Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

পরকীয়া-সম্পত্তি-অনৈতিক কাজ

জুন ১৯, ২০২১, ০৬:২৫ পিএম


পরকীয়া-সম্পত্তি-অনৈতিক কাজ

ভাগ্যের ফেরে স্বামী-সন্তান বেঁচে গেলেও মেয়ের হাত থেকে শেষরক্ষা হয়নি বাবা-মা ও বোনের। রাজধানীর কদমতলীতে কেন এই হত্যাকাণ্ড— তাও এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ভেসে বেড়াচ্ছে গতকালের এই ট্রিপল মার্ডারের নেপথ্যের তিন কারণ। তার একটি পরকীয়া, অপরটি সম্পত্তির ভাগভাটোয়ারা, আরেকটি অনৈতিক কাজে বাধ্য করা। এই তিন কারণেই হত্যা, নাকি অন্য কোনো কারণ রয়েছে তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের অনুসন্ধান চলছে।

এরই মধ্যে কদমতলী থানার ওসি জামাল উদ্দীন মীর আমার সংবাদকে বলেন, ‘এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি হত্যার নেপথ্যের কারণ। তবে তিনটি কারণ স্থানীয় ও নিহতের স্বজনরা বলছেন।’ এর মধ্যে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার বিষয়টিও তিনি শুনেছেন বলে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন।

তবে স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, পরকীয়া, সম্পত্তি আর অনৈতিক কাজেই যদি বাধ্য করার কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকে, তাহলে ঘাতক মেহজাবীন ইসলাম মুন তার আগের স্বামীকেও কেন খুন করেছিলেন? যে মামলায় মেহজাবীনসহ তার নিহত মা-বাবাও পাঁচ বছর জেল খেটে জামিনে মুক্ত হন। এদিকে ঘাতক স্ত্রীর হাত থেকে বেঁচে ফেরা বর্তমান স্বামী শফিকুল ইসলাম বলছেন, মেহজাবীন বেশ কিছু দিন ধরে উশৃঙ্খল জীবনযাপন করতো। কাজ থেকে ফিরে তাকে বাসায় পাওয়া যেতো না। বাসায় তালা মেরে বাইরে থাকতো। গতকালও এসব নিয়েই ঝগড়া করে বাপের বাসায় আসে। এখানে আসার পরই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় মেহজাবিনকে আটক করেছে কদমতলী থানা পুলিশ। গতকাল দুপুরে তাকে আটকের পর থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। তবে সন্ধ্যা নাগাদ থানার ওসি জানাতে পারেনি জিজ্ঞাসাবাদে কী তথ্য দিয়েছে মেহজাবীন।

এর আগে সকালে কদমতলীর মুরাদপুর এলাকার ২৮, লালমিয়া সরকার রোডের ছয়তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে মেহজাবীনের মা মৌসুমী ইসলাম (৪০) সৌদি প্রবাসী বাবা মাসুদ রানা (৫০) ও বোন জান্নাতুলের (২০) লাশ উদ্ধার করা হয়। একই ঘটনায় আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মেহজাবিনের স্বামী শফিকুল ইসলাম ও তার আগের সংসারের মেয়ে মারজান তাবাসসুম তৃপ্তিয়াকে (৬) ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। পুলিশ জানায়, রাতে পরিবারের সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান মেহজাবীন। সবাই অচেতন হয়ে পড়লে মা-বাবা ও বোনকে রশি দিয়ে বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তিনি। স্বামী ও শিশু সন্তানকেও ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল। তবে তারা অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন। পুলিশ আরও জানায়, মরদেহগুলো হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বিষাক্ত কিছু প্রয়োগের আলামত পাওয়া গেছে। আলামতগুলো পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করেছে পুলিশ। মরদেহগুলো সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ঘাতকের চাচাতো বোন শিলা বলেন, মেহজাবীন তার পরিবারের সবাইকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল। সে তার আগের ঘরের স্বামীকেও খুন করেছিল। তার আগে বিয়ে হয়েছিল দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জে। সেই মামলায় মেহজাবিনসহ তার নিহত বাবা-মা ও বোনের জেল হয়েছিল। পাঁচ বছর জেল খেটে তারা জামিনে ছাড়া পায়। তিনি আরও বলেন, গত দুদিন আগে স্বামী সন্তানকে নিয়ে মায়ের বাড়িতে বেড়াতে আসে মেহজাবীন। এসেই তার ছোট বোন জান্নাতুলের সঙ্গে তার স্বামীর পরকীয়া রয়েছে বলে বাবা-মাকে অভিযোগ করে। এ নিয়ে অনেক কথা কাটাকাটিও হয়। তার জেরেই হয়তো এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এছাড়া প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, জায়গা সম্পত্তি নিয়েও পরিবারের সঙ্গে বিরোধ ছিলো মেহজাবীনের। সম্পত্তি লিখে দেয়ার জন্য বাবা-মাকে অনেক চাপ দিতো। এ নিয়ে এর আগে বৈঠক সালিশ হয়েছে। পুলিশ বলছে, মেহজাবীন তার বাবা-মা ও বোনকে হত্যা করে ৯৯৯-এ কল করে। এ সময় তিনি বলেন, ‘আপনার দ্রুত না আসলে আমার স্বামী ও মেয়েকে খুন করে ফেলব।’ পরে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ নিহত তিনজনের লাশ উদ্ধার করে। অন্য দুজনকে অচেতন অবস্থায় ঢামেকে পাঠায়। পুলিশের ধারণা, শুক্রবার রাতে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে তিনজনকে গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। ওসি জামাল উদ্দিন বলেন, আমরা মরদেহগুলো হাত পা বাঁধা অবস্থায় পেয়েছি। শুক্রবার রাতে তাদের হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করেছে তাদেরই আরেক মেয়ে। সেই মেয়েকে আটক করা হয়েছে। আর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শফিকুল বলেন, শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছিলাম। গতকাল রাতে খাবার ও চা খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমার মেয়েও অচেতন হয়ে যায়।

ওয়ারী জোনের ডিসি শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, মেহজাবীন হত্যা করে ঘটনাস্থল থেকে ফোন দেয়। পুলিশ দ্রুত না গেলে তার স্বামী-সন্তানকেও মেরে ফেলার হুমকি দেয় সে। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নিহত মৌসুমী ইসলাম উচ্চবিত্তদের মেয়ে সাপ্লাই দিতেন। তার মেয়ে মেহজাবীন ছিলেন এক নেতার বেডপার্টনার। মা-মেয়ের মধ্যে দেহব্যবসা নিয়ে ঝামেলা হয়। এর রেশ ধরে মুন পরিকল্পিতভাবে সবাইকে হত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। জানা গেছে, মুনের মা মৌসুমী সাবেক এক বিএনপি নেতার পিএস হত্যামামলার আসামি। মুনের বাবা মাসুদরানা দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলেন। তিনি স্ত্রী-মেয়ের বিষয়ে জানতেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি জামাল উদ্দিন মীর বলেন, অনৈতিক কাজের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এ ছাড়া নিহতের স্বজনরা দাবি করছেন, মেহজাবিনের স্বামী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শফিকুল ইসলামের প্ররোচনাতেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। স্বজনদের এমন অভিযোগও আমলে নিয়ে ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন উপ-কমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ। প্রতিবেশী ও বাড়ির মালিক জানিয়েছেন, বাসা ভাড়া নেয়ার পর থেকে প্রতিবেশীদের সাথে তাদের কোনো যোগাযোগ ছিলো না।

আমারসংবাদ/জেআই