Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

উদ্বেগের কারণ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট

মাহমুদুল হাসান

জুন ১৮, ২০২১, ০৬:৩৫ পিএম


উদ্বেগের কারণ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট
  • বর্তমান হারে রোগী বাড়লে হাসপাতালে জায়গা দেয়া কঠিন হবে -জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী
  • ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণ চলছে -অধ্যাপক ডা. রিদওয়ান-উর রহমান রিসার্চ প্রধান, ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ ও রিসার্চ সেন্টার

করোনা সংক্রমণ ফের ভয়াবহতার পথে। ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপে দেশ নতুন একটি ঢেউয়ের মুখে। গেলো ৮ মে প্রথম ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হলেও ধরনটি সারা দেশে ছড়িয়েছে ঈদের পর থেকে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে শনাক্ত-মৃত্যু। লকডাউনেও কমছে না সংক্রমণ হার।  প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ শহর থেকে প্রান্তিকে ছড়ালেও তৃতীয় ঢেউ উল্টো পথে। সীমান্তবর্তী জেলা থেকে সারা দেশে ছড়াচ্ছে। গতকাল দুই মাসে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৮ শতাংশের বেশি নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। এসব ঘটছে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপে। গবেষণাও মিলেছে তার সত্যতা।

আইসিডিডিআরবির গবেষাণায় দেখা গেছে, ঢাকায় শনাক্তের প্রায় ৬৮ শতাংশই এখন ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা সংক্রমিত। প্রতিবেদন প্রকাশের পর রাজধানীসহ সারা দেশে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি ভারতে এই নতুন ধরনের করোনার প্রকোপে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে। সীমান্তের ৩০ জেলার ২১টিতেই করোনার নতুন ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ছয়টি জেলার অবস্থা ভয়াবহ। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবস্থার অবনতি হয়েছে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে। রাজধানীতেও এমন পরিস্থিতি হাতছানি দিচ্ছে বলেই সন্দেহ বিশেষজ্ঞদের।

জনস্বাস্থ্যবিদরা জানিয়েছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব বেশি পড়বে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে। সংকট মোকাবিলায় লকডাউন, আইসোলেশন, টেস্ট বাড়ানোসহ টিকা কার্যক্রম বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন তারা। সরকারও বিষয়টি স্বীকার করছে। সেই সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সচেতনভাবে কাজ করার কথাও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) তথ্যমতে, ঢাকা থেকে সংগ্রহ করা ৬০টি নমুনার মধ্যে ৪১টিতেই ভারতীয় ধরন পেয়েছে। গবেষকরা গত ২৫ মে থেকে ৭ জুনের মধ্যে ঢাকার ৬০ জন কোভিড রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে জিনোম সিকোয়েন্স করেছে। এতে শতাংশের হিসেবে ৬৮ শতাংশ ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট, ২২ শতাংশ নমুনায় পাওয়া গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার ধরন। বাকি নমুনাগুলো অন্যান্য ধরনের। এর আগে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভস (আইডিএসএইচআই) দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে করোনা ভাইরাসের ৫০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করে। গত ৩ জুন এ বিষয়ে তারা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে ৪০টিতেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়ে। গত ৮ মে প্রথম ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয় বলে জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজধানীসহ সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি ৫২৮টি আরটিপিসিআর, র্যাপিড অ্যান্টিজেন ও জিন এক্সপার্ট ল্যাবে গতকাল আরও ২০ হাজার ৮৮২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ৬২ লাখ ৮৮ হাজার ৫৩৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে গতকাল আরও তিন হাজার ৮৮৩টি নমুনায় করোনার উপস্থিতি মিলেছে। এতে শনাক্ত রোগীর সংখ্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট লাখ ৪৪ হাজার ৯৭০ জনে। তার মধ্যে গতকাল সুস্থ হওয়া এক হাজার ৯৫৫ জনসহ এ পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হয়েছে সাত লাখ ৭৮ হাজার ৪২১ জনে। এছাড়াও গতকাল ৫৪ জনের মৃত্যুতে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩ হাজার ৩৯৯ জনে। গতকাল শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গতকাল মারা যাওয়া ৫৪ জনের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগেরই ১৫ জন। এছাড়া ঢাকায় ১২, রাজশাহীতে ১২, খুলনায় আট, বরিশালে চার, সিলেটে দুই এবং ময়মনসিংহে একজন মারা গেছেন। শুক্রবার মারা যাওয়াদের মধ্যে ৩৫ জন পুরুষ এবং ১৯ জন নারী। এদের মধ্যে বাসায় মারা গেছেন দুইজন। বাকিরা সবাই হাসপাতালে মারা গেছেন। এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মোট মারা যাওয়া ১৩ হাজার ৩৯৯ জনের মধ্যে পুরুষ ৯ হাজার ৬২৩ জন এবং নারী তিন হাজার ৭৭৬ জন। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গতকাল মারা যাওয়াদের মধ্যে ২৬ জনেরই বয়স ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছরের ১৫, ৪১ থেকে ৫০ বছরের সাত, ৩১ থেকে ৪০ বছরের পাঁচ এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের একজন রয়েছেন।

ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ ও রিসার্চ সেন্টারের প্রধান অধ্যাপক ডা. রিদওয়ান-উর রহমান বলেন, ঢাকায় এখন ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণের সময়কাল চলছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণেই ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়েছে এবং কোভিড পরিস্থিতি আবারো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। ঢাকায় যারা এখনো ভ্যাকসিন পান নাই, যারা এখনো করোনা আক্রান্ত হননি তারা এই ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ঢাকায় সংক্রমণ কম হলেও ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে এই ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব পড়বে, সেখানে সংক্রমণ বাড়বে। আর সেখানকার রোগীদের ঢাকায় নিয়ে আসা হবে, তখন এখানে চাপ বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, তৃতীয় ওয়েব সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে এটাই মনে হচ্ছে। পরিস্থিতি যদি মোকাবিলা করতে হয়, তাহলে যখন হাসপাতালগুলোর বেড ক্যাপাসিটি ৮০ ভাগ পূরণ হয়ে যাবে তখনই আমাদের একটা লকডাউন দিতে হবে। এছাড়া এখন টেস্ট বহুগুণে বাড়াতে হবে। লাখ লাখ মানুষের টেস্ট করিয়ে ফেলতে হবে। একই সঙ্গে যেভাবে হোক ভ্যাকসিন নিয়ে আসতে হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আমাদের দেশেও এসেছে, এর সংক্রমণের ক্ষমতা ৫০ ভাগের বেশি। কাজেই এই সময়টা আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, নিজেদের রক্ষা করতে হবে, পরিবারকে রক্ষা করতে হবে, দেশকে রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গের হাসপাতালগুলো করোনা রোগীতে ভরে গেছে। রোগীদের সামাল দেয়া কঠিন হচ্ছে। আমরা চাই না ঢাকা ও দেশের অন্যান্য জেলাগুলোয় এই সমস্যা দেখা দেয়। দেশে যখন করোনা নিয়ন্ত্রণে ছিলো, তখন সারা দেশের হাসপাতালে ১৫শর মতো রোগী ছিলো। সংক্রমণ বাড়ায় বর্তমানে সারা দেশে চার হাজারের মতো রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছে এবং প্রত্যেক দিন প্রায় চার হাজারের কাছে নতুন রোগী আক্রান্ত  হচ্ছে। বর্তমানে এই হারে যদি রোগী বাড়ে, তাহলে হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের জায়গা দেয়া কঠিন হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, দেশে টিকা কর্মসূচি এখনো পুরোপুরিভাবে চালু করতে পারিনি। আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই টিকা পেয়ে যাবো। চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে টিকা পাবো এবং ভারতের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে সেখান থেকেও পাবো। কিন্তু এখনো তা পাওয়া যায়নি। টিকা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু একজন মানুষ সুরক্ষা হয় না, তারও এক মাস সময় লাগে।

আমারসংবাদ/জেআই