৯৫৬ জনের নমুনায় করোনার উপস্থিতি মিলেছে। এ সময় দুই হাজার ৬৭৯ জন রোগী সুস্থ হয়েছে। 

এখন পর্যন্ত ৬২ লাখ ৪২ হাজার ৭৮৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে শনাক্ত হয়েছে আট লাখ ৩৭ হাজার ২৪৭ জন। তার মধ্যে সুস্থ হয়েছে সাত লাখ ৭৩ হাজার ৭৫২ জন। এছাড়াও গতকালের ৬০ জনসহ এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছে ১৩ হাজার ২৮২ জন।

গতকাল শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং এখন পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। তার মধ্যে সুস্থ হয়েছে ৯২ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং মারা গেছে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। গতকাল মৃত্যুবরণকারী ৬০ জনের মধ্যে ৩৬ জন পুরুষ এবং নারী ২৪ জন। এখন পর্যন্ত পুরুষ মারা গেছেন মোট ৯ হাজার ৫৪৩ জন এবং নারী তিন হাজার ৭৩৯ জন। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল মৃত ৬০ জনের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব আছেন ২৩ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৬ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে সাতজন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে একজন এবং ১১ থেকে ২০ বছরের তিনজন। বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন আটজন, চট্টগ্রামে আটজন, রাজশাহীতে ১৭ জন, খুলনায় ১৪ জন, সিলেটে ছয়জন  রংপুরে চারজন এবং ময়মনসিংহে তিনজন। গতকাল সরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৬ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৯ জন এবং বাসায় পাঁচজন।

রামেকের করোনা ইউনিটে ১৩ জনের মৃত্যু : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গতকাল আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচজনের করোনা পজেটিভ ছিলো। বাকিরা করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গতকাল রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টার মধ্যে ১৩ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে রাজশাহীর আটজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের চারজন ও কুষ্টিয়ার একজন। এ নিয়ে চলতি মাসের গত ১৬ দিনে এই হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ১৬১ জন। গতকাল এ হাসপাতালে ৪৮ করোনা রোগী ভর্তি হয়েছেন। গতকাল সকাল পর্যন্ত ভর্তি আছেন ৩৪৪ জন। রাজশাহীতে গত মঙ্গলবার দুটি ল্যাবে ১৮৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ৮৫ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার ৪৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

কুষ্টিয়ায় শনাক্ত ৪১ শতাংশ, মৃত্যু তিন : কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গতকাল আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে কোভিড-১৯ পজেটিভ হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। একই সময়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের আরটি-পিসিআর ল্যাবে ২৩৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে কোভিড-১৯ পজেটিভ শনাক্ত হয়েছেন ৯৮ জন। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৪১ শতাংশ। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপ-পরিচালক) ডা. আব্দুল মোমেন বলেন, কুষ্টিয়ায় সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোয় বাড়ছে। এ পর্যন্ত কুষ্টিয়ায় মোট পাঁচ হাজার ৮৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ১৩৫ জন।

ঝিনাইদহে সংক্রমণ ৩৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ, একজনের মৃত্যু : ঝিনাইদহে গতকাল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩ জন। একই সময়ে মারা গেছেন একজন। সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম বলেন, গতকাল সকালে যশোর, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ ল্যাব থেকে আসা ১২০ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে ৪৩ জনের করোনা পজেটিভ এসেছে। শনাক্তের হার ৩৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আক্রান্তদের মধ্যে ঝিনাইদহ সদরে ২২ জন, শৈলকূপায় পাঁচ, হরিণাকুণ্ডতে সাতজন, কালীগঞ্জে ছয় ও মহেশপুরের তিনজন রয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট তিন হাজার ১৯৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল মৃত্যুবরণকৃত একজনসহ জেলায় মারা গেছেন মোট ৬১ জন।

নাটোরে গতকাল ৩০১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১২০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৯ দশমিক ৮৬। এ সময়ে মারা গেছেন একজন। এ নিয়ে নাটোর জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সাতক্ষীরায় শনাক্ত বেড়ে ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু চার : করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরায় গত ৫ জুন থেকে লকডাউন শুরু হয়। কিন্তু, লকডাউনের ১২তম দিনে এসেও সংক্রমণ কমেনি। সর্বশেষ গতকাল বুধবার এ জেলায় সংক্রমণের হার বেড়ে ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশে পৌঁছেছে। এ ছাড়া গতকাল জেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। তার আগের দিন সাতক্ষীরায় সংক্রমণের হার ছিলো ৪৯ শতাংশ। সিভিল সার্জন সাফায়াত হোসেন জানান, সাতক্ষীরায় করোনা আক্রান্ত  রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। সংক্রমণ কমাতে লকডাউন কঠোরভাবে মেনে চলা ছাড়া উপায় নেই।  কিন্তু, এ ব্যাপারে মানুষ একেবারেই সচেতন হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, দেশের ছয়টি জেলায় করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। জেলাগুলো হলো— খুলনা, নাটোর, চুয়াডাঙ্গা, কুড়িগ্রাম, নওগাঁ ও দিনাজপুর। বিভাগীয় হিসাবে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। দেশের চার জেলায় করোনা সংক্রমণ কমেছে। সেগুলো হলো— সাতক্ষীরা, নড়াইল, যশোর ও রাজশাহী।

আমারসংবাদ/জেআই