Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তামাকমুক্ত হবে দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ১৭, ২০২১, ০৬:৪৫ পিএম


সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তামাকমুক্ত হবে দেশ
  • ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করা সম্ভব হবে -লোকমান হোসেন মিয়া, সচিব, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ
  • মেডিকেল শিক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হবে -মো. আলী নূর, সচিব, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ
  • করোনায় মৃতদের বড় অংশ তামাকের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ছিলো -অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
  • করোনার চেয়ে ধূমপানে প্রায় ১৯ গুণ বেশি মৃত্যু হচ্ছে -ড. মো. শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ, মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট

তামাক উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সেবন— প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ক্ষতি করে। বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়ায় সাত হাজারের বেশি ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৭০টি ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী। সরকার জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও অকালমৃত্যু প্রতিরোধে বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। তামাক যেহেতু মানুষকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে তাই তামাকজনিত অকালমৃত্যু কমিয়ে আনার লক্ষ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণেও সরকার সক্রিয় রয়েছে। সরকারের এসডিজি অর্জনের বিষয়টিকে এগিয়ে নিতে সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় তামাক নিয়ন্ত্রণকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান স্পিকার সামিটে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মুজিববর্ষ ও বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে অনলাইনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় যুক্ত হয়ে বক্তারা এসব তথ্য দেন।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ‘তামাক উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সেবন প্রতিটি ক্ষেত্রই পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ক্ষতি করে। সরকার তামাক খাত থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব পায়, তার চাইতে অনেক বেশি অর্থ তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যয় করতে হয়। বর্তমান সরকার জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও অকালমৃত্যু প্রতিরোধে বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করছে।’

বাংলাদেশ সরকার এসডিজি অর্জনের বিষয়টিকে এগিয়ে নিতে সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় তামাক নিয়ন্ত্রণকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান স্পিকার সামিটে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নূর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। তার এ ঘোষণা বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগও সক্রিয় থাকবে। মেডিকেল শিক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হবে। এছাড়া পরিবার কল্যাণে বিদ্যমান কর্মসূচির সঙ্গে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়কে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘করোনাকালে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, করোনায় যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ ধূমপান করতেন বা তামাকের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ছিলো। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে চা বাগানের শ্রমিকরা এক ধরনের তামাক গ্রহণ করেন। তামাক ও চুন মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এটি মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখেন তারা। আমাদের ট্রাক ড্রাইভাররা গুল ব্যবহার করেন। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করতে হবে।’

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ বলেন, ‘ধূমপানজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রতিবছর এক লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এক বছরের করোনায় মৃত্যুর সরকারি হিসাব বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, ধূমপানে করোনার চেয়ে মৃত্যু প্রকৃতপক্ষে প্রায় ১৯ গুণ (১৮ দশমিক ৬৭) বেশি। প্রতিবছর গড়ে ১২ লাখ লোক ধূমপানজনিত বিভিন্ন রোগে ভোগেন। এর মধ্যে রয়েছে ক্যান্সার, যক্ষ্মা, ডায়াবেটিস, হাঁপানি, হূদরোগ।’ তিনি বলেন, সবাই যখন তামাকমুক্ত দেশ গড়তে চাইছে, তখন একটি শ্রেণি রয়েছে তারা বলেন, সরকার এই খাত থেকে অনেক বেশি রাজস্ব পেয়ে থাকে। তবে ২০১৭ সালে সরকার তামাক থেকে রাজস্ব পেয়েছে ২২ হাজার ২৬৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা কিন্তু একই বছর ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির পেছনে। শুধু তামাকজনিত অসুখের কারণে আট হাজার কোটি টাকা বেশি চিকিৎসা-ব্যয় হচ্ছে। তামাক চাষে জড়িতদের অন্যান্য মানুষের চেয়ে অনেক কম আয়ু। গবেষণা করলে দেখা যাবে তামাক উৎপাদন ও চাষে যারা জড়িত, তারা অন্য শ্রমিকদের চেয়ে অনেক আগেই মারা যান। ধূমপানজনিত কারণে বছরে মৃত্যুর এই সংখ্যা করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর ১৩ গুণেরও বেশি।

স্বাস্থ্য সচিবের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রি. জেনারেল (অব.) ডা. আবদুল মালিক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. বর্ধন জং রানা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্বস্বাস্থ্য) কাজী জেবুন্নেছা বেগম প্রমুখ।

আমারসংবাদ/জেআই