Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার শস্যভাণ্ডার

মো. কামরুল আহসান তালুকদার পিএএ

জুন ১৬, ২০২১, ০৬:৫৫ পিএম


বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার শস্যভাণ্ডার

পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ পানি, কিন্তু মিঠা পানির পরিমাণ খুবই কম। তাই পানিসম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা সারা বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পৃথিবীতে প্রাপ্ত মিষ্টি পানির প্রায় ৭০ ভাগই ফসল উৎপাদনে কৃষকরা ব্যবহার করেন। শিল্প-কলকারখানা ব্যবহার করা হয় ২০ ভাগ এবং শতকরা ১০ ভাগ মিষ্টি পানি ব্যবহার করা হয় গৃহস্থালির কাজে। নদীমাতৃক বাংলাদেশের সবুজ বুকের উপর দিয়ে বয়ে চলেছে হাজারো ছোট-বড় নদী। কেউ বলে নদ-নদী বাংলাদেশের হূৎপিণ্ড। কেউ বা বলে ফুসফুসের মতো কাজ করে। যে যাই বলুক নদ-নদীর গুরুত্ব অনুধাবন করতে শিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ এই দেশটির নদ-নদী বিধৌত পলিমাটি দিয়ে নিজেকে করেছে উর্বর, ফুল ফল আর ফসলে করেছে দেশকে সমৃদ্ধ। নদী গ্রামীণ জনপদকে কর্মচঞ্চল রাখতে একদিকে যেমন অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করে তেমনি গতিময় শহুরে জীবনকে আরও বেগবান করতে নদীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।

অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে একদিকে যেমন বিপুল পানি ব্যবহার করা হচ্ছে, অন্যদিকে অপরিশোধিত ও পয়ঃবর্জ্য ফেলে ভয়াবহ পানিদূষণ করা হচ্ছে। গত এক যুগে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হলেও প্রতি বছর বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি কারণে দেশের সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক হিসেবে পানিসম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি। পানিসম্পদের সুষ্ঠু সংরক্ষণ এবং বছরব্যাপী বহমানতা বজায় রাখতে পারলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা শুধু নয়, বিপুল খাদ্য উৎপাদন উদ্বৃত্ত রাখা সম্ভব। বাংলাদেশের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও নিষ্কাশন, নদীতীর ভাঙন প্রতিরোধ, ব-দ্বীপ উন্নয়ন, ভূমি পুনরুদ্ধার প্রভৃতি বিষয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যারেজ, রেগুলেটর, স্লুইস, খাল, বেড়িবাঁধ, রাবার ড্যাম, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ ও খাল খনন-পুনর্খনন করে সেচ, জলাবদ্ধতা নিরসন, বন্যা প্রতিরোধ, নদীর ভাঙন প্রতিরোধ, ভূমি পুনরুদ্ধার বিষয়ে সেবাসমূহ প্রদান করে।

সরকারের রুলস অব বিজনেসের অ্যালোকেশন অব বিজনেস অনুযায়ী পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রযোজ্য বিষয়গুলো হলো— ১, নদী এবং নদী অববাহিকার উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ; ২. সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, নিষ্কাশন এবং নদীভাঙন ক্ষেত্রে সাধারণ নীতি প্রণয়ন ও কারিগরি সহায়তা প্রদান; ৩. সেচ, বন্যা-পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ স্থাপনা, বন্যার কারণ এবং বন্যার কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কিত সকল বিষয়াবলি; ৪. নদীর অববাহিকা প্রকল্প এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মৌলিক এবং ফলিত গবেষণা পরিচালনা; ৫. বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং পানিসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা; ৬. সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক কমিশন এবং কনফারেন্স; ৭. বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় নদী ড্রেজিং, খাল খনন এবং রক্ষণাবেক্ষণ। খাল খনন কর্মসূচির আওতায় খালের উপর পানির নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ; ৮. ভূমি সংরক্ষণ, নিষ্কাশন এবং জলাবদ্ধতা বিষয়ক কার্যাবলি; ৯. পানি সংরক্ষণ, জলাধার নির্মাণ, বাঁধ ও ব্যারেজ নির্মাণ বিষয়ক কার্যাবলি; ১০. ভূমি পুনরুদ্ধার, মোহনা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক কার্যাবলি; ১১. লবণাক্ততা ও মরুকরণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অন্যতম।

