Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

‘এখনকার নাটকে পারিবারিক বন্ধন কমে গেছে’

জুন ১৭, ২০২১, ০৬:৪৫ পিএম


‘এখনকার নাটকে পারিবারিক বন্ধন কমে গেছে’
  • টিভি নাটকে নিজের আলাদা একটি ছবি আঁকার চেষ্টা করেছেন নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। এ ক্ষেত্রে তিনি সফলও হয়েছেন। নারীপ্রধান গল্প নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসেন এই গুণী নির্মাতা। নাটকে তার পছন্দের আরেকটি বিষয় হচ্ছে সম্পর্ক। এটিকে তিনি খুব যত্ন করে লালন করেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রকিব হোসেন

আপনি বেশির ভাগ সময়ই নারীকেন্দ্রিক গল্প নিয়ে কাজ করেন। এটা কী আপনি নারী বলেই?

আসলে এসে যায়। আর আমি কেবল নারীকেন্দ্রিক কাজ করি, তা নয়। আমি সম্পর্কের গল্প নিয়ে কাজ করি। সম্পর্ক সম্পর্কিত কাজ করতে আমার ভালো লাগে। আর সেটা নারীকেন্দ্রিক, হতে পারে, প্রেমিক-প্রেমিকা, মা-বাবা পারিবারিক গল্প হতে পারে। তবে হ্যাঁ, এটা আমি নারী বলেই হয়তো নারীপ্রধান গল্প নিয়ে নাটক নির্মাণ করতে আমর ভালো লাগে। আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠিত নারী অভিনেত্রীদের নিয়ে আমি ভাবি, আমার নাটকে অমুকে নিলে ভালো হবে। আমি অমুককে আমার নাটকে চাই। এভাবে ভাবতে ভাবতেই আমার নারীপ্রধান কাজ করা হয়ে যায়।

আপনি বললেন সম্পর্ক নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসেন। তো অন্য অনেক বিষয়বস্তু তো ছিল। কিন্তু সম্পর্ককে কেনো বেছে নিলেন?

আমি সম্পর্ককে বেছে নেয়ার কারণ সম্পর্ক নিয়ে আসলে সারাবছরই কাজ করা যায়। আমাদের সম্পর্কগুলো কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সম্পর্কই কিন্তু আসল। কারো সাথে কারো সম্পর্কই কিন্তু আমাদের হাসতে দেয়, আমাদের আনন্দে রাখে। আমরা সামনে বাড়তে পারি, আমরা ভালো কিছু ভাবতে পারি। সম্পর্ক অনেক বড় একটা ব্যাপার, এটা আসলে দেখা যায় না। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই আমার সম্পর্কের গল্প করতে ভালো লাগে। যেহেতু আর্টিস্টদের সঙ্গে আমার সুন্দর একটা সম্পর্ক, আমাদের টিমের সাথে, তো সম্পর্কের গল্প কেনো নয়? প্রথমেই তো আমি বললাম, স্পেশাল সাবজেক্ট নিয়ে কাজ করতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আর সম্পর্কের গল্প নিয়ে সবসময়ই কাজ করা যায়।

‘বড় ভাবী’ আপনার ৪১২তম নির্মাণ। এই নাটকটির প্রয়োজন অনুভব করেছেন কেন? বা এটা আপনার আগের কাজগুলো থেকে কতটা আলাদা?

এটা সুইট একটা গল্প। বড় একজন ভাবী যে একটি পরিবারে কতটা দায়িত্ব পালন করে, একটা পরিবারকে যে সে কোথায় নিয়ে যেতে পারে, এটাই আমার নাটকে উঠে এসেছে। গল্পটা একটা কর্পোরেট লেডিকে নিয়ে। বড় ভাবী যে সংসারের বড় একটা জায়গায় থাকতে পারে। সংসারকে বড় একটা জায়গায় নিয়ে যেতে পারে, তিনি যে বড় মনের একজন মানুষ, এটাই নাটকে তুলে ধরা হয়েছে।

চয়নিকা চৌধুরী এর আগে ৪১১টি নাটক নির্মাণ করেছে। তার বেশির ভাগ নাটকটি দর্শকপ্রিয়। এর মধ্যে যদি নির্মাতার চোখে সেরা ১০টি কাজের কথা জানতে চাই, কী বলবেন?