[media type="image" fid="128618" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রধান সংস্থা যা পানিসম্পদ উন্নয়নে নিরন্তর কাজ করে চলেছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট অর্ডার নং ৫৯ তদানীন্তন ইপি ওয়াপদা ‘পানি উইং’ নিয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড নামে একটি স্বতন্ত্র সংস্থা সৃষ্টি করেন। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২৫ বছর মেয়াদি খসড়া পরিকল্পনায় স্বল্পমেয়াদি (আট বছর) ২৪০টি মধ্যমেয়াদি (১৫ বছর) ৮৮টি এবং দীর্ঘমেয়াদি (২৫ বছর) ১৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নাধীনযোগ্য প্রকল্পের ৮০ ভাগই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত ও সহিষ্ণু সমৃদ্ধশালি ব-দ্বীপ গড়ে তোলাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের বিবেচনায় সার্বিকভাবে কৃষি ও শিল্প, অর্থনীতি, মৎস্য, বনায়ন, পানি ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশকে সমন্বিত করে দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী গত সেপ্টেম্বর ২০১৮ দেশের প্রথম শতবর্ষ মহাপরিকল্পনা বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা অনুমোদন করেন। বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সেচধর্মী প্রতিটি প্রকল্পে সেচ সমপ্রসারণ, ফসল উৎপাদন, এরিয়া বৃদ্ধি এবং ফসল উৎপাদনের নিবিড়তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। টেকসই ও নির্ভরযোগ্য ফসল উৎপাদনের জন্য আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে সেচ। সেচের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধির ওপর নির্ভর করে সেচের পানির প্রধান দুটি উৎস— ১. ভূপৃষ্ঠস্থ পানি; ২. ভূগর্ভস্থ পানি। ভূপৃষ্ঠস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লবণ ও রাসায়নিক দ্রব্য দ্রবীভূত থাকে। এসব লবণ ও রাসায়নিক দ্রব্যের পরিমাণ বেশি হলে তা গাছের জন্য ক্ষতিকর। রাসায়নিক পদার্থগুলোর মধ্যে রয়েছে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, কার্বনেট, বাই কার্বনেট, সালফেট ইত্যাদি। সোডিয়াম কার্বনেট যৌগ পানিতে বেশি পরিমাণ থাকলে ফসল তা সহ্য করতে পারে না। সেচের পানি ঘোলা হলে তা মাটির রন্ধ্র বন্ধ করে দিয়ে মাটি শক্ত করে ফেলে। সেচের পানিতে বিষাক্ত আর্সেনিক, ক্যালসিয়াম, সিসা ইত্যাদি থাকে যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর।  হাওরাঞ্চলে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের ফলে ফসল উৎপাদনে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। সুনামগঞ্জে ৬১৯ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে এক লাখ ৬৫ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমি, নেত্রকোনা জেলায় ১০১.৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের ফলে ৪০ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমি, কিশোরগঞ্জে ৬১.৩২ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের ফলে এক লাখ দুই হাজার হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। নদীভাঙন, জলাবদ্ধতা, বন্যা ও পরিবেশ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে ছোট-বড় নদী-নালা, খাল-ডোবা ড্রেজিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়থেকে চার হাজার ৮৭ কিলোমিটার ড্রেজিংয়ের মহা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনার আওতায় প্রথম পর্যায়ে দুটি সিটি কর্পোরেশন, ৩৭৫টি উপজেলার ৮৮টি ছোট নদী ৩৫২ খাল এবং আটটি ডোবা ড্রেজিং কাজ চলমান রয়েছে। ডেল্টা প্ল্যান গৃহীত হওয়ার পর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনর্খনন শীর্ষক এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ৪৪৮টি ছোট নদী ও খালের চার হাজার ৮৭ কিলোমিটার পুনর্খনন সম্পন্ন হবে। ফলে দেশের এক হাজার ৮০০ কিলোমিটার নৌপথের নাব্যতা সংকট দূর হবে, পানির ধারণ ক্ষমতা ও নিষ্কাশন ক্ষমতাও বাড়বে। ফলে নৌচলাচল ও যোগাযোগ সহজ হবে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা যাবে। পাশাপাশি চাষাবাদ করা যাবে এক লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমি। ফলে প্রতি বছর কমপক্ষে তিন লাখ ৫০ হাজার টন ফসল উৎপাদন বাড়বে। গত ১০ বছরে এক হাজার ৩৬৭ কিলোমিটার নদী খননকাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন কমিটির পঞ্চম বৈঠকে উল্লেখ করেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় খনন কাজের মাধ্যমে নদীর প্রবাহ ঠিক করায় এক কোটি টন খাদ্য বেশি উৎপাদন হয়েছে।

দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারেজের কমান্ড এলাকার ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এরিয়া পুনর্বাসন ও সমপ্রসারণ প্রকল্প সমপ্রতি একনেকে পাস হয়েছে। এই প্রকল্পের কমান্ড এরিয়া এক লাখ চার হাজার হেক্টর জমিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহ করা হবে। তৃণমূল পর্যায়ের কৃষকের সেচের পানি সরবরাহ করতে ৭৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সেকেন্ডারি ও টারসিয়ারি ক্যানেল নির্মাণ করা হবে। সেচ-সুবিধার কারণে ফসলের নিবিড়তা ২৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। অতিরিক্ত এক লাখ টন ধান উৎপাদন হবে এবং অন্যান্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়বে প্রায় ছয় লাখ টন। বর্তমান যার বাজার মূল্য এক হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা পাড়ের মানুষের দুর্দশা লাঘবে আট হাজার ২০০ কোটি টাকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। তিস্তা রিভার কমিপ্রহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট নামে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১১৫ কিলোমিটার এলাকায় ব্যাপক খনন, স্থায়ী তীর রক্ষাসহ পৌনে ২০০ বর্গকিলোমিটার জমি উদ্ধার করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে তিস্তা পাড়ের মানুষের ভাগ্য। ফসল উৎপাদনে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। আগে শেষ এর জন্য ডিজেল ও বিদ্যুতচালিত মোটরের পাম্পের সাহায্যে পানি দিতে বিঘায় খরচ হতো এক হাজার ৫০০ টাকা, আর এখন সেচ প্রকল্পের পানিতে প্রতি একরে খরচ হবে ৪৮০ টাকা। তা ছাড়া পানি পেতে কোনো ঝামেলা নেই। সেচের পানি প্রকৃতি হতে প্রাপ্ত এবং বৃষ্টির উপরি ভাগের পানি ব্যবহার করা হচ্ছে।

কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, ১৯৭০-৭১ সালে প্রাকৃতিক নির্ভর আমন আর আউস থেকে মোট উৎপাদনের বেশির ভাগ আসতো। মাত্র ২০ শতাংশ ফসল আসতো বোরো থেকে। আর এখন দেশে ৬০ শতাংশ চাল আসে বোরো থেকে। ৩০ শতাংশ আসে আমন থেকে এবং ১০ শতাংশ আসে আউস থেকে। এ সময় বোরোর মোট উৎপাদন বেড়েছে প্রায় আটগুণ। এ সময় বন্যার পানিনির্ভর আউশের চাষ কমেছে এক-তৃতীয়াংশ। আমন চাষ কমেছে ৩০ শতাংশ।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের হিসাব মোতাবেক কৃষিকাজে ব্যবহার করা পাম্প আছে ১৩ লাখ ৭৯ হাজারটি। এর মধ্যে ডিজেলচালিত ১১ লাখ ৯২ হাজার ৬৩০টি। বিদ্যুতে চলে মাত্র এক লাখ ৮৬ হাজার ৪০০টি। অগভীর নলকূপ বিদ্যুতে চলে এক লাখ ৫০ হাজার, ডিজেলের চলে ১০ লাখ ৭০ হাজার। গভীর নলকূপের মধ্যে ১২ হাজার ডিজেল এবং ২৬ হাজার বিদ্যুতে চলে। বোরো মওসুমে ১৭ লাখ সেলো টিউবওয়েল কার্যকর থাকে। ১৯৭০-৭১ সালে দেশে মোট খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিলো এক কোটি ১০ লাখ টন। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার কোটি ৫৩ লাখ টন। যদিও এ সময়ের ব্যবধানে প্রতি বছর দেশে মানুষ বাড়ছে ২০ লাখ। কৃষিজমি কমেছে আট লাখ হেক্টর করে। ১৯৭২ সালে একজন মানুষ প্রতিদিন খাদ্য পেতেন ৪৫৬ গ্রাম, তা ২০২০ সালে বেড়ে হয়েছে ৬৬৭ গ্রাম। দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্য মতে, খাদ্যশস্য উৎপাদনে চীনের অবস্থান প্রথম আর বাংলাদেশের অবস্থান ১১তম।

তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প, চাঁদপুর সেচ প্রকল্প, জিকে সেচ প্রকল্প, মুহুরী সেচ প্রকল্প, বরিশাল সেচ প্রকল্প প্রভৃতি এ প্রকল্পের সুবিধা সমপ্রসারণ করে দেশকে খাদ্য উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণতাই নয়, দুই কোটি টন অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কৃষিবান্ধব কর্মসূচি, প্রকল্প বাস্তবায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষতা, মেধাবী একঝাঁক প্রকৌশলীর ক্লান্তিহীন কর্মযজ্ঞ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক ফসল উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, উপ-মন্ত্রী, সিনিয়র সচিব এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকের পরামর্শ ও নিবিড় মনিটরিং ফসল উৎপাদনে মন্ত্রণালয়ের ভূমিকাকে আরো দৃশ্যমান করবে।  ৬৪ জেলা ছোট নদী, খাল ও জলাশয় খনন ও পুনর্খনন প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। আট হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের মাধ্যমে দুই হাজার ৬১২টি ছোট নদী, খাল ও জলাশয় খনন করা হবে। এর মধ্যে ২১২টি ছোট নদী, দুই হাজারটি খাল এবং ৪০০টি জলাশয় রয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।

লেখক : উপ-মন্ত্রীর একান্ত সচিব, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়

আমারসংবাদ/জেআই