এটা আমি বলতে পারবো না। এর আগে এক জায়গায় অনেক কষ্ট করে আমি ২৫টি নাটকের নাটকের নাম বলতে পেরেছিলাম। এরপর দেখি এটা বাদ গেল, ওটা বাদ গেল এই অবস্থা। এটা আসলে এভাবে হয়। তারপরও কিছু নাটক থাকে না, যেটা মাইলফলক হয়ে থাকে, এর মধ্যে রয়েছে-ইমদাদুল হক মিলনের মায়া, এসো হাত ধরো, আঁচল, এটা আমার ৫০তম নাটক ছিল। অরুণ চৌধুরীর চলমান ছবি, নীল মলাট, গিয়াসউদ্দিল সেলিমের জুয়াড়ি, শফিকুর রহমান শান্তনুর ইতি তোমার মা, মাসুম শাহরিয়ারের একদিন খুঁজেছিনু যারে, তালপাতার পাখা—আসলে ওভাবে সব বলতে পারবো না। প্রতিটি নাটকই তো মমতা দিয়ে করা। ঈদের নাটক বলে আমার কাছে স্পেশাল বলে কিছু নেই। প্রতিটি নাটকই আমার কাছে সেরা। আমি একইভাবে, একই রকম যত্ন ও ভালোবাসা নিয়ে করে থাকি। ওইভাবে ১০টা নাটক বলা আমার জন্য অনেক কঠিন।

এখনকার অনেক নাটকেই আগের মতো গল্প থাকে না। নাটকে পরিবার খুঁজে পাওয়া যায় না। চরিত্রগুলো কেটে ফেলা হয়। সীমাবদ্ধতাটা আসলে কোথায়?

এখন ভালো নাটক যেমন হচ্ছে, এর পাশাপাশি খারাপ নাটকও হচ্ছে। আমার নাটকে আপনি যে বিষয়গুলো বলেছেন, সেটা পাবেন না। আমি সবসময়ই বিষয়টি বলতে গর্ববোধ করি যে, আমার নাটকে হায়েস্ট পারফর্মার হলো আবুল হায়াত ও শর্মিলী আহমেদ। কারণ মা-বাবা ছাড়া তো আমার কোনো নাটকই হতো কখনো। এখনকার নাটকে পারিবারিক বন্ধন কমে গেছে বাজেটের কারণে। দেখা যায় নাটকের বাজেট এতই কম, কম সময়ের মধ্যে-দুই দিনে একটা নাটকের শুটিং শেষ করতে হয়। এ কারণে দেখা যায় রাইটার মা-বাবার চরিত্র কেটে ফেলে দিচ্ছে বা আমরাই বলছি কী দরকার দুটি চরিত্র রাখার। যে কোনো একটা কেটে ফেলে দিন। এমনও দেখা যায়, কিছু মেধাবী অভিনয় শিল্পী আছে, যাদের নাটকের অনেক ‘ভিউ’ হয়, তাদের নাটকের আবার অনেক বাজেট। এটা দিয়ে তো আসলে সব ডিরেক্টরের চলবে না। সবাইকে তো সারভাইভ করতে হয়। এ বিষয়টা আসলে টিভি চ্যানেলের সাথে ঠিকঠাক করা উচিত। কেউ হয়তো একটি নাটকের জন্য সাত-আট লাখ টাকা পাচ্ছে, আবার কেউ দুই লাখ টাকাও পাচ্ছে না। এটা আসলে চিন্তার ব্যাপার।

আমারসংবাদ/জেআই